আসুন... মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা করি!

অভ্রনীল এর ছবি
লিখেছেন অভ্রনীল (তারিখ: শুক্র, ১৮/১২/২০০৯ - ৬:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।

আচ্ছা! চুরির সংজ্ঞা কি? কেবল যে চুরি করে শুধু সে-ই চোর? নাকি যারা তাকে চুরি করতে উৎসাহিত করলো তারাও চোর? যারা চুরি করতে ইন্ধন যোগায় বা উৎসাহিত করে তারা কি চোরের চেয়ে কোন অংশে কম? ধরুন আপনার মোবাইল ফোন দরকার, কিন্তু আপনার পঞ্চাশ হাজার টাকার মোবাইল কেনার সামর্থ্য নেই। হঠাৎ একদিন অফার পেলেন যে ঐ মোবাইলটার একটা চোরাই ভার্সন হাজার পাঁচেক টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আপনি কি করবেন? আপনি কি সেই চোরাই জিনিসটা অল্পমূল্যে কিনে ব্যবহার করবেন? নাকি পাঁচ হাজার টাকায় নতুন একটা ফোন কিনবেন যাতে আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো (কথা বলা, টেক্সট করা ইত্যাদি) করা যায়? একজন চোরের কাছ থেকে একটা চুরির জিনিস কিনে ব্যবহার করতে কি আপনার এতটুকু খারাপ লাগবেনা? কখনো কি মনে হবেনা এই যে আপনি টাকাটা খরচ করলেন চোরাই জিনিসটা কেনার জন্য, এটা করে আপনি আসলে একজন চোরকে আবার চুরি করতে উৎসাহী করলেন?

২।

প্রফেসর হ্যারি বাওম্যান বেশ হাসি খুশি লোক। এই লোকের ক্লাশ করার ভাগ্য হয়েছিল আমার। তো প্রথমদিন এই ডাচ প্রফেসর ক্লাসে কে কোন দেশ থেকে এসেছে জানতে চাইলে যখন বললাম বাংলাদেশের কথা, তখন দেখি তার ঠোঁটের কোনায় হাসি। সেই হাসি মাখা মুখেই বলল যে সে বাংলাদেশকে চেনে। আমারতো ঘাম ছুটে গেল, কারন ভালো কোন দিক থেকে বাংলাদেশকে চেনার কোন কারন নাই, এখন ভরা ক্লাসের সামনে কোন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে কে জানে! ভয়ে ভয়ে অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলল যে সে বাংলাদেশকে চেনে জর্জ হ্যারিসনের কল্যানে! আরে যোগ করলেন হল্যান্ডও এককালে বাংলাদেশের মত বন্যাপ্রবন দেশ ছিল, তাঁর আশা হল্যান্ডের মত বাংলাদেশও একসময় এই বাধা কাটিয়ে উঠবে। যাক বাবা, এই যাত্রায় বেচে গেছি ভেবে ক্লাস পুরোটা করলাম। ক্লাস শেষে বেরুতে যাব এমন সময় তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন বাংলাদেশ কি এখনো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় কিনা? তারপর আরো কথার মাঝে কথায় কথায় বললেন যে "... তোমাদের তো আসলে সবাই চুরি করে, উপর থেকে শুরু করে নিচে সবাই। এই যেমন তোমরা কখনো আসল সফটওয্যার কিননা, কেবল চুরিই কর..."। নিজেকে এভাবে চোর শুনতে কার ভাল লাগে? কিন্তু এটাই বাস্তব! দেশের বাইরে আমাদের পরিচয় চোর হিসেবে যারা যা পায় তাই চুরি করে। বাইরের দেশগুলোতে আমাদের ভাবমূর্তি খুব একটা ভালনা। সহজভাবে বললে তারা আমাদেরকে নিকৃষ্ট হিসেবে দেখে।

৩।

ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিং রাইটস (ট্রিপস) এর একটা বেশ বিখ্যাত চুক্তি আছে। এ চুক্তি অনুসারে পৃথিবীর সব দেশের মেধাসম্পদের সর্বজনীন সংরক্ষণের কথা বলা আছে। কিন্তু বাণিজ্যে সমতা সৃষ্টির জন্য উন্নত বিশ্ব আর স্বল্পোন্নত বিশ্বকে তো আর একই কাতারে ফেলা যায় না। তাই কপিরাইট বিষয়ে ডব্লিউটিওতে দরিদ্র−ভদ্র ভাষায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো ছাড় পাওয়ার জন্য হইচই করে। শুরুতেই ট্রিপসে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ছাড় দেওয়া হয়। পরে ২০০৫ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সেই ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ট্রিপসে বলা আছে যে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো সাড়ে সাত বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত বিদেশি কপিরাইট, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক ও অন্যান্য মেধাসম্পদের ক্ষেত্রে এবং ১১ বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ওষুধ শিল্প ছাড় পাবে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এই ছাড় দেওয়ার কারণ হচ্ছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব দেশ যাতে সমান সুযোগ পায়। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অনেক এগিয়ে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি তথা মেধানির্ভর বিশ্ব বাণিজ্যে টিকে থাকতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সক্ষম হতে হবে।

তাহলে কি দাঁড়ালো? বাংলাদেশ ও ঐ ছাড়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তার মানে কি আমরা নির্বিচারে পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার করব? খেয়াল করুন এইখানে "ছাড়" শব্দটা ব্যবহার করা হচ্ছে। ছাড় কখন দেয়া হয়? যখন কোন অপরাধ করা হয় তখন সেটাকে পাশ কাটানোর জন্য বলা হয় যে "তাকে ছাড় দেয়া হল"। কালো টাকা সাদা করার ঘোষনায় "ছাড়" পাওয়া চোরাকারবারিরা যেমন অপরাধী থেকে নিষ্পাপ মানুষে পরিবর্তিত হয়না তেমনি ট্রিপসের ছাড়ের কারনে কিন্তু পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার করাটা জায়েজ হয়ে যায়না। সোজা কথায় কপিরাইট ভঙ্গ আসলে "অপরাধ" কিন্তু উন্নত বিশ্ব আমাদের "করুনা" করছে। ট্রিপস চুক্তি অনুসারে সফটওয়ার পাইরেসি করা সত্ত্বেও ওরা আমাদের "সরাসরি" চোর বলতে পারছেনা, কিন্তু ২০১৩ সালের পর কিন্তু আমরা লিখিতভাবে চোর হয়ে যাব!

৪।

- "বাংলাদেশে আমরা কম্পিউটার নামক যন্ত্রটার সাথে ফ্রীতে একগাদা সফটওয়ার পেয়ে অভ্যস্ত। নতুন কেনা কম্পিউটার কিনে সুইচ অন করলেই মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠে উইন্ডোজের চেহারা। আপনি কি জানেন আপনার পিসির সাথে পুরে দেয়া উইন্ডোজটি যে চুরি করা?"
- "কে কইছে চুরি করসি! দামাদামি কইরা ত্রিশ টাকা খরচ কইরা কিনছি মিয়া। আমারে চোর কন!"
- "মাইক্রোসফট কোম্পানী যে জিনিসের দাম রাখে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা সেটাই আপনি দোকান থেকে কিনছেন ত্রিশ টাকা দিয়ে। এবার ভাইজান বলেন যে আপনি চোর না!"
- "আবার কয় আমি বলে চুরি করছি। আরে মিয়া দুকান্দার কোত্থেইকা এইটা আনসে সেইটা আমি জানিনা, আমার জানবারও দরকার নাই। দুকানে সিডি ছড়াইয়া বেচতাসে, টাকা দিয়া কিনসি। মাগনা চুরি কইরা আনিনাই। গাটের টাকা খরচ করসি... হুমম।"
- "গাটের পয়সা খরচ করেছেন ভালো কথা, কিন্তু কিসের পিছনে? একটা চোরাই মালের পিছনে! "
- "এই চুরি তো সেই চুরি না। আমাগো আসলটা কিনবার সামর্থ্য নাই। তাই এইটাই তো কিনতে হবে।"
- "ধরুন আপনার পনর লক্ষ টাকার গাড়ীটা কেউ চুরি করে এক লাখে বিক্রি করে দিল। যে চুরি করলো সেতো চোরই যে জেনেশুনে কিনল তাকে কি বলবেন?"
- "ঐ ব্যাটাও চোর। ওর চৌদ্দগুষ্ঠি চোর। জাইনাশুইনা চুরি করা গাড়ি কিনসে, কোন ভদ্রলোকে এই কাজ করে?"
- "ভাইরে... তাহলে তো আপনিও চোরের কাতারে পড়েন। জেনেশুনে চোরাই সফটওয়ার ব্যবহার করছেন।"
- "আরে ভাই... ঐ লোকের পয়সা দিয়া গাড়ি কিনবার সামর্থ্য নাই তো গাড়ি কিনবে ক্যান? বাস, ট্যাক্সি কি দেশ থেইকা উইঠা গেছে? ঐ ব্যাটার তো অন্য আরো রাস্তা খোলা আছে। কিন্তু আমারটা ভাবেন, উইন্ডোজ ছাড়াতো আর কোন উপায় নাই! রাস্তাতো একটাই!"
- "নারে ভাই! রাস্তা আরো আছে। উইন্ডোজই একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম না, আরো কয়েকটা অপারেটিং সিস্টেম আছে। এগুলোর মধ্যে ফ্রি বিএসডি, ওপেন সোলারিস এবং লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোর (উবুন্টু, ওপেনসুস্যে, মিন্ট, ডেবিয়ান ইত্যাদি) সিংহভাগই একেবারে মাগনা। শুধু তাইনা সাথে আছে অনেক ফ্রি সফটওয়ার। আর ঐগুলা ব্যবহার করলে কারও বাপের গায়ে জ্বর যে আপনাকে চোর বলে। আগের জনকে যেভাবে চোরাই গাড়ির বিকল্প দেখিয়ে দিলেন এখনতো আপনিও চোরাই সফটওয়ারের বিকল্প পেলেন। এখন বলেন কি করবেন!"

৫।

"চোর" শব্দটা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের দুটো পথ খোলা আছে। প্রথম পথটা বেশ কঠিন, সেটা হল পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার না করে সফটওয়ারগুলোর জেনুইন ভার্সনগুলো কিনে ফেলা। আমাদের মত গরীব দেশের কম্পিউটার ইউজারদের জন্য এই পন্থাটা বেশ কঠিন, বলতে গেলে অসম্ভব। কারন উইন্ডোজ, এমএস অফিস আর এন্টি ভাইরাস সফটওয়ার - এই তিনটার কথা চিন্তা করলেই কিন্তু একটা কম্পিউটারের জন্য কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হবে। তাহলে খোলা থাকলো দ্বিতীয় পথটা, ফ্রি ওপেনসোর্স সফটওয়্যারে নিজেদের বদলে ফেলা। এই পন্থায় বলতে গেলে কোন সমস্যাই নাই। ফ্রিবিএসডি, সোলারিস বা লিনাক্স বেজড ডিস্ট্রগুলোতে ভাইরাসের ঝামেলা নাই, তাই এন্টিভাইরাসের কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব। আর যদি ব্যবহার বান্ধবতার কথা চিন্তা করেন তবে চোখ বন্ধ করে লিনাক্স ভিত্তিক উবুন্টু বা মিন্ট ব্যবহার করা যায়। উইন্ডোজে যা করতেন তার সবই কিন্তু উবুন্টু বা মিন্টে করা সম্ভব। যে কাজ আপনি চুরি করে কিনে অবৈধভাবে করছেন, সেই কাজগুলোই কিন্তু উবুন্টু বা মিন্টে করতে পারবেন বিনা ঝামেলায়।

তাছাড়া অনেকেই কিন্তু ইতিমধ্যে ফায়ারফক্স, থান্ডারবার্ড, ভিএলসি প্লেয়ার, ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, দ্রুপাল, ফাইলজিলা, পিএইচপি, পাইথন, জাভা ইত্যাদি ওপেনসোর্স সফটওয়ার ব্যবহার করছেন জেনে কিংবা না জেনে। যারা এসব ব্যবহার করছেন তাদের নিশ্চয়ই ওপেনসোর্স সফটওয়ারের ক্ষমতা বা কোয়ালিটি নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা না। যেখানে ওপেন সোর্স সফটওয়ার বিনা পয়সায় আমাদের মুক্তি দিতে পারে সেখানে কেন আমরা শুধু শুধু নিজেদের গায়ে "চোর" তকমাটা লাগিয়ে রাখবো?

৬।

আপনি নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন হঠাৎ করে কেন আমি এইসব জিনিস নিয়ে পড়লাম? আসলে নিজের জাতি সম্পর্কে কটু কথা শুনতে কারই বা ভালো লাগে বলেন? তবে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু চোর অপবাদটা ঝেড়ে ফেলে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু সেই চেষ্টাটাই আমরা করছিনা। শুধু যে করছিনা তা না, আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে আছি যাতে চেষ্টাটা না করতে হয়। কিন্তু এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে না হলে দেখা যাবে যে ২০১৩ সালে সরকারকে মোটা দাগের টাকা অপচয় করে সরকারী কাজে গাদা গাদা লাইসেন্স করা সফটওয়ার কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে সাধারন ইউজাররাও পড়বে ঝামেলায়। যেহেতু উইন্ডোজের বাইরে আর কিছু নিয়ে তাদের কোন ধারনা নেই তাই স্বভাবতই তাদেরকেও মোটা দাম দিয়ে উইন্ডোজ কিনতে হবে, সেই সাথে দামী দামী সব সফটওয়ার। তাই এখনই সময় সাধারন পিসি ইউজারদের এই ব্যাপারটা নিয়ে সচেতন হবার এবং করার। আর কিভাবে এ কাজটা করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে আমাদের প্রযুক্তিতে। তাই যারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান বা যারা এ আলোচনায় অংশগ্রহন করতে চান, তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো আমাদের প্রযুক্তিতে আপনার মূল্যবান মতামতটা প্রদান করুন।

৭।

২০০৯ প্রায় শেষ। ২০১০ সাল শুরু হবে আর কদিন পরই। নববর্ষকে দেখা হয় পুরনো সব গ্লানি মুছে নতুন আশার প্রতিক হিসেবে। এই নববর্ষে আমরা কি ছোট্ট একটা প্রতিজ্ঞা করতে পারিনা যে আমরা আমাদের 'চোর' তকমাটাকে বিদায় জানাবো। নতুন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো বিশ্ব দরবারে। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোটা কঠিন না কিন্তু মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বিদ্ধান্ত নেয়াটাই কঠিন। একবার স্বিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে মাথা উঁচু করাটা কোন ব্যাপারই না। এই লেখাটা দিয়ে একজনকেও যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়া করাতে পারি তাহলেই আমার লেখাটা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।


মন্তব্য

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

প্রিয় অভ্রনীল,
আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু পরিচতি "জানালা" ছেড়ে যেতে ভয় হয়।
তাছাড়া, লিনাক্স ব্যাবহার করতেতো সবসময় ইন্টারনেটের কানেকশানের দরকার হয় বলে জানি, যা আমাদের দেশে এখনও সব কম্পিউটার ব্যাবহারকারীদের কাছে পৌছেনি। আমি লিনাক্সের একটা ভারশন ইউজ করেছিলাম। পরে দেখলাম, গান শুনতে পারতেসি না, ডিভিডি দেখতে পারতেসি না, সফটওয়্যর ডাউনলোড করতে হবে। তখন আমার ইন্টারনেটের গতিও ছিল মন্থর। পরে মনের দুঃখে বাদ দিছি। এখন উবুন্টুর কথা শুনি, ইউজ করতে ইচ্ছা জাগে, কিন্তু ভয় ও লাগে।

অভ্রনীল এর ছবি

উবুন্টু বা মিন্ট ব্যবহারে সবসময় ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সাধারনত ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় বিভিন্ন আপডেটের জন্য আর সফটওয়ার ডাউনলোড করার জন্য, কারন সেসব সফটওয়ার দোকানে সিডি হিসেবে পাওয়া যায়না। যদি পাওয়া যেত তবে নেট থেকে ডাউনলোড করার দরকার ছিলনা। তবে ইদানিং বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় উবুন্টু ও মিন্ট বেশ ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়েছে। ফলে অনেকেই প্রয়োজনীয় সফটওয়ারের অফলাইন ইন্সটলার বানিয়ে রাখে। এবং এইসব অফলাইন ইন্সটলার নেটেও পাওয়া যায়, যেগুলো সাইবার ক্যাফে বা অফিসের বা পরিচিত কারো বেশি স্পিডের নেট কানেকশন ব্যবহার করে নামিয়ে সিডিতে রাইট করে ইন্সটল করা সম্ভব। আর আপডেট যদি আপনার দরকার নাহয় তাহলে বন্ধ রাখতে পারেন, কোনই সমস্যা নাই।

আপনি লিনাক্সের কোন ডিস্ট্র ব্যবহার করেছেন জানিনা। তবে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটা ডিস্ট্র উবুন্টু আর মিন্টে কিন্তু গান শুনতে সমস্যা হয়না। আইনী কারনে উবুন্টু প্রোপেইটরি সফটওয়ার এড়িয়ে চলে, তাই ইন্সটল করার সাথে সাথেই সব ফরম্যাটের গান বা মুভি দেখা সম্ভব হয়না, এজন্য কোডেক ইন্সটল করে নিতে হয়। তবে মিন্ট ব্যবহার করলে এই সমস্যাও পাবেননা। ইন্সটলের পর থেকেই গান বাজাতে বা ভিডিও দেখতে পারবেন।

এখন উবুন্টুর কথা শুনি, ইউজ করতে ইচ্ছা জাগে, কিন্তু ভয় ও লাগে।

আমি ভাই কম্পুকানা! আমার মত কানা যদি নির্ভয়ে এই জগতে বিচরন করতে পারেন তাইলে আপনিও পারবেন, ব্যাপার না!
_______________
এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লিংক ধরে অন্য আলোচনাটাও দেখলাম। পুরো আলোচনার একটা সারমর্ম দিয়েন।

অভ্রনীল এর ছবি

আলোচনা কন্টিনিউজ। সারমর্ম পেতে বহুত দেরী হবে মনে হয়। তবে পার্ট-বাই-পার্ট সারমর্ম দেয়া যাবে আশাকরি!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

শাহান এর ছবি

বুড়া আঙ্গুল !!

আমি ইতিমধ্যেই গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজনকে উবুন্টু সাপ্লাই দিছি (ফাউ পাইলে দিতে সমস্যা কই? খাইছে )। এর মধ্যে এখানকার সাইফ ভাই অল্পদিনেই মোটামুটি হার্ডকোর উবুন্টু ব্যবহারকারী হয়ে যাচ্ছে - অথচ আমি নিজেই জানালায় লটকে আছি। আস্তে আস্তে জানালা গলে বের হয়ে আসতে হবে। জানামতে আরো ২-১ জন পুরাদমে ব্যবহার করতেছে।

অফটপিকে আরেকটা কথা বলি। ধর সফটওয়্যারের তো বিকল্প আছে, কিন্তু দামী দামী বইয়ের? এই যে আমরা নীলক্ষেত থেকে পানির দামে ফটোকপি বই কিনি, সেইটাও কি এক ধরণের অপরাধ? অনেক বইয়ের তো "লো-কস্ট" এডিশন থাকে, তা-ও তো আমরা ফটোকপি কিনি।

(এতদিন কোথায় ছিলা?)

অভ্রনীল এর ছবি

আস্তে আস্তে জানালা গলে বের হয়ে আসতে হবে।

এই আস্তে আস্তে যেন আবার বেশি আস্তে না হয়ে যায়! চোখ টিপি

অফটপিকঃ
এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করলে নিশ্চয়ই একটা প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। তবে পাইরেটেড সফটওয়ারের যেই বিকল্পগুলো আছে সেগুলো কিন্তু একেবারে মাগনা অর্থাৎ যে টাকা দিয়ে চুরির জিনিস কিনছি সেটা থেকেও সস্তা, কিন্তু বইয়ের ব্যাপারটাতো সেরকম না- এই জিনিসটাও মাথায় রাখতে হবে। যেসব লো প্রাইস বইগুলো পাওয়া যায় সেগুলো সব ভারতে ছাপা হয়। ভারতের লাভ, পরিবহন মূল্য, বাংলাদেশের লাভ- এসব কারনে দাম কিছুটা বেশিই পড়ে। কিন্তু যদি ভারতে না করে স্থানীয়ভাবে ছাপানো যেতে পারে তাহলে দাম অনেকটুকু কমে আসবার কথা।

(এতদিন বাইচা ছিলাম এতটুকু বলতে পারি! দেঁতো হাসি অনেকদিন পর আসলাম, অনেক নতুন আইডি দেখলাম। কাউকেই তো দেখি চিনিনা! তোমার খবরাখবর কি?)
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

তৌফিক হাসান [অতিথি] এর ছবি

অনেক নতুন আইডি দেখলাম। কাউকেই তো দেখি চিনিনা!

ভাই, সচলের পাঠক বাড়ছে। আমিও একজন নতুন পাঠক। সচলকে ভাল লেগে গিয়েছে। তাই সাহস করে মন্তব্য করা শুরু করেছি। আমি জানি না, কেউ সচলে নতুন আসলে কি তাকে পরিচয় দিতে হয়? দিতে হলে সেটা কিভাবে দিব, জানালে খুশি হব।

সচলের পাঠক বাড়তেই থাকুক।

তৌফিক হাসান
পি এইচ ডি গবেষক
টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউ এস এ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দাঁড়ান রিস্ক একটা নিয়ে দেখি। না হইলে আপনেরে ধরমু...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অভ্রনীল এর ছবি

কী আছে দুনিয়ায়? রিস্ক নিয়াই দেখেন। কমসেকম মইরাতো শান্তি পাবেন!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হে হে হে, সাবাশ অভ্রনীল, উবুন্টু লোডানির পর থিক্কা জানালার মুখে ইয়ে করি, সেই সাথে বিল কাগুর ... ... ...

দারুন লেখা, আর সব বাদ দিলে, শুধু আরাম করে বাংলা পড়ার জন্যেও উবুন্টু লোডানির কাম, ফ্রি নরম্মালের ব্যাপারতো আছেই। জানালা ছাড়তে যারা ভয় পান, তারা আমার মত এন্ট্রি লেভেলের কম্পু ইউজারদের দেখে বুকে সাহস আনেন। সাপোর্ট দেওনের লাইগা আমারে পছন্দ না হোক, শামীম ভাই, গৌতমদা তো আছেই। অন্তত চুরাই জানালার পাশে উবুন্টু লোডান।

আমরা এখন করি পুকুর চুরি, একদিনে সব ঠিক হবে না, তবে, বলা যায় না, চোরারে ধর্মের কাহিনী শুনাইলে একদিন সে চুরি ছাইড়াও দিতে পারে। আর আরেকটা কথা, ফ্রি পাইলেই মানুষ মনে করে জিনিষটা খারাপ, কেউ চাক্ষুস উবুন্টু না ব্যবহার করলে বুঝবেন না , জানালা খত খ্রাপ। আর ঊবুন্টুর নরম্মালগুলা ওজনে হালকা হইলেও কামের বেলার এক্কাবারে "ছোট মরিচের ঝাল বেশি"
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অভ্রনীল এর ছবি

শামীম ভাই ছাড়া আর কেউ যে এইখানে উবুন্টু ইউজ করে সেইটা নিয়া কোন ধারনা ছিলনা। এখন দেখতেসি দলে লোকজন কিছু আছে দেখি!

আর আরেকটা কথা, ফ্রি পাইলেই মানুষ মনে করে জিনিষটা খারাপ, কেউ চাক্ষুস উবুন্টু না ব্যবহার করলে বুঝবেন না , জানালা খত খ্রাপ।

চলুক
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চমৎকার !!!! ...
সমস্যা হচ্ছে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে আনলাকি ২০১৩ থেকে কেউ আমাকে চুর বলুক- সেটাও চাইনা।
... বেশ, উবুন্টুতে তবে ট্রাই মার্তে হচ্ছে।

_________________________________________

সেরিওজা

অভ্রনীল এর ছবি

২০১৩ থেকে কাগজে-কলমে চোর আর এখন কিন্তু অলিখিতভাবে... চোখ টিপি

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

শামীম এর ছবি

প্রথমবার হলে মিন্ট দিয়ে শুরু করেন। শুরু থেকেই ইন্টারনেট ছাড়া গান/ভিডিও চলবে।

তবে উবুন্টুতে কমিউনিটি সাপোর্ট একটু বেশি। আর উবুন্টুকে একটু ঘষামাজা করেই আমজনতার চাহিতা মোতাবেক কাস্টমাইজ করে মিন্ট তৈরী করা হয়েছে। প্রতিটি উবুন্টু রিলিজের এক বা দুইমাস পর তাই মিন্ট রিলিজ করে। তাই মিন্টে চাইলেই উবুন্টুর মেনু সহ সবকিছুই ব্যবহার করা যায় ... বোনাস হিসেবে মাল্টিমিডিয়া কোডেক দেয়া থাকে।

প্রজন্ম ফোরামেও শুধু মিন্টের জন্য আলাদা একটা সাবফোরাম খোলা হবে অচিরেই। সমস্যায় পড়লে ওখানেও জানাতে পারবেন।

আমার কাছে মিন্ট (হেলেনা) এবং উবুন্টু (কারমিক + নেটবুক রিমিক্স)গুলো আছে। চাইলে ওগুলো দিয়ে একটা USB পেনড্রাইভকে বুটেবল করে নিতে পারেন। এবং সেই পেনড্রাইভ থেকে লাইভ সিডির মতই চালাতে পারবেন, তবে স্পিড অনেক বেশি পাবেন; কারণ সিডির চেয়ে ইউ.এস.বি'র ডেটা ট্রান্সফার রেট অনেক বেশি।

আপনার আশেপাশের কে কোনটা ডাউনলোড করেছেন এবং দিতে আগ্রহী জানতে এখানে উঁকি মারুন।
উবুন্টু নিয়ে সাহায্য পাবেন এখানে।
আমাদের প্রযুক্তি ফোরামে লিনাক্স সাবফোরাম

চান্সে আমার পুরাতন পোস্টগুলোর লিংক দেই:
১. লিনাক্স মিন্ট নতুনদের জন্য ভালো হবে (খুউব খিয়াল ... এইটা কিন্তু পুরাতন ভার্সান দেখে লেখা, নতুনটা আরো জোস্স)
২. হঠাৎ লিনাক্স নিয়ে পড়লাম কেন
৩. লিনাক্স পুরা ফালতু - ব্যবহার করে দিনকে দিন হতাশ হচ্ছি
৪. বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার
৫. হীনমন্যতার জুজুবুড়ি
৬. ফ্রী ক্যাড প্রোগ্রাম
৭. হলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমা তৈরীতে লিনাক্স (অনুবাদ)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সোয়েব এর ছবি

অনেকদিন পর তোমার লেখা পেলাম ।ভালো লিখেছ ।

অভ্রনীল এর ছবি

একগোছা ধইন্যাপাতা!!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি এগুলা বুঝি কম। শামীম ভাই আমার পিসিতে সেট করে দিবে কয়দিন পরে। তারপর ব্যাবহার করা শুরু করুম। আশাকরি চোর অপবাদ ঘুচাতে পারবো অচিরেই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অভ্রনীল এর ছবি

শামীম বস্ যখন আপনেরটা তে হাত দিসে তখন কোন ব্যাপারই না! তয় সেট করার পরের কাহিনী জানাইতে হইবো কইলাম!

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

তানবীরা এর ছবি

চোর সবাই কিন্তু দোষ হয় গরীবের।

অটঃ এখনো হল্যান্ডেই আছো কি ?
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

saibalkantisaha এর ছবি

আপনি প্রতিভাবান...দার্শনিক, ...."ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়ের" অবস্থা----কম বেশী সবাই চোর,কেউ প্রতিষ্ঠিত...
কেউ চেষ্টা চালাচ্ছে...মনের কাছে জিজ্ঞেস করলেই উত্তর মিলবে...সবের মতো চোরের সংখ্যা .আংকিক নিয়মে. বাড়তেই থাকবে...সৎ মানুষ ছাড়া..।ভাবনাটা খুব ভালো...কিন্তু প্রয়োগ কঠিন। অসংখ্য ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।