গ্যাস সম্পদ - বানিজ্যিক প্রেক্ষিত এবং প্রস্তাব গুলো

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/০৭/২০০৯ - ১০:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছুদিন আগে সচলায়তনে 'গ্যাস সম্পদ, মতদ্বৈততা এবং আমাদের অপেক্ষার প্রহর' নামে একটা ব্লগ লিখেছিলাম। এই লেখাটা তারই ধারাবাহিকতা বলা যায়। মুল অর্থের অতিরিক্ত দ্যোতনা থাকায় আমি কিছু কিছু ইংরেজী প্রতিশব্দ ব্যাবহার করেছি এই লেখায়। শুরুতেই আমাদের দেশে জ্বালানির (জীবাশ্ব অথবা এর বিকল্প) ভবিষ্যত সংকটের একটা সম্ভাব্য ছবি একেঁ নেই।

আমি নিচে যে গ্রাফটা ব্যাবহার করেছি তা উড ম্যাকেঞ্জীর (Wood Mackenzie) জানুয়ারী ২০০৬ সালে তৈরী করা 'পেট্রোবাংলা - বাংলাদেশ গ্যাস সেক্টার মাষ্টার প্ল্যান' এর চুড়ান্ত রিপোর্ট থেকে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা/যোগানের ভারসাম্য (কেইস সি)
(পৃষ্ঠা ১১৩, ফিগার ৩-১৪)

auto

রিপোর্টে গ্যাসের চাহিদার তিনটি সম্ভাব্য প্রক্ষেপণ তৈরী করা হয়েছে। কেইস 'সি' বা যে প্রক্ষেপণটি ব্যাবহার করা হয়েছে তা আসলে আপার কেইস (upper case) প্রক্ষেপণ। যেহেতু এই রিপোর্টটা এখন 'জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত' এবং এই গ্রাফ ব্যাবহার করার উদ্যেশ্য গ্যাসের চাহিদা এবং যোগানের একটা ধারনা দেয়া, তাই কেইস 'সি' নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনা করলাম না। (এই লেখাতে কোথাও কোথাও আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যার ইচ্ছে হয়েছে - সময়ের অভাবে, অনেক বড় হয়ে যাবে ভেবে অথবা একটা প্রাথমিক রচনার জন্য বিস্তারিত ব্যাখ্যার দরকার নাই মনে হওয়ায় সচলায়তন থেকে ধার করা প্রিয় একটা পরিভাষা ব্যাবহার করেছি ["পরে কমু"]। স্বীকার করতে হয় খুবই শক্তিশালী পরিভাষা - কর্পোরেট জগতে আমি মাঝে মাঝেই ব্যাবহার করি - আই উইল এক্সপ্লেন ল্যাটার, অথবা আরো বিনয়ী, মে বি আই উইল এক্সপ্লেন ল্যাটার সামটাইম।)

যাই হোকে। গ্রাফের দিকে চেয়ে দেখুন প্রুভড এবং প্রবেবল রিজার্ভের সাথে চাহিদার পার্থক্য কিভাবে বেড়ে যাচ্ছে। পসিবল, ইয়েট টু ফাইন্ড (ওয়াই,টি,এফ) গননায় ধরা যাচ্ছে না। রিজার্ভের এই পরিভাষা গুলোর পার্থক্য পরে আলোচনা করছি।

সহজভাবে বুঝার জন্য আমি আরেকটা গ্রাফ ব্যাবহার করেছি। এই গ্রাফটা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ শুধুমাত্র কোন একটা আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ২০০৭ সালের দিকে তৈরী করেছিল। এখানেও আমি শুধুমাত্র চাহিদার 'আপার কেইসটা' ব্যাবহার করেছি।

auto

এই 'আপার কেইস' চাহিদার এই প্রক্ষেপণ তৈরী করতে যে সকল বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে দাবী করা হয় তা হল - তখনকার গ্যাসের চাহিদা, সরকারের যেসকল প্রজেক্ট 'একনেকে' পাশ করা হয়েছিল বা পাশের আপেক্ষায় ছিল এবং অন্যান্য যে সকল প্রজেক্ট সরকারের বিবেচনাধীন ছিল, অথবা প্রপোজালের পার্যায়ে ছিল তার জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাহিদার যোগফল। (এই মুহূর্তে আমার হাতের কাছে উপাত্ত নেই, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আরো নতুন নতুন প্রজেক্ট বিবেচনায় আসছে)। এই গ্রাফের উদ্যেশ্য কিন্তু শুধুমাত্র গ্যাসের চাহিদার সম্পর্কে একটা ধারনা দেওয়া - চাহিদা এবং যোগানের বিতর্কহীন প্রক্ষেপণ তৈরী করা না।

দেখুন চাহিদা এবং যোগানের গ্যাপ কিভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এ থেকে মোটামোটি ভাবে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে আমরা একটা বড় জ্বালানি সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সমস্যা সমাধানের ধীর গতির সম্ভাব্য কারন আমাদের বের করার আগে কয়েকটা জিনিস একটু ব্যাখ্যা করা দরকার।

গ্যাসের রিজার্ভ

গ্যাস কিংবা হাইড্রোকার্বনের রিজার্ভকে কয়েক ভাবে প্রকাশ করা হয়, খুবই সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলঃ

প্রুভড (প্রমানিত) - বলতে সাধারনত সেই পরিমান হাইড্রোকার্বন রিজার্ভকে বুঝায় যা ভৌগলিক এবং প্রকৌশল উপাত্তের উপর ভিত্তি করে 'রিজনেবল সার্টেনিটিতে' আনুমানিক হিসাব করা হয়। এখানে ধরা হয় কিছু কিছু ব্যাপার অপরিবর্তীত থাকবে। বিস্তারিত পরে কমু। এটাকে আবার পি ৯০ হিসাবে বলা হয় - যা আসলে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত একটি হিসাব - ৯০ ভাগ পসিবিলিটি ধরা হয় যে আনুমানিক হিসাব ঠিক আছে।

প্রবেবল - এখনো অপ্রমানিত, কিন্তু ভৌগলিক এবং প্রকৌশল উপাত্তের উপর ভিত্তি করে যে আনুমানিক হিসাব করা হয়েছে, তা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটাকে আবার পি ৫০ হিসাবে বলা হয় - যা আসলে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত একটি হিসাব - ৫০ ভাগ পসিবিলিটি ধরা হয় যে আনুমানিক হিসাব ঠিক আছে।

এই দুইয়ের যোগফল ২ পি (প্রুভড+ প্রবেবল) বলা হয়। সাধারনত যোগানের প্রক্ষেপণ তৈরী করতে পি ২ ব্যাবহার করা হয়।

অন্যান্য পরিভাষা গুলো পরে কমু। শুধু জেনে রাখুন পসিবল রিজার্ভকে প ১০ হিসাবে প্রকাশ করা হয় এবং এটা একটা পরিসংখ্যান সংক্রান্ত একটি হিসাব' বাকীটা নিজে বুঝে নিন।

গ্যাসের মুল্যায়ন - গ্যাসের বন্টণ

আইওসিদের সাথে স্বাক্ষরিত পিএসসির অধিনে যে গ্যাস উত্তোলন করা হয় তার মুল্যায়ন কীভাবে করা হয়, অথবা গ্যাস/বিক্রীত অর্থ কীভাবে বন্টন করা হয়? যেহেতু আইওসিদের সাথে স্বাক্ষরিত পিএসসি বা জিপিএসএকে (গ্যাস পারচেজিং এন্ড সেলিং এগ্রিমেন্ট) সাধারনত গোপনীয় বলে ধরা হয়, লোকজন নিজের মত করে এগুলো ইন্টারপ্রেট করে নেয়। এবং এই 'সাবজেক্ট-টু-ইন্টারপ্রেটেশন' এর সুযোগে বিষয়টা যারা বুঝে, তারাও তাদের মত করে বলে যায়। আমার মনে হয় একটা ছোট উদাহরন দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যায়।

প্রথমে আসি গ্যাসের মুল্যায়নের ব্যাপারটাতে। গ্যাসের দাম সাধারনত সিংগাপুর ভিত্তিক High Sulfur Fuel Oil (“HSFO”) মুল্যের সাথে লিংক করা থাকে (ভগ্নাংশ মাত্র)– যার ফলে HSFO মুল্যের উঠানামার সাথে সাথে গ্যাসের মুল্যেরও পারিবর্তন হয়। তবে গ্যাসের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মুল্য ‘ক্যাপ’ করা থাকে। তার মানে যদিও HSFO মুল্যের উঠানামার সাথে গ্যাসের মুল্যেরও পারিবর্তন হয় কিন্তু তা ‘ক্যাপড’ সর্বোচ্চ মুল্যের উপরে উঠে না অথবা সর্বনিম্ন মুল্যের নীচে নামে না। এত মুল্যায়নের ব্যাপারটা গেল।

এখন আসি বন্টনের ব্যাপারটাতে। আইওসিরা প্রাথমিক অবস্থায় বেশ বড় ধরনের বিনিয়োগ করে। সফল গ্যাস আবিষ্কার এবং উত্তোলনের ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগের এবং উত্তোলন খরচের সরকার দ্বারা ‘এপ্রুভড’ অংশ আইওসিরা গ্যাস বিক্রীর টাকা থেকে ‘কস্ট-রিকভারীর’ আওতায় সরকারের কাছ থেকে পেতে পারে। একটা উদাহরন দেয়া যাক। ধরে নিলাম কোন এক মাসে ১০০ ইউনিট গ্যাস উঠানো হয়েছে এবং ঐ মাসে প্রতি ইউনিটের দাম ১ টাকা। তাহলে সেই মাসে গ্যাসের মোট দাম দাড়ালো ১০০ টাকা। এই টাকার, ধরি সর্বোচ্চ ৫০% কস্ট-রিকভার করা যাবে, এবং আরও ধরি যে পুরোটাই কস্ট-রিকভারী করা হল। বাকী রইল ৫০ টাকা - যাকে বলা হয় 'প্রফিট গ্যাস'। এই প্রফিট গ্যাসের একটা অংশ পায় সরকার এবং একটা অংশ পায় আইওসি। ধরলাম ৬০% পাবে সরকার এবং ৪০% পাবে আইওসি। তাহলে আইওসির পরিমান হবে ২০ টাকা (৫০ টাকার ৪০%)। তার মানে ঐ মাসে ১০০ ইউনিট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে দেয়ার জন্য আইওসি সরকারের কাছ থেকে পাবে ৭০ টাকা (৫০+২০)। যখন প্রাথমিক বিনিয়োগের টাকা রিকভার হয়ে যাবে, তখন শুধু উত্তোলন পরিচালনার ব্যয় রিকভার করা হবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই প্রফিট গ্যাসের পরিমান বেড়ে যাবে।

বোন অভ কন্টেনশন

এখন আমরা সমুদ্রসীমায় গ্যাস খোঁজার দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করি। এখানে তিনটি বিষয় আছে। প্রথমটি পদার্থবিদ্যা সম্পর্কীত (!)এবং বিষয়ের নাম – জড়তার সুত্র (law of inertia)। নিউটন সাহেবের প্রথম সুত্র অনুযায়ী - "A body persists its state of rest or … unless acted upon by an external unbalanced force." ভারত এবং মায়ানমারের গ্যাস আবিষ্কারের পর "স্টেট অভ রেস্ট” থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের প্রসেস শুরু হল মাত্র। দ্বিতীয়টি আন্তর্জাতিক, যা ভারত এবং মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত এবং যার সমাধান কুটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশনের আওতার করতে হবে।

তৃতীয়টি আভ্যন্তরীণ এবং প্রধান ইস্যুটি আমার কাছে মনে হয় পিএসসিতে 'গ্যাস রপ্তানির সুযোগ'। উপরের গ্রাফ গুলির দিকে তাকান, এই যদি হয় চাহিদা এবং যোগানের অবস্থা তবে 'গ্যাস রপ্তানির সুযোগ' রাখা তো আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় না সম্পুর্ন 'সুস্থমস্তিষ্কজনিত'। যারা এই সুযোগ বজায় রেখেছেন তাদের যুক্তি 'আগের পিএসসি' তে ছিল। আমার মনে হয় না ব্যাপারটা এত সহজ। আমার ধারনা 'গ্যাস রপ্তানির সুযোগ' ব্যাপারটা অইওসিদের আকৃষ্ট করার জন্য এক ধরনের 'ভ্যালু প্রোপজিশান'। ব্যাখ্যা করি।

গভীর সমুদ্রসীমায় গ্যাস খোঁজার জন্য একটি অইওসিকে প্রাথমিক ভাবে ৬/৭ বছর আনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হবে (৩০০ - ৭০০ মিলিয়ন ডলার)। নিশ্চই সেই অইওসি চাইবে বিনিয়োগ শেষে সেই টাকা তাড়াতাড়ি উঠে আসুক। সম্ভবত সেই জন্যই গ্যাসের চাহিদার একটা নিশ্চয়তা চাইবে সেই অইওসি। গ্যাস রপ্তানি যেহেতু আভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর নির্ভর করে না - দ্রুত অনেক গ্যাস রপ্তানি করা সম্ভব এবং তাড়াতাড়ি বিনিয়োগের টাকা উঠানো সম্ভব।

এই বিষয়ে এবং আরও কিছু বিষয়ে আমি আমার মাতামত নিচে দিলাম। এটা এক ধরনের ধৃষ্টতা হয়তবা। 'বিশেষজ্ঞরা' যেখানে বছরের পর বছর এগুলো নিয়ে চিন্তা করছে, সেখানে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মতামত দেয়া একধরনের ধৃষ্টতাইতো।

রপ্তানী - হ্যাঁ বা না
প্রথমেই আমাদের দরকার 'জ্বালানি নিরাপত্তা' নামক অতি-ব্যাবহারে জরাজীর্ন এবং রেটোরিক হিসাবে ব্যাবহ্র্রত শব্দটিকে বাস্তবে একটি 'স্ট্র্যাটেজি পেপারে' পরিনত করা। এবং এটা হতে হবে খুব ভাল ভাবে তৈরী করা একটা দলিল। এখানে আগামী ২৫ বছর বা তারও বেশী সময়ের জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যাপারটা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গুলি থাকবে।

আমি আমাদের পিএসসির 'রপ্তানীর' অংশটা পড়েছি। এখানে কোন শর্তাবালী যোগ করা হয় নাই বা কোন পূর্বশর্ত নাই। আমার অন্য একটি দেশের পিএসসি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানেও কিন্তু রপ্তানীর সুযোগ দেয়া ছিল এবং আমাদের সাথে সেই পিএসসির পার্থক্য ছিল - সেখানে খুব পরিষ্কার ভাবে রপ্তানীর কিছু পূর্বশর্ত ছিল।

তাই আমাদের রপ্তানীর সুযোগ থাকবে কিনা তা সেই স্ট্র্যাটেজি দলিলই নিশ্চিত করবে। যদি রাখতেই হয় তবে তা হবে শর্তসাপেক্ষ এবং জ্বালানি নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত। এটা নিয়ে অচলায়তনের সৃষ্টির কোনই সুযোগ থাকবে না। বিস্তারিত পরে কমু।

বাপেক্সের অংশদারীত্ব

বাপেক্স হল পেট্রোবাংলার একমাত্র সাবসিডিয়ারী যা তেল এবং গ্যাস অনুষন্ধান এবং উত্তোলনের কাজ করে থাকে (এবং একমাত্র বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান)। বাপেক্সের শুধুমাত্র ভুমিতে তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের কাজের অভিজ্ঞতা আছে। বাপেক্স সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধানের জন্য পিএসসিতে একটা নন-অপারেটর পক্ষ হতে পারে যার অংশদারীত্ব থাকবে ৩০-৪০ ভাগ। তার মানে কী? মানে হল প্রাথমিক বিনিয়োগের ৩০-৪০% বাপেক্স করবে এবং কস্ট-রিকভারীর এবং প্রফিট-গ্যাসের সরকারের অংশ বাদ দিয়ে বাকী অংশের ৩০-৪০% পাবে। কিন্তু আইওসি অপারেটর হিসাবে কাজ করবে, এতে লাভ কী?

প্রথমত, বাপেক্স সমুদ্রে তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের কাজে অভিজ্ঞতা লাভ করবে। দ্বিতীয়ত, আইওসিরা এক ধরনের নিশ্চয়তা পাবে এবং বাপেক্সেরও কন্ট্রোল থাকবে। বিশেষ অবস্থায় রপ্তানীর বিকল্প হিসাবে আইওসির গ্যাসের অংশকে উত্তোলনের অগ্রাধিরার দেয়া যেতে পারে। সবশেষে বৈদেশীক মুদ্রার সাশ্রয়ের ব্যাপারটাতো আছেই।

আরও কিছু ইস্যু আছে - বিস্তারিত পরে কমু।

তবে মুল ইস্যু হল প্রাথমিক বিনিয়োগের ব্যাপারটা। এত টাকা পাবে কই বাপেক্স। সমাধান হল - 'ক্যারিড ইন্টারেস্ট' এর মডেল। তার মানে হল প্রাথমিক ভাবে অইওসি বাপেক্সের বিনিয়োগের অংশটা বহন করবে। উত্তোলনের স্টেজে অগ্রাধিরার ভিত্তিতে তা নিয়ে যাবে।

সাইজমিক ম্যাপিং

আমার জানামতে আমাদের সরকারের কাছে গভীর সমুদ্রের সাইজমিক উপাত্ত নাই। ভারত যখন তাদের গভীর সমুদ্রের ব্লক গুলির জন্য বিড ডেকেছিল - তখন আইওসি গুলোর সুযোগ ছিল চড়ামুল্যে উপাত্ত কিনে নেয়ার। বাংলাদেশে সরকারের উচিত গভীর সমুদ্রের সাইজমিক উপাত্ত সংগ্রহ করা। কিন্তু কিভাবে, কে দেবে টাকা?

তৃ্তীয় পক্ষকে দিয়ে এবং টাকা দিবে তৃ্তীয় পক্ষ। শর্ত অনুযায়ী তৃ্তীয় সাইজমিক উপাত্ত গুলো সরকারকে দিবে তৃ্তীয় পক্ষ। সরকার গ্যাসের সম্ভাবনা সম্বন্ধে একটা ভাল ধারনা পাবে। তৃ্তীয় পক্ষ বিডে অংশগ্রহনকারী আইওসিদের কাছে শর্তসাপেক্ষে বিক্রী করতে পারবে তাদের টাকা উঠানোর জন্য।

বাপেক্সের পেশাদারিত্ব বাড়ানো এবং উন্নয়ন

কী করছে এ ব্যাপারে সরকার? ২০০৭ সালে যখন তেলের দাম আকাশ ছোঁয়েছিল তখন কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মত আইওসি তৈরী হয়েছিল এবং তাদের পেশাদারিত্ব ছিল। আর আমাদের বাপেক্স তো চার দশকের একটি প্রতিষ্ঠান।

আরেকটা তথ্য - পিএসসির আওতায় আইওসিরা কিন্তু বাপেক্সের উন্নয়নের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা খরচে বাধ্য। সরকারকে পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য একটা পরিকল্পনা করতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা ভাল লোককে ধরে রাখতে হবে।

বুয়েটের আন্তরিকতা

বুয়েটে মাস্টার্স লেভেলে Petroleum Engineering আছে এবং Bachelor level এ Chemical Engineering আছে। বুয়েট কী আজ পর্যন্ত কোন আইওসি সাথে পার্টনারশীপে তার ছাত্রদের প্র্যাকটিক্যালি শিখার জন্য কোন ব্যাবস্থা করতে চেষ্টা করেছে? তাকিয়ে দেখুন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর দিকে। আমি আবারও সেই কথাটা বলতে চাই, degree opens the door, still experience is the best teacher.

আরো কিছু প্রস্তাবনা আছে - হয়ত পারে আবার লেখব।


মন্তব্য

দিগন্ত এর ছবি

বাংলাদেশে গ্যাস ব্যবহারে অভ্যাসের ব্যাপারটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মানে ধরুন গ্যাস ব্যবহারের চাহিদা বাড়তেই থাকবে - তখন বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানী করতে হবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দুর্দান্ত এর ছবি

বাংলাদেশে গ্যাস ব্যবহারে অভ্যাসের ব্যাপারটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশ আমরা গ্যাস খাই, তা দিয়ে গাড়ী চালাই, কল কারখানা চলে। ভেতো বাংলাদেশীর সবাই চুলোয় গ্যাস জ্বালায় না ঠিক, তবে খাদ্যের একটা বড় অংশ এই গ্যাস ভিত্তিক ইউরিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এটা রাতারাতি পাল্টাবে বলে মনে হয় না।

নবায়নযোগ্য জ্বালানী হয়তো নতুন পথ দেখাবে, কিন্তু সেটি ধর্তব্যের আকার নিতে কয়ে দশক লাগবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার অথবা গ্যাস বা কয়লা আমদানী ছাড়া অন্য কোন গতি নেই।

নৈষাদ এর ছবি

এডিবির ২০০৭ সালের একটা রিপোর্ট দেখলাম গ্যাসের ব্যাবহার - ৫২% পাওয়ার, ২০% সার, ১৭% আবাসিক, শিল্প ইত্যাদি এবং ১১% অন্যান্য।

নৈষাদ এর ছবি

যতক্ষন পর্যন্ত বিকল্প পাওয়া না যাচ্ছে, গ্যাস সম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহুর্তে গ্যাসের ৫০% ভাগের উপর পাওয়ার জেনারেশনে ব্যয় করা হচ্ছে (ক্যাপটিভ পাওয়ার ছাড়া)। আমদানীর ব্যাপারটা জানি না - তবে সরকার মায়ানমারের কাছ থেকে আমদানী করার চেষ্টা করেছিল।

দুর্দান্ত এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে। পরে কমুর কথাগুলো একে একে আসুক।
--
১. দ্বিতীয় গ্রাফটি দেখতে পাচ্ছি না।
২.
বাপেক্সের শুধুমাত্র ভুমিতে তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের কাজের অভিজ্ঞতা আছে।

এখানে অভিজ্ঞতাকে কত গভীর ধরা হচ্ছে জানি না। যদি বাপেক্সের কর্মকুশলীদের যোগ্যতা আর অফ-শোরে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা বলেন, তাহলে আমি বংগোপসাগরের অন্তুত তিনটি ড্রিলিং সাইকেলে আমি দুজন পেট্রোবাংলার প্রকৌশলীকে রোটা ডিউটিতে থাকতে দেখেছি; রিগে যাবার আগে এরা সবাই এবার্ডিনে মাসব্যাপি অফশোর ড্রিলিং কোর্সে ও সিঙ্গাপুরে সপ্তাহব্যাপি অফশোর সেফটি কোর্সে গেছেন, এটাও ঘটনা।

আইওসি যে নিজে সব কাজ করে তা তো নয়, তারা থাকে পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রনে, মাঠের কাজ তো করে বিভিন্ন ওয়েলফিল্ড সার্ভিস কোম্পানি - বলতে পারেন তাদের বাছাই ও চুক্তিবদ্ধ করার অভিজ্ঞতা বিশেষ জরুরী। যদি এইসব প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতার কথা বলেন, তাহলে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কস্টরিকভারি পর্যন্ত পেট্রোবাংলার একটি অংশতো ওতপ্রত ভাবে জড়িত সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। এই অভিজ্ঞতা কি শুরু করার জন্য যথেষ্ট নয়? আপনার ভাষাতেই

" ২০০৭ সালে যখন তেলের দাম আকাশ ছোঁয়েছিল তখন কিন্তু যুক্তরাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মত আইওসি তৈরী হয়েছিল এবং তাদের পেশাদারিত্ব ছিল। আর আমাদের বাপেক্স তো চার দশকের একটি প্রতিষ্ঠান। "

পেট্রোবাংলার 'অভিজ্ঞতা' নেই বলে দায়িত্ব এড়ানোটা আর সম্মানজনক নয়।

৩.

'সাইজমিক উপাত্ত গুলো সরকারকে দিবে তৃ্তীয় পক্ষ। সরকার গ্যাসের সম্ভাবনা সম্বন্ধে একটা ভাল ধারনা পাবে। তৃ্তীয় পক্ষ বিডে অংশগ্রহনকারী আইওসিদের কাছে শর্তসাপেক্ষে বিক্রী করতে পারবে তাদের টাকা উঠানোর জন্য।'

পেট্রোবাংলার নিজের কাছে টাকা নেই? পেট্রলবিক্রির শুল্কআয় থেকে ফ্রিগেট আর সরকারি গাড়ী না কিনলেই কিন্তু দুই চারটা সিস্মিকের টাকা ওঠে। একান্তই যদি তৃতীয় পক্ষকে দিতে হয় তাহলে টোটাল শেভ্রন জাতীয় গ্যাস কম্পানীগুলোকে বাদ দিয়ে শুধু উপাত্তসংগ্রহে স্পেশালিস্ট যেমন ফুগ্রো বা জন উড ইত্যাদিকে সরাসরি চুক্তি দেয়া যেতে পারে।

নৈষাদ এর ছবি

বাপেক্সের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আপনার সাথে সহমত। বাপেক্সের একজন করে প্রকৌশলী অফশোর ড্রিলিংএ 'অবজারভার' হিসাবে থাকে। দেখুন বাংলাদেশে অফশোর ড্রিলিংএর প্রায় পুরোটাই 'আউটসোর্সড'। কিন্তু আপনি যেটা বলেছেন - এর জন্য পরিকল্পনা, একটা টিমকে এক করা, কোর্ডিনেশন, নিয়ন্ত্রন, এবং রিলেটেড ব্যাপারে অভিজ্ঞতা এবং পেশাদারীত্ব দরকার। 'পেট্রোবাংলার 'অভিজ্ঞতা' নেই বলে দায়িত্ব এড়ানোটা আর সম্মানজনক নয়।' - সহমত। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল - ভাল লোক রিটেনশন। আমার একটা ম্যাপিং করার সুযোগ হয়েছিল - বুয়েটের অনেক যোগ্য ব্যাক্তি পেট্রোবাংলা ছেড়ে বিদেশে আইওসিতে কাজ করছে।

সাইজমিক উপাত্তর ব্যাপারেও সহমত। সাধাবনত ফুগ্রো বা জন উড জাতীয় প্রতিষ্ঠানই এধরনের কাজ করে - আইওসিরা হয়ত এসব কাজ করবেও না।

হিমু এর ছবি

ফ্লিকার থেকে কীভাবে ফোটো এমবেড করতে হয়, দেখুন নিচের ভিডিওটিতে।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।