ডেভিড ক্যামেরনের বুশ যাত্রা

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: বুধ, ০৪/০৮/২০১০ - ৬:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডেভিড ক্যামেরন এবং বারাক ওবামা আজকাল খুব অর্থকষ্টে আছেন। ওবামার সামনে ঝুলছে নানারকম মতামত জরীপ যেখানে তার জনপ্রিয়তার ধস স্পষ্ট। আর মিডিয়াতে ঢাকার খোন্দকার দেলোয়ারের মত কথা বলে বৃটেনের ছাপোষা মানুষদের তিতিবিরক্ত করে চলেছেন ক্যামেরন। ওবামা কথাবার্তা গুছিয়ে বলেন, তবে আজকাল টাকার দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়না। ভাগ্যিস মিশেল ওবামা বুদ্ধি করে হোয়াইট হাউজের বাগানে শাক সবজি চাষ করেছেন, তাইতো অন্তত রুটি শাকের বন্দোবস্ত আছে। বলা বাহুল্য ল্যারি কিং মার্কিন ফার্স্ট লর্ডদের কোনরকম বুদ্ধি দিতে ব্যর্থ হয়ে ফার্স্ট লেডিদের এসব গার্হস্থ্য বুদ্ধি দিয়ে থাকেন, লরা বুশকে যেমন যুদ্ধবাজ বুশের সংসারে ভালো সময় কাটাতে ক্রিসমাস কুকিজ বেকিং এর বুদ্ধি দিয়েছিলেন।

 

অর্থনৈতিক মঙ্গার এই দিনগুলোতে ওবামার টাকা ধার করার কোন জায়গা নেই। কারণ বড় ব্যবসায়ীরা মিডটার্ম ইলেকশনে যুদ্ধবাজ কাউকে চান। ওবামার মত রামকৃষ্ণ পরমহংসের পিছে আর পয়সা নষ্ট করে লাভ নেই, নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবার পর ধণুক ব্যবসায়ীদের চোখে ওবামা দুধভাত হয়ে গেছেন।মিছিলবাজ সিভিল সোসাইটির অত্যাচারে রিপাবলিকান কাউকে নিয়ে আসা কঠিন,মন্দের ভাল হিলারী ক্লিনটন,তার কিছু ন্যুইসেন্স ভ্যালু তো আছেই।আলগোরের শান্তি খ্যাপে নর্থ কোরিয়ার আটক এমেরিকান উদ্ধার করে আনায় বিল ক্লিনটনের জনপ্রিয়তাও হিলারির জনপ্রিয়তায় কিছু অবদান রাখছে। যদিও হিলারী আর বিলের পরিচয়ে পরিচিত হতে চান না।

 

মিডটার্ম নির্বাচনের আগে ক্লিনটন-কার্টার তাদের জনপ্রিয়তাও নিম্নগামী হয়েছিল। বুশ সেখানে ব্যতিক্রম, নয়-এগারোর ঘটনাটি বুশের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিল।হয়ত যুদ্ধবাজ না হলে আজকাল ইলেকশনে জেতা যায়না।পশ্চিমের খৃস্টীয় মৌলবাদ আর পূবের ইসলামী মৌলবাদ এখন দেশে দেশে রক্ষণশীলতার বিষ এমনভাবে ছড়াচ্ছে যে কতিপয় বিচ্ছিন্ন উদারমনা মানুষের বাইরে অধিকাংশ মানুষের মনোজগতকেই একটি ক্রুসেড বাতাবরণে উস্কায়িত করা হচ্ছে।

 

ওবামা যুদ্ধের খরচ চালাতে অপারগ। বুশের যুদ্ধবিল ওবামার মধ্যে ছেড়ে দেমা কেঁদে বাঁচি অবস্থা তৈরি করেছে।গুয়ানতানামো গুটিয়ে নেবার প্রস্তাবটি ক্ষমতা কাঠামোতে ওবামাকে আগেই বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলেছে। এখন আফঘানিস্তান থেকে নিজেকে গুটানোর পালা।ধণুক সিন্ডিকেটের একটা কথাও রাখতে পারলেন না ব্লগারদের অত্যাচারে। যারা অনলাইন ক্যামপেইন চালিয়ে ওবামার পরিবর্তনের শ্লোগানটিকে দ্রুতি দিয়েছিল, তারা এখন অফলাইনে পরিবর্তনটা দেখতে চায়। ফলে তার সাম্প্রতিক ৪৯ তম জন্মদিনটিতে তিনি আর আগের মত করে প্রত্যাশার কথা শোনানোর সাহস পাননি। ১৮মাসতো হয়ে গেল আর কত।

 

ওবামা দুধভাত হয়ে যাওয়ায় নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার সিন্ডিকেটটি ডেভিড ক্যামেরনের গরীবীর সুযোগ নিতে পারে। ঘটনা সম্ভবত সেদিকেই যাচ্ছে।সরকারের ফুয়েল বাঁচাতে হাঁটাহাঁটি করে মোড়ের দোকান থেকে শুকনো পাঁঊরুটি কিনে চিবাচ্ছিলেন বেশ কিছুদিন।একটু ভালো নাশতা অনেকদিন পরে জুটলো মনমোহন সিং এর বাসায়। লুচি,অষ্টব্যঞ্জন,মাটন কারি, ভারতকে নতুন ভারত মনে হচ্ছে ব্রেকফাস্টের পরে,ক্যামেরনের অনভ্যস্ত পাকস্থলী বিদ্রোহ করলে মেজাজ খিঁচড়ে যায়। মনমোহনের কাছে কিছু টাকা ধার চাইবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মনমোহনের কৃপণ চেহারা দেখে আর সাহস করলেন না। তবে মনমোহনকে বরাবরের চেয়েও রিল্যাক্সড দেখে ক্যামেরন চিন্তায় পড়ে গেছেন।

এই গ্রামের আত্মীয় কীভাবে এত আরামে থাকে। ওবামার সঙ্গেও একটা চাচা ভাতিজা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।চাচা বেড়াতে গেলেই রেডকার্পেট। অবশ্য দুজনেরই গাত্রবর্ণ কাল, ক্যামেরন ওই একটা কারণি খুঁজে পেলেন।

 

ক্যামেরন অবাক হলেন, ইসলামাবাদ থেকে গিলানী ফোন করেছেন, মনমোহনের পাঠানো একবাকশো আমের প্রশস্তি গাইতে।

 

ক্যামেরন টিপ্পনী কাটেন। আপনার আমের ঋণ নিশ্চয় বোমা মেরে ফেরত দেবে। মনমোহন এমনিতেই কম কথা বলেন, অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ক্যামেরনকে একটু খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা করে দেন।

 

নতুনদিল্লীর সাংবাদিকদের সামনে পাকিস্তানের জঙ্গীশিল্পের বিকাশ ও রপ্তানীর খবরটা পুনপ্রচার করে সেরকম সাড়া পেলেন না ক্যামেরন কারো কাছে। শুধু পাকিস্তানের ঠাকুরঘরে কে রের দুষ্টু গোয়েন্দা বাচ্চাগুলো গাল ফুলিয়ে জারদারী সমভিব্যহারে লন্ডন যাওয়া বাতিল করল।

 

দিল্লীর এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, মি ক্যামেরন লন্ডনে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষ নেতা গ্রেফতার এড়াতে অসুস্থতার অজুহাতে লুকিয়ে আছে। পাকিস্তানের রপ্তানী করা এই জঙ্গী পণ্যটি বিচারের জন্য ঢাকাকে ফেরত দেয়া দরকার।

 

ও গোলামের কথা বলছেন, উনিতো রাণীর রাজকীয় ভৃত্যশালার অতিথি, কমন ওয়েলথ দেশগুলোর পুরাতন ভৃত্যদের দেখাশোনা করে রাণীর লোকজন। আমি কিছু জানিনা।

 

ক্যামেরন লন্ডনে ফিরেও ইনডিয়ান কুইসিনের প্রতি প্রতিক্রিয়ায় বুড়োদের প্যাম্পারস পরে ঘুরছেন। রিডিং রুমে একজন ধণুক ব্যবসায়ী অপেক্ষমান, কিছু উপার্জনের আশায় ক্যামেরন তাকে দাওয়াত দিয়েছেন। মনমোহনকে যখন টলানো যাচ্ছেনা, তখন কাশ্মীর ইস্যুটা আবার সামনে নিয়ে এসে মনমোহনের ধ্যান ভঙ্গ করা যাক।

 

ক্যামেরন ভাবছেন এবার তাহলে মিডিয়া কাভারেজে ওবামার চেয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে। ব্লেয়ার সাহেব ফোন করে নিরুতসাহিত করেছেন। কারণ যুদ্ধবাজদের মডেল হয়ে কম ভোগান্তিতো হল না।

 

তবে বুশ ফোন করে বলেছেন, সে সময় ব্লেয়ার না থেকে তুমি থাকলে লাদেন এতদিনে গুয়ানতানামোতে থাকত।

 

ক্যামেরন যখন মডেল হতে রাজী,ওপাশে লাদেন পুরোনো মডেল, এক টেকেই ওকে শট।সুতরাং বিবিসি-সিএনএন-আলজাযিরার ক্যামেরা এসাইন করা দরকার। নতুন কপি রাইটার নেয়া হয়েছে, বুশের চেয়ে ক্যামেরনের সংলাপগুলো আধুনিক হবে, আর লাদেনের স্ক্রিপ্ট একই থাকছে, বক্স অফিস হিট কপি রাইটার তার।

 

ধণুক ব্যবসায়ী ফিরে গেলে ক্যামেরন ওয়াশরুমের আয়নার সামনে একবার মকশো করেন, আইদার ইউ আর উইদ আস অর এগেইনসট আস।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার তাহলে ধারণা হিলারী জিতবে এবার? আর এদিক থেকে ক্যামেরন। পৃথীবিতে তাহলে টেরম টেরম আবার বাঁধবে? জানেন তো পশ্চিমা বিশ্ব যুদ্ধ করে করেই ধ্বংস হয়ে যাক এমনটাই চায় লাদেন। ছায়ার সাথে যুদ্ধের কোন ফায়দা নেই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

দেখা যাক, প্রত্যেকটা লেখার সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় ফুটেজ আপলোড ও শেয়ার করা দরকার, কিন্তু আমি সচলায়তনের প্রযুক্তিটা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। যদি সাহায্য করেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

"ওবামা যুদ্ধের খরচ চালাতে অপারগ। বুশের যুদ্ধবিল ওবামার মধ্যে ছেড়ে দেমা কেঁদে বাঁচি অবস্থা তৈরি করেছে।গুয়ানতানামো গুটিয়ে নেবার প্রস্তাবটি ক্ষমতা কাঠামোতে ওবামাকে আগেই বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলেছে। এখন আফঘানিস্তান থেকে নিজেকে গুটানোর পালা।ধণুক সিন্ডিকেটের একটা কথাও রাখতে পারলেন না ব্লগারদের অত্যাচারে। "

ঠিক বুঝি নাই। একটু ব্যাখ্যা করবেন দয়া করে?
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

As the chorus of critics grows, Mr Obama finds himself on the defensive. In two recent television interviews, the president was at pains to remind viewers that many of the problems he faced were handed to him when he took office.

But that's an argument the public seems increasingly immune to.

Presidential Approval Ratings

Figures for early August in the second year in office:

Barack Obama: 45%
George W Bush: 71%
Bill Clinton: 43%
George H W Bush: 74%
Ronald Reagan: 41%
Jimmy Carter: 39%
Gerald Ford: 48%
Richard Nixon: 55%
Source: Gallup

"Change has not come fast enough for too many Americans, I know that," Mr Obama admitted via video to the online activists and bloggers gathered at the liberal Netroots Nation convention.

That group were committed early supporters of Mr Obama, but have grown increasingly disgruntled with his presidency.

By Katie Connolly
BBC News, Washington

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

জোহা [অতিথি] এর ছবি

ভালো লেগেছে লেখাটা।তবে চাই বারবার নিজ দেশের পটভূমিতে বেশী বেশী বিচরণ করুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।