কিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি

শিশিরকণা এর ছবি
লিখেছেন শিশিরকণা (তারিখ: শুক্র, ২৬/০৪/২০১৩ - ১১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এ এক অসহনীয় অবস্থা! হাজার মেইল দূরে বসে কিছু করতেও পারছি না, সাভারের এক একটি ছবি দেখে, সংবাদ পড়ে সহ্য করতে পারছি না এত কষ্ট, আবার এইসব সংবাদ থেকে নিজেকে স্বার্থপরের মত দূরে সরিয়ে রাখতেও পারছি না। কেবল মনে হচ্ছে মস্তিষ্কে চিরকালের মত গভীর দাগ পড়ে যাচ্ছে, ঐ নূপুর পড়া পায়ের ছবি, ঐ মৃত যুগলের ছবি জীবনে আমি মাথা থেকে মুছতে পারব না। গোল্ডফিশের মত ২ সপ্তাহ বাদে রানা প্লাজার নাম ভুলে গেলেও বহু বছর বাদেও দুঃস্বপ্নে ওরা এসে ঠিক ঠিক হানা দিয়ে যাবে। হয়তো কিছুটা মনুষ্যত্ব এখনো ধরে রেখেছি বলেই এই ভোগান্তি। রাজনীতির নানারকম গদিতে বসে থাকা অবিশ্বাস্য রকমের পিশাচ হলে হয়ত এই যন্ত্রনা হতো না।

একজন বললেন এ নাকি আল্লাহর গজব। একজন বললেন এ সবই হরতাল বানচালের ষড়যন্ত্র। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেবল আজগুবি এক তত্ত্ব দিয়েই থামলেন না পুনরাবৃত্তি করে সেটা অধিষ্ঠিত করতেও সমানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুর্যোগে যার দায়িত্ব সবচে' বেশি সেই দুর্যোগ মন্ত্রী একরকম পালিয়েই আছেন তার নির্বাচনী এলাকায়। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কাজের কথার চে অকাজের কথা দিয়ে মুখ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্তত সঠিক নির্দেশনাটুকু দেয়ার আগে নানান বুলি কপচাইতেই তাদের বেশি আগ্রহ। অবশ্য মানুষ তাদের বানীর জন্য বসে নেই। সরকার বা সরকারি ব্যাবস্থাপনার উপরে যে মানুষের ভরসা নাই এইটা বলার অপেক্ষা রাখে নাই। এদের আক্কেল হবার অপেক্ষায় কেউ বসে নেই, এই বিপদে আবারও সবচে' আগে এগিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষ। যারা উদ্ধারকাজে নেমে পড়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আভূমি মাথা নত হয়ে আসে। উদ্ধারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ঔষধ এসবের ব্যাবস্থা আসা উচিত দুর্যোগ মোকাবেলা মন্ত্রণালয় থেকে, তাদের এইসব যোগাড়যন্ত্র তৈরি থাকার কথা! যে কোন দেশে তাই থাকে। আমাদের দেশে সম্ভবত এই খাতের বরাদ্দ বাজেট যায় প্রকল্পের চেয়ারম্যানের পাজেরো কিনতেই। যন্ত্রপাতি কেনার টাকা আর কই। এইটা সবাই জানে, তাই সরকারের কাছে আর কেউ আবেদন জানিয়ে সময়ও নষ্ট করে নাই, নিজেরা কিভাবে কি করা যায় সেই জোগাড় দেখছে। শেষ পর্যন্ত মানুষ মানুষের জন্য। সরকারি এত "ব্যবস্থাপনা" যদি কোন কাজেই না আসে, তবে কেন খালি খালি এই কাঠামোর পিছে সময় ব্যয়, কেনই বা তার নেতা নির্বাচন নিয়ে এত মারামারি। রাজনৈতিক এইসব নেতারা যে আমাদের সাধারণ মানুষের কোন কাজেই আসবেন না কখনো সেটা তো পরিষ্কার। কেবল সরকারে গেলে মুখ রক্ষা করতে আর পরের নির্বাচনে ভোট চাইতে কিছু মিছু কাজ তারা করেন। এই অমানুষগুলোর হাতেই কেন আমরা বারবার দায়িত্ব তুলে দেই? আসলেই কি আর এদের প্রয়োজন আছে আমাদের দেখভাল করার জন্য?

দায়িত্বে বসে থাকা এই মানুষগুলোকে কি আসলেই কোন কাজে আসছে? এরা আছেন একরকম সঙ হিসেবে, আমাদের ডেইলি বিনোদনের জন্য যেন, হা হুতাশ করবার জন্য। শুধু এই নেতা মহাশয়রাই নন, এইসব মন্ত্রনালয়ে যেসব আমলারা রয়েছেন, তাদেরই বা কতখানি যোগ্যতা রয়েছে এইসব পরিস্থিতি সামলাবার। শুধু এই মন্ত্রনালয়ই কেন, সরকারি সব জায়গাতেই দলাদলি, ধরাধরি করে স্থান করে নেওয়া কিছু ব্যক্তি যাদের যোগ্যতার সাথে পদের অনেক পার্থক্য। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে এই মূহূর্তে তাদের অনেক দ্রুত বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল, যার কোন উদ্যোগই দেখছি না। তাদের কি করা উচিত সেটা ভেবে বের করার মত বুদ্ধিমত্তা বা আন্তরিকতা তাদের আছে কিনা সেটাও প্রশ্ন জাগছে তাই। শুনছি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আটকে আছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে এত সহজে অযোগ্যতা চোখে পড়ে না, কারণ হঠাৎ করে কোন কাজ করে দেখাতে হয় না তাদের। আর আমরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছি, মেনে নিয়েছি যে সরকারি কোন কাজ করাতে হলে অনেক ঠেলাঠেলি লাগবে। আসলে বাংলাদেশের পুরো সরকারি ব্যবস্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে ঐ রানা প্লাজার মত, ভার বহনের অনুপযোগী কাধে ভর দিয়ে। স্পেক্ট্রাম, তাজরীন, হলমার্ক, ডেস্টিনি এই ঘটনা গুলো এক একটা জায়গায় পলেস্তরা খসে দুর্বল স্থাপনা উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার মত। যেকোন সময় পুরোটুকু হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে পারে। আমরা কি এইগুলি ঠেকা দিয়েই চালিয়ে দেবার চেষ্টা করব? তাতে কি শেষ পর্যন্ত রেহাই মিলবে? এইরকম কোন সুউচ্চ ভবন যদি বিপদজনক হয়, তবে সাধারণত পুরোটা ভেঙ্গে আবার নতুন করে গড়া হয়? সেটা কি সম্ভব?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"দায়িত্বে বসে থাকা এই মানুষগুলোকে কি আসলেই কোন কাজে আসছে? এরা আছেন একরকম সঙ হিসেবে, আমাদের ডেইলি বিনোদনের জন্য যেন, হা হুতাশ করবার জন্য। শুধু এই নেতা মহাশয়রাই নন, এইসব মন্ত্রনালয়ে যেসব আমলারা রয়েছেন, তাদেরই বা কতখানি যোগ্যতা রয়েছে এইসব পরিস্থিতি সামলাবার।"

মন্ত্রনালয়ের আমলারা হন বি সি এস নামক এক "good for nothing" পরীক্ষার মাধ্যমে!!!
এদের দিয়ে ঘুষ খাওয়া ছাড়া আর কি আশা করা যায়???

সুবোধ অবোধ

শিশিরকণা এর ছবি

যোগ্যতার চেয়েও বেশি পীড়াদায়ক দায়িত্ববোধের অভাব। দায়িত্বশীলরা যেখানে ব্যাতিক্রম সেখানে কিভাবে প্রশাসন চলবে?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

তারেক অণু এর ছবি

প্রশ্নগুলো আমার ভেতরেও ঘুরপাক খাচ্ছে, উত্তর মেলার আশায় আছি

শিশিরকণা এর ছবি

আগে ভাবতাম দেশের জন্য মানুষের জন্য মমতা নিয়ে সৎভাবে কাজ করবে এমন মানুষই বুঝি নাই। কিন্তু শাহবাগ আর সাভারের ঘটনায় যেভাবে মানুষ এগিয়ে এসেছে, তাতে মনে হচ্ছে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং অন্যভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আগ্রহী আছে অন্তত। এর আগে যখন স্পেক্ট্রাম ধ্বসে পড়লো তখন কিন্তু টিভিতে খবর দেখে মন্তব্য করার বাইরে মানূষ নিজে ছুটে যায় নি। মানুষের ইনভল্ভমেন্ট বাড়ছে, ফলে এইসব রাজনীতিকরা লোকজন আরাম করে ফাকা মাঠে গোল দিতে পারছে না। এইসব পুরনো জং ধরা পচে গলে যাওয়া মানুষগুলোকে সরিয়ে নতুনেরা কিভাবে আসবে জানি না। কিন্তু আসবে। আশা করি সময়টা দ্রুত আসুক।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

ঘুমকুমার এর ছবি

এইসব পুরনো জং ধরা পচে গলে যাওয়া মানুষগুলোকে সরিয়ে নতুনেরা কিভাবে আসবে জানি না। কিন্তু আসবে। আশা করি সময়টা দ্রুত আসুক।

চলুক

ছাইপাঁশ এর ছবি

একই অনুভুতি মন খারাপ

শিশিরকণা এর ছবি

সব অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জনগনই এই দেশের সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয়...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শিশিরকণা এর ছবি

জনগণ না থাকলে এরা কাদের নেতা হবে, কার ঘাড়ে বসে খাবে। জনগন হইলো ফার্মের মুরগীর মতো, ডিম বেচে খায় আবার দরকার পরলে দুই চারটা জবো দিয়েও খায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এইরকম কোন সুউচ্চ ভবন যদি বিপদজনক হয়, তবে সাধারণত পুরোটা ভেঙ্গে আবার নতুন করে গড়া হয়? সেটা কি সম্ভব?

শিশিরকণা, আপনি অনেক বড় একটা প্রশ্ন খুব অনায়াসে করে ফেলেছেন। সমস্ত দেশটাই একটা বিশাল ভবন। আমরা সবাই সেখানে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকে আছি...বিশেষ ক্ষমতাধররা ছাড়া।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

শিশিরকণা এর ছবি

জানি না। কেবল একটা জিনিষ লক্ষ্য করছি। আগে মানুষ বলতো সরকার এইটা করে না কেন, ঐটা করে না কেন, এইটার সরকারের কাছে আমাদের দাবি হেন তেন। কিন্তু এখন মানুষ নিজেও নেমে পড়েছে। ঐ যে একটা কথা আছে না, For evil to succeed all is required that the good do nothing. সত্যিকারের মানুষেরা যখন ডু নাথিং এর চেয়ে বেশি কিছু করছে, তখন দিন বদলাবেই।
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আসলে বাংলাদেশের পুরো সরকারি ব্যবস্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে ঐ রানা প্লাজার মত, ভার বহনের অনুপযোগী কাধে ভর দিয়ে।

এভাবে চলতে পারে না।

শিশিরকণা এর ছবি

রানীতিবিদ, আমলা, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী সবাই মিলে এক চমৎকার ইকোসিস্টেম। এর মাঝে সততা আর দায়িত্বশীলরাই ভাইরাসের মতো। আর এরা বাস করে আমাদের মাঝেই। ফরাসী বিপ্লবের মতো একটা বিপ্লব হওয়া দরকার এদেশে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

শাব্দিক এর ছবি

জাতিগত ভাবে আমরা শর্ট টাইম মেমরি লস সমস্যায় ভুগি।
তাই ঠেকা দিয়েই চলে যাবে, চেষ্টাও করা লাগবে না।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

শিশিরকণা এর ছবি

বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু বাড়ছে, মানুষ বাড়ছে, সেই ভার ঠেকা দেয়া চেলাকাঠ নিতে না পারলে সব ভেঙ্গে পড়বেই।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু

তালেব মাষ্টার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।