জনি, স্যার, কেক

খেকশিয়াল এর ছবি
লিখেছেন খেকশিয়াল (তারিখ: রবি, ০৪/০৫/২০০৮ - ১১:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জনি আমাদের কাছে 'পাগলা জনি' নামেই পরিচিত । সম্রাটের কথা একটা গল্পে কিছু বলেছি । সম্রাট আমার স্কুল থেকে বন্ধু, কিন্তু জনির সাথে আমার পরিচয় হয় ভার্সিটিতে পড়ার সময় । এ.আই.ইউ.বি তে পড়ত ওরা আর আমি আই.ইউ.বি তে । আমার বেশকিছু স্কুলের বন্ধু এ.আই.ইউ.বি তে ( তখনও নাম ছিল 'অ্যামা' ) পড়ত তাই আমি বেশিরভাগ সময় ওখানে এসেই আড্ডা দিতাম । এভাবেই ওইখানে অনেক বন্ধু হয় । জনির অনেক গল্প আছে আজকে শুধু একটা গল্প করি । গল্পটা জনির মুখেই শোনা ।

জনিদের কোন একটা সাবজেক্টের শেষ ক্লাস, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা । সবাই এই স্যারের সাথে অনেক ফ্রী, স্যারকে সবাই পছন্দও করে । শেষ ক্লাসের চমক হিসেবে জনি , নিবিড়, রুবেল ( নিবিড়, রুবেল আমাদের জুনিয়র, কিন্তু আমাদের সাথেই আড্ডা দিত বেশি ) ইয়া বড় কেক নিয়ে এসেছে স্যারকে দিয়ে কাটাবে, কেক লুকিয়ে রাখা হয়েছে । তো সব কিছুই ঠিকঠাকমত চলছিল, হঠাৎ ক্লাসের শেষের দিকে এক ছেলে একটা ফালতু কথা বলে ফেলল । ও বলছিল এরকম 'স্যার সারা সেমিস্টার কি পড়াইলেন কিছুই তো বুঝলাম না, আমাদের কিছু সাজেশন দিয়ে দেন' । স্যার মন খারাপ করে ফেললেন, করারই কথা । স্যার সিরিয়াস হয়ে বললেন , 'দেখ আমার সাধ্যে যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি, তারপরও যদি মনে কর আমি কিছুই পারিনি তোমরা আমাকে মাফ করে দিও', বলেই তিনি ক্লাস থেকে চলে গেলেন । জনি, নিবিড় ওরাতো থ, পারলে ওই ছেলেকে এই মারে কি সেই মারে 'তুই এরকম বললি কেন !! ওই শালা' ওই ছেলেও ভ্যাবাচ্যাকা, নিজেও বুঝেনি মজা করতে করতে কি বলে ফেলেছে । জনি বলল 'নিবিড় রুবেল চল স্যারের অফিসে যাই, স্যাররে বুঝাইয়া নিয়া আসি' । যেই কথা সেই কাজ, পাঁচ ছয়জন মিলে গেল স্যারের অফিসে স্যারকে বুঝিয়ে আনতে, সাথে ওই ছেলেও গেল । অফিসে গিয়েই জনির অনুরোধ, 'স্যার স্যার আমাদের মাফ কইরা দেন, এইটা একটা সাগল, কি কইছে নিজেই জানে না, ওই স্যারের পায়ে ধইরা মাফ চা' । তো ওই ছেলে স্যারের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, 'স্যার স্যার মাফ কইরা দেন' । স্যার একই সাথে হতভম্ব বিব্রত, স্যার বললেন 'আরে আরে কর কি পা ছাড়, মাফ করেছি যাও, ক্লাসতো এমনিতেই শেষ, এখন আর গিয়ে কি হবে' । ওরা তো ছাড়বে না , 'স্যার কেক নিয়ে আসছি কেক কাটতেই হবে' । এইবার স্যার বিরক্ত, 'আরে বলে কি ! কেক কাটবো মানে, নানা ..' । জনি ওদের বলেছিল কেকটা লুকিয়ে আনতে অন্য কেউ যেন না দেখে কারন অন্য স্যার টার দেখলে আবার কি ভাববে, পানিশমেন্টও হতে পারে, জনির হাতে ছিল কেক কাটার ছুড়ি বাম হাতে লুকিয়ে রেখেছিল । এদিকে অবস্থা দেখে জনি বুঝল এভাবে হবে না স্যারকে ধরে নিয়ে যেতে হবে, ও নিবিড় রুবেল কে বলল, 'ওই স্যাররে তুইলা ধর, ক্লাসে নিয়া যাই'। যেমন বলা সেমন কাজ, নিবিড় এমনিতেই ওই ছেলের সাথে স্যারের পা ধরে বসেছিল, জনির সিগন্যাল পাওয়ামাত্রই ওরা স্যারকে চ্যাংদোলা করে ফেলল । স্যারতো হাত পা ছুড়ছেন, 'এই এই করে কি ! ছাড়ো ! করে কি ! 'এইদিকে রুমের বাইরেই এক জুনিয়র টিচার যাচ্ছিলেন । তিনি দেখলেন একপাল ছেলে চ্যাংদোলা করে এক সিনিয়র স্যারকে নিয়ে যাচ্ছে, স্যার চেচাচ্ছেন 'ছেড়ে দাও ! ছেড়ে দাও !', আর দলের লিডারের ( জনি ) হাতে ইয়া বড় ছুড়ি যা সে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে ' বাইর কর, তাড়াতাড়ি বাইর কর ! ' । এদিকে জনি দেখে ফেলেছে এই জুনিয়র স্যারকে, ভাবছে 'এহে, সিচুয়েশন তো খারাপ', ততক্ষনে ওই স্যার ভয়ে বই টই ফেলে দিয়ে বলতে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলেন । ওইদিকে চ্যাংদোলা অবস্থাতেই ওদের স্যার বলছেন , 'জনি জনি, উনি ভুল বুঝেছেন উনার ভুল ভাঙ্গাও' । চারিদিকে পুরা ক্যারাব্যরা অবস্থা ! জনি ওদের বলল, 'তোরা স্যারকে নিয়ে ক্লাসে যা আমি দেখছি ।' জনি ওই জুনিয়র স্যারের রুমে জোরে জোরে নক করতে করতে বলে, 'স্যার আপনি ভুল বুঝছেন, দরজা খোলেন' কিন্তু কে খোলে দরজা ! জনি ভাবল স্যার যদি কাউকে বলে দেয় তবে তো খবর হয়ে যাবে ওদের, তাড়াতাড়ি ও রুমের অন্যদিকে একটা জানালা আছে ওখান দিয়ে স্যারকে ডাকতে গিয়ে দেখে জানালা খোলা, স্যার রুম লক করে জানালা দিয়ে পালিয়েছেন ! জনির তো মাথায় বাশ, কি করবে কি করবে ! বুদ্ধি করে গেল রেজিষ্ট্রার অফিস, ওইখান থেকে স্যারের সেল ফোন নাম্বার নিয়ে, স্যারকে অনেক কষ্টে বুঝাল আসল ব্যাপারটা কি হয়েছিল । তারপর ওদের ক্লাসের স্যারও ( যাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ) পরে ওই স্যারকে বুঝিয়ে বলেন ব্যাপারটা ।

তারপরে কি হইল ? তারপর স্যার কতৃক কেকখানি কাটা হইল এবং তা গলাধঃকরণ হইল । জনিরা কি ছাড়ে ?


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বড় বাঁচা বেঁচেছে আপনার বন্ধুরা। পরে কেকটার কি হলো?

খেকশিয়াল এর ছবি

ক্লাসে গিয়ে কাটা হল, খাওয়া হল

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

যাক, শুভ উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়নি! কিন্তু এই রাতদুপুরে যে এখন কেক খেতে ইচ্ছা করছে আমার, তার কি হবে‍! মন খারাপ

সবজান্তা এর ছবি

মজার ঘটণা। কিন্তু কমরেড একটু জলদিতে লিখলেন মনে হয় ?

শেষ টা আরেকটু অন্যভাবে করলে ভালো হইতো না ?
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

আরে কাহিনী তো শেষ ! তবে ফিনিশিং টাচ দিয়া দিতাছি ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

রায়হান আবীর এর ছবি

মজা!!!
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

অত্যন্ত মজা পাইলাম পড়ে! শেষটুকু আরও মজার হতে পারতো মনে হল।

অতিথি লেখক এর ছবি

এক কেক কাটতে এত কাহিনী!মজা পাইলাম
-নিরিবিলি

মুশফিকা মুমু এর ছবি

তিনি দেখলেন একপাল ছেলে চ্যাংদোলা করে এক সিনিয়র স্যারকে নিয়ে যাচ্ছে, স্যার চেচাচ্ছেন 'ছেড়ে দাও ! ছেড়ে দাও !', আর দলের লিডারের ( জনি ) হাতে ইয়া বড় ছুড়ি যা সে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছে ' বাইর কর, তাড়াতাড়ি বাইর কর ! '

হো হো হো আমিতো হাসতে হাসতে শেষ ...... হাহাহাহাহাহাহাহাহা
৫ তারকা দেঁতো হাসি
---------------------------------------------------------
মূর্ছনা কেটে গেছে সুর
জোছনা ছড়ায় বেদনা, হৃদয় আনমনা ... চির চেনা তুমি অচেনা।

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

খেকশিয়াল এর ছবি

এই কাহিনী জনি যেভাবে বলেছিল শুনে আমরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছিলাম ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাসি

সৌরভ এর ছবি

মজা পাইলাম।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হা হা হা
বাইরে থেকে দেখলে সিচুয়েশন তো আসলেই ভয়াবহ ছিল।
আপনার সরস বর্ণণায় মজা পাইলাম খুব।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অনিন্দিতা এর ছবি

যাক হরিষে বিষাদ হয়নি শেষ পর্যন্ত। শেষ অংশ ছাড়া বাকীটা দুর্দান্ত।
অফিসে একা একা আপন মনে পড়ছি আর হাসছি। এমন সময় কোত্থেকে এক লোক বেরসিকের মতো জরুরী কাজে(?) এসে হাজির। কোনমতে হাসি চেপে তার কথা বোঝার চেষ্টা করলাম।
রেশটাই কেটে দিলো।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ইয়া আন্তা!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

ম্যাক এর ছবি

হে হে হে ... পুরা রিয়েল লাইফ জোক... বেশ মজা পেলাম...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এই ঘটনা এখন ঘটলে জুনিয়র স্যার হুদাই ভয়-টয় পাইতেন না। চ্যাংদোলা হওয়া সিনিয়র স্যার বোধহয় নাস্তিক-ব্লগার ভেবে নিশ্চিন্তে পাশ কাটাতে পারতেন...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।