কর্মসংস্থানে বাংলার উপযোগ

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ১৯/০৩/২০১৪ - ৪:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৃথিবী আজ গতকালের চেয়েও একটু বেশি পরস্পর-সংযুক্ত।

অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত আজ অন্য প্রান্তের সংস্পর্শে বেশি আসছে। আর এই বর্ধিত যোগাযোগের যুগে অন্যতম অস্ত্র ভাষা।

উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবিস্তারের সূত্রে পৃথিবীতে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষা বহুলকথিত। আমাদের দেশে বাংলা মাতৃভাষা হলেও উচ্চশিক্ষার মাধ্যম এখনও ইংরেজি। এর ভালো-খারাপ দুটি দিকই আছে নিশ্চয়ই।

কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভাষা নিজের দেশের নাগরিকের জন্যে সুযোগ সৃষ্টির অনেক অস্ত্রের একটি। জার্মানিতে সাধারণত জনগণের অর্থে চালিত প্রকল্পের জন্যে যেসব দরপত্র আহ্বান করা হয়, সেখানে কার্যাদেশদাতার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগের জন্যে জার্মান ভাষাকে আলাদা ধারায় নির্দিষ্ট করা থাকে। ভিনদেশী প্রতিষ্ঠানের সেসব দরপত্রে অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই, কিন্তু কাজ চালিয়ে নিতে গেলে তাদের অবশ্যই সে কাজের বিভিন্ন স্তরে জার্মান ভাষায় পারদর্শী জনবল নিয়োগ করতে হবে।

খুবই ছোটো একটি বিধি, কিন্তু এর প্রভাব অনেক। ভিনদেশী পেশাজীবীরা জার্মানের মতো খটমটে একটি ভাষা নতুন করে শিখে কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে অন্তত একজন জার্মানকে নিয়োগ দিলে কাজ সহজে সমাধা করতে পারবেন। এতে করে শুধু যে কর্মসংস্থানের পরিধি বর্ধিত হচ্ছে, তা-ই নয়, দুটি ভিন্ন কর্মসংস্কৃতির মানুষ একে অপর সম্পর্কে জানতে পারছে, যার মূল্য অনেক।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রায়ই ডাকা হয়, সেসব প্রকল্পে বেশিরভাগ সময় কায়িক অদক্ষ পরিশ্রমের কাজগুলো কেবল বাংলাদেশীদের জন্যে বরাদ্দ থাকে। এমনকি দরপত্রে যোগাযোগের ভাষা হিসেবেও ইংরেজিকে আলাদা ধারায় নির্দিষ্ট করা থাকে। এতে করে ব্যবস্থাপনার মাঝারি পর্যায়ের কাজে বাংলাদেশীদের নিয়োগের সুযোগ সীমিত ও অনিশ্চিত থাকে, কিংবা সে সুযোগকে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছায় সীমিত ও অনিশ্চিত করে রাখা হয়।

আমরা যেহেতু ক্রমশ আত্মমর্যাদা নিয়ে সচেতন হচ্ছি, এবং এই আত্মমর্যাদার প্রকাশেও সমর্থ হচ্ছি, অনাগত দিনে আন্তর্জাতিক দরপত্রে কার্যাদেশদাতার সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ ও দলিল সংরক্ষণের ভাষা হিসেবে বাংলা এবং কেবল বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এতে করে বাংলাদেশীদের কাজের সুযোগ যেমন বিস্তৃত হবে, জ্ঞান স্থানান্তরের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন হবে, আর বাইরের পৃথিবীর কাছেও আমরা আত্মসচেতন জাতি হিসেবে পরিচিত হবো।


মন্তব্য

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

খুবই সময়োপযোগী দাবী। এ নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা সহ পোস্ট আসতে পারে।

আমার নিজের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি এখানে। যুক্তরাজ্যে আমি এবং আমার স্ত্রী পড়াশোনার পাশাপাশি দোভাষীর কাজ করি। এখানে আদালতে, উকিলের কাছে, ডাক্তারের কাছে, বিভিন্ন ট্রাইবুনালে, স্যোশাল সার্ভিসে এবং এমন কি বাচ্চাদের স্কুলেও দোভাষীদের নিয়োগ দেয়া হয়। আদালতে কাজ করার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মামলা শুরুর আগেই এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এক বা একাধিক দোভাষীকে নিয়োগ দেয়া হয়। ডাক্তারের কাছেও চর্চাটা প্রায় একই রকম। ফলে ইংরেজি নিজের ভাষা না হলেও ফ্রান্স, জার্মানী, স্পেন, ইটালি সহ সব দেশের মানুষই মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশের সুযোগ পায় যুক্তরাজ্যে। এমন কি যদি কেউ ইংরেজি পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী না হয় তাহলেও তার জন্য দোভাষীর ব্যবস্থা করা হয়। এ কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে, এই চর্চাটা আমাদের দেশে একদমই নেই। একটা বিশেষ ভাষা বলতে না পারাটা কারো অযোগ্যতা হতে পারে না। কিন্তু ক্রিকেট মাঠ থেকে শুরু করে সরকারী টেন্ডার, সব ক্ষেত্রেই ইংরেজি বলতে পারাটাকে একটা বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন আসাটা জরুরী। এতে এক দিকে যেমন সব পক্ষ আত্মবিশ্বাসী হয়ে যোগাযোগ করতে পারবে, অন্য দিকে একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানেরও (দোভাষী) সৃষ্টি হবে।

সবশেষে বলবো, ইংরেজরা আমাদের ইংরেজি ভাষা চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে এবং আমরা সেটা নিয়েই বসে আছি (ভালো-মন্দ উভয় দিকই আছে তার)। কিন্তু সময়ের সাথে খোদ ইংরেজরাই এগিয়ে গিয়েছে, ভিন্ন ভাষাকে গ্রহণ করেছে নিজেদের দেশের আফিস, আদালত, হসপিটালে। কিন্তু আমরা তাদের অর্ধ-শতাব্দী আগের ধ্যাণ-ধারণাকে এখনও আকড়ে ধরে বসে আছি।

হিমু এর ছবি

আমাদের দেশে বাংলা ভাষার দিকে মনোযোগ দিতে বললে অনেকে প্রথমেই এটাকে ইংরেজির ওপর গুরুত্ব না দেওয়ার সাথে সমীকৃত করেন। ইংরেজি শিখতে বা ব্যবহার করতে কিন্তু আমি নিষেধ করছি না। কিন্তু বাংলা ভাষা যেন বাংলাদেশের মানুষের জন্যে অর্থনৈতিক সুবিধা তৈরি করে, উল্টোটা নয়।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

এভাবে যদি নীতি নির্ধারকরা ভাবত, তাহলে অনেক আগেই আমরা এর সুফল দেখতে পেতাম হাতে হাতে।

সামুদ্রিক বন্দর, পর্যাপ্ত সূর্যালোক আর বুদ্ধিমান জনগোষ্ঠী - উন্নয়নের বড় তিনটি নিয়ামক এবং সহায়ক আমাদের আছে প্রচুর পরিমাণে। আফসোস, আমরা কতিপয় স্বার্থান্বেষী হিংস্র পশুরূপী সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক নেতাদের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় যাচ্ছি!

____________________________

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সামুদ্রিক বন্দর, পর্যাপ্ত সূর্যালোক আর বুদ্ধিমান জনগোষ্ঠী - উন্নয়নের বড় তিনটি নিয়ামক এবং সহায়ক আমাদের আছে প্রচুর পরিমাণে। আফসোস, আমরা কতিপয় স্বার্থান্বেষী হিংস্র পশুরূপী সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক নেতাদের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় যাচ্ছি!

- সত্যিই এতকিছু থাকার পরেও সামনের দিকে এগিয়ে চলার যে গতি আমাদের সেটা আশানুরূপ নয়। সবকিছু যদি ১০-১৫ বছর ঠিকমত চলত, তাহলে বাংলাদেশের চেহারাই পাল্টে যেত এতদিনে।

শুভেচ্ছা হাসি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক এই উদ্যোগ অবিলম্বে গ্রহন করা উচিৎ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঔপনেবেশিকতা, পাকি-প্রেম, বলিউড প্রেম, ধর্মীয় ভাই ইত্যাদি বেশ কয়েকটা কারনে আমাদের মাঝে অনেকেরই, সুযোগ পেলেই বাংলা ছেড়ে অন্য ভাষায় কথা বলা শুরু করে । দেশের কর্পোরেট সমাজ তো অফিসে বাংলায় কথা বলাকে রীতিমত অপরাধ হিসেবে দেখে । আর দেশের বাইরে থাকা মানুষদের দেখি পাকিদের "ব্রাদার" সম্বোধন করে ভাংগা উর্দু-হিন্দিতে কথা শুরু করে দেয় ।

আপনার সাথে একমত । প্রথম উদ্যোগটা নিতে হবে উপর থেকেই । সামাজিক আন্দোলন তখনই জোরদার হয়, যখন তা উপর থেকে পৃষ্টপোষকতা পায় ।

================
দস্যু ঘচাং ফু

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক+স্নাতকোত্তর পুরোটা বাংলায় পড়ানো সম্ভব, বই আছে হাসি ব্যাবহার নেই মন খারাপ এমনটি অন্যান্য বিষয়েও হওয়া আবশ্যক, যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল, অন্তত "বই নেই" এ অজুহাতটা অচল হয়ে যাবে

সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের আইন আছে, আশা করি একটু গুঁতোগুঁতি করলেই সেটার বহুল ব্যাবহার করা সম্ভব (জানি, এ কাজ আইনের নয়, তবু কিছু উন্মাদ আর অন্ধকে আইনের রুলের গুতো না দিলে চলে না)

সময় নিয়ে আবার মন্তব্য করতে আসব, আপাতত চলুক উত্তম জাঝা!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

বাংলাদেশে আইনের অভাব নেই, কিন্তু প্রয়োগের আন্তরিকতা যথেষ্ট নয়। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের আইনের প্রচলন আইনটিও তেমন। শুধু পতাকা উড়িয়ে, আর শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আমাদের মহান নেতারা ঘরে ঘরে বাংলা ভাষাকে পৌছে দিচ্ছেন। তারপরও এমন উদ্যোগ শীঘ্রই নেওয়ার আশা করি।

মাসুদ সজীব

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নিঃসন্দেহে কবুল করি,

খুবই ছোটো একটি বিধি, কিন্তু এর প্রভাব অনেক।

আমি মনে করি, কর্মসংস্থানে বাংলার উপযোগ হতে হবে অবশ্যই, শুধু বাংলায় নয় বরং সহজ সরল বাংলায়।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রায়ই ডাকা হয়, সেসব প্রকল্পে বেশিরভাগ সময় কায়িক অদক্ষ পরিশ্রমের কাজগুলো কেবল বাংলাদেশীদের জন্যে বরাদ্দ থাকে। এমনকি দরপত্রে যোগাযোগের ভাষা হিসেবেও ইংরেজিকে আলাদা ধারায় নির্দিষ্ট করা থাকে। এতে করে ব্যবস্থাপনার মাঝারি পর্যায়ের কাজে বাংলাদেশীদের নিয়োগের সুযোগ সীমিত ও অনিশ্চিত থাকে, কিংবা সে সুযোগকে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছায় সীমিত ও অনিশ্চিত করে রাখা হয়।

খুব সম্ভবতঃ বাংলাদেশে দরপত্র আহ্বান সিপিটিইউ নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে করতে হয়। তাজ্জব ব্যাপার হলো, এই সাইটটিও ইংরেজিতে। শুধু ইংরেজি নয়, যতোটা সম্ভব মারপ্যাচযুক্ত কঠিন ইংরেজিতে লেখা। তবে প্রশ্ন জাগে মনে, অনুসরণের বাধ্যবাধকতা থাকায় কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের কিছু কিছু কর্তাব্যক্তি যদি দুরভিসন্ধিমূলক ইচ্ছের মোহ থেকে বেরিয়ে আসতেও চান, তাহলে তা বিদ্যমান পরিসরে কতটুকু সম্ভব?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

এক লহমা এর ছবি

চলুক
৫ তারা

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই ফাঁকে ভাষা নিয়ে আমার অপিনিয়নগুলো বলে ফেলি।

১। বাংলা এবং ইংলিশ দুটো ভাষাই ভালোভাবে শিখতে চাই। যাতে বাংলা এবং ইংলিশ উভয় ভাষা 'শুনিয়া বুঝিতে, শুদ্ধ উচ্চারণে বলিতে ও পড়িতে, এবং শুদ্ধভাবে লিখিতে' সক্ষম হই।

২। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কেবল বাংলাই শেখানো হোক, যাতে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এর সাহায্যে ইংলিশটা শেখানো সম্ভব হয়।

৩। সকল পর্যায়ে ভাষার পরীক্ষাগুলো লিসনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং - এই চারভাগে নেয়া হোক।

৪। বাংলা ও ইংলিশ উভয় ভাষার সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হোক, কারণ এই সেক্টরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রায় নেই বললেই চলে।

৫। আইন ও বিচার বিভাগের সকল শাখা, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে ইংলিশকে সসম্মানে বিদায় করা হোক। একইভাবে ভূমি, জরিপ, সম্পদ, উত্তরাধিকার এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ফারসি ও সংস্কৃত মেশানো বকচ্ছপ পরিভাষা ও বাক্যবন্ধগুলোকে সসম্মানে বিদায় করা হোক।

৬। সকল ফরম, আবেদনপত্র, সনদ ও প্রত্যয়ন বাংলায় করা হোক। প্রয়োজনে সাথে ইংলিশ অনুবাদ দেয়া যেতে পারে।

৭। সকল আদেশ, নিষেধ, অধ্যাদেশ, সতর্কীকরণ বাংলায় করা হোক। একইসাথে সকল সাইনবোর্ড, নির্দেশনা, পরিচিতিও বাংলায় করা হোক।

৮। বাংলাদেশে পরিচালনাকারী (ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড) সকল এয়ারলাইনে স্পষ্ট বাংলায় ঘোষণা ও নির্দেশনা দেওয়া এবং সেখানে বাংলা সংবাদপত্র রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক।

৯। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানসমূহ বাংলায় পরিচালনা করা হোক। প্রয়োজনে সাথে ইংলিশসহ অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ দেয়া যেতে পারে।

১০। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানসমূহে বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ কেবলমাত্র বাংলা বক্তব্য প্রদান করবেন।

১১। আন্তর্জাতিক মণ্ডলের জন্য প্রযোজ্য সকল বিবৃতি, নির্দেশনা, ঘোষণা, দরপত্র ইত্যাদি বাংলার সাথে একাধিক বিদেশি ভাষায় করা হোক।

১২। সরকারি, বেসরকারি সকল পর্যায়ে নিয়োগের পরীক্ষাতে যেখানে প্রযোজ্য নয় সেখানে ইংলিশে পরীক্ষা নেয়া বন্ধ করা হোক।

১৩। সরকারি, বেসরকারি সকল অফিসে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ভাষা বাংলায় সীমাবদ্ধ করা হোক।

১৪। পাবলিক, প্রাইভেট সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ দান ও পরীক্ষাতে মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও ইংলিশ উভয় ভাষাকে ঐচ্ছিক করা হোক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মন মাঝি এর ছবি

৪। বাংলা ও ইংলিশ উভয় ভাষার সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হোক, কারণ এই সেক্টরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রায় নেই বললেই চলে।

শুধু ভাষা-শিক্ষায় বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণে খুব একটা কাজ হয় বলে মনে হয় না। আধুনিক পদ্ধতিগুলিতে প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর খুব একটা সুযোগ থাকে না। আসল সমস্যা শিক্ষা বিষয়ক নীতিনির্ধারক মহলে, স্কুল ব্যবস্থাপনা মহলে, এবং অভিভাবক মহলে। এইসব জায়গায় সমস্যাগুলি দূর না করতে পারলে শুধু শিক্ষক প্রশিক্ষণে কাজ হবে না। বাস্তব চর্চার সময় দেখা যায় তারা তাঁদের প্রশিক্ষণে শেখা অনেক কিছু বাড়িতেই ফেলে আসতে বাধ্য হন, কর্মক্ষেত্রে বিরোধিতা ছাড়া সাপোর্ট পান না।

তাছাড়া শিক্ষকদের পেশাগত কালচারেও সমস্যা আছে। প্রশিক্ষণে শেখা অনেক নতুন জিনিষই তারা নিজেদের মানসিকতায় গ্রহণ ও ধারণ করে বাস্তব চর্চায় প্রতিফলিত না করে প্রচলিত ভ্রান্ত বা পশ্চাদপদ চর্চায় রিভার্ট করেন।

মোদ্দা কথায়, স্রেফ প্রশিক্ষণের চেয়েও অনেক ব্যপক উদ্যোগের প্রয়োজন। নইলে প্রশিক্ষণ প্রয়াসের একটা বড় অংশই পানিতে যেতে পারে।
----------------------------------

# ভুল জায়গায় একই কমেন্ট আরেকবার করে ফেলেছি। আশা করি মডু মহোদয় করুনাপরবশ হয়ে ওটা মুছে দিবেন।

****************************************

কল্যাণ এর ছবি

নিজস্ব অর্থায়নে দেশ যে সব প্রকল্প নেয় সেগুলোতে এটা করে ফেলাটা সম্ভব। ইচ্ছা থাকলেই করা যায়। শুরুতে অবশ্য ভাল শ্রম ও সময় দিতে হবে। এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করে আমার অভিজ্ঞতায় কয়েকটা জিনিস পেলাম।

১। যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে চলে গেলে কাগজপত্রের মধ্যে শুরুতেই বিড ডকুমেন্ট আর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন লাগবে। বিড ডকুমেন্টের "ইন্সট্রাকশন টু বিডারস", "জেনারেল ও স্পেশাল কন্ডিশন" আর "ফর্ম" বাংলা করে ফেলা সময় ও শ্রম সাপেক্ষ (Tedious) হলেও অসম্ভব নয়। তবে আমার মনে হচ্ছে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনে বেশ সমস্যা হবে। এর কারণ হল প্রযুক্তির বেশিরভাগটাই বাইরে থেকে আসে বলে রেফারেন্স অনেক স্ট্যান্ডার্ড ইংরেজীতে থাকবে। এইগুলা বাংলায় পাওয়া যাবে না মনে হয়। ফলে বাংলার পাশাপাশি বিদেশী ভাষা ঢুকে যাবে স্পেসিফিকেশনে। এ সবকিছুই যেহেতু কন্ট্রাক্টের এক একটা অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়, ঝামেলা (Dispute) হলে তখন ভাষার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন "টার্ম" এক এক পক্ষ তাদের সুবিধা মত ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করতে পারে; একইভাবে পিছলামি করে কন্ট্রাক্ট অনুসারে ডেলিভারি না করার চেষ্টাও করতে পারে। এক কথায় প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কঠিন হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

২। প্রকল্পের প্রস্তাব (বিড) জমা পড়ার পর একটা সমস্যা হতে পারে। প্রকল্পে যদি বিদেশী পরামর্শক থাকে, সেক্ষেত্রে বিডগুলো বাংলায় জমা পড়লে সেগুলো সব অনুবাদ করতে হবে ইভালুয়েশনের জন্যে। অনুবাদ করলে সঠিক এবং এফিশিয়েন্ট অনুবাদ না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এতে ইভালুয়েশন ভুল হয়ে যেতে পারে। পরামর্শক না থাকলে এবং আভ্যন্তরীণ ইভালুয়েশন হলে এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এখানে পরামর্শক লাগবে কি না সেই সিদ্ধান্তটা আগে নিয়ে নিতে হবে। দেখতে দেশে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আছে কিনা।

৩। আর একটা ব্যাপার হল প্রকল্পের সাথে যুক্ত আমলা-পরিচালক মানে যারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা পদ্ধতিগত পরিবর্তন মেনে নিতে চায় না। একটা উদাহরণ দেই। মনে করেন একজন একটা প্রকল্পে কাজ করে একটা ডেলিভারি-পেমেন্ট-ইন্সুরেন্স এর কায়দা শিখল - সে ধরে নেয় ওইটাই যাকে বলে সবথেকে এফিশিয়েন্ট, আর চিন্তার কিছু নাই, অন্য কোন কায়দা থাকতে পারে না, বা থাকলেও সেগুলো সব ভুল। এর পেছনের মূল কারণ মনে হয় নতুন জিনিসটা শিখতে যে সময় বা এফোর্ট দিতে হয়, সেটায় অনিচ্ছা। ফলে একটা প্রকল্প বাংলা ভাষায় করতে গেলে যে নতুন ব্যবস্থার সাথে মানিয়ে নেওয়ার এডমিন বা এ সংক্রান্ত অতিরিক্ত কাজ করতে হবে - সেটা চিন্তা করে বিশেষজ্ঞরা পিছিয়ে যেতে পারে।

যত ঝামেলাই হোক, আমার মনে হয় এটা করা সম্ভব এবং করা উচিত। প্রথমে ছোট প্রকল্প দিয়ে শুরু করে দিতে হবে। সেই সাথে দেশি অর্থায়নে সব প্রকল্পে বিদেশী ঠিকাদারের ক্ষেত্রে ৫-১০% দেশী প্রকৌশলী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে। তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মজবুত ও পরীক্ষিত একটা কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলা যাবে।

(জুতসই পরিভাষা জানা না থাকায় মন্তব্যে অনেক ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করে ফেললাম। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।)

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

হিমু এর ছবি

১. কোনোকিছুতে টাকাপয়সা জড়িত থাকলে নতুন পরিভাষা প্রবর্তন/প্রচলনও বেগ পাবে। যেসব শব্দের বাংলা পরিভাষা নেই, সেগুলো এই সুযোগে হয়ে যাবে। কারিগরি বাংলার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। সর্বোপরি বাংলায় সবকিছু দাখিল করতে হলে বাংলা ভাষায় প্রযুক্তি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনার চর্চা বেগ পাবে।

২. বিদেশী পরামর্শককে নিজের খরচে কাগজপত্র বাংলা থেকে ইংরেজি করে নিতে হবে।

৩. কিছু বললাম না।

কল্যাণ এর ছবি

একটা জিনিস বলতে ভুলে গেছি। বাংলায় দাপ্তরিক চিঠিপত্র মানে কাগজ পত্রের ভাষা খুবি জটিল। সেই সাথে একজনের অন্যজনের অবগতির জন্যে ফাইল ঠেলাঠেলির যে ব্যবস্থা - যাকে বলে প্রাণান্তকর। এইটার একটা সদগতি খুব দর্কার।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

হিমু এর ছবি

এটা কপিপেস্টের কারণে হয়। নতুন আমলারা পুরোনো মান্ধাতার আমলের আমলাদের কাছ থেকে এসবের প্রশিক্ষণ পান, সে কারণে বৃটিশ আমলের দাপ্তরিক ভাষা এখনও চলমান।

আমাদের স্কুলে শেখানো হয়েছিলো, ইংরেজিতে দরখাস্ত করতে হবে "আই বেগ টু স্টেইট" লিখে। নটরডেম কলেজে একবার জ্বরের অজুহাত দিলে কী ঘটে দেখার জন্য টেরেন্স পিনেরো বরাবর দরখাস্ত করলাম। জনাব পিনেরো আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, ইউ আর নট আ স্লেইভ। হোয়াই ডু ইউ হ্যাভ টু বেগ? তারপর বললেন, এখনও কি জ্বর জ্বর লাগছে, নাকি ডাক্তারকে খবর দেবো? আমাদের কলেজে জ্বর হলে বাসায় যাওয়ার কোনো দরকার নাই, ডাক্তার ক্লাসে এসে চিকিৎসা করে যাবেন। আমি বিরস বদনে এই উপলব্ধি নিয়ে ফিরে এলাম যে আমি যেমন কারো চাকর নই, টেরেন্স পিনেরোও বোকা নন।

একটা ব্যবস্থা পাল্টায় যখন মাথা আর বুকের পাটাওয়ালা লোকজন তার ভেতরে থাকেন। আমাদের আমলাদের দুইটার একটাও আছে কি না সন্দেহ।

কল্যাণ এর ছবি

হ, কপি পেস্ট একটা সমস্যা। তবে সামান্য একটু চিন্তা করে কপি করলে আর সেই সাথে পেস্ট করার সময় প্রেক্ষাপট খেয়াল করে খানিকটা কাণ্ডজ্ঞান মিশিয়ে দিলেই কপি-পেস্ট ক্ষেত্র বিশেষে বেশ কার্যকর বলে আমার মনে হয়।

সবকিছুর একটা ফলোআপ-মনিটরিং আর জবাবদিহিতা থাকলে কে কাজ করতেছে আর কে গায়ে ফু দিয়ে বেড়াচ্ছে সেইটা ধরা যেত।

আমি মনে হয় আলোচনা ভিন্ন দিকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমার সব সময় মনে হয়েছে নতুন পুলাপানরে সুযোগ দিলে তারা বুড়াদের থেকে ভাল করে। নতুন পুলাপান ভুল করে, কিন্তু সেইটা ধরায় দিলে ঠিক করে নেয়ার কষ্ট করতে তারা ডরায় না। বুড়াগুলা এর উল্টা। নতুন কিছু পুলাপান নিয়ে একটা পাইলট শুরু করে দেয়া খুব কঠিন হওয়ার কথা না। এক সড়ক-জনপথেইতো কত শত প্রকল্প চলে।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

দুর্দান্ত এর ছবি

এই উদ্যোগ গ্রহন করা হোক।

দীনহিন এর ছবি

অসাধারণ বিশ্লেষণ, হিমু ভাই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।