পৌনঃপুনিক

অভ্রনীল এর ছবি
লিখেছেন অভ্রনীল (তারিখ: সোম, ২৩/০৩/২০০৯ - ৭:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[১]

এলার্ম ঘড়িটা দুইবার বাজলো, তৃতীয়বার বাজবার আগেই রনির ডান হাতটার চাপড়ে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। ওর ঘুম ভেঙ্গেছিলো আগেই, এতক্ষন শুয়ে শুয়ে ডায়রীটা পড়ছিলো। যে পাতার উপর চোখ আটকে আছে সেটাতে বড় করে লেখা “এটেম্পট নাম্বার ১৪”। আগের পৃষ্ঠাটা উল্টায় রনি। সেটাতে বড় করে লেখা “এটেম্পট নাম্বার ১৩” যেটা আবার লাল কালি দিয়ে কাটা, যার একটাই অর্থ এটেম্পটা সফল হয়নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রনি, সামান্য একটা কাজ করতে এতগুলো এটেম্পট নিতে হয়! কাজটা অনেক আগেই শেষ হত কিন্তু বাগড়া দেয় নীলা, ওকে দেখলেই সবকিছু ভুলে যায় রনি। এই মেয়ের জন্যই সারা জীবনে সবখানে সফল রনি এই কাজে এসে ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু নাহ কাজটা আজকে শেষ করতেই হবে, যেভাবে হোক। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে রনি বাথ্রুমের দিকে যায়।

[২]

শাহবাগের মোড় থেকে গোলাপফুল কেনে রনি। দোকানদার তার পরিচিত, দেখলেই হাসি দেয়। উত্তরে রনিও পাল্টা হাসি দেয়। হাসাহাসির পাট চুকিয়ে দামাদামি শুরু হয়। আশ্চর্য ব্যাপার। পরিচিত দোকানী কিন্তু তারপরও প্রতিদিন দরদাম করতে হয়। একসময় দামাদামিও শেষ হয়, রনিরও ফুল কেনা হয়।

ফুল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিন নেতার মাজারের সামনে গিয়ে বসে রনি। মাথায় এখনো ঘুরছে কাজের কথা। আজকে সে প্রচন্ড ডিটারমাইণ্ড যে কাজটা হয়ে যাবে। রাস্তার উল্টোপাশে আরিফরা সব বসে আছে। রাস্তার ওপাশ থেকে রনির উপর ওরা নজর রাখছে। এইটা ওরা সবসময়ই করে। ওদের কথা বাদ দিয়ে রনি আবার তার কাজের দিকে মন ফেরায়।

বসে থাকতে থাকতে সাত মিনিট পার হয়ে গেছে। এমন সময় সামনে এসে থামলো সাদা কারটা। প্রতিদিনের মত আজকেও নীলা কে তার বড়বোন অফিস যাবার পথে নামিয়ে দিতে এসেছে। নীলা গাড়ি থেকে নামলো। অসাধারন সুন্দর লাগছে ওকে আজকে। নীল কামিজ পড়েছে সাথে ম্যাচিং করা ব্যাগ। ও কিভাবে জানলো নীল রঙ রনির পছন্দের? রনিতো ওকে জানায়নি। মুহূর্তে কাজের কথা বেমালুম ভুলে যায় রনি। হাঁ হয়ে তাকিয়ে দেখে নীলাকে। নীলা স্মিত হেসে ওর দিকে আসতে লাগলো। রনির তারপরও ঘোর কাটেনা! ও মুগ্ধ হয়ে কেবল দেখছে, নীলাকে দেখছে!

[৩]

হঠাৎ কাঁধে চাপড় পড়তেই ঘোর ভাঙ্গে রনির। চাপড়টা আরিফের। হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে আরিফ, সাদেক, মামুনরা। ডানে বামে তাকালো রনি, কোথাও নীলা কে দেখলোনা। মন থেকে মুগ্ধতা মুছে গিয়েছে, মুগ্ধতার জায়গায় এখন নিজেকে লাথি দেবার একটা ফিলিংস এসে ভর করেছে। ওদিকে আরিফরা তখনো হেসে চলেছে। সাবধানে ব্যাগ থেকে ডায়রিটা বের করলো রনি, পৃষ্ঠা উলটে বড় করে লিখলো “এটেম্পট নাম্বার ১৫”, লাল কালি দিয়ে আগের পৃষ্ঠায় লেখা “এটেম্পট নাম্বার ১৪” কেটে দিল। হাসি থামিয়ে আরিফ জিজ্ঞেস করে- “এইটা তোর কত নাম্বার এটেম্পট রে!” ডায়রিটা বন্ধ করতে করতে নিজেকে গালি দিল, আজকেও পারলনা নীলাকে ওর ভালোবাসার কথা জানাতে। কালকে আরেকটা এটেম্পট নিবে রনি।

[৪]

রনির পরিনতি জানতে উৎসাহী পাঠকরা এই গল্পটা আবার শুরু করতে পারেন প্রথম থেকে, তবে যতগুলো সংখ্যা পাবেন সবগুলোর সাথে প্রতিবার ১ যোগ করে নেবেন!


মন্তব্য

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ভাবতেছি। তবে আমি নিশ্চিত রনির মতো আমার পরিণতি একই হবে। শুধু এটেম্পট নম্বর বাড়বে।

রায়হান আবীর এর ছবি

কারসাথে? দুইদিন ধরে যিনি ফোন দেন না? চোখ টিপি

=============================

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আরে, দুইদিন ধরে কথা বলছে না তো আমার গল্পের এক ক্যারেক্টার। বহুত ত্যাদড় সে। চোখ টিপি

অভ্রনীল এর ছবি

ক্যারেক্টারটার ইমেইল এ্যাড্রেসটা দিয়েনতো... জিগাইতাম ক্যান সে আপ্নের লগে কথা কয়না... পারলে ফেসবুকের লিঙ্কটাও দিয়েন... দেঁতো হাসি ত্যাদ্রামী বাইর কইরা দিমুনে চোখ টিপি

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ওরে! এন্ডিংটা চরম লাগল। তবে নায়কের নাম 'দিপু' বা 'মিফতা' বা 'নাফিজ'... হইলে বেশি মানাইত দেঁতো হাসি

এতদিন পর! খুব পড়ার চাপ যাচ্ছে নাকি? দেশে আসতেছ শুনলাম...

অভ্রনীল এর ছবি

রিয়েল লাইফ টাচ দিতে চাইসিলাম... তাই রনি নামটা দিসি... দেঁতো হাসি

এখনো চাপে আছি রে ভাই... সামনে পরীক্ষা... পরীক্ষার সময় এইসব আজাইরা জিনিস মাথায় আসে... কি করুম!!

দেশে আসতাছি কিনা এখনো শিউর না!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

রিয়েল লাইফ টাচ, না! দাঁড়াও মিয়া, আমিও একটা রিয়েল লাইফ ইশটোরি লেখায় হাত দিব নাকি ভাবতেসি চিন্তিত

আরে, পরীক্ষা মানেই তো নিজের ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ক্রিয়েটিভ কিছু করার সুযোগ। এই চান্সে আরো কিছু গল্প/ব্লগ ধমাধম নামায়া ফেলো। দেঁতো হাসি

দেশে আইসা পড়ো, একটু না হয় দেশের ধূলাবালি খায়া গেলা... হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কেনো যে 'নীলা'রা এটেম্পট গুলা বুঝতে চায় না !!!!

অভ্রনীল এর ছবি

এইসব কথা সবার সামনে কইয়েননা... সচলে কোন নীলা থাকলে আপ্নে গ্যাছেন!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

নজমুল আলবাব এর ছবি
অভ্রনীল এর ছবি

ঈমানে কইতাসি নাজমুল ভাই, আমি জানতামনা এই নামে আরেকটা গল্প আছে সচলে! তাছাড়া আমি সচলে আসলাম বহুত দিন পর। তাই এই গল্পর কথা জানতামনা। আপনে লিঙ্ক দেওয়াতে আমি ঘাবড়ায় গেসিলাম, কাহিনীও এক হয়ে যায় কিনা...

তবে কাহিনী কিন্তু দুইটা দুই রকমের! দেঁতো হাসি :D

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

মনে পড়ে গেল মির্জা আসাদউল্লাহ খান গালিবের একটা শের:

"মুহাব্বাত মে কোয়ি ফার্ক নহী হ্যায় জীনে আউর মরনে কা।
উসি কো দেখ কর হাম জীতে হ্যায়, জিস কাফির পে দম নিকলে।"

বঙ্গার্থ: বাঁচা আর মরায় কোনো তফাত নেই প্রেমে। বেঁচে আছি তো তাকে দেখেই, যে হৃদয়হীনকে না পেয়ে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

কীর্তিনাশা এর ছবি

শেরটা আমার খুব প্রিয় আনিস ভাই। জগজিতের কন্ঠে দারুন লাগে.....

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অভ্রনীল এর ছবি

চলুক
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধুগোদা'র ভাষায় কই .........

পুরা আগ্গুন গল্প হইছে চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অভ্রনীল এর ছবি

এইটাতো "গুরু ধুগো"র ভাষায় কইলেন... আপ্নের ভাষায় এইবার কন...

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।