কাজী সৈয়দ আজিজুল হক নামে এক বাঙালি পুলিশ অফিসার বৃটিশ শাসনামলে করাঙ্ক শ্রেণীবিন্যাস (ফিঙ্গারপ্রিন্ট ক্লাসিফিকেশন) পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে একে সহজতর করে তোলেন এবং এর সাহায্যে অপরাধী শনাক্তকরণের কাজটির জটিলতা [১] বহুগুণে কমিয়ে আনেন । এর এক শতাব্দী পর বাংলাদেশের পুলিশ সম্পর্কে খবর এসেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসপাতালের ফরেনসিক রিপোর্টের ভাষা বোঝেন না [২]।
মৃতদেহের প্রকৃতির ওপর তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি সুরতহাল (রূপাবস্থা) রিপোর্ট করেন। মৃতদেহ কোথায় কী অবস্থায় পাওয়া গেছে, মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন আছে কি না, থাকলে তা কেমন, পরিধেয় কী ছিলো, ইত্যাদি অনেক বর্ণনা তারা লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু মৃত্যু পরবর্তী বিকৃতি সম্পর্কে তাদের যথাযথ জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ থাকে না বলে সেই সুরতহাল প্রতিবেদনের সাথে চিকিৎসকের পোস্ট মর্টেম প্রতিবেদনের গরমিল পাওয়া যায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে, সেটি আরো বিড়ম্বনাকর, পুলিশ সেই রিপোর্ট বোঝে না।
না বোঝার পেছনে কাজ করছে একটি অদ্ভুত অযোগাযোগ। সাব-ইনস্পেক্টরদের জন্যে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, আমি জানি না, কিন্তু তারা ফরেনসিক রিপোর্টে ব্যবহৃত জারগন বোঝেন না। এতে লজ্জার কিছু নেই, কারণ চিকিৎসার ভাষা বিশেষায়িত। মুশকিল হচ্ছে, সাব-ইন্সপেক্টররা সেই বিশেষ শব্দাবলী বোঝেন না, এবং ধারণা করা যায়, তারা ইংরেজিতে কাঁচা। ঘটনাক্রমে কিছু ঘটনায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত রায় পড়ার সুযোগ আমার ঘটেছে, সেখানে খোদ ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের বাংলা ভাষা নিয়ে মন্তব্য করে বিপদে না পড়াই ভালো, আর তদন্তকারী সাব-ইন্সপেক্টরের প্রতিবেদনের অবস্থা তথৈবচ। বাংলাতেই যদি এই হাল হয়, ইংরেজিতে যে খুব ভালো হবে না তা অনায়াসানুমেয়। সাব-ইন্সপেক্টরদের নানা খাটনির কাজে জড়িত থাকতে হয়, লেখাপড়ার ব্যাপারটায় তারা বেশি সময় দিতে পারেন বলে মনে হয়নি। পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট বেশ দীর্ঘ এবং নানা হাবিজাবি তথ্যে ভরপুর হয়, সেটা লিখতেও লম্বা সময় লাগার কথা। সেই রিপোর্টে আইনের ভাষাও যথোচিত পরিমাণে এস্তেমাল করতে হয়। এই অবস্থায় যদি তাদের ডাক্তারি এলেমও অর্জন করতে হয়, বেচারা সাব-ইন্সপেক্টররা আয়রোজগার করবে কখন?
একটি কাজের দায়িত্বে যখন দুই বা ততোধিক ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষ জড়িত থাকেন, তখন তাদের মধ্যে মিসকমিউনিকেশন হওয়া স্বাভাবিক। পুলিশের কাজে আইন ও চিকিৎসা, উভয় বিদ্যাই কমবেশি জড়িত। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (সাধারণত উপপরিদর্শক) এই দুই বিষয়ে কিছু না কিছু জানতে হয়। কিন্তু পুলিশের উপপরিদর্শক পদটির মর্যাদা বিচার করলে দেখা যায়, এই পদে উচ্চশিক্ষিত লোক (যারা স্বল্প আয়াসে আইন ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় প্যাচঘোচ হেফজ করতে পারবেন) সাধারণত যোগদান করবেন না। আমাদের দেশে আইন ও চিকিৎসা, উভয় বিদ্যা শুদ্ধরূপে বলিতে-পড়িতে-লিখিতে গেলে ইংরেজি জানা অবশ্যকর্তব্য। সমাধানটা তাহলে কোথায়?
রাতারাতি আমাদের উপপরিদর্শকদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলা যাবে না। ফরেনসিক রিপোর্টের ডিটেল ফুলপ্যান্ট ছেঁটে উপপরিদর্শকের মাপে হাফপ্যান্ট বানানোও অনুচিত হবে, তাতে ফরেনসিক পরীক্ষাটিকে পঙ্গু করা হবে কেবল। পুলিশ বিভাগ উপপরিদর্শকের প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে চায়, কিন্তু সেটি করে কতটুকু ফল আসবে, সে প্রশ্ন সামনে আসতে বাধ্য। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ইংরেজি জ্ঞানের অভাবে ফরেনসিক রিপোর্টের সব কিছু ডিঙিয়ে নাকি শুধু শেষটা দেখেন, হত্যা নাকি আত্মহত্যা ইত্যাদি। তাদের এই কর্মসংস্কৃতি দূর করা খুব কঠিন।
প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমাকে বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষের সাথে কাজ করতে হয়েছে, এবং তাদের দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নিতে হয়েছে। ইংরেজি বোঝে না এমন টেকনিশিয়ানের জন্যে আমাকে বাংলায় ফর্ম বানিয়ে দিতে হয়েছে রিপোর্ট লেখার জন্যে, এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেগুলো ছিলো টেইলরমেড, একেক জনের জন্যে একেক রকম। আমাদের দেশে যে লোকটা দৈহিক শ্রমঘন কাজ করে, তার জন্যে কাগুজে কাজ প্রায়শই কঠিন। এই কঠিন কাজটায় সে হয় ফাঁকি দেয়, নয়তো মনোযোগ দেয় না। এই কারণে তার জন্যে সবচেয়ে সহজ, এমন একটা ফর্ম ডিজাইন করাই শ্রেয় সাময়িক সমাধান।
পুলিশের উপপরিদর্শকের কাজ সহজ করে তার দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে পুলিশ বিভাগ যা করতে পারে, তা হচ্ছে তার সুরতহাল রিপোর্টে জন্যে একটি ফর্ম তৈরি করে দেয়া। এই ডিজিটাল ক্যামেরার যুগে যেখানে প্রতিদিন পোলাপান কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাঙের ছবি তুলে ফেসবুকে আপ করে লোকজনকে ট্যাগিয়ে অস্থির, সেখানে কেন পুলিশের কাছে একটা সবচেয়ে বেসিক ডিজিটাল ক্যামেরা থাকবে না, আর কেন সুরতহালের এক হাজার শব্দের পরিবর্তে একটি ছবি ব্যবহার করা হবে না, সেটিই আশ্চর্য প্রশ্ন। একটা সাধারণ এনজিনিয়ারিং ইনস্টলেশনের আগে-পরেই যেখানে কয়েকশ ছবি তোলা হয়, মৃত্যু বা হত্যকাণ্ডের পর কেন তোলা হবে না? সুরতহালের জন্যে যদি একটি ফর্ম পুলিশকে তৈরি করে দেয়া হয়, যেখানে তাকে শুধু টিক/ক্রস দাগাতে হবে, তাহলেই তার কাজ সহজ হয়ে যায়। পুলিশকে প্রচুর পেপারওয়ার্কস করতে হয়, এবং তার অনেক কিছুই একঘেয়ে ও পুনরাবৃত্তিপ্রবণ, একটা সঠিকভাবে প্রণীত তথ্যবহুল ফর্ম তাকে দেয়া হলে, এবং সেটার ওপর সংক্ষিপ্ত একটা প্রশিক্ষণ দিলে সুরতহাল প্রতিবেদন সঠিক হওয়া সম্ভাবনা বাড়ে, তদন্ত এনজিনিয়ারিঙের সুযোগও কমে।
একই সাথে ফরেনসিক রিপোর্টটিকেও একটি ফর্মের চেহারা দেয়া সম্ভব। সেটি দ্বিভাষিক হলে চিকিৎসক ও পুলিশ, উভয়ের জন্যে কাজ সহজ হয়। চিকিৎসক তাঁর অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী ইংরেজি অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে যাবেন, যার পাশেই ব্র্যাকেটে বাংলায় লেখা থাকবে, ঐ বস্তুটি আসলে কী। এতে করে টার্মগুলো শেখার কাজটিও তারা দীর্ঘ সময় ধরে চর্চা করতে পারবেন, যা স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণে সম্ভব নয়। স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার ইত্যাদি শব্দ এবং দুয়েকটি গল্প শেখানো সম্ভব, কিন্তু আস্ত ফরেনসিক বিজ্ঞানের দাঁতভাঙা সব বিশেষায়িত শব্দ শেখানো বেশ কঠিন।
পুলিশ বিভাগ চাইলে এক ধাপ এগিয়ে আরো একটি কাজ করতে পারে, একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে এই সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে সমন্বয় করতে পারে। তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শনে গিয়ে সুরতহালের ফর্ম ফিল আপ করবেন, ছবি তুলবেন, আরো যা যা করণীয় করবেন, তারপর থানায় ফিরে এসে লগ অন করবেন পুলিশের ওয়েবসাইটে। সেখানে তিনি সুরতহাল প্রতিবেদনের অনলাইন ফর্মটিতে তারপর মাউসের কয়েক ক্লিকে সেই রিপোর্ট জমা করে দেবেন পুলিশের কেন্দ্রীয় তথ্য গোলায়, ছবিসহ। একইভাবে ফরেনসিক চিকিৎসকও হাসপাতাল থেকে তার রিপোর্টটি পাঠিয়ে দেবেন পুলিশের কাছে। দুইজনের তথ্য সমন্বয় করে একটি রিপোর্ট চলে যাবে সেই থানার ফোল্ডারে, থানার ইনচার্জ সেখান থেকে তা ডাউনলোড করে বিস্তারিত দেখবেন। একই সাথে সেই রিপোর্টটি জনসমক্ষেও প্রকাশের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে [ছবি ছাড়া], তাতে করে স্বচ্ছতা আরো বাড়বে।
আমাদের পুলিশ আইন রয়ে গেছে বৃটিশ আমলে, পুলিশের আচরণও বৃটিশ আমলের পুলিশের মতো, কিন্তু বৃটিশ পুলিশের ব্যবস্থা আর উপকরণ কিন্তু এগিয়ে গেছে বহুদূর। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে গেছে অনেক, আমাদের ক্ষমতাবানেরা বৃটিশ আমল আঁকড়ে পড়ে আছেন। কারণ তাতেই ফায়দা। একটা ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্যে দরকার হয় আধুনিক কর্তার। আমরা সেই আধুনিক কর্তাদের ঠেকিয়ে দিয়েছি বৃটিশ আমলেই। সেই কারণেই আমরা কাজী সৈয়দ আজিজুল হককে নিয়ে গর্বিত হই, বর্তমান পুলিশকে নিয়ে নয়। গোটা ব্যবস্থাটাকে আরো স্বচ্ছ করে তোলার জন্যে শুধু পুলিশের সদিচ্ছাই যথেষ্ট নয়, আমাদের পক্ষ থেকেও চাপ থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র:
মন্তব্য
উত্তম প্রস্তাব। প্রাথমিক তথ্যসংগ্রহকারীর জন্য এটিই আসলে দরকার। সুরতহাল ও ফরেনসিক রিপোর্ট তথ্যগোলা থেকে ডাউনলোড করে থানার ইনচার্জ রিপোর্ট বানানোর কাজ করতে পারেন সময় নিয়ে এবং বিদ্যার বহর প্রয়োগ করে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জন্য টেইলরমেইড ফর্মের বিকল্প নেই।
উপপরিদর্শক কি শুধু প্রাথমিক তথ্যসংগ্রহকারী? নাকি তদন্তও করতে হবে তাদের? তদন্ত করতে হলে, আইন বা চিকিৎসা বিষয়ক এক্সপার্ট নিয়োগ করতে পারে পুলিশ কর্তৃপক্ষ যারা উপপরিদর্শকদের সব প্রশ্নের জবাব দেবে। এতে ব্যয় বাড়বে অবশ্য, কিন্তু সঠিক তদন্তের সম্ভাবনাও বাড়বে সাথে সাথে।
উপপরিদর্শক তদন্তকারী। সে ঘটনাস্থলে যায়, লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, লাশ উল্টেপাল্টে দেখে সুরতহাল রিপোর্ট করে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে থানার ইন চার্জ আদালতের জন্য একটা প্রতিবেদন লেখে (সাধারণত বদলেযাউবদলেদাউ ওরফে কনট্রোল সি কনট্রোল ভি)। আদালত রায় লেখার সময় ঘটনার বর্ণনায় সেই রিপোর্ট ব্যবহার করেন (আমি একটা রায় দেখেছি, সেখানেও বদলেযাউবদলেদাউ)।
সমস্যা হচ্ছে, কোনো কোনো কেসে তদন্তকারী কর্মকর্তা পাল্টে যেতে পারে। মনে করেন এসআই আবুল সুরতহাল রিপোর্ট করেছে, ডাক্তার কুদ্দুস ফরেনসিক রিপোর্ট লিখেছে। এরপর মনে করুন আইনের প্যাচঘোচে এক হাজার বছর কেটে গেলো। এসআই সোলায়মান সেই কেসের নতুন এন-তম তদন্তকারী নিযুক্ত হলো। ততদিনে আবুল বা কুদ্দুস ধরাধামে নেই, আছে শুধু সুরতহাল রিপোর্ট, ফরেনসিক রিপোর্ট এইসব। তাকে ঐসবের ভিত্তিতেই তদন্ত করতে হবে। এখন আবুলের সুরতহালে যদি ভুল থাকে, বা সোলায়মান যদি কুদ্দুসের ফরেনসিক রিপোর্ট না বোঝে, তাহলে তদন্তটি এতিমখানায় চলে যাবে।
একটা কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে তথ্যগুলো জমা হওয়ার সুবিধাটা অন্য জায়গায়। মনে করুন, আবুল সুরতহাল রিপোর্টে লিখেছে, শ্বাসরোধে হত্যা। ওদিকে ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা গেলো, বিষক্রিয়া। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটা এরর টিকেট চলে আসবে রিপোর্টের সাথে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিষক্রিয়ার ডাক্তারি পরিভাষা নাও বুঝতে পারেন। তারা যদি তদন্তের সময় সেসব স্কিপ করে কেবল শেষ রিমার্ক পড়েন, তাহলে দেখা যাবে তারা সেই শ্বাসরোধে হত্যার পেছনেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। স্বয়ংক্রিয় চেকব্যাকের ব্যবস্থা করা হলে জিনিসটা তৎক্ষণাৎ কেসের স্বাভাবিক আয়ুষ্কালের মধ্যে আমলে নেয়া যাবে, এসআইয়ের এসিআরে এই ধরনের ভুলভালকে মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা যাবে, সেইসাথে রিপোর্টটা সাধারণের করায়ত্বের মধ্যে থাকলে সাংবাদিকসহ আরো অনেকে পর্যালোচনা করে দেখতে পারবেন। শুধু তা-ই না, ফরেনসিক রিপোর্টটা একটা সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য সামারি (বাংলা) আকারে পাওয়া তখন সম্ভব হবে। এটা তদন্তের কাজ অনেক সহজ করে তুলবে।
খুব সিম্পল একটা ডেটাবেজ দিয়েই এটা করা সম্ভব। সিআইডিতে বহু ঘাগু পুলিশ আছে, বড় বড় ফরেনসিক চিকিৎসকদের সাথে বসে তারা একটা সুরতহাল ফর্ম আর ফরেনসিক রিপোর্ট ফর্ম তৈরি করে পুলিশ ডাক্তার সবার জীবন সহজতর করে তুলতে পারেন। আমাদের দেশে যেহেতু মাথাপিছু ডাক্তার আর পুলিশ কম, তাই তাদের ওপর চাপটা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে কমানো উচিত।
ধন্যবাদ হিমু, বিষয়টি চমৎকারভাবে সামনে নিয়ে আসার জন্য। আপনি জানেন কিনা, "ডিজিটাল" শব্দটি বাংলাদেশে এখন sarcastic । তাই সেন্ট্রাল ডেটাবেইজ তো অনেক পরের ব্যাপার, আমাদের পুলিশ বাহিনী যেকোন অপরাধের পরে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ দক্ষ কিনা সেটাই আমরা নিশ্চিত নই। অনেক কারন থাকতে পারে, তবে মূল কারন সম্ভবত ক্রাইম সিনে আঠার মাস পরে গিয়ে পৌছানো ! আমি যতটুকো জানি, একজন এসআইকে চাকরীতে যোগদানের পরপরই ট্রেনিং করতে পাঠানো হয় কোন পুলিশ একাডেমীতে। আমার এক বন্ধুর কাছে শোনা, সকাল বিকাল পিটি করা আর খিস্তি খেউরে নিজেকে আপটুডেট রাখাটাই মূলত কাজ। সাথে অবশ্য উইকের কোন কোন দিনে ক্রিমিনাল সাইকোলজী আর ইংলিশের উপরও ক্লাশ নেয় হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই ট্রেনিং পিরিয়ডে কিছু pseudo case সলভ করা বা আনসলভড/ক্রিটিকাল কেসকে সামনে নিয়ে এসে ঐসব ট্রেইনি অফিসারদের অন ফিল্ড একটা প্রোজেকশান দিলে ভাল হতে পারে। টেইলর মেড form ইউজার েফ্রন্ডলি হতে পারে কিন্তু তাতে ডেটা ম্যানিপুলেশনের রিস্কটা রয়ে যায়। আর সেক্ষেত্রে central database শুধু একটা বিরাট গারবেজ বিন ছাড়া কিছু হবে না। তাই আপনি শেষে যেটা উপসংহার টেনেছেন, সেটাই আসলে ইফেক্টিভলি কাজে আসবে। ডাক্তার আর পুলিশের মাঝে সমন্বয় যাতে এমন একটি form তৈরী করা সম্ভব হয় যেটা কিনা medical point/ explanation এর সাথে কোন কমপ্রোমাইজ না করেই পুলিশের জন্য সহজবোধ্য হবে।
ফর্ম ব্যাবহার না করলে আরোও বেশি থেকে যায়। এই বদলেযাউবদলেদাউ এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার এক্মাত্র উপায় হল অডিও-ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টকে ফর্মের উপাদানে পরিনত করে যুক্ত করা এবং টিক মারার ব্যাবস্থা করে মনের মাধুরী মেশানোর সুযোগ নূন্যতম পর্যায়ে আনা। আর এইখানে ফর্ম ডিজাইন মানেত আর প্রথমালুর তারকা জরীপ না, এই ধরনের ফর্ম আসে "সিস্টেম এনালিসিস" এর মাধ্যমে, সেটা পরিস্কার এইখানে
আবার ধরেন ডেটাবেজে একবার কোন ফর্ম আপ্লোড করে দিলে খুব সহজেই অডিট করা যায় পরে কে বা কাহারা উহার উপর নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ করিল, কখন করিল এবং কোন ডেটাতে করিল। এমন কি আগে কি ছিল, এখন কি হল সেটাও রেখে দেওয়া যায় যেটা কাগুজে ফিতাবন্দি ব্যাবস্থায় কোন দিন সম্ভব না।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হিমু ভাই, খুব সুন্দর লিখেছেন। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। পুলিশ বিষয়ক গঠনমুলক লেখা দূর্লভ, সেজন্য বিশেষ ধন্যবাদ। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনি পুলিশের কাজ-কর্ম সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে। কিন্তু আপনি জানেন কি-না জানিনা, এই যে সুরতহাল রিপোর্ট, তদন্ত রিপোর্ট, আরো অন্যান্য আনুষংঙ্গিক কাজে যে স্টেশনারীগুলো প্রয়োজন হয় সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তার নিজের টাকায় কিনতে হয়? এমন কি কিছু ছাপানো ফর্ম আছে যেগুলো বিজি প্রেস থেকে সরবরাহ করার কথা সেগুলোও পাওয়া যায়না। বিজি প্রেস থেকে বলা হয় ফর্ম শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দের ঘুষ দিলে ঠিক-ই ফর্ম মেলে! এমনকি জি ডি করার যে সরকারী ছাপানো ফর্ম আছে সেটাও নিজের টাকায় ফটোকপি করে ব্যবহার করতে হয়! আপনার প্রস্তাবটি খুব-ই সুন্দর, যা করলে এ সংক্রান্ত কাজ আসলে-ই অনেক সহজ হয়ে যাবে, কিন্তু এ বুদ্ধি কেউ গ্রহণ করবেনা। পুলিশকে ভালো করে ফেললে লাঠিয়াল বাহিনী হবে কে? পুলিশ রিফর্ম প্রোগ্রামে অনেক ভালো ভালো প্রস্তাবনা তৈরী করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কখনো বাস্তবায়ন হবেনা, কারণ সেটা হলে পুলিশ ভালো হয়ে যাবে, লাঠিয়াল হিসেবে পুলিশকে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাবে। ইচ্ছে ছিল পুলিশ রিফর্ম নিয়ে কিছু লিখব, কিন্তু লিখার হাত ভালো নয় বলে সাহস হয় না। আশা করি সচলায়তনের ভালো ভালো লেখক-রা পুলিশ রিফর্ম বা পুলিশের সমস্যা গুলো নিয়ে মাঝে মাঝে লিখবেন। কিছু বিশ্লেষন-ধর্মী লেখা খুব দরকার। সবাই শুধু সুপারফিসিয়ালি পুলিশকে গালিগালাজ, দোষী করে লিখে, কিন্তু কেউ-ই পুলিশের এই দূরবস্থার আসল কারণ গুলো নিয়ে কিছু বলেনা। আশা করি এ বিষয়গুলো নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে আপনারা লিখবেন।
সচলায়তনে যারা লেখেন, তারা তো সাংবাদিক নন ভাই। তারা পুলিশ সম্পর্কে না জানলে লিখতে পারবেন না তো। আপনি পুলিশ নিয়ে লিখতে চাইলে, লিখে ফেলুন। লিখতে লিখতেই জড়তা কেটে যাবে।
একদম একমত।
এসআইয়ের পক্ষে ডাক্তারের ফরেনসিক রিপোর্টের মত নির্ভুল তথ্য দেয়া সম্ভব? এসআইকে কাজ করতে হয় তাৎক্ষনিক ভিত্তিতে এবং বাহ্যিক নিদর্শন দেখে, যা কিনা প্রায়ই বিকৃত করা হতে পারে সত্যি ঘটনা আড়াল করার জন্য। অন্যদিকে, ডাক্তারের রয়েছে সময় নিয়ে দেহাভ্যন্তরিন পরীক্ষা করার সুযোগ। সুতরাং, এসআইয়ের এসিআর নির্ধারণের জন্য ফরেনসিক রিপোর্টের সাফল্যের উপর নির্ভর করাটা সামান্য অবিচারমূলক হয়ে যায় না কি, হিমু ভাই? বিশেষত যখন আমাদের এসআইগণ শিক্ষাগত ও প্রশিক্ষণগতভাবেই ততটা ইকুইপড ও আপডেটেড নন।
খুব ভাল একটা দিক তুলে ধরেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই রিপোর্ট কি মামলা খতমের পর উন্মুক্ত হইবে না আগে?
উত্তম প্রস্তাব সন্দেহ নেই। কয়েক পৃষ্ঠার রিপোর্টের চেয়ে ভালো করে তোলা একটি ছবি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা হোল এতে করে বিভিন্ন হাতের তেলেসমাতি বন্ধ হবে। ময়নাতদন্ত, পুলিশ কেস আর লাশ হস্তান্তর নিয়ে ভিক্টিমের স্বজনদের দুর্গতি দেখলে খুবই খারাপ লাগে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের কর্মদক্ষতা ও স্বচ্ছতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
দীর্ঘ বিরতির (প্রায় ১২ দিন) পর সচলে এসেই দেখি আপনার লেখা। ভালো লেগেছে কিন্তু সমস্যার সমাধান যাদের হাতে, তাদের ঘুম কী ভাঙবে?
লেখার শেষের প্যারায় শতভাগ সহমত।
দারুণ লেখা। সমস্যা সমাধানের দারুণ সব আইডিয়া।
বেশ কয়েকটি বিদেশী সংস্থা কয়েক বছর ধরে পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে - কোটি কোটি টাকা খরচ করে - বেশিরভাগই পুলিশকে মানবাধিকার এবং কমিউনিটি বেইজড পুলিশিং শেখানো নিয়ে - আপনার উল্লেখিত বিষয়টি ওগুলোর চাইতে গুরুত্তপূর্ণ মনে হয়েছে আমার কাছে - কিন্তু কেন যেন সবসময়ি সরকার বা দাতা দের সবাইকেই 'অন্য' কাজে বেশি উতসাহী দেখতে পাওয়া যায় - আপনার এই লেখাটি নিয়ে তাদের একজন এর সাথে কথা বলার ইচ্ছা আছে।
এই কোটি কোটি টাকার একটা বড় অংশ দাতাদের দেশেই ফেরত যায়, পরামর্শকের ফি হিসাবে। বাকি টাকা হাবিজাবি খাতে খরচ হয়। প্রকল্প শেষে যেই লাউ সেই কদু। সমস্যা জিইয়ে রাখতে পারলে দাতাদের লাভ, কিছু দেশী উচ্ছিষ্টভোগীরও লাভ। তাই সব প্রকল্পই কসমেটিক উন্নয়নের ব্যাপারে আগ্রহী।
সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষদের একটা বড় অংশ এই কসমেটিক উন্নয়ন দেখে তুষ্টি অনুভব করে। জাগো ফাউন্ডেশন পথশিশুদের ইংরেজিতে ভিক্ষা করা শেখাচ্ছে দেখে অনেকের অর্গাজম হয়ে যায় আনন্দে।
লেখায় একমত। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পুলিশের এইসব কাজ কিন্তু সহজ করে দিতে পারে।
অটঃ একটা তথ্য দেই- মানুষ কাজী আজিজুল হকের এই সাফল্যগাথা কোনোদিনই জানতে পারতো না যদি হেনরি এডওয়ার্ড তার অপকর্মের কথা ডেথ বেড কনফেশনে বলে না যেতো। হেনরি এই প্রযুক্তি তার নিজের নামে প্যাটেন্ট করে নিয়েছিলো কাজী সাহেবকে তার একজন সহকারী হিসেবে দেখিয়ে। কোথাও পড়েছিলাম অনেক আগে, রেফেরেন্স মনে করতে পারছি না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
যথার্থ প্রস্তাবনা। পুলিশের কানে যদি পৌছাতো...............
উত্তম প্রস্তাব
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ
আপনে এইসব আইডিয়া পান কো? পরিকল্পনা, সম্পাদন ও কার্যকারীতা মন্ত্রণালয় করে আপনারে সেইখানে দেয়া দরকার।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
যা ভাবলেন তা দারুন কিন্তু এইদেশে অদূর ভবিষ্যতে এর সম্ভাবনা দেখি না।
উত্তম
facebook
এই কাহিনী জানা ছিলনা। ধন্যবাদ, হিমু।
ইচ্ছা থাকলে তো উপায় হবে!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আন্তরিকতা থাকলে সবই সম্ভব। নইলে দেখা যাবে ক্যামেরা দেয়া হলো ঠিকই কিন্তু ঘটনার সময় অই ক্যামেরা থাকবে স্যারের বউয়ের কাছে যিনি আবার ওটা তার বান্ধবীকে ধার দিয়েছেন কয়েকদিনের জন্য।
আহা, আপনার এইসব বুদ্ধি-পরামর্শ যদি কেউ শুনতো, কাজে লাগাতো ! জনসংখ্যা জাপানে জনশক্তি হয়, আর আমাদের দেশে জনদুর্গতি । আসল কথা কত্তার ইচ্ছাই নাই ।
বাংলাদেশই বোধহয় একমাত্র দেশ যেখানে পুলিশকে গাড়ি দেয়া হলেও গাড়ির তেলের পয়সা দেয়া হয় না ঠিকমতো। 'যোগাড়' করে নিতে বলা হয়। 'যোগাড়' কি হচ্ছে না?, 'যোগাড়' করেই অভিযানে যায় পুলিশ। ডিজিটাল ক্যামেরাটাও 'যোগাড়' করে নিয়ে ব্যবহার করতে বললেই হয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আইডিয়াটা খুব ভাল।
আর আপনার প্রতিমন্তব্য থেকেও অনেক কিছু জানতে পারলাম।
লেখায়
পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ে স্নাতক পাশ করে ঢুকতে হয়। তবে কন্সটেবল থেকে পরীক্ষা দিয়ে অথবা প্রোমোশনের মাধ্যমে উঠে এলে শিক্ষাগত যোগ্যতাটা মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের বেশি থাকে না। এক্ষেত্রে ফর্মের আইডিয়াটা চমৎকার সমাধান হতে পারে। আপনার এই আইডিয়ার স্বপক্ষে একটা উদাহরণ দেই।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রফেসার Graham Teasdale এবং Bryan J. Jennett
গ্লাসগো কোমা স্কেল বলে একটা স্কেল প্রস্তাব করেন ১৯৭৪ সনে। এটা মূলতঃ একটা ফর্ম। কোন রোগী মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে এলে তাকে পর্যবেক্ষণ করে একটা ফর্মে টিক দিতে হয়। ফর্মের প্রতিটা ঘরের জন্যে একটা করে পয়েন্ট আছে। সেই পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেলেও এই ফর্ম ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখনও বেশ দাপটের সাথেই নিউরোলজির চিকিৎসায় টিকে আছে যদিও আরো বিভিন্ন স্কেল প্রস্তাবিত হয়েছে পরে। আপনার আইডয়াটাকে অনেকটা এভাবে দাড় করানো গেলে সেটা ফরেনসিক গবেষণায় বাস্তবিকই একটা দারুণ সংযোজন হতে পারে।
টুইটার
কে কইছে পুলিশের ক্যাম্রা নাই? এইযে আছে
ফেসবুকে আজকেই এই ছবি টা পেলাম। শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
ছবির নিচে আজাহার হোসাইন নামের একজন সবার কৌতুহলের জবাবে বলেছেন, (পুরোটাই কোট করছি)
"পুলিসের যে ফটোগ্রাফি এন্ড ক্রাইম ফাইন্ডিং নামে একটা আলাদা টিম আছে এটা হয়তো আপনাদের অজানা, একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এই টিম পরিচালিত . . . এদের কাজ . . . পচা গলিত লাশের ছবি রাখা, গুরুতর অপরাধী যারা লুকিয়ে আছে তাদের ট্রেস করতে ফটো সরবরাহ করা, আর এই যে রাজনীতির ময়দানে পুলিশ ছবি তুলছে . . . এর কারণ উনি হয়তো পিকেটারদের সনাক্ত করার জন্যেই এটা করছেন
আবার ডিবিতেও এমন একটা টিম আছে, ওটা আবার বেশি শক্তিশালিী ডাটাবেজ নিয়ে কাজ করতে পারে . . ."
বিষয়টা জানতাম না। জেনে ভাল লাগল যে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলার দামাল পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে।
ওনারা ডগ স্কোয়াডের মতো একটা ক্যামেরা স্কোয়াড বানিয়ে বসে আছেন।
নতুন মন্তব্য করুন