অপ্রীতিকর

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: সোম, ২৮/০২/২০১১ - ৪:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টাকাটা ভীষণ ময়লা। লোকটাও। আপাদমস্তক নোংরা একটা লোক ততোধিক নোংরা একটা নোট বাড়িয়ে দিচ্ছে তাকাতেও গা ঘিনঘিন করছে। টাকাটা নোংরা হলেও মূল্য তার নতুন নোটের মতোই। জমিরুদ্দিনের মাথায় ব্যাপারটা গোলমেলে ঠেকে। মানুষ নোংরা হলে তাকে আমরা ঘরের ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেই না, আর ময়লা টাকা অবাধে বুক পকেটে নিয়ে ঘুরি। মানুষ আর টাকা দুটোর মধ্যে টাকারই জিত। যদিচ টাকা মানুষের সৃষ্টি, কিন্তু সৃস্টিকর্তার চেয়ে সৃষ্টির মূল্য বেশী এখানে। যত্তসব অজাচার!

জমিরুদ্দিন একসময় নতুন টাকার মতো টাটকা ছিল। কর্মসময় ফুরিয়ে অবসরে যাবার পর থেকে ময়লা জীবন শুরু। সবকিছু দীনহীন হতে থাকে, পরনের ফতুয়ার পেছনের কোনা দুটো নৌকা হয়ে থাকে। পুত্রকন্যাগণ নিতান্তই দায়সারা ভাবে কাছে আসে। বাড়ীটা নেহায়েত তার নামে বলেই। স্ত্রী বিগত হয়েছে অবসরে যাবারও আগে। একাকীত্বের স্বাদ নতুন কিছু নয়। স্ত্রী থাকলে অবসর পরবর্তী সময়ে তাকে কিরকম সমাদর করতো বলা মুশকিল।

জমিরুদ্দিন হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিল। ভিক্ষুকটাকে দশ টাকার নোটটা দিয়ে পাঁচ টাকা ফেরত চেয়েছে। আগে কখনো এই কাজ করতো না। পুরো দশ টাকাই দিয়ে দিত। কিন্তু অবসরে যাবার পর থেকে পকেটে কতো টাকা আছে তার মুখস্ত। আগে কখনোই মানিব্যাগে থাকা টাকার পরিমাণ জানতো না।

আয়ু বেশী নেই তার। ফুরিয়ে আসছে আয়ু আর ব্যাংকের বাজেট। তার ইচ্ছে ব্যাংকের বাজেট যেন আয়ুবাজেটের চেয়ে একটু বেশী দীর্ঘায়িত হয়।

টাকাটা ফেরত দিয়েও ভিক্ষুকটা চলে গেল না। সামনে দাঁড়িয়ে রইল। কিছু একটা বলবে। দোয়া করবে? বিরক্তি লাগে এই ব্যাপারটা। টাকা দিয়েছি, নিয়ে চলে যা।

অ জমির। ভিক্ষুকের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠে সে। ভালো করে তাকায় দাড়িগোঁফে সাদা জঙ্গলের ভেতরে তোবড়ানো মুখটার দিকে। চশমাও আছে যার ডানচোখের কাঁচে পরিষ্কার ফাটল।

অ জমির, তুই আমারে চিনছোস? আবারো ডাকলো ভিক্ষুকটা।

জমিরুদ্দিন চশমাটা ভালো করে মুছে আবার তাকায়। কে লোকটা? তার নাম জানে কি করে? তার কোন বন্ধু দেউলিয়া হয়ে ফকির বনে গেছে.....হতেই পারে না।

আমি শফিউল। কোনাবাড়ির শফিউল.............এটুকু শুনেই স্মৃতি এক লাফে তাকে ইতিহাসের এক চরম অপমানজনক অধ্যায়ে নিয়ে যায়। চল্লিশ বছর পেছনে।

কিন্তু এই শফিউল তো খুন হয়ে যাবার কথা। ভিখিরি সেজে পুলিশের চর হয়ে কি সে আজ এই বাড়িতে? মাথা থেকে টাকাপয়সার দর্শন সব উবে যায়। চল্লিশ বছর আগে শফিউল তাকে চরম অপমান করেছিল, মরে যাবার মতো ঘেন্না লেগেছিল নিজেকে। সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে শফিউলকে ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে খুন করার জন্য এক লাখ টাকা নগদ দিয়েছিল জমিরুদ্দিন।

"আমি তোমাকে চিনি না!!"

ভয়ে ঘামতে থাকলেও ভেতরটা শক্তই তার। হাতের লাঠিটা মুঠো করে ধরে রাখে। এই লাঠিতে ভর না দিয়ে সে উঠে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু খুনের মামলায় ফেঁসে যাবার ভয় তাকে লাঠি ছাড়াই দাঁড় করিয়ে দেয়।

"আমি তোকে চিনিনা, যা দূর হ এখান থেকে।" ক্রোধ আর অচেনা ভীতিতে চিৎকার করে ওঠে জমিরুদ্দিন।

পাড়া কাঁপিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে শফিউল। জমিরুদ্দিনের পাঞ্জাবীটা ভিজে গেছে, ভেতরের গেঞ্জী থেকে ঘামের ধারাটা কোমর হয়ে হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে। এখুনি বদলানো দরকার। কিন্তু তার আগে এই বদমাশটাকে তাড়াতে হবে।

কিন্তু অট্টহাসিটা তাকে এতটা ভারসাম্যহীন করে যে হাতের লাঠিটা অজান্তেই শফিউলের মাথায় নেমে আসে।
এবং এক আঘাতেই শফিউলের পতন।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্বে তার মুখ দিয়ে গড়গড় শব্দে বেরুনো বাক্যটা, "এবার তোরে ফাঁসিতে ঝুলানো গেলরে হারামজাদা।"

বারান্দায় ভেসে যাওয়া রক্তের মধ্যে পতিত শফিউলের কুঁচকানো কপালের নীচে আধভাঙ্গা চশমার কাঁচে জমিরুদ্দিনের ফাঁসিকাষ্ঠের ছবিটা যেন ভেসে উঠলো।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটি ছোট হলেও যথেষ্ঠ ঝরঝরে.....। ভালু পাইলাম।

---- নুর নবী দুলাল

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ভালু পাওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

কৌস্তুভ এর ছবি

হুমম। মানুষের ব্যাপারস্যাপার সবই অদ্ভুত!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মানুষ একটা বিস্ময়কর সৃষ্টি হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভালো লাগলো।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

টানটান কাহিনি। ধন্যবাদ নীড়দা।

-মাইনুল এইচ সিরাজী

নীড় সন্ধানী এর ছবি

টানটান নাকি টানাটানি? কেমন আছেন, আপনাকে এখানে দেখে ভাল্লাগছে হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

ময়লা টাকা আর মানুষের তুলনাটা চমৎকার লাগলো! গল্পটা ভালো লেগেছে সেকথাও জানিয়ে গেলাম হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

তালগাছটা আপনাকে দিলাম আপনার

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে নামটা লেখতে ভুলে গিয়েছিলাম আগের মন্তব্যে।
- আয়নামতি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো প্লটটা।

-অতীত

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সুপ্রিয় দেব শান্ত (অতিথি) এর ছবি

ভালো লাগলো। মানুষের আর টাকার মধ্যে তুলনাটা চমৎকার হয়েছে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি সন্ধ্যা এর ছবি

ভালো লাগলো হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো লাগসে। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বেশ লেগেছে

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ভালো আছি এর ছবি

এত স্পিডি গল্প ,শুরু নাই করতে যেন শেষ হয়ে গেল,
আরও লেখা ছাই,
দারুন গল্প
চলুক

ভালো আছি এর ছবি

দুঃখিত, লেখা চাই...।
বানান ভুল হইসিলো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।