নগরদাসী

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/১০/২০০৭ - ১১:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাকে সংসারে ঢুকিয়ে দিয়ে জীবন থেকে বের হয়ে গেলি সবাই

এদিকে আসেন। এই যে; এই চেয়ারটা শিউলির। ইজি চেয়ার। আর এই বারান্দাটাও তার। অন্তত গত চার বছর ধরে তার। সে ছাড়া গত চার বছরে এই বারান্দায় কেউ আসেনি। এমনকি রংয়ের মিস্ত্রিও না। এই দেখেন ঘর থেকে বারান্দায় আসার স্লাইড ডোরে একটা লক আছে। শিউলি লক করে চাবি নিজের কাছে রাখে। ... এখানে দেখেন; বারান্দার গ্রিলে; ঠিক এই জায়গায় ডান হাত দিয়ে ধরে আস্তে আস্তে দোল খায় সে এই চেয়ারে বসে। গ্রিলের লোহাটা কেমন স্মোথ হয়ে আছে দেখেন বছরের পর বছর একই জায়গায় ধরার কারণে। এখানে কোনো লাইটের কানেকশন নেই। চাঁদ থাকলে সে এখানে বসে চাঁদ পায়; অন্ধকার থাকলে অন্ধকার। বাড়তি কিছুই না। ওই টবের গাছগুলোও শিউলির। প্রতিদিন সে ওগুলোতে পানি দেয়- বারান্দা পরিষ্কার করে আর রাতে এসে বসে এইখানে। প্রতিদিন। বসে একটা গান গায়। একটাই গান। অন্তত শুনে আপনার তাই মনে হবে। অথবা এমনও হতে পারে যে একই রকমের অনেকগুলো গান সে একই গানের মতো করে গায়। আসোলে কিছু কিছু গানের কথা ভালো করে না শুনলে এক গানকে অন্য গান কিংবা অনেকগুলো গানকে একই গান বলে মনেই হতে পারে। আসোলে শিউলি যে গান কিংবা গানগুলো গায় সেগুলো সে ছাড়া অন্য কেউ শোনে না। যার কারণে অন্য কেউ তার সুর কিংবা কথা বোঝার কথা না। অবশ্য সুর কিংবা কথা ঠিক করে গায় নাকি পাল্টেপুল্টে গায় তা আমি ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয় সে সুর এবং কথা দুটোই পাল্টায়। কারণ মানুষ যখন গুনগুন করে গায় তখন কোনো মানুষই গানের কথা আর সুর ঠিক রাখতে পারে না। তাছাড়া শিউলি গায় রবীন্দ্রনাথের গান। প্রমাণ দিতে না পারলেও আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা কিংবা এগুলো রবীন্দ্রনাথেরই গান। কারণ শহর কিংবা মফস্বলে বড়ো হওয়া ইস্কুল কলেজে পড়া কোনো বাঙালি একা একা রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া অন্য কোনো গান গাওয়ার ক্ষমতাই রাখে না। অন্য গানগুলোকে এরা অনুষ্ঠানে গায়। এখানে আরেকটা কথা; রবীন্দ্রনাথের গান কিন্তু একা একা গাইলে সুর বদলে যেতে বাধ্য। কারণ নিজের গলাকে নিজের থেকে একটু দূরে নিয়ে না গেলে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া যায় না। মানে এই একটু ভদ্র কিংবা পলিশ কিংবা পোশাকি কিংবা মেকি গলা না বানালে এই ভদ্রলোকের গানের গ্রামার ফলো করা সম্ভব না। কিন্তু সব বাঙালিইতো মূলত চাষা বাঙাল। এদের গলায় বাই-ডিফল্ট পল্লিগীতির সুর ইনস্টল করা। কিন্তু শহরে কয়েক বছর থেকে কয়েক ক্লাস পড়ার পরে তারা আর কোনো পল্লিগীতির কথা মনে করতে পারে না। তখন এরা একা একা বসে পল্লিগীতির সুরে রবীন্দ্রসংগীত গায়। কারণ পল্লিগীতির সুরে আছে একটা আপন আপন ভাব আর রবীন্দ্রসংগীতের বাণীতে আছে অন্তর্গত অভাব কিংবা একাকিত্বের কথা। তাই আমার ধারণা শিউলিও পল্লিগীতির সুরে রবীন্দ্রনাথের গান গায়। হয়তো...। আমি নিশ্চিত না। ...হয়তো। তা যাই হোক সে গায়। এই চেয়ারে এই বারান্দায় বসে প্রতিদিন রাতে

শিউলির সকাল হয় অনেক সকালে। এমন সকাল যাতে সকালের সব কাজ শেষ করে ফেলা যায় সকালের মধ্যেই। ...আসেন এদিকে আসেন। এই যে এটা তার বেডরুম। এই দেখেন সাইড টেবিলে একটা ঘড়ি অ্যালার্ম দেবার জন্য। এইতো অ্যালার্ম বাজল। বাজছে। শিউলির কানে এখনও শব্দ যায়নি কিংবা গেলেও সে নড়ছে না; কিংবা নড়তে ইচ্ছা করছে না; কিংবা নড়তে পারছে না সে; কিংবা উঠতে ইচ্ছে করছে না তার; অথবা অ্যালার্ম শুনেও আরেকটু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে; অথবা ভাবছে অ্যালার্মটা আরেকটু পরে বাজলে ভালো হতো; অথবা মনে হচ্ছে ঘড়িটা একটু ফার্স্ট তাই আগেই অ্যালার্ম বাজছে; অথবা আরো কয়েক মিনিট পরে অ্যালার্মটা সেট করলে আরেকটু ভালো হতো। এইজন্যই সে অ্যালার্ম শুনেও শুয়ে আছে। কিন্তু স্বামীর ঘুম ভেঙে গেছে- মরে গেছো নাকি? উঠো

এইবার দেখেন। শিউলি উঠছে না কিন্তু আধমরা কিংবা আধা-ঘুমন্ত একটা হাত বাড়িয়ে অ্যালার্মটা বন্ধ করছে। দেখেন দেখেন ঘড়িটাকে চুপ করিয়ে ওর আবার মনে হচ্ছে আর কোনো ঝামেলা নেই। এখন আরো কয়েক সেকেন্ড ঘুমানো যাবে। কিন্তু না। এই ঘুমের মধ্যেই যেন কেউ তাকে তাড়া দিচ্ছে- ওঠো শিউলি। ওঠো। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওঠো

দেখেন। যেন একটা দড়ির মাঝখানে আরেকটা দড়ি বেঁধে উপর থেকে টেনে তুলছে কেউ। এভাবে ঝুলে ঝুলে উঠছে শিউলি। দেখেন দেখেন উঠতে উঠতে খোঁপা করতে গিয়ে কয়বার টাল খেলো। আর এই দেখেন স্যান্ডেলে পা গলাতে গিয়ে কীরকম পড়ে পড়ে যাচ্ছে সে

এইবার শরীরে একটা ঝাঁকি দিয়ে খাড়া করে জানালার পর্দা সরিয়ে- ডিম লাইট অফ করে এক টানে গিয়ে রান্না ঘরের বাতি জ্বালালো। না। এখনও মুখে পানি দেবে না। আরেকটু পরে। রান্না ঘরে ঢুকেই এক চুলায় চায়ের পানি অন্য চুলায় রুটির পানি বসিয়ে তারপর এসে ব্রাশ করবে

আসেন এদিকে আসেন। এই দেখেন এটা তার রান্নাঘর। তার প্রথম কাজ সকালের নাস্তা রেডি করা। তার বাসায় কোনো কাজের লোক নেই। সব কাজ সে একাই করে

এইবার আসেন বিষয়গুলোকে একটু কাটপিস আকারে দেখি। মানে টুকরো টুকরো করে। এই দেখেন স্বামী ঘুমাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে আর শিউলি ওড়নাতে মুখ মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেরোচ্ছে- রান্না ঘরে আলু কুচি করছে- মরিচ কুচি করছে- পেঁয়াজ কাটছে- গরম পানিতে রুটির আটা দিচ্ছে- নেড়ে নামাচ্ছে- অন্য চুলায় আলু ভাজির বিত্তান্ত বসাচ্ছে- আলু তদারকি করতে করতে রুটি বেলছে আর ওদিকে শোনেন স্বামীর ডাক- শিউলি আমার ট্রাক স্যুটটা কোথায়?

স্বামী বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। জগিং করতে বের হবে এখন। বেডরুমেই ওদের সব কাপড় চোপড় থাকে ওয়ারড্রবে। কিন্তু দেখেন শিউলি রান্না ঘর থেকে গিয়ে ট্রাক সুটটা বের করে দিয়ে আসছে। ফিরে এসে সে আবার যেই কাজে লেগেছে ওমনি আবার ডাক- এক জোড়া মোজা দিয়ে যাওতো

শিউলি আবার গেলো। একই জায়গা থেকে এক জোড়া মোজা বের করে দিয়ে ফিরে এলো রান্না ঘরে। আবার কাজ। কিন্তু আবার ডাক। এবার দরজা লাগাতে। দরজাটা অটো লক। ভেতর থেকে টিপ দিয়ে বাইরে থেকে টান দিলেই দরজাটা লেগে যায়। কিন্তু স্বামী যাওয়ার সময় ডাক দিলো আর শিউলি গেলো দরজা লাগাতে। এই দেখেন দরজা লাগিয়ে দরজার নিচ থেকে পত্রিকাটা সোফার টেবিলে রেখে আবার ফিরে এলো রান্না ঘরে

এবার শিউলি কী করছে দেখেন। এটা ওর স্বামীর দুপুরের টিফিনের আয়োজন। এখন শিউলির হাত গুনে গুনে দশটা। একেবারে দেবী দুর্গার ক্লোন রোবট। দেখেন আবারও কাটপিস করে দেখেন। ফ্রিজ খুলে মাছ বের করে ভিজিয়ে রাখছে- অন্য তরকারি গরম করছে ওভেনে- চাল ধুয়ে রাইস কুকারে দিচ্ছে- মসলা মাখাচ্ছে- মাছের ঝোল করছে- রাতের মাংসটা গরম করছে- স্বামী জগিং সেরে এসে খাবে তাই আদা কুচি মরিচ কুচি দিয়ে ছোলার প্লেট রেডি করছে। আর এর ফাঁকে ফাঁকে রুটি বানানো আর ভাজাতো আছেই

এই যে কলিং বেল বাজল। স্বামী ফিরেছে। এই যে দরজা খুলতে গেলো। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনটা বেল বেজে গেলো- অতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?

শিউলি রান্নাঘরে ফিরে যাচ্ছে। আবার ডাক- মোড়াটা দাওতো
দেখেন ওই যে মোড়া। স্বামী যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার দুই হাত দূরে সোফার কোনায়। কিন্তু শিউলি গিয়ে সেটা দিয়ে আসছে। স্বামী মোড়ায় বসে জগিং সু খুলবে

আবার রান্নাঘর। শুনতে পাচ্ছেন কিছু?
- ছোলা রেডি হয়নি?

ছোলা রেডি। কিন্তু দরজা খুলে রান্নাঘরে গিয়ে আবার ডায়নিংয়ে ফিরে আসতে তো সময় লাগে। তাই না? এই যে শিউলি ছোলার প্লেট নিয়ে হাজির। এখন আবার কাটপিস দেখেন- পানি দাও
স্বামীর হাতের কাছের পানি শিউলি তার হাতের কাছে এগিয়ে দিচ্ছে। দিয়ে রান্নাঘরে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছে। আবার ডাক- পত্রিকাটা দিয়ে যাও
ড্রয়িং রুমের টেবিল থেকে পত্রিকাটা এনে ডায়নিং টেবিলে দিলো। নাহ এবারও যেতে পারল না- ফ্যানটা ছাড়ো

হ্যাঁ ফ্যান ছেড়ে এবার রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকল আবার। কিন্তু আবার ডাক- শিউলি চশমাটা দাওতো

চশমা সেই বেডরুমে। সুতরাং দেখতে হলে আমাদেরকেও রান্নাঘর থেকে ডাইনিং স্পেস পার হয়ে বেডরুমে ঢুকতে হবে। শিউলি বেডরুমের ওয়ারড্রব থেকে চশমা বের করবে। ...চলেন। হ্যাঁ এই যে চশমা নিলো। চলেন আবার বেডরুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং পার হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকি। হ্যাঁ আবার রান্না ঘর। ওই আগেরই কাজ। কিন্তু আবার ডাক- শিউলি একটা কলম দিয়ে যাওতো

আবারও রান্নাঘর থেকে ডাইনিং- ডাইনিং থেকে বেডরুম- বেডরুম থেকে ডাইনিং করতে হবে আমাদের ওর সাথে। এই যে কলম দিয়ে স্বামী শব্দ-জট মেলাচ্ছে ছোলা খেতে খেতে। চলেন আবার রান্না ঘরে যাই

এখন রান্নার সাথে কম্পিটিশন করে চলবে ধোওয়া ধুওয়ি। প্রথমেই রুটির জিনিসপত্র। কোনো শব্দ শুনলেন? হ্যাঁ চেয়ার ঠেলার শব্দ। স্বামী বাথরুমে যাচ্ছে। এখন শিউলি স্বামীর জন্য ডিম পোচ করবে। ডিম পোচটা করতে হয় স্বামীর গোসল থেকে বের হয়ে নাস্তায় বসার সাথে টাইমিং করে। কারণ বেশি আগে করলে পোচটা ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু শোনেন- শিউলি সেভিং ফোমটা কোথায়?

চলেন তো দেখি কোথায়? এই যে। বাথরুমেই। শিউলি বাথরুমে ঢুকে সেটা বের করে দিলো বাথরুমে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামীর হাতে। আবার রান্না ঘর। কিন্তু আবার ডাক- শিউলি টাওয়েলটা দিয়ে যাও

স্বামী টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে ঢোকেনি। সুতরাং আমাদেরকেও দৌড়াতে হবে রান্নাঘর থেকে ডাইনিং। ডাইনিং থেকে বেডরুম। সেখান থেকে নতুন টাওয়েলের সাথে বাথরুম এবং তারপর আবার রান্নাঘর। না একটু দাঁড়ান। শিউলি রান্নাঘরে যাবার আগে ডায়নিংয়ে এলোমেলো পত্রিকাটা গুছিয়ে রাখছে। হ্যাঁ ফ্যানটা বন্ধ করে ছোলার প্লেটটা নিয়ে তারপর রান্নাঘরে যাচ্ছে। এবার ডিম পোচ করার পালা

ডিম পোচ প্রায় শেষ। নাস্তার ট্রেও রেডি। স্বামী এসে বসে গেছে টেবিলে- নাস্তা রেডি হয়নি এখনও?

ডাকের আগেই শিউলি পা বাড়িয়েছে। তাই না? আচ্ছা হ্যাঁ। একে একে নাস্তাগুলো সামনে নামিয়ে রাখল- পানি দাও

পানি দিয়ে শিউলি এখন বেডরুমের দিকে যাচ্ছে। স্বামী ভেজা টাওয়েলটা বিছানায় ফেলে রেখেছে। সেটা বারান্দায় নিয়ে যাচ্ছে। ফিরে বিছানা গোছাচ্ছে। আবার রান্না ঘরের দিকে গেলো। চলেন। ও এইবার চা বানাবে। কিন্তু এবার বোধ হয় আগে পা বাড়াতে পারল না। ডাক চলে এলো- চা হলো তোমার?

দেখলেন? স্বামী ডাক শেষ করে মুখ বন্ধ করতে পারেনি তার আগেই শিউলির চা হাজির। এবার সে একটা হাফ সার্কেল চক্কর দেবে। নাস্তার প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে বের হয়ে বেডরুম। সেখান থেকে এক সেট কাপড় টেনে সোজা বাথরুম

বাথরুমে আমরা আর না ঢুকি। আসেন ডায়নিংয়ে আসেন। স্বামী চা খাচ্ছে। শিউলি দেরি করবে না। চা শেষ হতে হতে বের হয়ে পড়বে। দুয়েক সেকেন্ড এদিক সেদিক হতে পারে বড়োজোর। হ্যাঁ স্বামী চায়ে শেষ চুমুকটা দিলো। পত্রিকাটা ঠেলে সরিয়ে উঠে পড়ল। এখন সে বেডরুমে যাবে। চলেন। এই যে শিউলি বের হয়ে গেছে আগেই। আয়নায় দাঁড়িয়ে মাথা মুছছে
- অফিসের কাপড়গুলো দাওনি এখনও?
শিউলি পুরো সেটা কাপড় এগিয়ে দিলো স্বামীর হাতে। আসেন আমরা শিউলির সাথে যাই। ভেজা টাওয়েলটা মাথায় জড়াতে জড়াতে সে ডায়নিংয়ে পত্রিকাটা গুছিয়ে চায়ের কাপটা নিয়ে রান্না ঘরে যাচ্ছে। কাপ-পিরিচগুলো ধুয়ে রাখবে। কিন্তু স্বামী ডাকছে- টাইটা ঠিক করে দাও না

আমরা মাঝামাঝি দাঁড়াই। ডাইনিং রুমে। এই স্পেসের সামনে দিয়ে এখন শিউলি অনেকবার যাওয়া আসা করবে। হ্যাঁ টাই বেঁধে দিয়ে রান্নাঘরের দরজায় পা দিতেই আবার ডাক- পারফিউমটা দাও

পারফিউমটা দেখেছেন না? স্বামী যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেই আয়নার পাশের রেকে। কিন্তু শিউলি রান্নাঘর থেকে গিয়ে দিয়ে ফিরে আসছে। না। ফিরতে পারল না- অফিসের ব্যাগটা দাও
ওটাও ওখানেই রাখা। নিচের তাকে। হ্যাঁ বের করে বিছানায় রেখে এলো। ...ব্যাগে কলমটা দাও

কলমটা শব্দ-জট মেলানোর জন্য ডায়নিংয়ে নেয়া হয়েছিল। এই যে কলমটা নিয়ে ব্যাগে রেখে এসে ঢুকল রান্নাঘরে। স্বামীর দুপুরের খাবার হট ক্যারিয়ারে সাজাচ্ছে। এই যে হয়ে গেছে। তার পা দুটো দেখেন। কত দ্রুত চলে। হট ক্যারিয়ারটা বিছানায় রেখে ফিরছে। না না। ফিরতে পারেনি- এটা রাখো। এটা কোনটা বুঝতে পারছেন? পারফিউম। রাখল। এবার ফিরতে পারবে বলে আপনাদের মনে হয়? দেখেন না। এই যে;
-সান গ্লাসটা দাওতো

হ্যাঁ এবার ফিরতে পারল রান্নাঘরে। নাস্তার প্লেটগুলো ধুয়ে রাখা শেষ। এবার এক টুকরো রুটির মধ্যে আলু নিয়ে মুখে দিচ্ছে। ...দেখেন তো ওদিকে আবার কী হলো?
- শিউলি ঘড়িটা দাওতো

আবার বেডরুম। ঘড়ি নিয়ে এসে ড্রয়িং রুম। আবার রান্নাঘর। নাস্তাতো করা হয়নি এখনও। আরেক টুকরো রুটি মুখে দিলো। কিন্তু গিলতে পারেনি এখনও- শিউলি দরজা লাগাও

মুখের খাবার চিবোতে চিবোতে গিয়ে দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরে এসে আরেকটু নাস্তা মুখে দিলো। প্লেটটা রেখে চা বানিয়ে বের হলো। এক হাতে চা অন্য হাতে নাস্তা। ডায়নিংয়ে চেয়ারের উপর পা তুলে দিয়ে বসে একসাথে চা আর নাস্তা খাচ্ছে। একটু নাস্তা এক চুমুক চা। কিন্তু আবার কলিং বেল। শিউলি নাস্তা রেখে উঠে গেলো। স্বামী ফিরে এসছে- আশ্চর্য হট ক্যারিয়ারটা ব্যাগের মধ্যে দেবে না?

শিউলি হট ক্যারিয়ারটা বিছানার উপর রেখে এসেছিল। স্বামী সেটা আর ব্যাগে ঢোকায়নি। রাস্তায় গিয়ে তার মনে হয়েছে। তাই ফিরে এসছে আবার। ... হ্যাঁ ঠিকই। ওটা যেভাবে রেখেছিল সেভাবেই আছে। এই যে শিউলি নিয়ে এসছে
- তোমার জন্য দেরি হয়ে গেলো আজ

দরজা লাগিয়ে শিউলি এসে আবার বসছে। আসেন আমরা ওর নাস্তা করা দেখি। নাহ। আর বোধহয় খেতে ইচ্ছে করছে না তার। এক চুমুক চা মুখে দিয়ে প্লেটটা নিয়ে রান্নাঘরে যাচ্ছে। হ্যাঁ সবই ফেলে দিয়ে কাপ প্লেটগুলো বেসিনে ধুয়ে নিচ্ছে। এবার নিজের দুপুরের জন্য দুটো রুটি আর কিছু ভাজি প্যাক করবে। এই তো। রান্নাঘর শেষ। এবার টিফিন বাটিটা এক হাতে নিয়ে ফ্রিজ থেকে ছোট পানির বোতলটা বের করে বেডরুম

মাথার চুলে চিরুনির দুটো বাড়ি দেয়া। ব্যাগের মধ্যে পানি টানি ভরে নেয়া। কপালে একটা টিপ হাতে ঘড়ি আর শাড়ি। এইবার স্যান্ডেলটাতে শুধু পা গলানো বাকি। এইতো। ...দড়াম। এক টানে দরজা বন্ধ এবং সিঁড়িতে তার পায়ের শব্দ শোনেন

শিউলি অফিস যাচ্ছে

এটা শিউলির অফিস। এই যে শিউলি এসে গেছে। দরজা খুলে ঢুকতেই বিগবস ম্যাডাম- অফিস টাইম নয়টা বলে নয়টাতেই আসতে হবে? দুয়েক মিনিট আগে আসা যায় না? যান সিটে যান আমি আসছি

ম্যাডাম তার রুমে গেলেন আর শিউলি ঘড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে তার সিটে গেলো। এই দেখেন কাগজপত্রে ঠাসা তার সিট। সবার উপরে মাঝারি বস রাসেলের নোট- সকাল দশটার মধ্যে কমপ্লিট করবেন। এরপরেরটা আরেক মাঝারি বস রশিদের নোট- লাঞ্চের আগে আমার ডেস্কে দিয়ে যাবেন

হ্যাঁ কম্পিউটারটা অন হয়ে গেছে। কিন্তু ম্যাডাম হাজির। শিউলির ডেস্কের কাগজগুলো দেখছেন- এগুলো এখানে কেন? রাসেল নিজে করতে পারে না এসব? এটা রশিদ এখানে রেখেছে কেন? ওটাতো তার নিজের করার কথা। এগুলো রাখেন। কালকের প্রপোজালটা বের করেন

প্রপোজাল শিউলি বের করেছে কিন্তু ম্যাডামতো এরই মধ্যে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শিউলি কী করবে তাহলে? বসেইতো থাকবে? কিন্তু দেখেন হঠাৎ শিউলির কথা ম্যাডামের খেয়াল হয়েছে- আপনি হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? কাজ করতে বললাম না? দেখি কী করেছেন? ...হ্যাঁ ঠিক আছে। ইনট্রোডাকশনটা বের করেন

ইনট্রোডাকশন বের করলেও তিনি কি তা দেখছেন নাকি ফোনে কথা বলছেন? ...এর মধ্যে রাসেল আর রশিদ দুবার করে এসে ম্যাডামকে শিউলির পাশে বসা দেখে ফিরে গেছে

ওই যে দেখেন ম্যাডামের দিকে তাকাতে তাকাতে ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার রতœা যাচ্ছে। নাহ। লুকাতে পারেনি। ম্যাডাম দেখে ফেলেছেন- রতœা এদিকে আসেন
ম্যাডামের সম্ভাব্য প্রশ্নের আগাম উত্তর দিতে দিতেই দাঁড়িয়ে পড়ল রতœা- ম্যাডাম আমার টেবিল ঘড়ির অ্যালার্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তো; তাই একটু দেরি হয়ে গেছে উঠতে। আজ আমি নতুন ঘড়ি কিনে নিয়ে যাব ম্যাডাম

রতœা চলে গেলো কিন্তু শিউলিকে শুনতে হলো- চোখ ফেরালেই আপনি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন। এটা কোন ধরনের অভ্যাস?

এই যে শিউলির রুমের আরেক কলিগ রুনা এলো
- আপনি কখন এলেন?
- ম্যাডাম নয়টায়
- নয়টায়? এখন কত বাজে জানেন?
- ম্যাডাম নয়টা এক

আপনাদের হাতে ঘড়ি আছে না? দেখেন তো কয়টা বাজে? নয়টা দশ না? কিন্তু রুনা বলল নয়টা এক। ম্যাডামও ঘড়ি দেখছেন- এখন নয়টা এক বাজে?
- আমার ঘড়িটা বোধ হয় একটু স্লো হয়ে গেছে ম্যাডাম। আমার ঘড়িতে নয়টা একই বাজে

ম্যাডাম রুনার দিক থেকে আবার শিউলির দিকে ফিরলেন- আপনাকে ঘড়ি দেখতে কে বলেছে? আপনি আপনার কাজ করেন
ম্যাডাম হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছেন। কিন্তু এই রুমের আরেক কলিগ তপন চলে এলো-গুড মর্নিং ম্যাডাম
ম্যাডাম মোবাইল বন্ধ করে ফিরলেন- এখন কটা বাজে তপন?
- ম্যাডাম এখন অফিস আওয়ারতো। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। আর আমিতো আসি অনেক দূর থেকে
- কেন? দূর থেকে আসেন কেন?
- আমি আমার মা বাবার সাথে থাকি তো
- কেন? মা বাবার সাথে থাকেন কেন?
- ম্যাডাম আমাদের সব ভাই-বোনই বিয়ের আগে পর্যন্ত মা বাবার সাথে থাকে
- তা আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
- ম্যাডাম এই অবস্থায় বিয়ে করে তো সংসার চালানো যাবে না তাই ভাবছি প্রমোশনটা হলেই বিয়ে করে ফেলব

ম্যাডাম এইবার শিউলির ডকুমেন্টে একটা বানান ভুল পেয়েছেন- অসহ্য। স্পেলিং মিস্টেক। আচ্ছা আপনাকে সার্টিফিকেট দিয়েছে কে?

কিন্তু এদিকে দেখেন শিউলির রুমে বসা আরেক কলিগ আরিফ দরজা খুলেই ডান-বামে কেমন তাকাচ্ছে। দরজার সামনাসামনি বসা রতœা ইশারায় জানিয়ে দিলো ম্যাডাম ওই রুমে বসা। খবরটা শুনেই দেখেন দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আরিফ কিছু ভেবে নিচ্ছে। তারপর... তারপর দেখেন কী স্পিডে গিয়ে রুমে ঢুকছে- স্লামালাইকুম ম্যাডাম। আরেকটু হলে ম্যাডাম। আজ মারাই যাচ্ছিলাম...
ম্যাডাম শিউলির কম্পিউটার থেকে চোখ ফেরাচ্ছেন না- মরার কী দরকারটা পড়ল আপনার?
- বাসে করে আসছিলাম ম্যাডাম। আমি ম্যাডাম বাসের বামদিকের পেছনের সিটের ঠিক সামনের সিটটায় বসা। আমাদের গাড়ির পেছন দিক থেকে একটা গাড়ি; মানে বাস-গাড়ি ম্যাডাম। ওভার টেক করতে গিয়ে মারল ঠিক আমার সামনের সিটে একটা ধাক্কা ... আরেকটু হলে ম্যাডাম...
দেখেন দেখেন তপন আর লুনা চোখাচোখি করে হাসছে। কিন্তু ম্যাডাম তাকাচ্ছেনও না আরিফের দিকে- সপ্তায় কয়দিন আপনার এরকম মরে যাবার মতো গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট হয়?
- ড্রাইভারগুলো ম্যাডাম একটাও মানুষের জাত না। খালি কম্পিটিশন
- আমি ড্রাইভারদের কথা শুনতে চাচ্ছি না। জানতে চাচ্ছি আপনি প্রতি সপ্তায় কয়দিন অ্যাকসিডেন্ট করেন?
- বিশ্বাস না হলে ম্যাডাম আপনি ফোন করে দেখতে পারেন... তারপর
- যান সিটে যান
- শিউলি আপা। আপনার কাছে পানি আছে? আমি ভয়ে সব কিছু কোথায় ফেলেছি বলতে পারি না.. উফ। আরেকটু হলে আমার আর কোনোদিনই অফিসে আসা হতো না

শিউলির কাছে পানি চেয়ে অ্যাকসিডেন্টটাকে আরিফ জায়েজ করে নিয়ে বসল সিটে। কিন্তু ম্যাডাম রেগে উঠলেন শিউলির উপর- আপনারতো দেখি কাজের চেয়ে জনসেবায় বেশি মনোযোগ

ম্যাডাম উঠছেন- এটা কমপ্লিট করে আমার ডেস্কে নিয়ে আসেন

ম্যাডাম বের হতেই এই যে রাসেল এসে হাজির- আপনিতো ম্যাডামকে বলতে পারতেন যে আপনার হাতে একটা জরুরি কাজ আছে?... আধ ঘণ্টার মধ্যে এটা কমপ্লিট করে নিয়ে আসুন

আসেন আমরা এখানে বসি। এই সোফাটায়। রতœার সামনে। রতœা বই পড়ছে আর একা একা হাসছে। আসেন তার সামনেই বসি। কারণ শিউলির ডেস্কে একই কাহিনী ঘটতে থাকবে অনেকক্ষণ ধরে। একটু পরে রশিদ গিয়ে হাজির হবে- এখনও শেষ হয়নি?
ম্যাডাম আবারও যাবেন। রাসেল যাবে। রশিদ যাবে। আর আরিফও যাবে- শিউলি আপা; ওটা একটু দেখে দেন না। এইটা একটু করে দেন না

এই যে সবাই লাঞ্চে বসে গেলো। আর শিউলির কম্পিউটারের কী বোর্ডে শোনেন কেমন নন-স্টপ শব্দ হচ্ছে। বসেন এখন আর দেখার কিছু নেই। সবই আগের মতো। মাঝে মাঝে আরিফের খিস্তি- রুনার ফোন- তপনের হাসি শুনতে পাবেন। ...ওই দুই রুমে যাবেন? রশিদ আর রাসেলের রুমে? না থাক। ওদিকে গিয়ে কাজ নেই। চলেন দেখি শিউলি কী করে। এই যে টিফিনের বাটিটা টেবিলে তুলল। হ্যাঁ মুখে দিচ্ছে। কিন্তু এই যে আবার ম্যাডাম হাজির- আপনার অত ঘনঘন ক্ষিদে পায় কেন?

ওই দেখেন শিউলি না খেয়ে বাটি আবার প্যাক করে ব্যাগে রেখে দিচ্ছে
- এই কোটেশনগুলো অ্যানালাইসিস করে নিয়ে আসুন
শিউলি বসে গেলো কোটেশনগুলো নিয়ে

এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি আবার সামনের সোফায় গিয়ে বসবেন? চলেন দেখি ম্যাডাম কী করেন। এই যে ম্যাডাম গাড়ি বের করতে বলছেন। তিনি বের হয়ে যাবেন এখন

দেখেন দেখেন ম্যাডাম অফিস ছাড়তে না ছাড়তেই রশিদ বের হয়ে গেলো। ...রাসেলও যাচ্ছে। যাবার আগে দুজনই রতœাকে বলে গেলো যেন কেউ খোঁজ করলে কোনো মিটিংয়ের কথা বলে। আর শিউলিকে দিয়ে গেলো আরো কিছু কাজ। কিন্তু দেখেন এই দুজন বের হতে না হতে রতœাও গোছানো শুরু করে দিয়েছে। শিউলির ডেস্কে এগিয়ে আসছে সে- আমি বের হচ্ছি। একটু ম্যানেজ করবেন
- শিউলি আপা আমি একটু বেরোচ্ছি। কম্পিউটার খোলা থাকল কেউ খোঁজ করলে বলবেন একটু নিচে গেছি। আর যাবার সময় পিসিটা বন্ধ করে যাবেন প্লিজ
লুনা বের হয়ে গেলো
- বাই শিউলি আপা
তপন গেলো
- ইয়ে... আমার একটু কেনাকাটা ছিল। আপনিতো আছেনই না?
এবার আরিফ গেলো

এখন পুরো অফিসে শিউলি একা। এবং চুপ। শুধু তার কম্পিউটারে শব্দ হচ্ছে অনবরত। আসেন বসি। অনেকক্ষণ বসতে হবে। এই যে শিউলি উঠল। এক গাদা প্রিন্ট দিয়েছে। এই যে আলাদা আলাদা করে স্টেপল করছে। এগুলো এখন সে বিভিন্ন ডেস্কে দিয়ে আসবে। হ্যাঁ এই যে। ম্যাডামের রুম থেকে রশিদের রুম। রশিদের রুম থেকে রাসেলের রুম। সেখান থেকে আরিফের ডেস্কে

লুনার পিসিটা বন্ধ করছে শিউলি। ফিরে গেলো নিজের ডেস্কে। পানি খাচ্ছে। হ্যাঁ এবার কম্পিউটার বন্ধ করছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে না? এখন সে বের হবে

এই সন্ধ্যায় শিউলি অফিস থেকে বাসায় ফিরছে

এই যে শিউলির স্বামী সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে। চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ঢুকল শিউলি। ঢুকেই রান্নাঘর। চায়ের পানি বসাচ্ছে। এবার বেডরুম। নিজের ব্যাগ রাখা- নিজের আর স্বামীর ব্যাগ খুলে হট ক্যারিয়ার বের করা। বিছানার উপর ছড়ানো স্বামীর কাপড়চোপড়গুলো ধুয়ে দেবার জন্য ওয়াশিং মেশিনে দেয়া- ফিরে এসে স্বামীর বিকেলের চা নাস্তা বানানো এবং রাতের রান্না

এর ফাঁকে ফাঁকে- ফ্যানটা ছাড়ো। চশমাটা দাও। পারফিউমটা কোথায়। দরজা লাগাও এগুলো আগের মতোই দেখলেন। ...স্বামী বেড়াতে গেলো। এবার শিউলি কী করে দেখেন। এবার সে ঘর মুছবে। আড়াই হাজার স্কয়ার ফিটের ফ্লোর মুছবে রান্নার ফাঁকে ফাঁকে। দেখেন। হ্যাঁ দেখলেন তো। তারপর কী?
কাপড় ইস্ত্রি করা লাগে না? এই যে শিউলি করছে। বিছানার চাদর চেঞ্জ করল। বারান্দার টবে পানি দিলো। বারান্দা ঝাড়– দিলো

কলিং বেল বাজল আবার। দরজা খুলে এই দেখেন রান্না ঘর। কিন্তু পেছনে আওয়াজ-রাতের খাওয়া কি বন্ধ নাকি আজ?

স্বামীর জন্য পুরো টেবিল বেড়ে দিয়ে- পানিটা বাড়িয়ে দিয়ে শিউলি এবার বাথরুমে যাবে। এইবার একটু বেশি সময় নেবে সে। স্বামী খেয়ে কিছুক্ষণ টিভি দেখবে। এই যে বাথরুম থেকে বেরিয়ে চুল মুছতে মুছতে শিউলি এসে বসছে টেবিলে। এই দেখেন বসল আর উঠল

এবার কয়েকটা চক্কর দৌড় লাগাবে সে। টেবিলের জিনিস গোছানো এবং ধুয়ে মুছে রাখা। ফ্রিজের জিনিস ফ্রিজে রাখা। স্বামীর ছোলা ভিজিয়ে রাখা

ব্যাস আজ আর রান্নাঘরে কোনো কাজ নেই। লাইটটা অফ করে দিচ্ছে। এবার কি শিউলির পায়ের গতি একটু ধীর হলো মনে হয়? তাকে কি ক্লান্ত লাগছে? হতে পারে। আজকের মতো আর কোনো কাজ নেই। শিউলির ছুটি হলো এখন। আপনাদের হাতে কি ঘড়ি আছে? দেখবেন কটা বাজে?

বাথরুমে এই যে মুখে পানি দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে। ধীরে ধীরে। থাক। ঘড়ি দেখে তাকে আর তাড়া না দেই। সে বের হোক। ওড়নাতে মুখ মুছতে মুছতে ডায়নিংয়ের দিকে যাচেছ শিউলি। সকালেও এই দৃশ্য দেখেছি। কিন্তু কত তফাত। একটু সরে দাঁড়ান। সে এখন এক ঢোক পানি খাবে

পানি খেয়ে শিউলি তার বারান্দার দিকে যাচ্ছে। ধীর-অতি ধীর। সারা দিনের না বলা কথার ভার টেনে টেনে শিউলি লক খুলে গিয়ে বসছে তার চেয়ারে। দুলছে...। ...আস্তে আস্তে। লোহার গ্রিল ধরে দোলাচ্ছে ইজি চেয়ার। ...শিউলির চোখটা বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু... তার ঠোঁট কি নড়ছে? কিছু শুনতে পাচ্ছেন আপনারা? কিছু শুনতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ শিউলি শব্দ উচ্চারণ করছে চোখ বন্ধ করে। ...শিউলি গান গাইছে। রবীন্দ্রনাথের গান হয়ে শিউলির মুখ থেকে বের হচ্ছে কথা। সারাদিনে এই প্রথম এবং একমাত্র কথা- আমি কান পেতে রই/ ও আমার আপন মনের গহন দ্বারে বারে বারে কান পেতে রই/ কোন গোপন বাঁশির কান্না হাসির গোপন কথা শুনি বারে বারে/ আমি কান পেতে রই

কিছু শোনার জন্য শিউলি তার নিজের ভেতরে কান পেতে দুলতে থাকুক। চলেন আমরা অন্য দিকে যাই

২০০৭.০৮.২৩ বিষুদবার- ২০০৭.০৯.১২ বুধবার


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই গানটি নগরদাসী গল্পের মুভি ভার্সনের প্লেব্যাক হিসেবে করা হয়েছে
মুভির চিত্রনাট্য এবং নির্দেশনা দুটোই আমার
(এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথা ছাড়া আর কেউ এর কপিরাইট দাবি করতে পারেন না)
গানটি গেয়েছেন শিমুল খান
.......

আমার কয়েকটা গল্পের মুভি ভার্সন আছে। আর আরো কয়েকটা করার পরিকল্পনা আছে

......

এই গানটি আগে একবার এখানে দিয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের মাথায় গানটি কোথায় যেন চলে গেলো
তাই এবার গল্পের সাথে দিলাম
এই গানটিই গল্পে শিউলি একা একা গায়

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার কপিরাইটেড হলে তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু গানটি আবার কোথায় গেল?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই গানটি নিয়ে তো মহা সমস্যা
দুইবার দিলাম দুইবারই গায়েব হয়ে গেলো
একটু আগেওতো দেখলাম ছিলো

অতিথি লেখক এর ছবি

তাপস শর্মা এর ছবি

গানটা ডাউনলোড করে নিলাম!

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

এর মুভি ভার্সনটা দেখতে চাই।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অচিরেই দেখবেন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

পড়তে শুরু করেছি। সুতরাং পড়া শেষ হওয়ার আগেই গানটা যুক্ত হোক। শুনতে শুনতে পড়ি।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

পড়া শেষে মন্তব্য:
পড়ে আমার বউয়ের জন্য দু:খ হলো। গল্পের মত একটা স্বামী সে পেল না।

পাঠপ্রতিক্রিয়া:

এইটাই কি মুভির মূল গল্প? ক্যাম্নে কি? ক্যারেক্টার আর্ক তো ধরতে পারলাম না। শিউলি শুরুতে যেরকম ছিল গল্পের শেষেও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। গল্পটারও কোনো উত্থান-পতন বুঝলাম না।
শিউলির জীবনের একটা দিন - এই ধারণা থেকে গল্পভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র।
কিন্তু প্রতিদিনের জীবনেও মানুষ এক থাকে না। একটু একটু করে বদলায়।

এতোগুলো মানুষের সাথে শিউলির কথা হলো, যোগাযোগ হলো, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হলো, তারা তাকে তাদের সুবিধায় ব্যবহার করলো দাসীর মতো, তাতে শিউলি চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হলো না?

আমরা কি কোনো সাইন্স ফিকশন পড়ছি? মানে শিউলি কি কোনো রোবট?

লেখকের ভাবনাটা ধরতে পারছি না। শুধু শুধু গল্প হলে প্রায়ই ধরতে পারি না। তবে মুভির গল্প বলেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। চিন্তাচেতনায় অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি কিনা? লেখকের সাথে আলাপ করলে হয়তো পরিষ্কার হতো।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কিছু মানুষ আছে যাদের অবস্থান এমন যে হুকুম পালন করে যাওয়াই তার নিয়তি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই এই নিয়তিকে দোষারোপ করে- অন্যের সাথে তর্ক করে- হা হুতাশ করে- হতাশায় ভোগে। কিন্তু কিছু মানুষ জানে তাতে কোনো লাভ নেই। কথায় কথা বাড়ে- হতাশায় বাড়ে হতাশা। তার চেয়ে ভালো সামনে যা আসে তাকে সহজভাবে মেনে নেয়া- এবং অপেক্ষা করা কোনো এক দূরের সম্ভাবনার

শিউলি এই শ্রেণীর এক মানুষ

সারা দিনের শেষে সব কাজ শেষ করে শিউলি নিজের জন্য পায় মাত্র এক অথবা দুমিনিট সময়। হয়তো এই অংশটির জন্যই শিউলি বেঁচে থাকে এবং বিনা শব্দে মেনে নেয় সবকিছু। এই অংশে শিউলির মুখে আমরা প্রথম কোনো শব্দ শুনতে পাই। অন্ধকার বারান্দার ইজি চেয়ারে বসে শিউলি গান গায় আপন মনে ‘আমি কান পেতে রই/ আপন হৃদয় গহন তলে বারে বারে কান পেতে রই’
শিউলি তারা সারাটা দিন পার করে নিজের ভেতরে কান পেতে কোনো দূরের বাণী শোনার আশায়...

এটাই শিউলি এবং নগরদাসী...

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ, লেখকের উদ্দেশ্যটা বুঝা যাচ্ছে।
মুভিটা আমরা কবে পাচ্ছি?
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি আইটিউব না ইউটিউব কি যেন একটা
সেটার সাথে যুদ্ধ করছি
বিজয়ী হতে পারলেই পেয়ে যাবেন

আর স্যাটেলাইটে যাবার তারিখ হলে এখানেই না হয় বিজ্ঞাপন করবো
(নো কস্ট)

ভাস্কর এর ছবি

জামাইটারে অটিস্টিক লাগছে...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হা হা হা।
শব্দজট খেলে কিন্তু?
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লীলেন ভাই আপনার হারিয়ে যাওয়া গানটা এখানে:

http://www.sachalayatan.com/node/9498

নগরদাসীর আরো গান শুনতে মঞ্চায়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- অসাধারণ গল্প লীলেন্দা। গানটার গায়কী এবং প্লট (গল্পের সাপেক্ষে), তাও অসাধারণ। নগরদাসী কি এখনও গল্প হিসেবেই আছে, নাকি মুভি'র সেলুলয়েডে আটকা পড়েছে, জানতে খুব লোভ হচ্ছে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়তে অসাধারন লাগলো। -রু

তাপস শর্মা এর ছবি

অবশেষে গানটা পেলাম। শুনলাম। গানটা শুনলাম। গল্পটা পড়লাম। শিউলিকে দেখলাম। ......... আর কিছুই বলার নাই, কেননা আমিও কান পেতে রই!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।