প্রবাসের কথোপকথন ১০

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: শনি, ০১/০৯/২০০৭ - ১২:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“সুপ্রভাত। তুমিই কি আমাদের নতুন ছাত্র?”
জ্বী, আজকে ইন্টারভিউ দিতে আসলাম মাত্র। অথম্যান (উসমান) আমাকে জেরা করছে এই মুহূর্তে।

“ব্যাপার না। আশা করি চাকরিটা পেয়ে যাবে তুমি। আমার নাম ডন ডেভিস। আমি এই অফিসের ডিরেক্টর। চাকরি পেয়ে গেলে আমার সাথেই কাজ করতে হবে তোমাকে। অথম্যান মাইক্রোসফটে চলে যাচ্ছে, জানোই তো মনে হয়। একদম ক্যাডিলাক জেতার মত ব্যাপার। তা তোমার নাম কী? ইশ? ওয়েইট, আমি পুরোটা ঠিক মত উচ্চারণ করবই। ইশ-ঠি-আক। কাছাকাছি যেতে পেরেছি? যাক, ইশ থাকুক আপাতত।”
হ্যাঁ, ইশ থাকুক। আমি এবার সফোমোর ইয়ারে উঠলাম। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি। এসেছি বাংলাদেশ থেকে। হ্যাঁ, আমার একটু একটু শীত লাগছে। আবহাওয়াটা নিজের দেশের মত হলেও ঠান্ডা একটু বেশি লাগছে। আমিও আশা করছি গা সয়ে যাবে কিছুদিন পরে। নট দ্যাট ইট ইজ অ্যান অপশন, এনিওয়ে।

“আমি তোমার শিক্ষাগত কোন ব্যাপার নিয়ে কোন প্রশ্ন করবো না। উই অল লার্ন অন-দ্য-জব। তুমিও শিখে যাবে, আমি নিশ্চিত। আমি শুধু তোমাকে খুব মৌলিক কিছু ব্যাপারে বলবো। সব সময় এগুলো মনে রেখে চলবে, তাহলে তোমার সাথে আমার কোন রকম ঝামেলা হওয়ার কারণ নেই।”
অবশ্যই। বলে যাও, আই অ্যাম অল ইয়ারস।

“এই যে যন্ত্রটা দেখছো, এটা একটা টেলিফোন। এটায় দূর থেকে কথা বলা যায়, চাইলে চোখের অনেক আড়াল থেকেও যোগাযোগ করা যায়। আর এই যে আমার ডেস্কের উপর বিশাল কাগজটা দেখছো, এটা আমার প্ল্যানার। এটার খুব হাবিজাবি অবস্থা, কারণ আমি খুব ব্যস্ত মানুষ। তুমি যদি আমাকে বল তুমি সকাল সাড়ে নয়টায় আসবে, তাহলে আমি তোমার জন্য নয়টা পয়ত্রিশ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তুমি দশটায় আসলে আমাকে পাবে না, কারণ দশটায় আমি আরেকজনকে সময় দেবো। তুমি যদি যেকোন কারণে আটকে যাও, আমাকে প্রথম সুযোগে জানাবে।”
অবশ্যই। এটা তো সাধারণ ভদ্রতা। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো। কী বল, আর্মির ছাত্রকে নিয়ে সমস্যা হয়েছিল? তাও পাঙ্কচুয়ালিটি নিয়ে? না না, আমার উপর রাগ হয়ে ফোন ভাঙার মত কিছু হবে না, আশা করি। দেরি হলে আমি জানাবো আগেই। তবে আমি যেমন কাছাঢিলা মানুষ, তাতে অনেক কিছুই ভাঙার মত অবস্থা হতে পারে।

“এর চেয়েও জরুরী হল দ্বিতীয় ব্যাপারটা। তুমি পাশের ঘরের মেয়েটাকে দেখেছো? ও আমাদের সাথে আছে আজকে পাঁচ বছরের বেশি। প্রথম যখন এসেছিলো, তখন কম্পিউটারের কিছুই জানতো না। ওকে কাজের শেষে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে। এটাই তোমার একমাত্র কাজ। এই কাজটা নিয়মিত ঠিক মত করতে পারলে তোমার আর কোন চিন্তা নেই। আমি এক জোড়া মেয়ে পেলে বড় করেছি। টাইমস আর নট দ্য সেইম এনিমোর।”
অবশ্যই মনে থাকবে। হ্যাঁ, ও মানা করলেও জোর করে দিয়ে আসবো গাড়ি পর্যন্ত। কোন ভয় নেই, ভুল হবে না এই ব্যাপারে আমার। আমার বিপদচেতনার মাত্রা আরেকটু বেশি হলেও আমি ব্যাপারটা খেয়াল রাখবো।

“ভেরি ওয়েল, দেন। তুমি প্রথম মাস ছয়েক এখানেই কাজ কর, তারপর বাসা থেকেই কাজ করতে পারো চাইলে। কাজের সময় নিয়ে চিন্তা কোর না। তুমি চাইলে রাতে রাতেও কাজ করতে পারো। অথম্যান আর আমার তো ভোর চারটায় দেখা হয়। ও বাড়ি ফেরে, আমি কাজে ঢুকি।”

...

“কী ব্যাপার, মন খারাপ কেন?”
আমার প্রথম ইলেকট্রনিক্স পরীক্ষার খাতা দিল। বীভৎস অবস্থা।

“আরে এগুলো কোন ব্যাপার না। কত পরীক্ষা আসবে যাবে। আমি জানি তুমি ভালই করবে। তোমার মাথা ভাল।”
লক্ষণে তো তেমন বলছে না। আমি আসলে এই প্রথম অনলাইনে গ্রেড পোস্ট হতে দেখলাম। শুরুতে স্রেফ শূন্য দেখাচ্ছিলো। পরীক্ষা খুব খারাপ দিয়েছিলাম। কোন প্রশ্নেরই পুরো উত্তর ঠিক করতে পারিনি। পার্শিয়াল মার্কের ভরসায় ছিলাম। জীবনে কখনো শূন্য পাইনি। কাল ঘাম ছুটে যাচ্ছিল আমার। একটু পরে দেখি ৬৯ হল সেটাই।

“হাহ হাহ, তুমি তাহলে গ্রেড পোস্টিং শেষ হওয়ার আগেই সিমেস্টার বুক দেখছিলে? একই সাথে তুমি আর ইন্সট্রাক্টর। মজাই। আমাদের কালেই ভাল ছিল। আমি পড়ানোর সময় খাতা নিজের হাতে দিলাম, ওল্ড স্কুল, ওল্ড ডেইজ। তখন এসব ঝামেলা ছিল না। অযথা তোমার কত্ত টেনশন গেল। অন্তত খাতা পাওয়ার আগ পর্যন্ত ছাত্ররা শান্তিতে ঘুমাতে পারতো।”
শূন্য পাইনি, এটা বিরাট একটা সান্ত্বনা, কিন্তু তবুও সি দিয়ে শুরু করলাম অযথা। নিজের উপর মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে আছে।

“আমি কীভাবে গ্রেডিং করতাম সেই গল্প বলি তোমাকে। ধর একজন ছাত্র তিন পরীক্ষায় ডি, সি, এ পেল। ফাইনালেও এ পেলো। সিমেস্টার গ্রেডে আমি তাকে এ দিতাম। কারণ, শুরুতে কিছুটা কম বুঝলেও শেষতক সবটা বুঝে নিয়েছে, এমন কাউকে আমি কেন প্রথম পরীক্ষার জন্য বি দেবো, বল?”
আহা, আমাদের টিচাররা যদি এমন হত! এখন তো একটা বাজে পরীক্ষা দিলেই হিসেব করতে বসি আদৌ কোর্স রাখবো, নাকি ড্রপ করে দেবো।

“নাহ, এভাবে ভেবো না। আমার এক শিক্ষক আমাকে একবার বলেছিলেন, দ্য ডিফরেন্স বিটউইন অ্যান এ অ্যান্ড এ বি ক্যান বি ইওর মেন্টাল হেলথ।”
ওয়াও! খুবই ওজনদার কথা। একটু ভাল লাগছে তোমার কথা শুনে। থ্যাংক্স, ডন। আমি কাজে ফেরত যাই এবার।

“উহু, একটু দাঁড়াও। এই যে দুই টাকা। ছোট বেলার কথা মনে আছে? যখন বাসার পাশ দিয়ে টুংটাং আওয়াজ করে আইসক্রিমের গাড়ি যেতো, বাবা আইসক্রিম কিনে দিলে খুশিতে লাফাতে? মানুষের ভেতর থেকে এই ব্যাপারগুলো কোনদিন যায় না। গো হ্যাভ সাম আইসক্রিম। ভাল লাগবে।”
না না, এটার কোন দরকার নেই। মেন্টাল সাপোর্টটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। নিজের মত হজম করার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে আর না বলে পারলাম না।

“বলে খুব ভাল করেছো। ব্যাথাগুলো কখনো বুকে চেপে রাখতে নেই। তুমি ক্যাম্পাসে একটু হাঁটাহাঁটি কর আর কিছু আইসক্রিম খাও গিয়ে। না, আমি কোন কথা শুনবো না। তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো যে আমি তোমার বস। আই অ্যাম অর্ডারিং ইয়ু টু গো অ্যান্ড টেক এ ওয়াক অ্যারাউন্ড দ্য ক্যাম্পাস। ডোন্ট বদার অ্যাবাউট দ্য ক্লক। আইল পে ইয়ু ফর ইট।”
আরে! ৮৯! কার্ভ! জীবনে এই প্রথম অন্যের দুঃখে সুখী হলাম।

“হ্যাঁ, দেখবে অনেক কিছুই এরকম। তুমি মনে হয় কার্ভ পাওনি তোমাদের ওখানে। এনিওয়ে, টাইম ফর সাম আইসক্রিম।”

...

“তুমি দেখলাম এই সপ্তাহে কম ঘন্টা কাজ করেছো। শরীর খারাপ নাকি?”
না, টাইমশিটে প্রতি মিনিটের হিসাব ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। শেষ দিকে এসে ঘন্টাগুলো পোষাতে পারিনি।

“ডোন্ট বদার। শুধু এখানে কাজ করা সময়টুকু ধরবে না। আমার মতে, তুমি যেই সময়টায় কাজ নিয়ে ভাবছো, সেই সময়ের জন্যও পয়সা পাওয়া উচিত। কাজের সময় যদি নিজের কাজ করা দোষের হয়, তাহলে নিজের সময়ে কাজ করলে কেন স্যালারি পাবে না, বলো?”
পৃথিবীর সব বস যদি তোমার মত করে চিন্তা করতো!

“জীবন নিয়ে কিছু মৌলিক ব্যাপার বলি। দু’তিনটা অভ্যাস কষ্ট করে হলেও করবে। প্রথমটা হল, লার্ন টু লিভ ইয়োর ওয়ার্ক ইন দি অফিস। আমি এই টেবিল থেকে ওঠার পরে কাজ নিয়ে কিচ্ছু ভাবি না। আমি অনেক ভোরে উঠি। বয়স তো কালে কালে বাহাত্তর হয়ে গেলো। কিছু জগিং করি, গোসল করি, তারপর কাজে চলে আসি সকাল সাতটার আগে। চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে উঠি, এবং এরপর আগামী দিনের আগে কাজ নিয়ে কিচ্ছু ভাবি না।”
এই ব্যাপারটা আমার জন্য কষ্টের। করতে পারলে খুব ভালো হত। আমার জীবনটা বিভিন্ন রকম কারণে খুব জট পাকিয়ে আছে। সবদিকের নিজের সবটুকু দিচ্ছি, কিন্তু অহেতুক অনেক ঝামেলা এসে জড় হয় বারবার। ছাত্রজীবন এমনিতেও এভাবে কাজ ছেড়ে দেবার মত না।

“তা ঠিক। সে-কারণেই আমরা আমাদের অফিসের নিয়মগুলো এভাবে ঠিক করেছি। তোমার লেখাপড়া সবার আগে। কাজগুলো এমন জরুরী কিছু না যে সেটা তৎক্ষণাৎ করতে হবে। ঘন্টা পুরো করার চেয়ে কাজ সমাধা হওয়া জরুরী বেশি। যখন খুশি, যেখানে খুশি, যেভাবে খুশি কাজ করবে। কাজ হবে আনন্দের।”
চেষ্টা করে দেখতে হবে। এটার সুফল হিসাবে জীবনটাও হালকা হওয়া উচিত, আশা করি। পেপার লেখার চাপ এসে পড়লে একটু বেশিই এলোমেলো হয়ে যায় আর কি সব। না, বল নি তোমার ডিসারটেশন লেখার গল্প। ক্লজেটে ঘুমাতে? কোথায়? ডিপার্টমেন্টের ক্লজেটে হয়ে থাকলে তো ঝাড়ুদারের সাথে ভালো খাতির ছিল তোমার। এসি ছিল না? এটাও নাহয় সহ্য করা যায়। আমি তো গরম দেশ থেকেই এসেছি। না, শেষটা বিশ্বাস করতে পারলাম না। এক রাতে পুরো ডিসারটেশন? রাত নয়টা থেকে ভোর চারটার মধ্যে ডিসারটেশন লেখাটা মোটামুটি ইনসেইন একটা ব্যাপার।

“ইউ গটা ডু হোয়াট ইউ গটা ডু।”

...

“অসংখ্য ধন্যবাদ আমার বাসায় আসার জন্য। আমার নিজেকে খুব বেকুবের মত লাগছে। এত সাধারণ ব্যাপারে তোমাকে ডেকে আনলাম।”
উহু, এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার একদমই কারণ নেই, ডন। আমার কাছে এগুলো খুব একটা ট্রিকি কিছু না। উই অল হ্যাভ আওয়ার পেট প্যাশনস। এটা সেরকমই। তোমার নাতি-নাতনির ছবিগুলো খুব সুন্দর। দাঁড়াও, পিকাসা ইনস্টল করে দেই। খুবই গোছালো অ্যাপ্লিকেশন। আরে এত উচ্ছসিত হওয়ার কিছু নাই। ক্রেডিট আমার না, গুগুলের।

“তুমি জানো না আমার কাছে এটার মূল্য কতটুকু। এই ছবিগুলো আমি অনেক দিন ধরে খুঁজছিলাম। এরকম সফটওয়্যার খুঁজলে অনেক মিলবে। তবে এটা ব্যাবহারের চিন্তাটুকু তোমার মাথায় আসাটা একটা লাইফ-সেভিং ব্যাপার আমার জন্য।”
দ্য প্লেজার ইজ অল মাইন।

“এই নাও, এটা রাখো।”
আরে এ কী? ইউ আর ফ্যামিলি, ডন। আমি এই সামান্য কাজের জন্য তোমার কাছে টাকা নেবো কেন? আমি তো মলের দিকে আসছিলাম এমনিতেই। আমার মায়ের কাজ শেষ, তুলে নিয়ে যেতে আসতাম।

“তুমি কি আমাকে মৃত দেখতে চাও? আমার বৌ আমাকে স্রেফ মেরে ফেলবে। শি ক্যান বি প্রিটি মিন সামটাইমস।”
তোমার মত দুর্ধর্ষ মানুষও এরকম করে বলছে, শুনে মজা লাগছে খুব।

“হিয়ার ইজ এ সিক্রেট ফর ইউ। তুমি সেদিন বুঝবে তুমি বড় হয়েছো, যেদিন তুমি মুখ বন্ধ করে মনে মনে এক থেকে বিশ পর্যন্ত গুনতে পারবে।”
এটা আবার এমন কী?

“এটা বিশাল ব্যাপার। এটা সংসারে শান্তির প্রথম শর্ত। আমি খুব রাগী মানুষ। আমার মুখের একদম আগায় সব আগ্রাসী কথাবার্তা বাসা বেঁধে বসে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো আমি জিভ কামড়ে মনে মনে চুপ করে থাকি, গুনতে থাকি এক থেকে। এগারো-বারো আসলে দেখবে রক্তগুলো মাথা থেকে একটু একটু করে নামছে, পনেরর দিকে এসে শরীর একটু ঠান্ডা লাগে, আঠারোর দিকে আসলে দেখবে পৃথিবী আসলে খুব সুন্দর একটা জায়গা।”
আমি বহু চেষ্টা করলেও হয়তো সাত পর্যন্ত যেতে পারবো। সাইলেন্স ইজ ব্লিস। বোবার কোন শত্রু নাই। এমনি এমনি তো আর বলে না।

“দেন কিপ ওয়ার্কিং অন ইট।”


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই কথোপকথনের প্রতিটি বর্ণ সত্য ঘটনা। আমার নিজের জীবনের। ডঃ ডনাল্ড ওয়েইন ডেভিস ছিলেন আমার গত আড়াই বছরের বস। এই মানুষটার কণা পরিমাণ হতে পারলেও নিজেকে আজীবন বাধিত মনে করবো। কারণটা আশা করি নিজেরাই বুঝতে পারছেন। দেশ না, ভাষা না, আবেগ না, নস্টালজিয়া না, আমাকে প্রবাসে বাঁচিয়ে রেখেছিল এই মহৎ মহীরূহ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এত ঝরঝরে লেখা আপনার। একটানে পড়ে গেলাম। দারুন লাগলো।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অচেনা এর ছবি

ইশ এর এই সিরিজের সব গুলোই ভাল লেগেছে।
সবচেয়ে ভাল লেগেছে এইটা।

-------------------------------------------------
আমি ভালবাসি বিজ্ঞান
আমি ঘৃণা করি জামাত॥

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার ঝরঝরে লেখা। একটানে পড়ে শেষ করলাম। আপনার বস ভাগ্য খুবই অসাধারণ-ঈর্ষাজাগানিয়া!


কি মাঝি? ডরাইলা?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পুরোটা জানলে এমন বলতেন না। ডনের আগে-পরে খুব বাজে কিছু বসের অধীনে কাজ করতে হয়েছে। সেই কিস্যা বলবো নে অন্য কোনদিন।

লেখা পড়বার জন্য ধন্যবাদ।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ইশ, আমি লেখাটা দুইবার পড়লাম। প্রথমবার পড়ে দুয়েকটা জায়গা বুঝতে পারিনি। গাধা টাইপের তো, তাই মাথায় সহজে চট করে কিছু ধরেনা।

দ্বিতীয়বার পড়ার পরও মনে হচ্ছে আবার পড়তে হবে। এখনো কয়েকটা প্যারার সিকোয়েন্স বুঝতে পারিনি। যেমন, টাইম শীটের বিষয়টা। আর এই প্যারাটা আমার কাছে সবচেয়ে প্রশ্নবোধক

আরে এ কী? ইউ আর ফ্যামিলি, ডন। আমি এই সামান্য কাজের জন্য তোমার কাছে টাকা নেবো কেন? আমি তো মলের দিকে আসছিলাম এমনিতেই। আমার মায়ের কাজ শেষ, তুলে নিয়ে যেতে আসতাম।

জীবনের সত্যি ঘটনাগুলো খুববেশী সুন্দর করে লেখা সহজ নয়। সেই কাজটা অবলীলায় করে যাচ্ছেন দেখে উৎসাহিত হচ্ছি।

নতুন নতুন লেখা পড়ার প্রত্যাশায়।

...........
যত বড় হোক সে ইন্দ্রধনু দূর আকাশে আঁকা
আমি ভালবাসি মোর ধরনীর প্রজাপতির পাখা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ক্লিয়ার করতে না পারার জন্য দুঃখিত। অনেকটা ইচ্ছা করেই শুধু সংলাপগুলো তুলে দিয়েছি। বিবরণ বর্জন করার চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব। এজন্য কিছু জায়গা খাপছাড়া দেখায়, বুঝি। মনে হয় কিছু যোগ করে দেই, তবে শেষ পর্যন্ত করিনি। কথোপকথন নাহয় নিজের মত নিজেকে বুঝিয়ে দিক।

ডন ওর বাসায় ডেকেছিল কম্পিউটার ঠিক করে দিতে। আমি টাকা নিতে চাইনি, কিন্তু জোর করে ধরিয়ে দিয়েছিল। আমার মা মলে কাজ করতো। বিকেলে মাকে কাজ থেকে আনার আগে ডনের বাসায় গিয়েছিলাম। তেল, সময়, ইত্যাদির অজুহাত তুলে হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিত সব সময়।

টাইমশিটে প্রতি সপ্তাহে কয়টা থেকে কয়টা কাজ করি সেটা লিখে রাখা হয়। সে অনুযায়ী বেতন দেওয়া হত। ডনের একটা খুব অদ্ভুত সুন্দর নিয়ম ছিল। কাজের ঘন্টাগুলো 'ব্যাংক' করা যেত। আগে থেকে বাড়তি কাজ করে রাখলে পরীক্ষার সপ্তাহেও বেতন দিতো।

অসম্ভব ভাল মানুষ একজন। মিস করি খুব। যারা ডনকে চেনে না, তারা জগতের সেরা ব্যাক্তিত্বগুলোর একটাকে চেনে না।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

পড়ছি ... ভাল্লাগছে ... অন্যগুলির মতই ...

বস ভাল হওয়া আসলেই দারূণ একটা ব্যপার ... কাজ করার আগ্রহ অনেক বাড়ে এমন হইলে ... তোমার কপাল ভাল দেখা যাইতেছে ...

ভার্জিনিয়ার কথা লেখ না ক্যান?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লিখবো। অনেক কিছু লেখার আছে। এখানে আসার আগের ঘটনাগুলোর ব্যাকলগ ক্লিয়ার করে নেই, তার পরে লিখবো। লুইজিয়ানা-ভার্জিনিয়া ট্রিপের আরো কিছু কথা লেখার আছে। লিখেই সামনে আগাবো।

সবুরে কাঁঠাল পাকে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

খুব মন দিয়ে পড়েছি,একাধিকবার পড়েছি গদ্যের মজাটা উপভোগের জন্য।
এবং শেষ পর্যন্ত একটা পাচঁ দিলাম।

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

গুরু অধমের লেখা দ্বিতীয়বার পড়েছেন, এতেই খুশি। পড়ে পাঁচ দিয়েছেন, এই আনন্দ রাখার জন্য আপাতত থালা-বাটি কিনতে বাজারে যাচ্ছি! দেঁতো হাসি

ঝরাপাতা এর ছবি

অসম্ভব, অসম্ভব, অসম্ভব রকমের ভালো লেগেছে। শুধু মন্তব্যে সেটা বোঝানো যাবে না। এমন একজন মানুষের সাথে কাজ করাও সৌভাগ্যের ব্যাপার।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ। কোনদিন লুইজিয়ানার দিকে আসলে আমাকে আগাম জানাবেন। ডনের সাথে দেখা করিয়ে দেব। আরো কিছু কথা আছে বলার মত। জুড়ে দিবো পরে কখনো। ইচ্ছা আছে ব-e'এ এটা জমা দেবার। ওখানে দেখে নিয়েন শেষ দিকে।

সিরাত এর ছবি

পুরান লেখার লিংক ফলো কইরা পড়লাম! কি একখান লোক! চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।