মানুষের মন-৩

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি
লিখেছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৯/২০০৯ - ২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কানা জইল্যা চায়ের গ্লাস হাতে নিয়ে গফুর মিয়ার দিকে তাকিয়ে একটি ফিচেল হাসি দিয়ে বললো, জামাই যহন ছাইড়ে দিয়েছে এহন তো তার পুরুষ মানুষির কাম চইলে যায়নি। তোর ঘরের লাগোয়া যহন রাইত-বিরাতে তো তুই যাতি পারিস!

গফুর মিয়ার খুবই রাগ হয় কানা জইল্যার উপর। কিন্তু এখনি উল্টোপাল্টা কিছু বলে নিজকে সমস্যায় জড়াতে চায় না গফুর মিয়া। সে রেগে উঠলে তারাও তাকে ক্ষেপানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই সে নির্বিকার থাকতে চেষ্টা করে। কিন্তু নজু যখন বলে উঠলো, তোর তো বউ মইরেছে দিন কম হয়নি। তোর রাইত ক্যাম্বা যাবি?

অথচ পরশু রাতেই মনে হয় সে নজুর কণ্ঠ শুনতে পেয়েছিলো সফুরার ঘরের কাছে। কাঠের দরজায় মৃদু করাঘাতের শব্দও যেন শুনতে পেয়েছিলো। সে সঙ্গে শুনতে পেয়েছিলো সফুরার বাবা রবিউল্লা ব্যাপারীর উচ্চকিত কণ্ঠস্বর।

গফুর মিয়া রাগ সামলাতে না পেরে হঠাৎ বলে উঠলো, দরকার হলি ধোনের মাথা দুব্বায় ঘইষে ক্ষয় কইরে ফেলাবোনি। তাও তোগের মত লুকোয়ে লুকোয়ে কোনো মাগীর কাছে যাবো লয়!

তখনই বাকি সবাই মজা পাওয়ার মত করে এক যোগে হেসে উঠলো।

কাদের খোনকার বিড়ির প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো, রাগ করিস ক্যান? ওরা তো মজা করবার জন্যিই কথাডা কইয়েছে!

আমাক নিয়ে মজা করবা আর আমি চুপ কইরে থাকবো ভাইবেছো? কে ক্যাম্বা চলে, কই কি করে ভাইবেছো আমি কিছুই জানিনে? আমি সবই জানি! ভাশুরের ছাওয়ালেক নিয়ে কার বউ ফস্টিনস্টি করে সবই জানি! আমার মুখ খোলালি কিন্তুক ভালো হবে না কতিছি!

আচ্ছা যা! তোর মুখ খুলতি হবেনানে। বিড়ি নে। মস্করাও যহন বুঝিসনে তোরে কিছু বলাডাও আমাগের ভুল। বলে, নিজের মনেই বিড়বিড় করে আরো কি কি বলে কাদের খোনকার তা দোকানে উপস্থিত কারো বোধগম্য হয়তো হয় না। গফুর মিয়া কেবল তার ঠোঁট দু'টোই নড়তে দেখে।

দাম পরিশোধ করে সে একটি বিড়ি ধরিয়ে টানতে টানতে বাড়ির দিকে চলতে আরম্ভ করলে তখনই তার মনে হয় যে, চায়ের দোকানে বসে বসে ওরা তাকে নিয়েই হয়তো কথা বলাবলি করছিলো। যে কারণে তাকে দেখে ওরা হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেও বিষয়বস্তু যখন সেই তখনই তা আবার তাকে দেখতে পেয়ে জেগে উঠেছিলো। কিন্তু সফুরাকে আর তাকে জড়িয়ে যদি দোকান-পাটে এভাবে কথা হতে থাকে তাহলে অচিরেই তা পাশের গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে যাবে। তখন একটি জটিল পরিবেশ তাকে কিছুটা হলেও আচ্ছন্ন করে ফেলবে। তার চরিত্রের যে সুনাম এতটা কাল ছিলো, তা ঘৃণার পাঁকে লুটিয়ে যাবে মুহূর্তেই। তার ছেলে-মেয়েরা শুনতে পেলে বাবা সম্পর্কে কি আগের মত সেই মহান ধারণাটুকু মনেমনে পোষন করতে পারবে? কিন্তু তবুও তার কাছে খুবই আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা। সফুরাকে তার স্বামী তালাক দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে আজ মাস দুয়েকের বেশি হবে না। আর এরই মধ্যে তার সঙ্গে গফুরের নামটা জড়িয়ে গেল কিভাবে?
আর তখনই তার ঘরের কাছ থেকে একটি নারী কন্ঠের চিৎকার ভেসে আসে।

গফুরের সন্দেহ হয় এটা সফুরারই কণ্ঠস্বর। কিন্তু এভাবে হঠাৎ চিৎকার করে উঠবার কারণ কি? কোনো বিপদ হলো না তো? তখনই যেন নিজেরই অজান্তে ছুটতে থাকে গফুর মিয়া। ঘরের কাছাকাছি হতেই দেখতে পায় সফুরা তাদের ঘরের সামনে মাটিতে বসে একটি পা চেপে ধরে আছে আর সমানে চিৎকার করে বলছে, কে কোহানে আছ, আমাক সাপে কাইটেছে গো! আমাক বাঁচাও!
(চলবে...)


মন্তব্য

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

৩ নং শেষ করলাম, কাহিনীতে এবার মনে হয় গতি আসছে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

পড়ছি............ভালো লাগছে............

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।