রণাঙ্গন ৭১: অপারেশন পানিহাতা

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি
লিখেছেন নুরুজ্জামান মানিক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৩/২০২৪ - ৭:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৪ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সকাল ৯ টায় মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল রাও আমাদের ক্যাম্পে এসে নির্দেশ দিলেন সন্ধ্যা ৭টায় পাক বাহিনীর শক্তিশালী ঘাটি পানিহাতা আক্রমণ করতে হবে। তার নির্দেশ শুনে আমার কোম্পানির যোদ্ধারা কিছুটা ভড়কে গেল । কারণ, কিছুদিন আগে উক্ত ঘাটি আক্রমণ করতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর একজন কোম্পানি কমান্ডার সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে ।

যা হোক, দেশকে শত্রু মুক্ত করতেই হবে যে কোন মূল্যে, পিছপা হলে চলবে না । আমি সকলকে একত্র হতে আদেশ দিয়ে ব্রিফিং দিলাম । সবাই 'জয় বাংলা' বলে অপারেশনে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করল । সন্ধ্যায় কর্নেল রাও এসে আমাদের প্রস্তুতি দেখে খুশি হলেন ।
শুরু হল আমাদের যাত্রা । ঘুটঘুটে অন্ধকার ,সামনে ছোট নদী পার হয়ে পানিহাতার দিকে নিরবে চললাম । আনুমানিক রাত ১১টায় পাকবাহিনীর ক্যাম্পের অতি নিকটে পৌঁছলাম । আধার রাতে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না । কিন্তু ক্যাম্পটি দেখা যাচ্ছে হারিকেন এর প্রজ্বলিত আলোয় ।
বেশ কিছুক্ষণ কাদাযুক্ত ধানক্ষেতে চুপটি মেরে থাকার পর আদেশ দিলাম ফায়ারিং এর । মিত্রবাহিনী সেল মারা শুরু করল । আর আমরা এলো এম জি, এস এলো আর ও রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকলাম । প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলল । পাকবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে সাজোঁয়া গাড়ি করে পালিয়ে গেল ।
ভোর ৪টায় পানিহাতা ক্যাম্পে রেড করলাম। বিজয় নিশান উড়ানো হল ময়মনসিংহ জেলার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাটি পানিহাতায় । শত্রু মুক্ত ঘাটিতে শুরু হল আনন্দ উল্লাস।

সকালে বাঙ্কারের ভিতরে দেখলাম সম্পূর্ণ নগ্ন মা -বোনাদের । তাদের দেহে শক্তিবল কিছুই নেই , রক্তশূন্য ফ্যাকাসে ,একেকজন যেন জিন্দা লাশ । প্রশ্ন জাগে মনে "পাকিস্তানি সেনারা কি মুসলমান ", "তারা কি মানুষ নাকি নরপশু " । ১৭/১৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করলাম । আমাদের সাথে যে গামছা ছিল তা' দিয়ে তাদের লজ্জা ঢাকার ব্যবস্থা হল । আশপাশের লোকজন এলে বীরাঙ্গনাদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর জন্য তাদের হেফাজতে দিয়ে ক্যাম্পে চলে এলাম । সঙ্গে ছিল দুই সহযোদ্ধার লাশ

মূল স্মৃতিচারণঃ মরহুম মোঃ রহমতুল্লাহ (আমার বাবা),কোম্পানি কমান্ডার, ১১ নং সেক্টর ,১৯৭১।
অনুলিখনঃ নুরুজ্জামান মানিক


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।