প্রবাসে দৈবের বশে ০২১

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ২৫/১১/২০০৭ - ৩:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমি যে একজন মাইওপিক, সেটা ধরা পড়ে যখন আমি ক্লাস টুতে পড়ি। আমার বড় ভাইও একজন মাইওপিক, তিনি হঠাৎ একদিন সন্ধ্যেবেলা এসে পাকড়াও করলেন আমাকে, ব্যাপার কী, তুমি এতো কাছে বসে টিভি দেখো কেন?

আমি যে কাছে বসে টিভি দেখি সেটা আমিও খেয়াল করিনি, কেউই খেয়াল করেনি, সেদিন সাথে সাথেই আমাকে কয়েক গজ পেছনে নিয়ে বসিয়ে টিভির বিভিন্ন লেখাজোকা পড়তে বলা হলো। খালি চোখে সেইসব ইকড়িমিকড়ি পড়তে আমি নিদারুণভাবে ব্যর্থ হলাম, আমার ভাই তাঁর নিজের চশমা চোখ থেকে খুলে নিয়ে আমাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন, এবার পড়তে পারছো? চশমা চোখে নিমেষেই টিভিতে আজানের দোয়ার বঙ্গানুবাদ আমার কাছে স্বচ্ছ হয়ে গেলো, সেই সাথে জানলাম, আমার চোখ খারাপ।

ভীষণ আতঙ্কিত বোধ করেছিলাম সেদিন। চশমা ব্যাপারটার প্রতি শিশুদের একটা আকর্ষণ সাধারণত থাকে দেখেছি, আমার ছিলো না, কিন্তু সারাজীবন চশমা পড়ে চলতে হবে ভেবে আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম।

পরদিন আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, তিনি আমার নাকে একটা ফ্রেম চড়িয়ে লেন্সের পাওয়ার মাপলেন প্রথমে, তারপর টর্চলাইট দিয়ে চোখে আরো অনেক কিছু দেখলেন। শেষমেশ আমার বাবার সাথে কী কী সব শলাপরামর্শ করলেন বুঝলাম না।

একেবারে সাথে সাথেই চশমা নেয়া হয়নি আমার, কিছুদিন পর লালচে ফ্রেমের একটা গোদা চশমা আমি নাকের ওপর নিয়ে ঘুরতে শুরু করলাম। আমার সহপাঠীরা প্রথমে আমার মতো একজন দেড়ব্যাটারিকে পেয়ে উল্লসিত হয়ে উঠলো, কিন্তু ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়ে গেলো কিছুদিন পর। আমার শৈশবে পোলাপানের চোখ সম্ভবত ভালো ছিলো, স্পষ্ট মনে আছে, ক্লাস সিক্সে ওঠার আগ পর্যন্ত আমার বয়েসী আর কোন ছেলেমেয়েকে চশমা পড়তে দেখিনি। চশমা জিনিসটাই একটা বড়দের ব্যাপার ছিলো।

ক্লাস টু এর পর আমি আর চশমার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারিনি। এখন অনেকে কনট্যাক্ট লেন্স পড়ে, কিন্তু জিনিসটা আমি কখনো পরখ করে দেখিনি, আমার চশমা-ই ভালো লাগে। চোখের দুরবস্থার কারণে আমি কখনো সানগ্লাস পড়ি না, চোখ যারা অকারণে ঢেকে রাখে তাদের তস্কর কিসিমের মনে হয়। পেশাগত কারণে যখন প্রখর রোদের মুখোমুখি কাজ করতে হয়েছে, তখনও আমি পরিমিত শেডের সাধারণ চশমা ব্যবহার করেছি।

তবে একটা দীর্ঘ সময় আমি কাটিয়েছি কোন ব্যাক আপ চশমা ছাড়া। কপাল ভালো রাস্তাঘাটে চশমা ভাঙেনি সেই সময়টাতে। আমি প্রথম চশমার অভাবে বিপদে পড়ি এক বন্ধুর বোনের গায়ে হলুদে যাবার আগে। প্রথমে ভেবেছিলাম অনুষ্ঠানেই যাবো না, কিন্তু সেই বন্ধু ফোনে এমন গর্জন করে উঠলো যে ঘাবড়ে গিয়ে বাক্সপ্যাঁটরা হাতে উইন্ডোজ ৯৫ মার্কা এক চশমা খুঁজে পেয়ে সেটা নাকে-কানে দিয়েই গেলাম। পরদিন চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়ে চোখ দেখিয়ে তিন তিনটা চশমার টেন্ডার হাঁকিয়ে এলাম, চশমার অভাবে যেন আর ভ্যাজালে পড়তে না হয়।

এখানে কয়েকটা চশমা নিয়ে এসেছি, তবে জুতার মতোই চশমারও স্বাদ আছে, চোখ নাক কান সেই স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একটার বদলে আরেকটা পরলে প্রথমে একটু সমস্যা হয়। আমার পছন্দের চশমাটা এখানে আসার দিনখানেক বাদেই হঠাৎ একদিন একপাশের স্ক্রু থেকে মুক্তকচ্ছ হয়ে লেন্সটা জলাঞ্জলি দিয়ে বসলো। খপ করে ধরে ফেলতে পেরেছিলাম, নাহলে গোটা জিনিসটাই বরবাদ হয়ে যেতো। একটা ভোঁতা ছুরি দিয়ে সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ইসকুরু আবার টাইট দিলাম, কিন্তু ক'দিন বাদে বুক চিতিয়ে বীরদর্পে রাস্তা পার হবার সময় মাঝপথেই আবার যে-ই কে সে-ই। মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেলো। এতো আদর যত্নে ধোয়ামোছা করে মাথায় করে রাখি, এরকম ব্যভিচার আর কত ভালো লাগে? যা-ই হোক, আবারও জোড়াতালি দিয়ে ম্যানেজ করলাম, আজ সকালে উঠে চশমা পড়তে গিয়ে দেখি স্ক্রু গায়েব!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরেকটা চশমা বার করে স্ক্রু খোঁজা শুরু করলাম। স্ক্রু খুঁজে আবার টাইট দিয়ে চশমা পড়ে কাজ শুরু করতে করতে পনেরো মিনিট লেগে গেলো।

চশমাধারী বা ধারিণীরা প্রবাসে এলে হাফ ডজন চশমা সাথে করে নিয়ে আসবেন, সেই সাথে আসার আগে চোখ দেখিয়ে আসবেন ডাক্তারের কাছে, সেই প্রেসক্রিপশন রেখে আসবেন দেশে কারো কাছে, যাতে এই হাফ ডজনের পাঁচটা ভেঙেচুরে গেলেও শেষটা চোখে লাগিয়ে দেশে ফোন করে বলতে পারেন, আরো কয়েকটা চশমা করিয়ে পোস্টে পাঠিয়ে দিতে।


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

'নাকে বসে ধরে কান, বলো দেখি কোন শয়তান?'

তো এই শয়তান চশমাটিকে আমিও ক্লাস থ্রি থেকে বহন করছি। চশমা যে কি ভীষণ যন্ত্রণার জিনিষ, এটি ভুক্তভোগি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।

অনেকে দেখি ফ্যাশন করে জিরো পাওয়ারের চশমা পরে। দেখে আমার এতো রাগ লাগে! কোনো মানে হয়, বলুন?

অফটপিক: অনেকদিন পানশালা পর্ব পড়ছি না। ওই সিরিজগুলোও একটু লিখুন প্লিজ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

হিমু এর ছবি

পানশালার পর্বগুলি লেখা খুউব কঠিন কাজ। তবে চেষ্টা করবো। এখন একটু দৌড়ের উপর আছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

অপ্রাসঙ্গিক সংযোজন:

ইস্নিপস এ খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম গানটা। প্রথম শুনেছিলাম একটা সিনেমায়, নামটা ভুলে গেছি। ঐ সংস্করণটা ছিলো CAKE এর পরিবেশন। পরে জানলাম এটা বেশ পুরনো গান, মূল গানটা স্প্যানিশ, ১৯৪৭ সালে লেখা, "কিজাস, কিজাস, কিজাস"। ডরিস ডে এর গাওয়া ইংরেজি সংস্করণটা ভালো লাগলো আবারও।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নিঘাত তিথি এর ছবি

জিরো পাওয়ারের চশমা পড়তে দেখে কেউ রাগ কইরেন না, একেক জনের একেক শখ থাকে না? আমার ছোটবেলা থেকে বড়ই শখ ছিলো চশমা পড়ার, কিন্তু মরার চোখ বেশি ভালো। ইউনিভার্সিটির ফোর্থ ইয়ারে বুড়া বয়সে দেখি ব্লাকবোর্ডের লেখা দেখি না, লাস্ট বেঞ্চে বসতাম বলা বাহুল্য। তারপর, আমার সে কি আনন্দ, এই বার আমাকে চশমা দিবেই ডাক্তার। দিলো। সাথে বলে দিলো, চব্বিশ ঘন্টা পড়ে চলতে হবে, তাহলে তিন মাস পরে চোখ ভালো হয়ে যাবে কারন সমস্যাটা ম্যাসিভ কিছু নয়।

ওই তিন মাসে ঠেলা টের পাওয়ার আগে পর্যন্ত আমার চশমার মোহ কাটে নি। শেষ এক মাসে অস্থির হয়ে গেলাম, আড়াই মাসের মাথায় ঘোষনা দিলাম, আমার চোখ ভালো হয়ে গেছে, চশমা বিদায়। কিন্তু ইদানিং আবার চশমা প্রেম পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে, জিরো পাওয়ারের একটা কিনে বিপ্লব'দার বকাবকির দলে পড়বি কিনা ভাবছি। হাসি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ট্রাজেডি হলো, হেলথ ইন্সুরেন্স চশমা কেনার টাকা দেয় না। মন খারাপ
চোখ ভালো রাখতে সবাই বেশি করে মাছের কাঁটা খান।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বুঝলাম এল্লিগাই চোখ ভালো আছে।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার তিনসেট চশমার এখন তৃতীয়টি চলছে। সেটাও মেয়ের কল্যাণে একটা ঠ্যাং বাঁকা হয়ে গেছে। কোনদিন হয়তো ওটাও চলে যাবে। তবে আশার কথা এই যে, এবার মেডিকেল ইনসুরেন্সের সাথে ওটাও কাভারড। ফলে নতুন চশমা এবার নিতেই হবে। কিন্তু কষ্ট লাগে-- যে চশমা ২শ টাকা দিয়ে দেশে পাওয়া যায় সেই চশমা নিতেই এখানে ২০০ ডলার খরচ করতে। হোকনা ইনসুরেন্সের টাকা, তাও মনে হয় পুরাটাই জলে গেল।

দ্রোহী এর ছবি

আমার ঘটনা অতীব হৃদয়বিদারক!

আমি দেশ থেকে আসার সময় ৩ খানা চশমা নিয়ে এসেছিলাম। দেশ থেকে আসার আগেই ডাক্তার দেখিয়ে প্রেশক্রিপশন রেখে এসেছিলাম বাসায় (একখানা স্যাম্পল চশমা রেখে আসতে ভুলে গিয়েছিলাম)। প্রবাসজীবনের ৬ মাসের মাথায় আমার তিনখানা চশমাই বীরদর্পে শহীদবরণ করে ফেললো। কালবিলম্ব না করে ঢাকায় নতুন চশমা পাঠাতে বললাম।

ঢাকা থেকে ১৪ দিনের মাথায় নতুন দুইখানা চশমা এসে পৌঁছালো। আমি নতুন চশমা পরে আবারও বীরদর্পে হাঁটাহাটি শুরু করে দিলাম। চশমা আকারে খানিকটা ছোট, চোখে দিলে সামান্য অস্বস্তি বোধ হয়। পুরোদস্তুর বাঙালী আমি মাথা ঘামালাম না ব্যাপারটা নিয়ে। মাসখানেকের মাথায় আমার নতুন রোগ দেখা দিলো। আমি কোন ধরনের আলো সহ্য করতে পারি না। দিনের বেলায় চোখে তোয়ালে বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর মত অবস্থা। রাতের বেলায় লাইটের আলো চোখে পড়লে মাথার ভেতর আগুন ধরে যায়।

এক সপ্তাহের মাথায় ডাক্তার দেখাতে গেলাম। ইন্সুরেন্স থাকা সত্ত্বেও সর্বসাকুল্যে ৬৪০ ডলার পকেট থেকে দিতে হয়েছিল।

অপেক্ষাকৃত ছোট সাইজের চশমা চোখে ঠিকমত বসতো না। চশমার কাঁচ বেঁকে থাকতো। বাঁকা লেন্সের ভেতর দিয়ে তাকাতে তাকাতে আমার চোখের অ্যাক্সিসও কোন একধরনের গন্ডগোল হয়ে গিয়েছিল। চোখের ভেতরে কি এক নার্ভ ফুলে মোটা হয়ে গিয়েছিল। যাকে বলে সুপার সেনসিটিভ বায়োনিক চোখ।

সুতারাং, হিমুর উপদেশবানী শুনেই লাফ দিয়ে উঠবেন না। চশমার প্রেশক্রিপশনের সাথে সাথে একটা স্যাম্পল চশমা না রেখে আসলে আমার মত ঘটনা ঘটতে বেশীদিন লাগবে না।


কি মাঝি? ডরাইলা?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই দেশে ও নিতান্ত বেকার ছাড়া আর কাউরে ফ্রি চশমা দেয়না । তো,আমি যেমনেই হোক ফ্রি চশমা পাবার বন্দোবস্ত করলাম । ফ্রি যখন পাওয়াই যাবে,গেলাম চশমার ডাক্তারনীর কাছে । চোখ টোখ পরীক্ষা করে ফ্রি চশমা দিলো । চশমার ফ্রেম চুড়ান্ত বদখত,পাওয়ারে ও গন্ডগোল । চারপাঁচবার অদলবদল করার পর ও একই দশা ।
ত্যক্তবিরক্ত হয়ে দেশ থেকে আনালাম তিন সেট । ৫০০ টাকা গোটা । চশমা ডাক্তারনীর কাছে নিয়ে গেলাম দেখানোর জন্য । ফ্রেম দেখে তো বালিকা কাৎ । বলে এতো দামী!, এগুলো তো ২০০ পাউন্ডের কম না ।
আমি বললাম,হুম-আমি কম দামী জিনিস পড়িনা । ফেরত নাও তোমার ফ্রি মাল

আমি ও আমার চশমা-দুজনেই ভালো আছি ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সবজান্তা এর ছবি

হিমু ভাই আপনার কাহিনী দেখি পুরা আমার আত্নজীবনী,মানে চশমা সংক্রান্ত ব্যাপারে।

আমার চশমার শুরু আরেকটু বড় হয়ে, ক্লাস সিক্সে। ধরা পড়ল একি ভাবে, টিভি দেখতাম সামনের থেকে। আর মজার ব্যাপার, আমাকে যখন চশমা দিলো , আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম।

আমাকে ডাক্তার বলেছিলেন, যত বয়েস বাড়বে ততোই পাওয়ার বাড়বে। ২০-২১ বছর বয়েসে যেয়ে থিতু হবে। এই বয়েসে যেতে যেতে আমার চোখের পাওয়ার এখন -৪.০০

চশমা নিয়ে তো দুঃখের শেষ নাই। সবচেয়ে বড় দুঃখ। স্কুলের পড়ি তখন , ৯ বা ১০। একদিন বৃষ্টির মধ্যে বন্ধুরা ভিজতে ভিজতে হাটছি। আমার চোখ তখন যথারীতি শীতের সকালের মত কুয়াশাচ্ছন্ন।এর ই মধ্যে কিছুটা দূর দিয়ে সেই মেয়ে রিকশাতে গেলো, যাকে দেখলে ঐ বয়েসে আমরা সবাই ২ টা করে বীট মিস করতাম। বলা বাহুল্য, সবাই দেখলো আর আমি ভ্যাবলার মত ডেসপারেট ভঙ্গিতে কাচ মুছে দেখার চেষ্টা করলাম। কিসের কি মন খারাপ

ওই দুঃখের কথা আমি এখনো ভুলতে পারি না:(
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আমার একদম 20-20. চেহারায় ভাব গম্ভীর বাড়ানোর লেগা ভাবছি জিরো পাওয়ার নিমু, কিন্তু এখনও ঐ ভাবনা পযন্তই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তিনবছর পরে যখন দেশে ফিরার মাস ছয়েক পর রশীদ হায়দারের কাছে গেছি। আমারে দেইখাই ঝাড়ি। বলাই বাহূল্য এর মধ্যে আমার অনেকদিনের শখ পূরণ করতে গিয়া বিমানে বইসা চশমাটা হাতে নিয়া দুমরাইয়া ভাঙছি।

এইবারে নেওয়া চশমাটা কই হারাইছি মনে নাই। বছর খানেক এইখানে থাকার পর দেখি কাহিনী খারাপ। কিচ্ছু দেহিনা, সব ঝাপসা।
দেশ থাইকা এক ফেরেন্ড আসার সময় কেমনে কেমনে জানি সঠিক মাপের গোটা দুই চশমা নিয়া আসলো। এইযাত্রা বুঝি আন্ধা হৈতে হৈতেও বাঁইচা গেলাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নিঘাত তিথি এর ছবি

বাহ, এই পোস্টে দেখি সবাই পোস্ট আকারের মন্তব্য করেছে। যার যার চশমা বৃত্তান্ত উঠে এসে একেকটা মন্তব্য আলাদা করে একেকটা পোস্ট হয়ে উঠেছে। হাসি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমি আরেকটু যোগ করি। আমার চশমার পাওয়ার সেই ১৭ বছর ধরেই মাইনাস পয়েন্ট ফাইভ।

ফারুক হাসান এর ছবি

চশমা নিয়ে এত ব্যাপার!
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আমার চশমা-পরা এক বন্ধুকে আমি ডাকতাম 'চশমখোর' বলে দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রাগিব এর ছবি

বুয়েটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে আমাদের ব্যাচের অধিকাংশ পোলাপানেরই চশমা ছিলো। ৪৫ জনের মধ্যে যেই দুই তিন জনের চশমা ছিলো না, তাদের মধ্যে এই দূর্ভাগাও ছিলো। আজও আমার চশমা লাগে নাই চোখে, কিন্তু আমার এই পেশায় কর্মরত অধিকাংশ মানুষেরই বেশ মোটা টাইপের চশমা অবধারিত।

যাদের চশমা নাই, তাদেরকে অ-আঁতেল, নন-সিরিয়াস, এরকম অপবাদ শুনতে হয় আড়ালে আবডালে ...। বুয়েটে তো চশমা নাই, কিন্তু ভালো ছাত্র - এরকম দেখলে মানুষে রীতিমত সন্দেহ প্রকাশ করতো, আসলে ব্যাটার রেজাল্ট কী রকম। মাঝে মাঝে ভাবতাম, অন্তত কিছুটা গম্ভীর ভাব আনার জন্য হলেও কি জিরো পাওয়ারের কিছু লাগাবো কি না।

তবে আমি বেজায় সুখে আছি এখন পর্যন্ত। চোখের উপরে কিছু একটা লেগে আছে, সেটা ভাবতেই পারি না। "চল্লিশ পেরোলেই চালসে", এটাই এখন পর্যন্ত চিন্তা ...

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

ফ্রুলিক্স এর ছবি

একটা চশমা দিয়ে পুরো ৫বছর জার্মানি। লাক খুব বেশি ফেবার করছে। যদিও মাঝে মাঝে ভয় হতো যদি কোন এক্সিডেন্টে ভেঙ্গে যায় তখন কানা। কোন ব্যাকআপ নেই।

কক্সবাজারের সমুদ্রের ঢেউয়ের মধ্যেও চোখ থেকে চশমা পড়েনি।ঘন্টার পর ঘন্টা লাফালাফি করেছি। কিন্তু এইবার প্রথম ঢেউয়ের আঘাতেই চশমা হারায়িত এবং আমি সপ্তাহের মতো কানায়িত। ডাক্তার দেখিয়ে ২জোড়া চশমা বানিয়ে নিয়ে এসেছি কিন্ত আগেরটার মতো এতো ভালো দেখা যায় না। এখন আবার এখানকার ডাক্তারের শরনাপন্ন।

আমি যতোটুকু জানি এখানে হেল্থ ইনস্যুরেন্স চশমা কাভার করে। তবে ২০ ইউরোর মতো দিতে হয় (একবার বানানোর অভিক্ষতা)।তবে গ্লাসের গেরান্টি থাকে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।