লোডশেডিঙের কবলে

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ১০/০৮/২০০৭ - ২:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্লগের শুরুতেই একটা ক্যাটেগরির কম্বোবাক্স চলে আসে। যা লিখতে চাই তা স্মরণ করেই চোখে আঁসু চলে এলো। কী বলা যায় একে? দিনপঞ্জি তো বটেই। আত্মজীবনীও বলা যেতে পারে। সমসাময়িকই তো, নাকি?

১.

মারাত্মক লোডশেডিং চলছে। এই বিদ্যুৎ আছে, এই নাই। ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে, ব্লগ যবে পাই দেখিতে, হারাই হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।

এদিকে গরম। আগুনের পরশমণি সারা গায়ে। চিটচিটে ঘাম। মিনমিন করে বিধাতার কাছে আরজ গুজার করি, আমার এ দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ঐ দেবালয়ের প্রদীপ করো। পাশের গাড়িতে বাজছে রেডিও (টুডে না ফূর্তি জানি না), তাতে এক আপামণি আকূল কাতর স্বরে চ্যাঁচাচ্ছেন, বেহায়া পানি হায়য়য়য়য়য় ... অঙ্গ ভিজাইলো অঙ্গ ভিজাইলো অঙ্গ ভিজাইলো পানিইইইইই। অন্তরাত্মা জ্বলে যায়।

বাড়ি ফিরে গোসল করে দেখি একই হাল। বিদ্যুৎ নির্দিষ্ট ছন্দে আসছে যাচ্ছে। একটু পরেই আবার কুলকুল করে ঘেমে পুনর্মূষিক হলাম।

২.

বেশ কিছুক্ষণ দখিনা বাতাসের মতো আসাযাওয়া করার পর বিদ্যুতের মর্জি ফিরলো। নিশ্চিন্ত মনে বসে কী একটা কাজে হাত দিয়েছিলাম, ইচ্ছে হলো একটু মুড়িমাখা খাবো। এমন সময় ফুট। আবারও আঁধার।

একেবারে নিকষ অন্ধকার চারদিকে। গোটা শহরে ব্ল্যাকআউট। জেনারেটর চালু হয়নি। অন্ধকারে পা বাড়াতে যেয়ে ঘটলো এক দুর্ঘটনা। বড়ই লজ্জাস্কর ব্যাপার।

অন্ডকোষ নিয়ে আমার কোন শভিনিজম নেই। আমি একে ঠিক চেষ্টাচরিত্র করে অর্জন করিনি। পেয়েছি, বয়ে বেড়াচ্ছি, কাজে লাগাচ্ছি কালেভদ্রে। পৃথিবীতে সব স্ট্যান্ডার্ড অন্ডই মোটামুটি শক্ত খোলসের মধ্যে পুরে ডেলিভারি দিয়েছেন ঈশ্বর, হার্ড প্যাকড যাকে বলে। আমাদের কপালেই যে কেন পলিপ্যাকে এলো জিনিসটা, বুঝলাম না। ডোন্ট পুট অল ইওর এগস ইন দ্য সেম বাস্কেট, বলে আংরেজিতে, বাস্কেটের অভাবে ব্যাগে করে সবেধন নীলমণি দু'টি অন্ড বয়ে বেড়াচ্ছি এই জালেম দুনিয়ায়, অন্ধকারে বেখেয়ালে বার করে রাখা চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সব বুঝি পয়মাল হলো।

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা থাকে না, চেয়ারে গুঁতো খেয়ে অন্ডকোষাধ্যক্ষ পদ থেকে একেবারে পড়িমড়ি করে পড়লাম আর কি। এহেন মহার্ঘ্য বাবাজিদের ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট'স গার্ড রেজিমেন্টের মতো সদা সতর্ক প্রহরায় আগলে আগলে রাখবো, এই পেতিজ্ঞা মনে মনে করতে করতে প্রাণপণে দম নেয়ার চেষ্টা করি। একই সাথে মনে হয়, এই ব্যাটারা তো অন্ড নয়, শুক্রকোষ! অন্ডকোষ নাম রাখার মানে কী? পরক্ষণেই বুঝতে পারি কারণটা। ডিমের মতোই সাবধানে আগলে রাখার পরোক্ষ শিক্ষা আছে কথাটার মধ্যে।

দম ফিরে পাবার পর গালিকোষটাও খুলে উল্টেপাল্টে দেখি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু তো সপরিবারে জেলের লপসি চাটছে, কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে রেখে (লোডশেডিং আর অন্ডকোষে আঘাত, উভয়ার্থেই) গেছে। আমলা আ ন হ আখতারের নামেও মামলা ঝুলছে দেখলাম। খাম্বারাজ যুবরাজ কোন অন্ধকার কারাকক্ষে আটক, আশা করি ওখানেও চেয়ার আছে। কিছু গালি ইনসাফের সাথে ভাগবাঁটোয়ারা করে দেবার পর ব্যথাটা যেন কিছুটা প্রশমিত হয়।

এর মধ্যে আবার বিদ্যুৎ আসে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে টয়লেটে গিয়ে দেখি একেবারে জাতির বিবেকের মতো চেহারা হয়ে আছে আমার।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

রে কুমারীবাজ হিমু। তুই তো অন্ড হারিয়েছে ফেলেছিস রে!! তোর এখন কি হবে!!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসিব এর ছবি

নিশ্চিন্ত মনে বসে কী একটা কাজে হাত দিয়েছিলাম, ইচ্ছে হলো একটু মুড়িমাখা খাবো।

এই উইকেন্ডে মুড়ি প্রজেক্ট । কনফার্ম । রুচির মুড়ি, রুচির চানাচুর, রাধুনীর সরিষার তেল, দেশী কাচামরিচ, জার্মান পেয়াজ, জার্মান লবন, ইন্ডিয়ান কাসুন্দি (শিওর না আছে কিনা) সহযোগে মাল্টি ন্যাশনাল উত্তর আধুনিক ঝাল মুড়ি ।

আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হিমু এর ছবি

@এএমামু, তারা হারায়নি। তবে টোল খেয়ে গেছে। ত্রাণ দরকার।

@হাসিব, সরিষার পেস্ট, গরুর কিমা, মরিচ-লবণ সহযোগে মটরশুঁটি সেদ্ধর পেস্টও যোগ করা যেতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হাসিব এর ছবি

ডুবাইবো


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হিমু এর ছবি

কাছাব্লাংকার াছা অকালে ইন্তেকাল করবে আর কি।

তবে আমার এমন দুর্দিনে মন্দিরা বেদির প্রসঙ্গ কেন তুললেন বুঝলাম না। বেদিতে ব্যাটিং করতে তো আমার কোন সমস্যা দেখি না। বোলিঙে একটু প্রবলেম হতে পারে। তবে রানার নিতে হবে না। নাহয় ছক্কা দুইটা কম মারলাম। চারও নাহয় রয়েসয়েই পিটালাম।

অস্টিন পাওয়ারস কে কোট করে বলতে চাই, "হোয়াট'স ইয়োর পয়েন্ট, ভ্যানেসা?"


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

আয়হায়!!! একেবারে অন্ডদাস হয়ে গেল যে!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

অমিত এর ছবি

হিমুর অন্ডকোষ তো স্টার হয়ে গেল !!!
_____ ____________________
suspended animation...

সৌরভ এর ছবি

আমাদের কপালেই যে কেন পলিপ্যাকে এলো জিনিসটা, বুঝলাম না।

অচলিল। হিমি আপুকে ব্যান করা হউক।
(আসলে সেরম হইসে!)

------ooo0------
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সুজন চৌধুরী এর ছবি

বিপ্লব।।
তবে সাবধান
অণ্ডকোষে গণ্ডগোল দেখা দিলে কিন্তু আত্মরতিও কাল্পনিক হইয়া যাইবো।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

শীগগিরই ক্রিকেট টিমে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হলো ,,, উহুঁ, টেপটেনিসে হবেনা, কাঠের বলের টিম চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত লেখা। কোনো লেখা পড়তে পড়তে এমন খুক খুক করে অনেকদিন হাসা হয়নি।

বউ শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? তার উত্তরে কী বলি? এতোকালের পুরনো বউয়ের কাছে নিজের সমস্যা বলতে অসুবিধা নেই। কিন্তু হিমুরটা বলি কী করে?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ইস ...

হাসিব এর ছবি

Jhalmuri

উত্তরআধুনিক মুড়ি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হিমু এর ছবি

চাট্টিফিকেট নিতে হবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

আর বাবা হতে হবে না। টোল খাওয়া বল দিয়ে কি আর ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা যায়!


কি মাঝি? ডরাইলা?

হিমু এর ছবি

আপনার স্বরচিত "কম + অন্ড" লেখাটি উল্টেপাল্টে দেখতে অনুরোধ করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।