আরো যেসব তালিকা আমি বানাতে চাই-

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: শনি, ০১/১২/২০০৭ - ৭:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আলী আহসান মুজাহিদের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের আগে পরে নানা তর্ক বিতর্ক হয়েছে। জামাতের অনেক ছোট বড় নেতারা ছাড়াও শাহ আব্দুল হান্নানের মতন কিছু জ্ঞানপাপীও মুজাহিদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই। শেষোক্ত এই ভদ্রলোক অবশ্য সেই সাথে আরেকটি তত্বের উপস্থাপন করেছেন যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নাকি আদতে ছিলো একটা গৃহ যুদ্ধ!

এই সব জামাতী লোকেদের মনোভাবের আকস্মিক প্রকাশে আমরা বিস্মিত হই, আহত হই, তবে সম্ভবত এরকমটা অনাকাংক্ষিত নয়। ঠিক এই মানসিকতা নিয়েই এরা ৭১ এ আতুঁড়ঘরেই বাংলাদেশকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো, পরে সেটা সম্ভব নয় জেনে বুদ্ধিজীবি হত্যার মাধ্যমে সদ্যোজাত বাংলাদেশকে পঙ্গু করার চেষ্টা করেছিলো! তাদের আজকের কথা শুনে মনে হচ্ছে, পরবর্তী এতগুলো বছরেও তাদের ধ্যাণ ধারণার কোন পরিবর্তন হয় নি। হবার কথাও নয়, কারণ তাদের দলীয় আবহাওয়াই এই রকম মনোভাবকে প্রশ্রয় দিয়ে বড় করেছে।

জামাতী নেতাদের কথা বাদ দিই, নভেম্বরের ১৩ তারিখের একটি সংবাদ চোখে পড়েছিলো। জামাতপন্থী কিছু শিক্ষক, হ্যা, শিক্ষকই প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় কিছু বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্যগুলো কারো চোখে পড়েছিলো কি না জানি না, এই নিয়ে তেমন আলোচনা শুনি নি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেই সব শিক্ষদের কথাগুলোর রেকর্ড থাকা দরকার। আমাদের বাবা-মায়েরা কোন সব শিক্ষকদের হাতে তাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব ছেড়ে দেন, এটা জানা থাকা দরকার।

একটা তালিকা বানাই।
১। "যুদ্ধাপরাধী হতে হলে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে। বাংলাদেশ সেই যুদ্ধের অংশ ছিলো না। এ কারণে বাংলাদেশে কখনোই যুদ্ধাপরাধী ছিলো না।"- বলেছেন বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের ডিন এ বি এম মাহবুবুল ইসলাম।
২। "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী জানানোর মত বিলাসিতা এখন জনগণের নেই।"- বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলের জ্বালানী উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান।
৩। "বর্তমান সরকার দুর্নীতি মূলোৎপাটন ও রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুস্থ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সময়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলে সেই উদ্যোগকে বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে।"- বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড এম কুরবান আলী।
৪। "ইতিহাস সম্পর্কে যারা জানে না, উন্নয়ন সম্পর্কে যাদের কোন ধারণা নেই, তারা কারণে-অকারণে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির পায়তারা করছে।"- ঢাবি-র ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম মুজাহিদুল ইসলাম।
৫। "কাদের স্বার্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্লোগান তোলা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে"- ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি কামালউদ্দীন জাফরি।
৬। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাং এর ঢাকা ক্যাম্পাসের ড মো আব্দুস সামাদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীকে সস্তা স্লোগান ও বিতর্কিত বিষয় আখ্যা দিয়ে বলেছেন, "যারা এসব কথা বলে তারাই প্রকৃত স্বাধীনতাবিরোধী। এদেরই আগে বিচার করা উচিৎ। কারন এরাই গত ৩৬ বছরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে নি। "
৭। " সিইসি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে উসকানি দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের সংগে সংলাপে তিনি জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে সংঘাতকে উসকে দিচ্ছেন।"- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড মো আবু ইউসুফ, সিইসির প্রতি বিষোদগারের এক পর্যায়ে।

দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রতি আরেকটু মনোযোগী হলে এই তালিকা আরো দীর্ঘ করা যেত, সন্দেহ নেই। তবে এই ছোট্ট তালিকায় চোখ বুলিয়েই আমি সত্যিই আতংকিত। এরাই আমাদের শিক্ষক? এরা আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন ইতিহাস ও আইন। কি শেখাবেন তারা? আমাদের নতুন প্রজন্মকে কি বানাচ্ছেন তারা, দেশপ্রেমিক? নাকি ক্ষমতালোভী স্বার্থপর কিছু জামাতী সৈনিক??


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

জলপাই-নিয়ন্ত্রিত সরকারের প্রচ্ছন্ন (নাকি সরাসরি?) সমর্থন পেয়ে এই চুতমারানিদের বাড় এতো বেড়েছে!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বিপ্লব।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এদের মধ্যে কেবল কামাল উদ্দীন জাফরীকে চিনি। নরসিংদীর গাবতলী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলো। তার তত্বাবধানে তার অনুসারী ছেলেপেলে মাদ্রাসার বখে যাওয়া (!) এক ছেলেকে হাতে পায়ের রগ কেটে ফেলে। ছেলেটা মরেনি। ঘরের মেঝের রক্তের দাগ এই জাফরী নিজে পরিষ্কার করেছে। আমাদের এলাকার নামকরা রাজাকার ছিলো এই ভদ্রলোক। এখন বুঝি ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে আছে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তালিকা ক্রমশঃ দীর্ঘায়িত হবে ।
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ধুগো,
কামালউদ্দীনের পূর্ব ইতিহাস জানি না, তবে এরকম নাম খুব বেশি মানুষের হয় না, তাই অনুমান করি, আপনার চেনা রাজাকার জাফরীই এখন ঐ ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত!

এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা মাথায় এলো, কেউ জানেন এই তালিকার বাকিদের আগের ইতিহাসের কথা? অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা কোথায় ছিলেন? কি করেছিলেন?

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

বিবাগিনী এর ছবি

তালিকা করলেই হবে না খালি।এইবার আমরাও কাটব।শুধু রগ না! যা পাই তাই কাটব এলোপাতাড়ি।কিমা বানিয়ে ডিসপ্লেতে দিলে রাস্তায় রাস্তায় তবে যদি এদের নোলা একটু কমে!!!রাগে মাথা ফেটে যায়!!!!

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একাত্তরের ঘাতক দালালদের পেছনের কীতিকলাপ এই লিংকে আছে
মিলিয়ে নিন

৭১ এর ঘাতক দালাল

অনিন্দিতা এর ছবি

রাষ্ট্র বা সরকার এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে জানি না । তবে আমরা শুধু হা হুতাশ না করে অন্তত একটা কাজ শুরু করতে পারি। সেটা হচ্ছে যার যার অবস্থান থেকে এই তালিকা অনুযায়ী ৭১ এর দালালদের সামাজিক,পারিবারিক,সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বয়কট করার সচেতনতামূলক কর্মসূচী নিতে পারি। অন্তত এই প্রশ্নে আসুন সবাই এক হই। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়। এদের আর বাড়তে দেয়া যায় না।যুদ্ধপরাধী হবে পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত গালি।

ভাগশেষ এর ছবি

ইউনিভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে আমাদের একজন স্যার একদিন ক্লাসে বলেছিলেন, যে মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি ক্লাস টেনে পড়েন, উনি নিজের কানে রেডিওতে শুনেছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। তখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে জেলে ছিলেন, উনার পার্টির লোকজনের সাথে উনার যোগাযোগ করার কোনো উপায় ছিলোনা। মুক্তিযুদ্ধের কথা উনার পক্ষে জানা আদৌ সম্ভব ছিলোনা।

জিয়া দেশের ভেতরে ছিলেন, তিনিই প্রথমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। কিন্তু তাকে পাবলিক চিনতোনা, তাই পরে উনি আবার একটা বক্তৃতা দেন, যে উনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করছেন, সো দ্যাট মানুষজন ব্যাপারটা অ্যাকসেপ্ট করে। কিন্তু স্বাধীনতার কনসেপ্ট আর ঘোষণা দু'টোর পেছনেই জিয়া আছেন।

চরম বিভ্রান্ত অবস্থায় বাসায় এসে মাকে জিজ্ঞাস করে সেইরকম একটা বকা খেয়েছিলাম।

খুবই অবাক লেগেছিলো। পরে জেনেছি উনি রাজনীতি করেন। তাই বলে অমন একজন বয়স্ক মানুষ প্রথমেই নিজের স্টুডেন্টদের সামনে এইরকম একটা মিথ্যা কথা কেমন করে বললো, চিন্তা করে খুবই অস্বস্তি লাগে।

কামাল উদ্দীন জাফরী কি টিভিতে ইসলামিক আলোচনা অনুষ্ঠান করেন? উনার দাড়িতে কি মেহেদি করা?

তাহলে মনে হয় উনার ছেলেকে চিনি, ইংলিশে অনার্স পড়ে। তার সামনে একদিন সাইদীকে রাজাকার বলা হয়েছিলো দেখে সে অনেক কান্ড করে ফেলেছিলো। চ্যালেঞ্জ করেছিল যে সাইদী যে রাজাকার ছিলো এইটা কেউ প্রমাণ করতে পারবেনা।

এইসব লোকজন যে ছেলে পেলেদের মাথা কীভাবে ওয়াশ করে তা নিজের চোখে দেখলেও বিশ্বাস হয়না।

তানিম এহসান এর ছবি

গত পাঁচ বছরে তালিকায় নাম জুটেছে প্রচুর। আপনার এই পোস্টে পাঁচতারা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।