আঁকটোবরের প্রথম সপ্তাহে সরবত খানের বিড়ম্বনা

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: শুক্র, ০৭/১০/২০২২ - ১২:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি ছবি আঁকতে পারি না। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় শেষ ছবিটা এঁকেছিলাম একটা মুরগির ডিমের খোসায়। তারপর থেকে আর কখনো রঙপেন্সিল হাতে নেইনি। গতকাল সরবত খানের ঘটনাটা লেখার পর মনে হলো এটার সাথে একটা ছবি যোগ করে দেয়া যাক। যুগের সাথে ছবি আঁকার পদ্ধতির বিবর্তন ঘটেছে। এবার ডিমের খোসার বদলে মোবাইলের খোসার ওপর আঙুল বুলিয়ে আঁকা। ছবি কিছু না হোক আঁকিবুকি তো হবে। এলোমেলো আঁকিবুকিও আঁকটোবারের উদ্যোগে সামিল হতে পারে। আর কিছু না হলে সরবত খানের বিড়ম্বনার সাথে তো পরিচয় হবে।

উত্তরাধুনিক সাহিত্য সমালোচক শরিফুল মালিকের বাসায় ঢুকেই বাকহীন হয়ে গেলেন রজনীগন্ধা পুরস্কারপ্রাপ্ত ঔপন্যাসিক সরবত খান।

শরিফুল মালিক বাসায় নেই, বাজারে গেছেন। খানিক পর ফিরবেন।

গত সপ্তাহে সরবত খান তাঁর সদ্য প্রকাশিত 'মালঞ্চ বিলাস' উপন্যাসের দুটি কপি পাঠিয়েছিলেন শরিফুল মালিকের কাছে। একটি দৈনিক পত্রিকায় রিভিউ লেখার কথা আছে। সেই উপলক্ষে শরিফুল সাহেবের সাথে একবার দেখা করে গল্পগুজব করে যাবেন সেই উদ্দেশ্যে আসা। আসার সময় তিন কেজি মিষ্টি কিনে এনেছেন রসালো মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে।

শরিফ সাহেব সমঝদার মানুষ। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিকের উপন্যাস তিনি রিভিউ করেছেন। বলা ভালো, তিনি রিভিউ করার পরই বইগুলো পুরস্কার পাওয়ার জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হয়েছিল। ফলে তাঁর বসার ঘরের সুদৃশ্য বুকশেলফ থই থই করছে দেশের অনেক পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থে। পয়সা খরচ করে বই কেনার বদভ্যাস নেই তাঁর। এটা সবাই জানে, জেনেও তাঁকে বই উপহার দেয় তাঁর কলমের সহানুভূতির আশায় । ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে আসা দু-চারশো কপির মধ্যে কয়েকটা কপি বিজ্ঞাপন বাবদে খরচ করা যায়। সরবত খানও সেটা জানেন। তাই আজ একটু রসালো তাগাদা দেবার জন্য এসেছেন মিষ্টান্ন নিয়ে।

কিন্তু যেটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না সেটা হলো তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটার ওপর স্যুপের বাটি রেখে শরিফ সাহেবের ৬ বছর বয়সী কনিষ্ট পুত্র ভিডিও গেমস খেলছে। স্যুপ থেকে টমেটো-পেয়াজ-ঝোল পড়ে তাঁর বইটার প্রচ্ছদের দফারফা। সুজন কর্মকারের এই প্রচ্ছদের জন্য তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল প্রকাশকের কাছে। চিত্রকরের প্রচ্ছদের সবটাই সসে জবজব করছে এখন। তিনি ছেলেটার উপর মনে মনে রাগ করলেও কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। ছেলেটার মতিগতি ভালো না। কিছু বললে পুরো বইটা স্যুপের বাটিতে চুবিয়ে দিতে পারে।

মিষ্টি হেসে ছেলেটার হাত থেকে বইটা উদ্ধার করার চেষ্টায় তিনি উঠে দাঁড়ালেন। হঠাৎ করে বারান্দা থেকে একটা কাগজের প্লেন উড়ে এসে তাঁর পাশের সোফায় অবতরণ করলো। তাকিয়ে দেখলেন বারান্দা থেকে শরীফ সাহেবের ৮ বছর বয়সী আরেক পুত্র পাঠিয়েছে এই প্লেন।

অনেক বছর পর কাগজের প্লেন দেখে আমোদিত হলেন সরবত খান । ছেলেবেলায় তিনি নিজেও পুরোনো খাতার কাগজ ছিঁড়ে প্লেন বানাতেন, নৌকা বানিয়ে বৃষ্টির জলে ভাসাতেন। এখনো সেই রীতি আছে তাহলে। প্রশ্রয়ের দৃষ্টি নিয়ে তিনি ছেলেটার দিকে তাকালেন। তারপর প্লেনটা ছেলেটার কাছে ফেরত দেবার জন্য সোফা থেকে তুলে হাতে নিলেন। কিন্তু হাতটা টেনে প্লেনটা উড়াল দিতে গিয়ে টেক অফের মুহূর্তে চোখে পড়লো কাগজের লেখার দিকে।

একি! এই কাগজ তো তাঁর উপন্যাসের পাতা! ২৯-৩০ পাতার কাগজ এটা। ছেলেটা এই কাগজ কোথা থেকে পেল?

তিনি খোঁজ নিতে বারান্দায় পা দিয়েই দেখলেন সেখানে আরো ডজনখানেক ফাইটার প্লেন উড়াল দেবার জন্য তৈরি আছে। সবগুলো তাঁর উপন্যাসের নানান রোমাঞ্চকর অংশ দিয়ে প্রস্তুত। শুধু তাই না। সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যবহার হয়েছে বইয়ের লেমিনেটিং করা হার্ড কাভারটি। ওটার অর্ধেকাংশ দিয়ে বারান্দায় রাখা পাখির খাঁচার দরোজা তৈরি হয়েছে।

কী করা উচিত ভেবে না পেয়ে কাগজের প্লেনটা হাতে নিয়ে সরবত খান একটা ৎ (খণ্ড-ত) হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

সচিত্র গল্পখান পড়ে আমিও একটা খসড়া আঁকিবুকি নামিয়ে ফেললাম:

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সরবত খানের এক জটিল সংযোজন হয়েছে হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

স্যাম এর ছবি

হাহহাহা, শরিফ সাহেব আপনার রিভিউ প্রয়োজন, আপনার পুত্রদের নয় - লেখা কোন নোট পাওয়া গেছে?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

হো হো হো শরিফ সাহেব বাজার থেকে ফেরার পর জিজ্ঞেস করবো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সুজন কর্মকার (!) তাঁর আঁকা প্রচ্ছদের এই দশা দেখে কী প্রতিক্রিয়া দিলেন সেটার ছবি দেখতে ইচ্ছুক। কর্মকার নিজেই কর্মটি সম্পাদন করতে না পারলে তাঁর উস্তাদ চৌধুরী মহোদয়ের কাছে দরখাস্ত দিয়ে দেখতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সুজনদা শুনলে মাইণ্ড খাইতে পারেন। কিন্তু সরবত খানের কিরা, লেখার সময় তাঁর কথা মাথাতেও ছিল না। হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সজীব ওসমান এর ছবি

বেশ!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কোনটা? স্যুপের বাটি নাকি ফাইটার প্লেন হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই সরবত খানকে নিয়ে কিংকু চৌধারি স্টাইলে কমিক দরকার, এক ছবিতে চলছে না। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।