দুর্নীতির মানে হচ্ছে নীতির অভাব

হীরক লস্কর এর ছবি
লিখেছেন হীরক লস্কর (তারিখ: শনি, ১৪/০১/২০০৬ - ৮:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সুন্দর বাংলাদেশের প্রত্যাশা নিয়ে আমার আগের পোস্টের এক মলাট সমালোচনা করেছেন সমালোচক। বইয়ের ভেতরে কি লেখা আছে তা না পড়ে প্রচ্ছদ দেখেই যেসব সমালোচনা লেখা হয় তাকে বলে মলাট সমালোচনা। তবে জাতির মান রেখেছেন তিনি। আর সব জাতিভাই-বোন সমালোচকদের মত লেখক কি বলেছেন তারচে' কি বলেননি তা নিয়েই সমালোচনা করার অপচেষ্টা করেছেন তিনি। অনেক বাঙালি মুসলমান যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমালোচনা করেন এই বলে যে, কোনো মুসলমান কোন পরিবারকে ঘিরে তিনি কোনো লেখা লেখেননি।

বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি কোনো অভিনব বিষয় নয়। বাংলায় দুর্নীতি মানে হচ্ছে নীতির অভাব। দুর্নীতি বলতে আসলে তাই বুঝায়। নীতি যদি যৌক্তিক ও যথাযথ হয় তবে দুর্নীতি করাটা ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। যদি কোনো সমাজে দুর্নীতি করাটা ব্যয়বহুল হয় তবে সে সমাজে নীতির ব্যত্যয় খুব কম লোক করতে সাহস দেখায়। আমাদের দেশে নীতির চর্চা ও শিক্ষা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার দেশে নীতি মানা লোককে সাধারণত: বোকা হিসেবে দেখা হয়। সুতরাং শিশুরা মা-বাবার কাছ থেকেই নীতি ভাঙার শিক্ষা পায়। ট্রাফিকের লাল আলো মেনে রাস্তায় গাড়ি থামায় যে গাড়ি চালক তাকে সরল সোজা ভাবতেই আমরা পছন্দ করি।
নীতিহীনতা শুধু আমাদের সরকারী প্রতিষ্ঠানের একক সম্পত্তি নয়। নীতিহীনতা আমাদের পরিবারে আছে প্রচন্ডভাবে।
সরকারী প্রতিষ্ঠানের যে নীতিহীনতা নিয়ে এতো কথা হয় তা কিন্তু বলেন ব্যবসায়ীরা। এখানে তাদের সরাসরি স্বার্থের বিষয় জড়িত। মনে রাখতে হবে দুর্নীতি এক পক্ষের বিষয় নয়। পাঁচ টনের ট্রাক দশ টন মাল টানে বলেই, তার ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই বলেই, ড্রাইভারের লাইসেনস দুনম্বরী বলেই, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালামাল পরিবহন করছে বলেই, অথবা অন্য যেকোনো কারণে আইন ভঙ্গ করে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে বলেই ট্রাকচালকরা প্রকাশ্যে ট্রাফিক সার্জেন্টদেরকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে যাচ্ছে।
দুর্নীতি আলাদা কোনো ব্যাধি নয় যে একটি মহৌষধে এটি সেরে যাবে। দুর্নীতি যা কিনা নীতির অভাব, তা আরো অনেক বিষয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যে প্রতিষ্ঠান দক্ষতার সাথে কাজ করে না, হোক তা পরিবার হোক তা রাষ্ট্র তা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। অস্বচ্ছ কাজের পদ্ধতি, গোপনীয়তার সংস্কৃতি এবং স্বজনপ্রীতি দুর্নীতি লালন করে শক্তিশালী করে তোলে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিবানদের বাছাই না করা, সততাকে লালন করতে পারিশ্রমিককে যথাযথ না করা, নীতিবানদের পুরষ্কৃত ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তির ব্যবস্থার চর্চা না থাকলে দুর্নীতি পায় স্থায়ী রূপ। বাংলাদেশে দুর্নীতি স্থায়ী রূপ পেয়েছে। তবে একথা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, বাংলাদেশ এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ খুঁজে পাবে না।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।