১৪ ই ফেব্রুয়ারি: শরমিন্দা ভালবাসা

হীরক লস্কর এর ছবি
লিখেছেন হীরক লস্কর (তারিখ: বুধ, ১৫/০২/২০০৬ - ২:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


শফিক রেহমান বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালাবাসা দিবস চালু করার আগেই আমি ভালবাসা দিবসের আস্বাদ পেয়েছি। তবে বিদেশের মাটিতে। দেশে যাযাদি'র ভালবাসা দিবস সংখ্যা আর তাতে শত শত গল্প পড়ে বুঝেছি বাঙালির মন চিরকালই রোমান্টিক।

কিন্তু সেই যে কাদের ভাইয়ের কণ্ঠে হূমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন- মনে আছে কিনা পাঠকদের। বহুব্রীহি নাটকের জনপ্রিয় সংলাপগুলোর একটি। মামা আলী জাকের যখন সবার কাছে জানতে চাইছেন ভালবাসা কি, তখন সৈয়দ বংশের ছেলে কাদের ভাই মাথা নামি জবাব দিয়েছিল, 'ভালবাসা অইলো গিয়া একটা শরমের ব্যাপার'।

ভালবাসার প্রকাশকে আমাদের দেশে সঙ্গমের পূর্বরাগ হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়। তাই অনুমান করা হয় শোয়ার ঘরই হচ্ছে ভালবাসা প্রকাশের যথাযোগ্য স্থান। (অবশ্য পাটক্ষেত নাকি বাঙালিকে প্রেমকুঞ্জের সার্ভিস দিয়ে এসেছে। ) প্রকাশ্য ভালবাসা আজো আমাদের দেশে খুব একটা গ্রহনীয় হয়ে উঠেনি। হবেও না। যতদিন না প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়া সন্তানেরা বাবা-মায়ের সম্পত্তির লোভ ছেড়ে স্বাধীন হতে পারবে না। অর্থনীতি তাই বলে।

পশ্চিমা দেশগুলোতে রাস্তায় চুম্বনরত যুগল দেখা যায় সর্বত্র। শুধু যে তরুণ-তরুণীরাই জড়িয়ে থাকে পরষ্পর তা নয়। অনেক মধ্যবয়স্কদেরও আমি দেখেছি আদরে আহ্লাদিত হয়ে উঠতে। এসব দৃশ্যে লজ্জা অনেকেই পান। অনভ্যস্ত চোখে মনে হয় বিনা পয়সায় পর্ণো দেখছি। কিন্তু আমার ততটা খারাপ লাগে না। কেনো লাগবে? দেশে রাস্তায় যে অশ্রাব্য ভাষায় রিকশাওয়ালাদের ঝগড়া দেখি, যখন তখন সংঘর্ষ দেখি, হাতাহাতি দেখি, রক্তপাত দেখি তার চেয়ে অনেক ভালো এই আলিঙ্গন, এই মধুর চুম্বন।
আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদের চেয়ে ভালবাসার দৃশ্য বেশি মধুর। আমি তাই প্রকাশ্য বিবাদের চেয়ে প্রকাশ্য ভালবাসার পক্ষে। প্রকাশে ঘুষাঘুষির চেয়ে প্রকাশ্যে চুমুর পক্ষে।

কিন্তু যত ভালবাসা মনে থাকুক বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীদের তা লুকিয়ে রাখতে হবে একটু আড়ালের জন্য। ভালবাসা তাদেরকে আলাদা করে দেয় ।সরিয়ে নেয় আড়ালে, আবডালে। ভালবাসা যেন অপ্রাকৃতিক। খোলা প্রকৃতির মাঝে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা কোনো গভীর রোমান্টিক মূহুর্তে একজনের ঠোঁটে ঠোট ডুবাতে পারবে না। এও কি সম্ভব? যারা ভালবাসায় বিশ্বাসী তারা হয়তো ধীরে ধীরে এই জাল থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করবেন।

সত্তুর-উধর্্ব শফিক রেহমানের মত আরো অনেক প্রেমময় মানুষের প্রয়োজন। যারা ভালবাসাকে শরমের হাত থেকে বাঁচাবেন। আহা, তরুণ তরুণরা ফুলের মত বাতাসে দোল খেয়ে খেয়ে প্রেম করে বেড়াবে। বোমা নি েয় তেড়ে আসবে না পরষ্পরের প্রতি। ভাবতেই চোখটা বড় হয়ে যায় বিস্ময়ে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।