প্রবাসে বাঙালি পুরুষের রান্না

হীরক লস্কর এর ছবি
লিখেছেন হীরক লস্কর (তারিখ: সোম, ২০/০২/২০০৬ - ৯:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আর সব বাঙালিদের কথা জানি না। তবে আমাদের বাসায় ছেলেদের রান্নাঘরে যাওয়াটা প্রায় নিষিদ্ধ ছিল। ঠিক কারণ কি জানি না। তবে আমরা যখনই রান্নাঘরে ঢুকতে চাইতাম, মা-চাচীরা তাড়িয়ে দিতেন। আমরা তাদের গোপন নৈপুন্য শিখে যাবো বলে?

প্রবাসে এসে আমার রান্নায় প্রথম হাতে-খড়ি। প্রথমে মুরগি। কামালভাই পরামর্শ দিলেন, তেল মশলা মাখিয়ে একবারে মুরগি বসিয়ে দিও চুলায় হয়ে যাবে। তো এই অদ্ভুত পদ্ধতিতে রান্না করে দেখলাম মন্দ হয়নি। প্রায় একইরকম স্বাদ। রান্নার আনন্দ তখন পেয়ে গেলাম। বিভিন্ন বাসায় গেলে সুযোগ পেলে খেয়াল করতাম রান্না র প্রক্রিয়া। মাঝখানে কয়েকবছর দেশে থাকায় আবার জং ধরে গেলো হাতে।

এবার বিলেত এসে রান্নাকে আবিষ্কার করলাম নতুন ভাবে। এবার সঙ্গী সিদ্দিকা কবীরের বই। রেসিপি নিয়ে মনোযোগী ছাত্রের মত রান্নাঘরে হামলে পড়লাম। একেকদিন একেক পদ। ভালোই হচ্ছে। সবাই উৎসাহ দেয়। সুতরাং আরো নতুন নতুন রান্না। রান্না যে একটা শিল্প এবং নেশা-এটাই নতুন করে বুঝলাম।

নতুন নতুন রেসিপি'র খোঁজ। লাইব্রেরিতে পেলাম দেবিকা রাণী চৌধুরানীর রান্নার বই। অনেক নতুন নতুন রান্না এতে। তা দেখে একদিন রান্না করলাম 'আজিজুল হক খিচুড়ি'। আহ নিজেরই জিভে জল চলে এলো। 'হোসেন বিরিয়ানি'-তাও এই বই দেখে। হাড়ি কিনে ফেল্লাম বড় একটা। বেশি বড় নয়, 6/7 কেজির। এবার লাগলাম কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে। এবং মোটামুটি সফল। অনেকগুলো রুই মাছের মাথা জমে গিয়েছিলো ফ্রিজে। একদিন তা নিয়ে রান্না করলাম 'মুড়িঘন্ট'। সিদ্দিকা কবীর খুলে তো হা। আমরা বাসায় যাকে মুড়িঘন্ট বলি তাতে ডাল থাকে। কিন্তু সিদ্দিকা কবীরের বইতে তো মুড়িঘন্ট চাল দিয়ে। পরে জানলাম অনেক এলাকায় তাই চল। যদিও সিদ্দিকা কবীরের রেসিপির এক ফোটা এদিক ওদিক যাই না, মুড়িঘন্টের ক্ষেত্রে গেলাম। এবং নিরীক্ষা সফল।

সুতরাং আরো কিছু নিরীক্ষা চললো। কিন্তু রেসিপি আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি। তো একদিন মনে হলো রেসিপি অনুসরণ করলেই ভালো রান্না হয় কিনা তা পরীক্ষা করা দরকার। একটি চাইনিজ রান্নার বই এনে রান্না করলাম চাইনিজ। এবং তা অত্যন্ত মজার হলো। আগে মাঝে মাঝে আমরা বাসার পাশের চাইনিজ টেক-ওয়ে থেকে খাবার আনতাম আর সুস্বাদু বলে খেতাম। এখন তা একেবারে বাদ। রেসিপি থাকলে রান্না আর কি এমন কঠিন?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।