যব ছোড় চলে ঢাকা নগরী

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ৩০/০৮/২০০৮ - ৫:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শতরঞ্জ কি খিলাড়িতে লখনৌ এর নওয়াব ওয়াজির আলি শাহ বৃটিশ দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে লখনৌ পরিত্যাগ করেছিলেন। কথিত আছে, কবি ও সুরকার, গায়ক ও ভাবুক নওয়াব সেদিন একটি গীত রচনা করেন, যব ছোড় চলে লখনৌ নগরী, তব হাল আদম পর কেয়া গুজরি? মানুষ যখন লখনৌ শহর পরিত্যাগ করে চলে যায়, তখন তার অবস্থা কী দাঁড়ায়?

ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথাটা বলা যায় ঢাকা সম্পর্কেও। ঢাকা ছেড়ে মানুষ যখন চলে যায়, তখন তার অবস্থা কেমন দাঁড়ায়?

বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত সুযোগসুবিধা প্রায় একপেশেভাবে ঢাকাকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে। ঢাকার বাইরে থাকা মানে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া। আর কোন নগরীই, এমন কি এককালের সবচেয়ে পরিকল্পিত আর পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রামও এখন আর ঢাকার মতো নেই। আমরা বাড়ছি রাজধানীকে ঘিরে, রাজধানীর সীমাটুকু অতিক্রম করলেই এক অচেনা, অনুন্নত বাংলাদেশ ঘিরে ধরছে আমাদের।

ঢাকা নাকি এককালে ওপর থেকে একটা বাগানের মতো দেখাতো। কথাটা যার কাছ থেকে শুনেছি, তাঁর পিতা নাকি পাকিস্তান আমলে কীটনাশকবাহী বিমানের বৈমানিক ছিলেন। হয়তো সত্যিই তেমন হবে। আমি গোটা ঢাকা শহর উঁচু সব ইমারতের ওপর থেকে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বেশির ভাগ এলাকাতেই দৃশ্যটি অতি কুৎসিত। প্ল্যানার্স টাওয়ারের ওপর থেকে কেউ উত্তরপশ্চিম দিকে তাকালে অসুস্থ বোধ করতে পারেন। ঘিঞ্জি ধূসর কংক্রীটের এক একটা বিল্ডিং, যতদূরে চোখ যায়।

ঢাকার মূল সমস্যা দু'টি, এর অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও সামান্য রাস্তাঘাট। যত সহজে একটা শহরে লোক বাড়ে, সেই বাড়তি লোকের জন্যে আবাসন তৈরি হয়, তত সহজে তার রাস্তাঘাট বাড়ে না। ফলে ঢাকায় এখন তেরো মিলিয়ন মানুষ বাস করেন, এবং তাঁরা সেই আঠারো বছর আগে শেষ রাস্তা নির্মাণের কাজটি দেখেছেন পান্থপথে। এখন শুনছি বিজয়সরণীকে তেজগাঁওয়ের কোলে তুলে দেয়ার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ঢাকাবাসী এতে নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন।

কিন্তু তারপরও ঢাকার হৃতরূপ ফিরে আসা এত সহজ নয়। যাঁরা সকালে গুলশান এলাকায় শহরের দক্ষিণপশ্চিমাংশ থেকে অফিস করতে যান, তাঁরা জানেন, সেটি কী বীভৎস একটি অভিজ্ঞতা। রাস্তাভর্তি জ্যাম, বাহন পাওয়া মুশকিল, জঘন্য শোরগোল আর ধোঁয়া। আমি বেড়ে উঠেছি ঢাকার বাইরে, যখন অফিসে যেতাম, মনে পড়ে যেতো, আমি আর আমার বাল্যবন্ধু কিভাবে রিকশায় চড়ে আমার শৈশবের নিরিবিলি ছায়াছন্ন অপূর্ব সেই শহরের রাস্তা ধরে স্কুলে যেতাম। চোখ ফেটে পানি আসতো। স্মৃতিকাতর হয়ে নয়, ধোঁয়ায়। একটি কথাই মনের মধ্যে ঘুরেফিরে অনুচ্চারিত থেকে ... বালের জ্যাম!

ঘুরেফিরে কেবল যানচলাচলব্যবস্থারই নিন্দা করছি। তার সাথে যোগ করুন বাতাসের অবস্থা। ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় ফেরার সময় একটা পর্যায়ে এসে ফুসফুস পরিষ্কার টের পায়, সে ঢাকায় ঢুকছে। আমি ঢাকার বাইরে যতবারই গিয়েছি, বাতাসের গুণের এই পার্থক্যটি একেবারে রগে রগে উপলব্ধি করেছি।

যোগ করুন খেলার মাঠের অভাব। ঢাকায় মাঠ বড় কম। বাচ্চারা খেলবে কোথায়? রাস্তায়, অবশ্যই। নয়তো ঘরে খেলবে। নয়তো ছাদে। হায়রে। বড় হয়েছি বিশাল সব মাঠে খেলে খেলে। আমার এক বন্ধুর একটা নিজস্ব ক্রিকেট মাঠই ছিলো (সেটিও ২০০২ সালে গিয়ে দেখেছি, অর্ধেক গায়েব হয়ে গেছে)। স্কুলের পাশে ছিলো বিশাল মাঠ, বাড়ির পেছনে ছিলো বিশাল মাঠ। ঢাকায় হাতেগোণা কয়েকটি মাঠ, সেগুলিতেও শিশুদের অ্যাকসেস সামান্য।

এবার ভাবুন, ঢাকায় আছেটা কী। ঢাকায় আসলে সবই পাওয়া যায়। লোডশেডিং নিয়ে ফোঁপাচ্ছেন? ঢাকার বাইরে যান। কেঁদে কূল পাবেন না। পানি? গ্যাস? স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল? লাইব্রেরি? সিনেমা হল? বিদেশী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র? দূতাবাস? সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদরদপ্তর? ভালো ব্যাঙ্কিং সুবিধা? ভালো শপিং মল? সবই আছে ঢাকায়। শুধু একটু শ্বাস ফেলে নড়েচড়ে বাঁচার সমস্যা।

আসুন এবার ভাবি, আমরা ঢাকা ছেড়ে চলে যাবো অন্য কোথাও। বাংলাদেশের অন্য কোন শহরে। কোন নিরিবিলি, মৃদু শহর, যেখানে রাধাচূড়া গাছ আছে, যে গাছে লেজঝোলা পাখি বসে, যেখানে বাড়ির পাশের পুকুরে চালতা পড়লে ঝুপুস করে শব্দ শোনা যায় অপরাহ্নে। যেখানে আপনি নিশ্চিন্তে সাইকেলে চড়ে চলতে ফিরতে পারেন, যেখানে চকিতহরিণপ্রেক্ষণা তন্বী তরুণীরা আপনার জুলজুলে চোখের চাহনির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে একটু জলদি করে পথ পাড়ি দেয় ... হেঁ হেঁ হেঁ, যাই হোক, যা বলছিলাম। ধরে নিই আমাদের সেই কাল্পনিক শহরের নাম ঝোলপাতিয়া। এখন বলুন, কী কী নাগরিক সুবিধা পেলে ঢাকা ছেড়ে ঝোলপাতিয়ায় বসবাস শুরু করবেন? হাল আপ পর কেয়া গুজরে?


মন্তব্য

মাল্যবান এর ছবি

আকাশছোঁয়া বটলপাম গাছ ঘেরা একটি বাগানের মধ্যে ছোট্ট একটি সাদা দালান। সেটি একটি লাইব্রেরী। সেখানে দুপুরবেলায় বসে বসে পুরোন সব বই দেখতে, পড়তে চাই।
আর ব্যালকনি থেকে দেখতে চাই আকাশ কালো করে আসা কালবোশেখীর মেঘ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য এই দুদেশে বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি-বাংলাদেশে যেমন গ্রাম থেকে মফস্বলে, মফস্বল থেকে জেলা শহরে, জেলা শহর থেকে রাজধানীতে ভিড় করার প্রবনতা এখানে তার উলটো । এই উলটো প্রবনতার কারন যতোটুকু বুঝতে পেরেছি- এ দেশে মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক যে বিষয়গুলো সেগুলো সবচেয়ে রিমোট এলাকাতে ও এভেইলেবল ।
যে কোন জায়গায় বসতের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমি দেখবো হাসপাতাল আছে কিনা? দোকান পাট আছে কিনা? ব্যাংকিং সুবিধা আছে কিনা? যোগাযোগ ব্যবস্থার অবস্থা কি? অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে কিনা?
একটা হাসপাতাল, প্রধান ব্যাংকগুলোর শাখা,দু একটা সুপার মার্কেট, একটা লাইব্রেরী, রুটিরুজির ন্যুনতম সুযোগ যেমন লন্ডন নগরীতে আছে ঠিক তেমনি স্কটল্যান্ডের গন্ডগ্রামে ও আছে । সুতরাং আমার জন্য একটু নিরিবিলি এবং অনেক সাশ্রয়ী জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব ।
আরেকটা বিষয় খেয়াল করছি- তুলনামুলক ভাবে ব্যায়বহুল সাউথ ছেড়ে নর্থের দিক মানুষজন এসে বসত গড়ছে হুটহাট । এটা একটা কমন প্র্যাক্টিস । সাউথের একটা ফ্ল্যাট বিক্রী করে নর্থে বাংলো কেনা যাচ্ছে । সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়া জটিল নয় যেহেতু মৌলিক অবকাঠামো সবখানেই আছে ।
সিলেট শহরে আমার একটু জমি আছে । এর যে বাজার মুল্য তা বিক্রী করে রংপুরে আমি খামার বাড়ি করতে পারি কিন্তু বাংলাদেশে তা করা সহজ নয় বরং এর চেয়ে বাস্তবসম্মত হলো সিলেটের জমি বিক্রী করে ঢাকায় ফ্ল্যাট বন্দী হওয়া ।

কিন্তু এই পরিবর্তন খুব জরুরী ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ইফতেখার এর ছবি

চকিতহরিণপ্রেক্ষণা তন্বী তরুণীরা
এইটা খুব জরুরী মনে হচ্ছে।
আসল সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যা, সেটা সবখানেই।

রাফি এর ছবি

ঢাকা শহরের সবচেয়ে বিশ্রী ব্যাপার হচ্ছে একজন হয়ত উত্তরা থাকেন; কিন্তু তার কর্মস্থল হচ্ছে মতিঝিল। অন্যদিকে যিনি মহাখালী কাজ করেন তিনি প্রতিদিন আরামবাগ থেকে যাতায়াত করেন। এই syncronization টা একটা পরিকল্পিত নগরের জন্য জরুরী বলে আমার মনে হয়। বিশেষত আমাদের মত দেশে যেখানে এই অসুবিধা কাটিয়ে উঠার মত বিনিয়োগ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অবকাঠামো বিস্তৃত না করে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য খুব জরুরী।

আর আমার স্বপ্নের শহরে প্রধান পরিবহন হবে বাস। ৫০০ মি. এর কম দূরত্বের জন্য হন্টন। প্রধান সড়কে অফিস বা স্কুলটাইমে কোন প্রাইভেট vehicle থাকবে না। শুধু ছাত্র-ছাত্রীরা নিজস্ব সাইকেল ব্যবহার করতে পারবে।
আবাসিক এলাকাগুলো হবে আক্ষরিক অর্থেই ছায়াঢাকা, পাখিডাকা।
লোডশেডিং এর সময়টা আগে থেকেই জানা থাকবে; রাস্তায় থাকবে না কোন আবর্জনা।
এরকম আরো অনেক কিছু।
স্বপ্নের কি আর শেষ আছে ভাই???

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

আমাদের নাগরিক সমস্যার প্রধান কারন গোড়া থেকেই কোন পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে উঠেছে আমাদের শহরগুলো। এটাকে কোন নগর হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি কখনো। আজকের যা শহর তার অতীত পরিচিতি হলো কোন একটা গঞ্জ কিংবা হাট বাজার। সময়ের বিবর্তনে শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ফলে একটা শহর কেমন হওয়া উচিত, তার বিন্দুমাত্র ছোয়া নেই। আমাদের প্রধান দুটি শহর ঢাকা এবং চট্টগ্রামের দিকে তাকালে বোঝা যায় আমরা কত বেশী দরিদ্র এমনকি আমাদের সমান দরিদ্র দেশগুলোর চেয়েও।

সৌরভ এর ছবি

পোস্টে উত্তম জাঝা।
আমি পুরোপুরি মফস্বলে বড় হয়েছি। আঠারো পর্যন্ত পঞ্চগড়, রংপুর, রাজশাহী। তারপর খুব সামান্য সময়, আট মাসের মতোন ঢাকায় ছিলাম। ভার্সিটির ক্যাম্পাসের ঘেরাটোপে থাকতাম। তবুও খুব খুব খারাপ লাগতো সেইসময়টুকু। মানুষের আধিক্যতায়। শুদ্ধ বাতাসের স্বল্পতায়। মানুষের অহেতুক ব্যস্ততায়। শরীর ভেঙে পড়েছিলো কয়েকবার, টাইফয়েড, পেটের সমস্যা হাবিজাবি লেগেই থাকতো সেই অল্প সময়েই।

তারপর সময়ের ফেরে দেশ ছেড়ে চলে এসেছি বছর সাতেক হলো। এখন আমার বন্ধুরা, যারা মফস্বলে আমার সাথে বড় হয়েছে, তারা ঢাকায় থাকে। তাদের ঢাকা থেকে বেরুবার কোন সম্ভাবনা আমি দেখি না।
মাঝে মাঝে ভাবি, আমি যদি এই মুহূর্তে দেশে চলে যাই, তাহলে কোথায় থাকবো? মফস্বলে ফিরে গিয়ে বেঁচে থাকবার মতোন পেশা খুঁজে পাবার উপায় নেই।
তাহলে কি গন্তব্য ঢাকা?

--
মোরশেদ ভাই যেটা বলছিলেন, সুযোগের সম-বন্টন, সেইটা ১০০ ভাগ বাস্তবে তৈরি করা অসম্ভব। ধরলাম, জীবনযাপনের সুবিধাগুলো তৈরি করা হলো। সাংস্কৃতিক আর বাণিজ্য কেন্দ্র আপনি তৈরি করতে পারবেন না। তৈরি করে ফেললে, ধীরে ধীরে আরেকটা ঢাকা তৈরি হয়ে যাবে।

আপনি একটা প্রজন্ম থাকা শুরু করলেন। কিন্তু, দেখা যাবে, আপনার বাচ্চারা, পরের প্রজন্ম ঠিকই ঢাকা র দিকে দৌড়ুনো শুরু করবে।

জাপানে মোটামুটি সব জায়গায় সব সুবিধা প্রস্তুত, লাইফলাইন বলেন আর আনুসঙ্গিক সুবিধা বলেন। অথচ, মফস্বলের দিকে লোক কমে যাচ্ছে, ট্যাক্স সংগ্রহ কমে গিয়ে স্হানীয় প্রশাসন দেউলিয়া হয়ে গেছে - এরকম নজির আছে কয়েকটা। তরুণ প্রজন্মের সবাই টোকিও কিংবা বড়সড় আর দুটো-একটা শহরের দিকে ছুটে আসছে।

--
ঝোলপাতিয়ায় আমি কী চাই?
খুব স্বাভাবিক লাইফলাইন সুবিধা - গ্যাস, পানি, বিদ্যুত, ব্যাংক, বাজার-ঘাট থাকলেই হবে। সবার আগে চাই ঝোলপাতিয়া থেকে ঢাকার যোগাযোগ। ট্রেন হলে ভালো হয়।

ঝোলপাতিয়ায় যেটা চাই না, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র। তাহলে ঝোলপাতিয়ায় অভিযোজিত মানুষ সেইভাবে বাড়বে না। পাখি, মৃদুমন্দ বাতাস, লাস্যময়ী তরুণীর হাসি, সবুজ ঘাস - বাকিসব এমনিতেই জুটে যাবে।

আমি ঢাকায় থাকতে চাই না, কিন্তু যোগাযোগ যদি ভালো হয়, ঘন্টা দুয়েকের ভ্রমণে যদি ঢাকায় এসে পৌঁছুনো যায়, তাহলে পেশার জন্যে প্রতিদিন ঢাকায় আসতে রাজি আছি।
মানে, কাজ করবো ঢাকায় বা অন্যকোন বাণিজ্যিক কেন্দ্রে, কিন্তু দিনশেষে ফিরে যাবো ঝোলপাতিয়ায়।

বি.দ্র. মূল পোস্টের আলোচনা বেলাইনে চলে গেলে ক্ষমা চাই


২৭. বেহেস্ত যাওনের খায়েশ হগ্গলের, আপত্তি শুধু মরনে


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ঝোলপাতিয়া তো এখন থেকে আমার স্বপ্নের শহর হয়ে গেল! হাসি

কি সুবিধা পেতে চাই? তেমন কিছু না। শুধু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ আর পরিবেশ। চাহিদা এর থেকে বেশি কিছু নয়। সেখানে যেন অফিসে যেতে হলে আমাকে এক/দেড় ঘন্টা জ্যামে বসে থাকতে না হয়, সেখানে যেন একটু পরপর বিদ্যুৎ চলে না যায়, সেখানে যেন রাস্তায় বের হয়ে যানবাহনের সমস্যায় না পড়তে হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় বা শখের কোন কিছু কিনতে যেন ছুটতে না হয় মাইল মাইল দূরের অন্য কোনখানে।

সেখানে থাকা চাই একটা লাইব্রেরি, একটা খেলার মাঠ, একটা পার্ক। আরো চাই একটা ভালো সিনেমা হল, একটা ভালো রেস্তোরা।

আসলে চাহিদার তো ভাই শেষ নেই। অবচেতনভাবেই হয়তো ঝোলপাতিয়াকে আরেকটা "ঢাকা" বানিয়ে ফেলতে চাইছি। হঠাৎই তাই অনুভব করছি সমস্যার মূল কতটা গভীরে!

বাই দা ওয়ে, পরে কিন্তু জানতে চাই ঝোলপাতিয়া-তে আপনি কি কি সুবিধা দেবার প্ল্যান করছেন চোখ টিপি
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

দৃশা এর ছবি

দশ বছর আগেও চট্টগ্রাম শহর যেমন ছিল এবং যা যা নিয়ে ছিল ঝোলপাতিয়াকে আমি ঠিক তেমনটা দেখতে চাই -না এর থেকে কম না এর থেকে বেশী। সবুজে ঘেরা ছিমছাম ছোট্ট শহর যেখানে যানজটের দৃশ্য নাই,জায়গায় জায়গায় দোকানপাটের আধিক্য নাই, যেখানে রাস্তাগুলোতে রিক্সা করে চড়ে বেড়ালেও মনে হবে রাজার রথে চলছি,যেখানে চোখ যাবে পাহাড় আর সবুযে চোখ জুড়াবে।
-------------------------------

দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অনেক সময় স্বপ্ন আমাদের বাঁচিয়ে রাখে বিরূপ পরিবেশেও।
হয়তো কোনো এক সময় আমাদের গ্রামাঞ্চলেও মিলবে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা। হয়তো আমরা তখন থাকবো না। কিন্তু আমাদের কোন প্রজন্ম সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো পাবে তা-ই অনিশ্চিত।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

বাংলাদেশে আমার লাস্ট চয়েস ঢাকা। গেলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। ফার্স্ট চয়েস সিলেট আর চাটগাঁ!
-------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

রণদীপম বসু এর ছবি

জীবনভর মফস্বলে বাস। চাকরী সুবাদে গত দুবছর ঢাকা বাস। ঢাকা এসেই প্রথম অভিজ্ঞতা, তিয়াস পেয়েছে, যে কোন হোটেলে ঢুকে এক গ্লাস পানি তো ঘোৎঘোৎ করে পেটে ঢুকাইনি, ঢুকিয়েছি বিষাক্ত তরল। তা আপনি ফিল্টার থেকেই নেন না কেন।
আকাশ গুড়ুম গুড়ুম করলো ? বৃষ্টির দরকার নেই। সুয়ারেজের সব নর্দমা নাচতে নাচতে রাস্তার উপরে এক হাঁটু।
বিদ্যুৎ ? সেই রসিকের মন্তব্যটাই এখনো সেরা। তিনি তো যান না, মাঝে মাঝে আসেন মাত্র।
বিদ্যুৎ নাই মানে বাসায় সাপ্লাই বন্ধ, কারবালা।
ঘুমুতে যাচ্ছেন ? বাড়িওয়ালার স্লীপ কাজের বুয়ার মাধ্যমে, আগামী মাস থেকে ভাড়া ...এত করে, নইলে অন্য বাসা দেখতে পারেন।

বাচ্চা পর্যন্ত আর গেলাম না। এ যুগের শিশু মানে জেলখানায় বেড়ে ওঠা এক যান্ত্রিক সত্তা। আগামী পৃথিবীর ভয়ঙ্কর প্রতিনিধি তৈরি করছি আমরা হাতে ধরে। একটা পুরোপুরি যান্ত্রিক সভ্যতার বীজ বপন করছি আমরা, যদি সে পর্যন্ত আমাদের ঢাকা শহরটা মানুষের বসবাস উপযোগী থাকে। তবে সে পর্যন্ত এই নগর বাসযোগ্য থাকে। তার আগেই আশঙ্কা করছি ঢাকা বাসের অযোগ্য একটি পরিত্যক্ত নগরী হয়ে যাবে। অতএব, আমাদের জন্য একটি ‌'ঝোলপাতিয়া' শুধু দরকারই নয়, অতিআবশ্যক।
হাসান মোরশেদের সূত্র ধরে @ চট্টগ্রাম তো গেছেই, সিলেটও ইটপাথরের জঙ্গল হয়ে যাচ্ছে।
ওখানে এখন আর আমার ভালো লাগে না। আমার নিজের এককালের নিরিবিলি শহর সুনামগঞ্জই যে ভয়াবহভাবে বদলে যাচ্ছে মনে হয় নিজ গৃহেই একে একে পরবাসী হয়ে যাচ্ছি আমরা।
তাহলে কোথায় যাবো ? কোথায় যাবো ?? কোথায় যাবো ???

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এনকিদু এর ছবি


চট্টগ্রামের ট্রাফিক জ্যাম এখন মারাত্নক, আক্ষরিক অর্থেই । গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে গিয়ে আমার এটাই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে ।


আজকাল বাচ্চারা খেলার মাঠ পায়না । অন্ততঃ সব বাচ্চারা না । হিমু ভাই ভাল একটা প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন । আমি কয়েক বছর আগে একটা অষ্টম শ্রেনী পড়ুয়া মেয়েকে পড়াতাম । প্রতিদিন বিকালে ওদের বাড়ি যেতে হত । ওর জন্য আমার খারাপ লাগত, কারন আমি নিজে শৈশবে আর কৈশরে বিকালে প্রায় কোনদিনই ঘরে বসে থাকতে হয়নি । গৃহ শিক্ষকের কাছে বসে বিকালে লেখাপড়া করা তো দূরের কথা । একদিন এই প্রসঙ্গে ছাত্রীর মায়ের সাথে কথা বলছিলাম । তিনি বললেন, "ব্যাপারটা আমিও বুঝি । কিন্তু বিকালে যাবে কোথায় ? তার চেয়ে লেখাপড়াই করুক ।" বাবা-মায়েরাও বুঝে ফেলেছেন বিকালে ছেলে-মেয়েদের করার যাওয়ার জায়গা ঢাকা শহরে নেই । তার চেয়ে শিক্ষা যন্ত্রে আরো কিছুক্ষন মস্তক-পিষ্ট করা গেলে আখেরে হয়ত লাভই হবে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।