হুমায়ুন আহমেদের হলুদ হিমু

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: রবি, ১৯/০৯/২০১০ - ৬:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ খোলা বাজারে চাল কেনার ডেসপারেশন নিয়ে বইমেলায় হুমায়ুন আহমেদের বই কিনছিল।উনি বসে। চারপাশে দাঁড়িয়ে হলুদ হিমুদল।

 

হুমায়ুন আহমেদ কতক্ষণ থাকবেন।ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হিমুরা মনে মনে বদদোয়া দেয় প্রকাশককে।উনি চেষ্টা করেন লেখককে বেশীক্ষণ রাখতে।

 

এক প্রাক তরুণী টিভি সাংবাদিক মাইক্রোফোন বাড়িয়ে দেয়, স্যার একটা বাইট।

 

স্যার ঘাবড়ে যান।ভ্যাম্পায়ার নাকি কামড়াতে চাইছে।

 

না স্যার আমরা কমেন্টটাকেই বাইট বলি।

 

ও আচ্ছা।

 

স্টলের বাঁশ পর্যন্ত হেসে ওঠে,শুধু হিমুরা গম্ভীর।একজন উঠতি ভাবুক সাংবাদিক হিমু দর্শনের গভীরে যেতে প্রশ্ন করে বসে,

 

স্যার আপনার হিমুরা আজ এতো গম্ভীর ভাবে ঘামছে কেন?

 

স্যার গম্ভীরমুখে ছড়া কাটেন,রাম গোরুড়ের ছানা,হাসতে তাদের মানা।

 

এবার রীতিমত হাসির সুনামী।

 

টিভির সান গানে হিমুদের দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে।চোখে ধাঁধা লেগে যায়। বইমেলার এই উতসবে তাসের খেলার দশটি জোকার নষ্ট হবার কষ্টে বেদনায় লীন হয় কয়েকজন মানুষ অথবা মডেল। অডেনের আননোন সিটিজেনের দশজনের পারিসংখ্যানিক আইডেনটিটি,হিমু ওয়ান,টু।থ্রি।দশজন শুক্রবার সারাদিনের জন্য হিমু উপন্যাসের মডেল।ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সানি আপা বুঝিয়েছেন।সারাদিন নিজেদের হিমু বলে ভাববে।

 

  হিমু চরিত্রটার জন্য দশজন মানুষের কী বেদনাহত জীবন।ওদের আলাদা করে কেউ চেনেনা।সবাই হিমু।হিমু মডেলিং এ প্রায় বিস্মৃত নিজেদের নামগুলো।

 

স্যার সুড়ুত সুড়ুত করে টি ব্যাগ দেয়া চা খাচ্ছেন। হিমুদের জন্য আজিমপুরের মৃতসঞ্জীবনী চা।

আবার এক টিভি আপা তিড়িং বিড়িং করে নাচতে নাচতে এসে,

 

স্যার একটু বলবেন কি হিমুরা দেখতে একই রকম হয় কেন।

 

স্যার বিরক্ত না হলেও চেহারাটা রোগীর ওপর সদাবিরক্ত ডাক্তারের মতো করে বলেন,দশটা হিমুর মধ্যে একটা আসল হিমু।দশটা সাদ্দাম যেমন বাগদাদে ছিল।একটা আসল নয়টা ক্লোনিং কইরা বানাইছে।

 

দশজন হিমুর মধ্যে স্যারের কথাটার একটা বিদ্যুত ঝলক খেলে যায়। কে সেই আসল হিমু। দশজনের মনের মধ্যে হিমুর আচরণগুলো সাঁতার কাটতে থাকে। হিমুরা একে অপরের দিকে তাকায়।

স্যার আবার সুড়ুত সুড়ুত করে চা খান। হাত ব্যথা হয়ে গেছে অটোগ্রাফ দিতে দিতে।

হিমুদের প্রশ্ন একটাই স্যার কখন যাবেন। একটু বসা যাবে কোথাও।

 

একজন রেডিও জকি মাইক্রোফোন নিয়ে খিল খিল করে হাসতে থাকে স্যারকে দেখে।

স্যার জিজ্ঞেস করেন,এই মেয়ে হাসো কেন।

 

লিসনার্স টুডে কথা বলতেসি আপনাদের মোস্ট ফভারিট রাইটার হুমায়ুন আহমেদ এর সাথ্বে। বিলিভ ইট অর নট ইয়েলো টিশার্ট পড়া কয়েকজন মডেল স্ট্যান্ডিং এরাউন্ড হিম। আর দে বডিগার্ডস আর দে এনিমিজ।

 

আরজে ঘুরিয়ে পেচিয়ে ইনট্রো দেয়।হিমু উপন্যাসের ব্যাপারটা জানেনা।প্রোডিউসার কানে প্রমট করলে আরজে আবার শুরু করে,

 

 হ্যাঁ হিমু,হিমু মানেই হলুদ টিশার্ট,হিমু মানেই হুমায়ুন আহমেদের বই।

 

স্যার আরজের বাংলিশ আধো আধো বুলি আর হা হা হা করে হেসে ওঠায় একটা প্রেসারের ওষুধ মুখে পুরে দেন। আর  সুলাইমান নবীর পশুপাখির ভাষা বোঝার ব্যাপারটাই আজকের ভাষা কিনা ভাবতে থাকেন। স্যারের মনে হয় এফ এম চ্যানেলএর চেয়ে ন্যাত্রোকোণার ভাষা অনেক সুমধুর।

 

স্যার ধমক দিয়ে আরজেটাকে বিদায় করেন। একটু প্রিপারেশন নিয়া আইসো।নেক্সট টাইম। তোমার ভালোর জন্য বললাম।

 

হিমুদের মনটা ব্যাজার হয়ে যায়।প্রতিশ্রুতিশীল তরুণীটিকে স্যার ভাগায়ে দিলেন।এইটা কী ঠিক হইলো।আবার ম্যারাথন অটোগ্রাফ।হিমুরা অপেক্ষা করে কখন গোডো যাবেন,একটু বসা যাবে।

একজন চটপটে পাঠিকা প্রশ্ন করেন,হিমুর গায়ে সারাবছর হলুদ গেঞ্জী।কেন স্যার কেন।

 

হিমুর জীবনে বারোমাসি বসন্ত।

 

সবাই হাততালি দিয়ে আর্তনাদ করে হাসে।

 

হিমুরা ঘামতে থাকে।স্যার এই প্রথম হিমুদের দিকে তাকান। চোখ ক্লান্তির কোটরে নিরুপায় হলুদ হয়ে আছে।স্যার ভাবলেন হয়তো মেক আপ,আবার নিবিষ্ট মনে হেসে হেসে অটোগ্রাফ দিতে থাকেন।

এবার আর একবার হিমুদের দিকে তাকান। মুখগুলো ক্লান্ত,অবসাদ্গ্রস্ত,ক্ষুব্ধ,উপায়হীন।

স্যার ঝট করে উঠে পড়েন। হিমুগুলোকে একটু বিশ্রাম দেয়া দরকার।

 

যাওয়ার সময় প্রকাশককে বলে যান কাল সকালের মধ্যেই এদের বিলিরুবিন টেস্ট করাতে।

 

 

 

 


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শেষের লাইনটা ভালো হয়েছে। এরকম টেস্ট অবশ্য অনেকেরই করা দরকার চোখ টিপি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

একটা প্রশ্ন, ঈসা নবী কি পশু-পাখির ভাষা বুঝতেন নাকি নবী সোলায়মান? চিন্তিত

আরেকটা প্রশ্ন, এতোগুলো হিমু স্যার সাহেব যোগাড় করলেন কোত্থেকে, যারা দেখতে সবাই একই রকম, যাদের চলন বলনও এক রকম। বাংলাদেশে তো খোলামেলা ক্লোনিং শুরু হয় নি এখনো! আর হলেও উল্লেখিত হিমুসব কঁচিকাঁচার আসরের সদস্য হওয়ার কথা।

আচ্ছা। স্যার ঝট করে উঠে পড়লেই কি হিমুরা বিশ্রামে যাবে? বিশ্রামে গেলে তো আর তারা হিমু হতো না। তো এদিক থেকে উঠতি সাংবাদিক, বাংলিশ উচ্চারণের আরজে, মেলার হাজার দর্শক এমনকি এই লেখক পর্যন্ত নকল হিমুদের দেখে আসল মনে করে একটা ভুল ইম্প্রেশন নিয়ে ফেললেন কী?

আমার মতে হুমায়ুন আহমেদের হলুদ হিমুদের বিশ্রাম নেই। কারণ তাদের মটো হলো রবোকপের মতো, "কোথাও কোনো অপরাধ ঘটতে চলেছে"। এখন স্যার সাহেব যদি ঝট করে উঠে প্রস্থান করেও ফেলেন, স্যারের জায়গা দখল করার জন্য আরেকজন ঠিকই তৈরী হয়ে থাকবেন এরই মধ্যে।

যাইহোক, গল্প বেজায় ভালো হইছে। এনজয়।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আপত্তি জানালাম। মেটাব্লগিং। আপনার এই গল্প, হিমুর গল্পের পাল্টা হিসেবে লেখা।
এসব অসুস্থ প্রতিযোগীতা। সচলায়তনে ভাল্লাগেনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

একমত।

এতদিনের পুরোন ঘাঘু সাংবাদিক এসে দুদিনের ব্লগার হিমুর পিছনে উঠে পড়ে লেগেছেন। হিমুকে ব্যক্তিগত মেসেজে দুরে হঠতে বলেন। মন্তব্য মুছে দ্যান। পোস্টের পর পোস্ট দিয়ে হেয় করেন। ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দ্যান

"অদ্ভুত হিংসুটএ কিছু বামন আছে,যারা নোবেল পুরস্কার পেলে সুদখোর হিসেবে কুতসা রটাবে,এভারেস্টে উঠলে বলবে হেই বেডা ওডে নাই, বেকারতা আর আপাত বিতর্কিত তসলিমা নাসরিন ধরণের সস্তা খ্যাতির লোভে বামন শুয়ে শুয়ে নিজের ভাবনার উচ্চতা দিয়ে সফল মানুষদের উচ্চতা মাপে। আর আমাদের জীবন বিনোদনহীন,বামনের হিটলার কস্টিউমের সং যাত্রা দেখে হাততালি দিই। বামন আরো মজা পায়,বামন মিয়া বেকার তাই বলে কি সাধ নাই তার পাহাড়গুলো ঢাকার।"

এসব কী! এই কী সেই বিখ্যাত সাংবাদিক মাসকাওয়াথ আহসান?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কালো-মডু এর ছবি

প্রিয় মাসকাওয়াথ আহসান,

সার্বিক কাঠামোবিচারে আপনার লেখা এই গল্পটি অভিযোগের ভিত্তিতে মেটাব্লগিং বিবেচনা করে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। এমন পোস্টের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।