সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা: একুশের মূল দাবী উপেক্ষিত

হীরক লস্কর এর ছবি
লিখেছেন হীরক লস্কর (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০২/২০০৬ - ৯:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ভাষার লড়াই ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য। তারপর আমরা 71-এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি, কিন্তু ভাষাকে কি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি সর্বস্তরে?

প্রতি বছর একুশে পদক পাচ্ছেন অনেকে। ভাষা প্রতিষ্ঠার কাজে তাদের কী অবদান? পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে এবার পদক পাওয়া 13 জনের 6 জন পদক পেয়েছেন রাজনীতির কারণে। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে এ আর এমন কি অসম্ভব কাজ।

ভাষা মতিন আজ বলেছেন গোলাম আজম বাংলা ভাষার লড়াকু সৈনিক ছিলেন না। এই ঘোষণাটা দরকারি ছিল কিন্তুআমরা অনেকেই এই সত্য জানতাম। যারা উদর্ু হরফে বাংলা লেখার পরামর্শ দেয়, নিজে রবীন্দ্র সঙ্গীত লেখার উদ্যোগ নেয়, বাংলাকে মনে করে হিন্দুদের ভাষা, তারা কী কারণে যুক্ত থাকবে ভাষা আন্দোলনের সাথে? তাদের উদ্দেশ্য ধর্মের ঝান্ডা ধরে ক্ষমতা আরোহণ। মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিতে তাদের শ্রদ্ধার কী প্রয়োজন। আমরা তা জানতাম। তবু ভাষা মতিন তা টিভি সাক্ষাৎকারে বলে প্রমাণ রেখে গেলেন। অন্তত: সেইসব ধর্মব্যবসায়ীদের ইতিহাস বিকৃতির ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানানোর একটি সূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে।

খোদ বাংলাদেশে বাংলা ভাষা এখনও সমাজের উচ্চ স্তরে পরিত্যাজ্য রয়ে গেছে। ভাষার ব্যবহার এখনও চালু হয়নি উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালতের রায়ের ভাষাও ইংরেজি। সে ইংরেজি যদি পাঠযোগ্য হতো তবু কথা ছিল না। সেও মান্ধাতা আমলেরও ঔপনিবেশিক ইংরেজি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য উচ্চশিক্ষার উপযোগী বই বাংলায় লেখা হয়নি। বাংলা একাডেমি বইমেলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে যায়, ভাষার জন্য জরুরি অনেক বিষয়ই তাদের করা হয় না।

অর্ধশিক্ষিত দর্জিমার্কা ব্যবসায়ী আর আদম ব্যবসায়ী থেকে হঠাৎ পাতিমন্ত্রী হয়ে যাওয়া রাজনীতিবিদরা দুলাইন বাংলা বলতে দশটা ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করেন। অথচ ইংরেজির বাঘা বাঘা শিক্ষক জিল্লুর রহমান সিদ্দীকী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কখনও ইংরেজি ব্যবহার করেন তাদের বক্তৃতায়। কোনো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করেই দিয়ে যান সাক্ষাতকার। অন্যদিকে দালালগোষ্ঠীর লবিং-এ ইংরেজিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নীতিমালা বানাতে থাকে সরকার। অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবচে বড় অবদান স্বৈরাচার এরশাদের। যেহেতু তার কবি হওয়ার সাধ ছিল সেহেতুএবং সৈয়দ আলী আহসানের সাথে তার সখ্যতার কারণে আমরা অনেক সরকারী সিদ্ধান্ত পেয়েছি যেগুলো বাংলা ভাষার জন্য ছিল সম্মানজনক। অন্যকিছু যদি বাদ দেই আন্তনগর ট্রেনগুলোর সুন্দর সুন্দর বাংলা নাম তার সময়েই দেয়া হয়েছিল। সে অন্য কথা।

প্রশ্ন হচ্ছে ঘটা করে ভাষা শহীদদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা দেখাই কিন্তু তাদের প্রাণদানের কারণটা বাস্তবায়ন করতে ভুলে যাই কেনো? মনে রাখতে হবে একুশের মূল দাবী ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা। সে দাবীর সূত্র ধরে রাষ্ট্র অর্জিত হয়ে গেছে। কিন্তু ভাষাটিকে যথাযথ স্থানে আমরা বসাতে পারিনি। কবে আমাদের সেই বোধোদয় হবে? কবে আমরা খোলস ভেঙে বেরিয়ে এসে নামবো প্রিয় ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।