ব্রেস্ট ক্যানসার পরীক্ষা - আপনি সচেতন তো?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: শনি, ১৪/০৫/২০১১ - ১:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিমাসে একবার নিজে থেকে মিনিট কয়েকের মধ্যে করে ফেলা ব্রেস্ট ক্যানসার পরীক্ষা আপনার জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। শতকরা ৭০% ক্ষেত্রে নিজ থেকে পরীক্ষাতেই ব্রেস্ট ক্যানসার ধরে ফেলা সম্ভব। যারা আগে ধরে ফেলতে পারেন তাদের শতকরা ৯৮% আরোগ্য লাভ করতে পারেন। ব্রেস্ট পরীক্ষার সময় কোনো লাম্প বা শক্ত মাংসপিণ্ডের উপস্থিতি ধরা পড়লে অতি অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

তবে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মাংসপিণ্ড ক্ষতিকর কিছু নয়। তাছাড়া মনে সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকলেও ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

ব্রেস্ট ক্যানসার শুধু মাত্র নারীদের হতে পারে মনে করেন অনেকে। কিন্তু দেখা গেছে ১০% ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রান্ত থাকেন পুরুষ। সমস্যা হচ্ছে এই পুরুষেরা ব্রেস্ট ক্যানসারের শেষ অবস্থায় এর চিকিৎসা করাতে যান এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আর কিছু করার থাকে না।

নিজে থেকে ব্রেস্ট ক্যানসার পরীক্ষা
ব্রেস্ট ক্যানসার পরীক্ষার ধাপ তিনটি। দাঁড়িয়ে অনুভব, দাঁড়িয়ে আয়নায় দেখে, শুয়ে অনুভব। প্রতিমাসে পিরিয়ডের ৭ থেকে ১০ দিন পরে পরীক্ষাটি করা ভালো। এ সময় ব্রেস্টে লাম্পের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।

দাঁড়িয়ে অনুভব

এই ধাপটি গোসলের সময় বা যে কোনো সময় দাঁড়িয়ে করতে পারেন। গোসলের সময় বা অব্যবহিত পরে শরীরের পেশী শিথীল থাকে বলে সেসময় পরীক্ষাটি করা সবচেয়ে ভালো। হাতের মধ্যের তিনটি আঙ্গুল ব্যবহার করে পরীক্ষা করতে হবে। ডান হাতে বাঁ দিকের ব্রেস্ট, এবং বাঁ হাতে ডান দিকের ব্রেস্ট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরীক্ষা করুন। অন্য হাতটি মাথার উপর ধরে রাখুন। লক্ষ্য করুন, কোনো শক্ত দলা, দড়ি পাকানো কিংবা মোটা হয়ে আসা অংশ অনুভুত হয় কিনা। এছাড়া অন্য কোনো পরিবর্তন অনুভব করেন কিনা দেখুন।

দাঁড়িয়ে আয়নায় দেখে

দুহাত দুপাশে রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় এবং দুহাত উপরে তুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রেস্টের পরিবর্তন লক্ষ্য করুন।

লক্ষ্য করুন ব্রেস্টের আকারে কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা। কোথাও ফুলে উঠেছে কিনা, চামড়ার রংয়ে পরিবর্তন এসেছে কিনা, চামড়া কুঁচকে গেছে কিনা কিংবা নিপলে কোনো সমস্যা মনে হচ্ছে কিনা। এরপর কোমরে দুহাত রেখে শক্ত করে বুকের পেশী টেনে ধরুন এবং কোনো পরিবর্তন দেখতে পান কিনা লক্ষ্য করুন। কারো কারো ক্ষেত্রে বাম এবং ডান ব্রেস্ট একই আকারের নাও হতে পারে। এটা স্বাভাবিক।

শুয়ে অনুভব

ডান কাঁধে বালিশ রেখে ডান হাত মাথার নীচে রাখুন। বাম হাতের মধ্যের তিন আঙ্গুল দিয়ে ডান দিকের বুকের উপর ধীরে এবং আলতো করে ছোটো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বুকের চারদিকে পরীক্ষা করুন।

এরপর ধীরে ধীরে চাপ বাড়িয়ে মাঝারী চাপ এবং গভীর চাপে আবার পরীক্ষা করুন। নিপল চেপে ডিসচার্জ এবং শক্ত মাংসপিণ্ডের অস্তিত্ব পরীক্ষা করুন। একই ভাবে বাঁদিকের ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন।

আরো ভিডিও পাবেন এখানে

উপসংহার
বিষয়টি নাজুক হলেও বাঁচতে হলে আমাদের জানতে হবে। সুতরাং অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই প্রতিমাসে একবার এই পরীক্ষাটি করুন। এবং বন্ধুদের জানান। পুরুষর হলেও সচেতন হোন এবং নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন।

(এক বন্ধুর রোগটি ধরা পড়ায় এবিষয়ে জানতে গিয়ে জানানোর ইচ্ছা থেকে লেখা)

পাদটীকা


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অমিত আহমেদ এর ছবি

চলুক

(ধারনাই ছিলো না যে পুরুষদেরও ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়।)

তাসনীম এর ছবি

চলুক

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রানা মেহের এর ছবি

খুব প্রয়োজনীয় লেখা মুর্শেদ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

স্বপ্নহারা এর ছবি

মুর্শেদ ভাই, যে সেলফ এক্সামিনেশনের কথা আপনি বলেছেন, Mortality rate কমানোর জন্য সেটা খুব একটা কার্যকরী না, কিন্তু এই প্রসেস শুধুমাত্র benign tumor ধরার জন্য, যেটা থেকে কোন ক্ষতির আশংকা নেই- অলরেডি Lobulated । ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এই প্রসেসে ধরা যায় না, আর যদি ধরা যায় তখন সেটা শেষ অবস্থা...এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার ডিফেন্সের পর একটা পোস্ট দেব ভেবেছিলাম। বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেলফ এক্সাম করতে বলা হত, এখন স্ক্রিনিং এর বিকল্প নেই...৪৫ এর পর প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। তবে এর কম বয়সে ধরার জন্য সেলফ এক্সাম আর ব্লাডে মার্কারের উপস্থিতি ছাড়া প্রাথমিকভাবে আর কোন উপায় নেই।

[1] C. Di Maggio. State of the art of current modalities for the diagnosis of breast lesions.
European Journal on Nuclear Medicine and Molecular Imaging, 31, supplement 1:S56–
S69, June 2004.
[2] A. K. Hackshaw and E. A. Paul. Breast self-examination and death from breast cancer:
a meta-analysis. British Journal of Cancer, 88:1047–1053, 2003.

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমি যতদূর জানি বেনাইন গুলোই পরবর্তীতে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই বেনাইন অবস্থাতেই বের করা দরকার। তাই না?

স্বপ্নহারা এর ছবি

আসলে এটা একটা সম্ভাবনা, কিন্তু ঘটার রেট খুব কম...যেগুলা অলরেডি শক্ত লাম্প হয়ে যায় সেগুলা মোটামুটি সেফ। তবে বিনাইন-গুলো ধরার সুবিধা হল, দূরের কোন অর্গানে ছড়িয়ে পড়তে পারে না...আর ট্রিটমেন্ট খুব সহজঃ রেডিয়েশন থেরাপি-সার্জারি দুটোই সহজ হয়ে যায়। সাধারণত বিনাইন গুলোকে বলা হয় টিউমার, ম্যালিগন্যান্টগুলোকে ক্যান্সার! সমস্যা হল কোনটা কী আচরণ করবে তা কেউ বলতে পারে না...ম্যালিগন্যান্টগুলোও বিনাইন হয়ে যেতে পারে...আবার বিনাইনগুলো ৫-১০ বছর পর হঠাৎ ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যেতে পারে। এখনো বিভিন্ন দেশে সেলফ এক্সাম করতে বলা হয়, কারণ এছাড়া ধরার আর কোন উপায় নেই যদিনা কোন সিম্পটম দেখা যায় (ব্যথা-ভারী লাগা-অসুস্থতা), তবে এর প্রায়োরিটি কমছে...চেষ্টা চলছে আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ধরার...কিন্তু সেখানে সমস্যা আল্ট্রাসাউন্ডের সেন্সিটিভিটি হাস্যকর রকমের কম, আর আর্লি সাইন ধরা যায় না...মন খারাপ অল্প বয়সে হলে আসলেই কিছু করার নেই-ডিম আগে না মুরগি আগে সমস্যা...! উন্নত দেশগুলোতে ৪০ বা ৫০ বছর বয়স থেকে রেগুলার ম্যামোগ্রাম করতে বলা হয়, প্রতি দুই বছরে...কিন্তু আমাদের দেশগুলোর মত দেশে ইন্সিডেন্স রেট কম হলেও দেরিতে ধরার কারণে মৃত্যুহার বেশি (জেনেটিক্যালি-ও!!)।

এটা ঘটার কারণগুলোঃ বংশগত, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন (ড্রিংকিং এন্ড স্মোকিং একসাথে!), রকি মাউন্টেন রিজিয়নে থাকা, অন্য কোন ক্যান্সারের মিউটেশন, শ্বেতাঙ্গ হওয়া...আরো হাজারটা।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

স্বপ্নহারা এর ছবি

ও, আপনাকে ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য...আমাদের দেশের জন্য আসলে এই সচেতনতাটা তৈরি করাই বেশি জরুরি। দেশেও এখন ইন্সিডেন্স বাড়ছে...সচেতন থাকলে যেকোন ভাবেই হোক আগে ধরা যাবে...কিছুটা হলেও মৃত্যুহার কমবে। আমি প্রথম কমেন্টটা আসলে করেছি উন্নত দেশের কনটেক্সটে...দুঃখিত ভাইয়া।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

আয়নামতি1 এর ছবি

চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কৌস্তুভ এর ছবি

সবাই চলুক দিচ্ছে, আমি তাই (গুড়) দিলাম...

অক্সিসেভেন  এর ছবি

আপনার পোস্টটিকি অন্য কোথাও শেয়ার করা যাবে ? ধন্যবাদ ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অবশ্যই লিংক শেয়ার করতে পারবেন। তবে কপি পেস্ট না করতে অনুরোধ জানাবো। ধন্যবাদ।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। দেশে খুব কম মানুষই এই ব্যাপারে সচেতন।

তরুণ হাসান এর ছবি

স্তন ক্যান্সার এখন বিশ্বব্যাপী মহিলাদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।সেই হিসেবে লেখাটি অত্যন্ত সময় উপযোগী। নিজে নিজে ব্রেস্ট পরিক্ষা করতে গেলে যে ব্যাপারটি কে গুরুত্ব দেওয়া দরকার তা হলো পরীক্ষার সময় কী কী অস্বাভাবিকতা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।মুর্শেদ ভাই উনার লেখার ভেতরে কিছু কিছু ব্যাপার উল্লেখ করেছেন।আরও কিছু উপস্বর্গ দেখা দিতে পারে।যেমনঃ

  • কোন গুটি বা দলা(lump) অনুভূত হয় কী না।
  • ব্রেস্ট এ ত্বকের রঙ পরিবর্তন আছে কী না।
  • নিপল কুচকে গেছে কী না(nipple retraction).
  • নিপল থেকে কোন রস নিসৃত হয় কী না।
  • ব্রেস্ট, এরিওলা,অথবা নিপলে কোন ধরনের একজিমা জাতীয় ঘাঁ(eczematous lesion) আছে কীনা।
  • সাধারণত ব্রেস্টের ত্বকে একধরণের কমলা রঙের আভা(peu de orange appearance) তৈরি হয়ে থাকে।
    এইগুলোর বাইরে, যাদের পরিবারে অন্য কারো ব্রেস্ট ক্যান্সার ছিল বা আছে তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবন তাদের কে নিয়োমিত স্ক্রিনিং করানর পরাপর্শ দেওয়া হয়।
    একজন মানুষের জীবনে যেকোনো সময়েই ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে।তবে দুই টা বয়স শ্রেণীর(age group) এর মাঝে এর রিস্ক সবচেয়ে বেশী ৩০-৩৫বছর এবং ৫০-৬০বছর বয়স।
    ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি মোটামুটি কম।কিন্তু একবার হয়ে গেলে মরণ ঝুঁকি (risk of mortality) মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার এর চেয়ে বেশী।সাধারণত যে সব পুরুষের স্তন বড় হয়ে যায় এটাকে মেডিকেলের ভাষায় gynaecomastia বলে।এদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার খুঁকি আরও বেশি।
    সুতরাং নিজের ব্রেস্ট সম্পর্কে যত্নবান হউন।বাংলা ব্লগ এ ইংরেজি ব্যাবহারের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

পাঠকafroza এর ছবি

পরীক্ষা করে কোনও উপসর্গ ধরা পড়লে প্রথমে কি করনীয়, কোথায় কার কাছে দেখালে সবচেয়ে ভাল হয়?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দেরি না করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনিই বলে দেবেন কার কাছে যেতে হবে বা আদৌ কোথাও যেতে হবে কিনা!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অবশ্যই একদম অবহেলা না করে জরুরী ভিত্তিতে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা নারী কোনো ডাক্তারের কাছে যান। তিনি প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে অন্য কারো কাছে পাঠাতে পারেন। আশংকা ইগনোর করে সমস্যাটাকে বাড়তে দেবার চেয়ে পরীক্ষা করে জেনে নেয়া ভালো।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই জরুরী লেখা, ভাল লাগলো

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ভীষন জরুরী একটা লেখা। পরিবারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের হিস্টি থাকলে নিজে শারীরিক পরীক্ষা, সময়মত ডাক্তারের সাথে কথা বলা, নিয়মিত আল্ট্রা সাউন্ড, ম্যামোগ্রাম করা খুবই জরুরী।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।