এইম ইন লাইফ

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: সোম, ১৯/০৭/২০১০ - ২:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শেষ ক্লাশ। মুনিয়ার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। কাজটা করতে হয়েছে খুব সাবধানে। ঘন্টা বাজার আগেই ব্যাগে বই-খাতা ঢুকাতে দেখলে রফিক স্যার খুবই রাগ করে। তাই বইটা সামনে রেখে দিয়েছে আর খাতা, পেন্সিল বক্স, পানির বোতল ঢুকিয়ে ব্যাগের ওপরের চেইনটা খুলে রেখেছে। টিফিন পিরিয়ডের পর সায়মাকে পটিয়ে বেঞ্চের কিনারে বসেছে, এক পা দিয়ে রেখেছে বাইরে। শিমু লীনাকে কি জানি বলবে তাই ওদের বেঞ্চে এসে বসেছে । এমনিতেই এক বেঞ্চে পাঁচ জন করে বসে ওরা তাই একটু চাপাচাপি করেই বসতে হয়েছে। মুনিয়ার চোখ এখন ঘড়ির দিকে, মিনিটের কাঁটা আর সেকেন্ডের কাঁটা একসঙ্গে হলো বলে। ঢন, ঢন, ঢন তারপর একটানা ঘন্টার শব্দ। একহাতে বই আরেক হাতে ব্যাগ ধরে একদৌড়ে স্কুলের গেট পার হয় মুনিয়া। মর্নিং শিফট শেষ হয়ে এখন ডে শিফট শুরু হবে কাজেই স্কুলের গেট তখনই পার হতে না পারলে ভীড়ের মধ্যে আটকে থাকতে হতো।

ঘড়ি দেখে মুনিয়া, বাড়িয়ে দেয় হাঁটার গতি। স্কুলে আসা - যাওয়ার রিকশা ভাড়া আর টিফিন বাবদ প্রতিদিন বিশ টাকা পায় ও। টিফিন খেতে ওর ভালো লাগনা। আর রিকশায় চড়লে তো এই মজার খেলাটা খেলতে পারবেনা। মিঠু ভাইয়ের দোকানে ছেলেদের হল্লা পার হয়ে বামের সরু গলিটা ধরে এগুলেই নাকে এসে লাগে মশলার ঝাঁজ, আলো -ছায়ার বরফি কাটা আল্পনা পায়ে মাড়িয়ে ডানদিকে মোড় ঘুরেই বিরক্তিতে চোখ কুঁচকে যায় মুনিয়ার গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সবসময় এখানে পানি জমে থাকবেই। যদিও পানি পার হওয়ার জন্য চারটা ইটও পাতা থাকে সবসময়। তারপর এসে যায় ডোবার রাস্তা। ডোবার পঁচা পানির গন্ধ মুনিয়াকে অনেকটা তাড়িয়ে নিয়ে যায়।

তারপর সেই দোতলা শাদা বাড়িটা! মুনিয়ার মনে হয় এই বাড়িতে যারা থাকে তারা নিশ্চয় খুব সুখি! এই বাড়ির মেয়েটার নিশ্চয় একটা নিজের রুম আছে? সেই রুমে অনেক অনেক গল্পের বই, মিউজিক প্লেয়ার, নিজস্ব আলমারি, বড় আয়না ওয়ালা ড্রেসিং টেবিল, সুন্দর একটা পড়ার টেবিল আছে। ওদের বাসায় মাত্র দুইটা রুম। কোনো বারান্দা নাই। ড্রয়িং রুমে বসেই ও পড়াশোনা করে, যখন মেহমান আসে তখনও। ওর অবশ্য অভ্যাস হয়ে গেছে অনেক লোকজন থাকলেও অসুবিধা হয় না।

এসব ভাবতে ভাবতেই বড় রাস্তা এসে যায়। বড় রাস্তা পার হলেই ওদের বাসার গলি। আবার ঘড়ি দেখে মুনিয়া। ওর হাতে আর তিন মিনিট সময় আছে। প্রায় দৌড়ে বাকি পথটুকু পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। বাড়ির গেটে পৌছে ঘড়ি দেখে। ঠিক ১২ মিনিটে বাড়ি পৌঁছেছে আজকে । কালকের টার্গেট ১০ মিনিট।


মন্তব্য

তাজিন [অতিথি] এর ছবি

ভালো লাগলো খুব...।।

মনামী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চলুক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

মনামী এর ছবি

দেঁতো হাসি

বাউলিয়ানা এর ছবি

ভাল লেগেছে অনুগল্প।

বারো মিনিট কিন্তু কম সময় না। চোখের দেখা আরও অনেক কিছু মনেই রয়ে গেছে মনে হয়েছে।

মনামী এর ছবি

ধন্যবাদ। চোখের দেখা অনেক কিছু আসলেও মনেই রয়ে গেছে। সময়ের হিসাবটা বুঝে উঠতে পারি নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

দশ মিনিটে বাড়ি পৌঁছানোটাই এইম ইন লাইফ! দারুণ!!
জহিরুল ইসলাম নাদিম

মনামী এর ছবি

মুনিয়ার কাছে তো এটাই এইম ইন লাইফ। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

সিরাত এর ছবি

ছোটবেলার এই অবলিভিয়াসনেসটা খুব মিস করি। কিন্তু ঐ কারণেই তো ওটা ছোটবেলা। হাসি

মনামী এর ছবি

ছোটবেলাতেও অনেককেই বড়দের মত হিসাব কষতে হয়। পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

স্কুল থেকে প্রায়ই হেঁটে ফিরতাম।
তখন নিজের সাথে নিজেই এভাবে পাল্লা দিতাম। প্রথমে ফুলার রোড পর্যন্ত ৩ মিনিট, নীলক্ষেত ৬, কাটাবল ১৪ তে, হাতিরপুল ২০ এ।
ডেইলী রুটিনের মত। কোনদিন একটু বেশি সময় লাগলেই মন খারাপ হয়ে যেত।
ভালো লাগলো, আপু। ভালো থাকবেন।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

উদয়ন নাকি?
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

দারুন লাগলো। কিন্তু আরেকটু বড়ো করলে ক্ষতি কি ছিলো?

মনামী এর ছবি

ক্ষতিতো অবশ্যই ছিল না কিন্তু বড় যে করতে পারলাম না...

দ্রোহী এর ছবি

মুগ্ধ হলাম। জানি না কেন, কিন্তু মুগ্ধ হলাম।


কি মাঝি, ডরাইলা?

মনামী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

মনামী এর ছবি

ভালু পাইলাম। থ্যাংকু।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
এইম ইন লাইফ থাকা ভালো।
-শিশিরকণা-

নাশতারান এর ছবি

সুন্দর।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রাফি এর ছবি

লেখাটা খুব ভাল লাগলো
চলুক

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মর্ম এর ছবি

ছোট্ট সুন্দর গল্প। ভাল লাগলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

স্বদেশ হাসনাইন এর ছবি

গন্তব্যটা ছিল অনেক দুরে যাবো। দৈর্ঘে প্রস্থে উচ্চতার সবার সামনে। কখনো ট্রেনে চড়তে ভাললাগতো না। তার উচু পাহাড়েও না। কারণ শিশুরা পাহাড়ে চড়াকে উঁচুই মনেই করে না।

উড়োজাহাজের চালক হবো। আমি যখন বলেছিলাম, দেখি ক্লাসের মতিন, সোবহান, আরিফ সবাই চালক হতে চায়। রচনা পরীক্ষাতে যদিও লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম নোট বইয়ের শিক্ষক হওয়ার এইম। কারণ নম্বরটাই ছিল মধ্যবছরের পরিক্ষার উদ্দেশ্য। উড়োজাহাজ না দেখে তার চালক হতে চাওয়া হাস্যকার। হাইস্কুলে শুনেছিলাম যে চালকছাড়াই অনেক প্লেন চলে। যখন সত্যিই উড়ন্তবাস দেখেছি, তখন বাড়ির জমি বিক্রি করে টিকেট কেনা পিছন সীটের যাত্রী।

যখন মুন্সী ঈদের খিচুড়ি খেতে খেতে পরকাল বোঝালো বুঝেছিলাম। জান্নাতের এইম ছাড়া সে কিছু চায়না। জান্নাতে যেতে সৎ থাকতে হয়। কিন্তু আমি তখন বাবাকে পরীক্ষার নম্বর দেখাই নি। মিথ্যে বলিনি কিন্তু সত্যিও না। এভাবে যত মিথ্যে বলেছি, যোগ করে শৈশবেই জান্নাতে যাওয়া কঠিন বুঝে গিয়েছিলাম। তবুও বড় হয়ে মরে যাবার আগে, সৎ থাকার একটা অদৃশ্য টার্গেট সবারই হয়তো থাকে।

কিন্তু সৎ থাকলাম কই। সিগারেটের আগে মিথ্যেটা ধরেছিলাম। মিনিট ধরে জীবনকে গুনতে গুনতে ঠিক মুনিয়ার মত ক্লাস থেকে ফিরতাম। ১০ মিনিট বা ১২ মিনিটের তফাৎ হলে আফসোস হতো, নিজেকে ছোট অপদার্থ মনে হতো। তখন অবশ্য বলা হয়েছিল নিয়মানুবর্তিতা মানে জীবন। পরীক্ষায় গুনে গুনে সময় এই নিয়মটাই কুমিরের ছানার মতো বোঝানো হতো। অন্য সব উদ্দেশ্যের জন্য মাথা নত করে ঘামতে ঘামতে বীজগণিত মেলাতাম। সময় ঘড়ির কাটাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেত অন্যত্র । তাই ঘড়িকে মনে হতো গলাটিপে দেয়া যম।

ঘড়ি যারা মানেনি, অনেকেই বাবার পয়সায় দামী ঘড়ি কিনেছে। টিউটর এসে সাত বিষয়ে উচ্চ নম্বরের পর আমার ডেস্কের অনেক রাতজাগা শ্রম দুর্বাঘাসে মিশে গেছে। যে সৎ থাকতে বলতো, তাকেই একদিন সেক্রেটারীর পুত্রের জন্য আলাদা বেঞ্চে খোঁজ নিতে দেখেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের হয়তো নিয়মানুবর্তীতা ছিল বেতনের এইমে যাবার সিড়ির পাপোষ। এভাবে অনেক অনেক বার, উদ্দেশ্য আর জীবন তিনটারই সংজ্ঞা খুজতে বসেছি ডিকশনারীতে।

এখনো খুঁজে যাই। যারা বাউল হয়েছে, জীবনের উদ্দেশ্যটা দেখেনি। আগে যাই মনে হতো এখন উদ্দেশ্যহীনতাকেও যুক্তিসঙ্গত একটা এইম মনে হয়। যেখানে ট্রেন আছে, গন্তব্য আছে, কিন্তু তাড়া নেই, আকাশটা দেখতে ভাল লাগলে গন্তব্যে না থামলেও চলে।

sw.has9 at gmail.com
-
কতটুকু ব্যর্থ হলে...
http://www.somewhereinblog.net/blog/ekattor/29198271

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

মুগ্ধ!! মুগ্ধ!! মুগ্ধ!!

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় সবাই মনে হয় এভাবেই চিন্তা করে! আমিও তাই করতাম। এমনকি এখনো মাঝে মাঝে করি। গল্পটা অনেক ভাল লাগলো।

অনন্ত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ব্যাপক। আরো বেশি বেশি অণুগল্প পোস্টান।

-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কম্পিটিশনের মেটাফরটা ভালো লাগলো।

মনামী এর ছবি

যারা আমার লেখা পড়েছেন এবং কষ্ট করে মন্তব্য করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

রেজা এর ছবি

খুব ভালো!!!
আসলে সবারই ছোটবেলাতেই 'এম ইন লাইফ' থাকে, আর বড় হবার সাথে সাথে তা...

শুচি এর ছবি

গল্পটা অনেক মজার। পুরোটা পথ মুনিয়ার সাথেই পাড়ি দিলাম। আলোছায়ার বরফি কাটা পথ...অনেক ভালো লাগলো। এমন সুন্দর উপসংহারের অনুগল্প আরো চাই...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।