বাউন্ডারির বাইরে

মর্ম এর ছবি
লিখেছেন মর্ম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৩/০১/২০১১ - ১২:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

।এক।

‘কী জুঙ্গা?!’
‘কিয়াজুঙ্গা!’
‘ঠিক জানিস তো? এই নাম? কিজুঙ্গা?
‘আরে কতবার বলি, কিজুঙ্গা না তো, কিয়াজুঙ্গা!’
‘কী আজিব নাম রে বাবা! শুনলেই কেমন আফ্রিকা আফ্রিকা গন্ধ লাগে নাকে!’
‘লাগুক না বাবা! তাতে কি? তুমি দেখ আগে কী করতে পার। জানায়ো কিন্তু।‘

ঋদ্ধ’র চিন্তার আসলেই শেষ নেই। বিশ্বকাপ চলে আসতে আর ক’দিন মাত্র বাকি, অথচ টিকিটের টিকিটি এখনো দেখা যায়নি। খোঁজ-খবর কম নেয়া হয়নি এর মধ্যে, আশা করার মত তেমন কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না।

বিসিবি এখনো টিকিট তো ছাড়েইনি, কবে যে ছাড়বে তা পর্যন্ত জানানোর নামটি নিচ্ছে না। “সময় হলে আমরা অবশ্যই জানাবো, টিকিট পাওয়া যাবে সারাদেশে”- টাইপের কথাবার্তা বলে সময় পার করছে কেবল।

শেষ ভরসা এই কিয়াজুঙ্গা। বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির ভার ওরা পেয়েছে আইসিসির কাছ থেকে, ওরা আবার সে ভার এদিক ওদিক পার করে দিচ্ছে, বাংলাদেশে কারা পাচ্ছে তা এখনো জানা যায় নি। সেটা বড় কথা না, বড় কথা হল ওদের ওয়েবসাইটে অনলাইন টিকিট পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বকাপের। ভাইয়াকে হঠাৎ করে ওদের নাম পাখিপড়া করে বলে দেওয়ার কারণ সেটাই।

অনলাইনে টিকিট করার জন্য সবচেয়ে জরুরী যে বস্তু তার নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড’। আর ঝামেলা হল বাসায় কারো এখনো ঐ মহার্ঘ্য বস্তু নেই! আগে জানলে অমন কার্ড একটা কেন চার-পাঁচটা জোগাড় করে রাখা কোন ঘটনা হত নাকি?!

এখন আশার কথা হচ্ছে কাল রাতে কথায় কথায় ভাইয়া বলেছিল ওর অফিসে কার নাকি ঐ ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড’ আছে- তেমন দরকার পড়লে ওটা কাজে লাগানো যাবে। এমন সুযোগ হারানোর মত বেকুব কি কেউ আছে?!

ভাইয়াকে তাই পই পই করে বলে দেয়া হয়েছে আজকের মধ্যে যেন টিকিট কেটে ফেলে কিয়াজুঙ্গা থেকে। ওর সমস্যা হল কোন কথা মনে রাখতে পারে না, এই যে কাল রাতে অত করে বলে দিয়েছে সে, বানানশুদ্ধ লিখে দিয়েছে ওয়েবসাইটের নাম, কি হয়েছে তাতে?!

অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই দিব্যি ভুলে বসে আছে। ও অফিসে কাজ কর্ম কিভাবে চালায় ঋদ্ধ সেটাই বুঝে উঠতে পারে না, ওর বস ওকে ঝাড়ি-টারি দেয়না নাকি?! ও ঠিক জানে, ও যদি বস হত ওর ভাইয়ার, একটা মারদাঙ্গা হয়ে যেত এদ্দিনে!

।দুই।

এমনিতে কম্পিউটারের স্ক্রিনের সাথে স্নিগ্ধ’র তেমন কোন শত্রুতা না থাকলেও মাঝে মাঝে কি হয় কে জানে, হঠাৎ দেখা যায় লেখাগুলো কেমন অস্পষ্ট হয়ে আসছে- আর একটা শব্দ আরেকটার মাঝে গিয়ে ঢুকে পড়তে চাচ্ছে, মাঝে মাঝে দুই তিনটা একসাথে বসে কিম্ভুতকিমাকার চেহারা নিয়েছে।

লেখালেখির কাজ হলে ভুল শুধরে নিতে সময় লাগে না, কিন্তু হিসাবের কাজ হলে জান বেরিয়ে যায়। কোথায় কোন খোপে এক আধটা ভুল হয়ে বসে থাকে- আর ওগুলোকে বের করে শায়েস্তা করার আগে নিজেকেই বারকয়েক শায়েস্তা হয়ে যেতে হয়।

স্নিগ্ধ অনেক হিসাব করে বের করেছে রাতের ঘুমটা ঠিকঠাক না হলেই পরদিন সকালে তার এই দশা হয়। ভার্সিটিতেও এমন হত, সকালে ক্লাশ নোট নিতে শুরু করেছে, হঠাৎ দেখা গেলো খাতার লেখাগুলো কেমন আবছা হয়ে আসছে, চেনা লেখাগুলো কেমন এঁকেবেঁকে যাচ্ছে কেবল! হাতটা কেমন এলিয়ে পড়তে চাইছে- হাতের কলমটা ধরে রাখতেও তার ঘোর আপত্তি! কোনমতে ক্লাশ শেষে ফ্যাকাল্টির ক্যান্টিনে চায়ের কাপে চুমুক আর বারান্দার রেলিং-এ স্প্রাইটের খালি বোতলে রাখা পানির ঝাপটা না দেয়া পর্যন্ত এ ঝামেলা মিটতে চাইতো না।

অফিস তো আর ভার্সিটি না, যে চাইলেই এদিক ওদিক গিয়ে ঘুরে ফিরে আসা গেল। বারবার ফ্রেশরুমে গেলেও বিপদ- কলিগদের চোখা কথায় বিপর্যস্ত হতে হয়- আর চা চাইলে গলা ঊঁচিয়ে বেশ হাঁক দিয়ে বলতে হয়, “হানিফ, একটা চা দিয়ে যাবেন?!” ব্যাস, এরপরই চোখগুলো একটু কচলে নিয়ে আবার ঘাড় গুঁজে ডেস্কটপে বসে পড়তে হয়।

আজকের মধ্যে মাসের রিপোর্ট-টা করে জমা দেওয়ার কথা, কাজ অনেকটা করে গিয়েছিল কালকেই, তবু এখনো শেষ হয়নি ও কাজ। কারণ আর কিছু না, নির্ঘাত কোন ভুল। হিসেবগুলো আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঠিক থাকছে, নভেম্বরে এলেই ওদের আজগুবি চেহারা দেখানো শুরু হয়ে যাচ্ছে।

ফরমুলায় ভুল হয়ে গেলো?! তাহলে আর রেহাই নেই, পুরো হিসাব আবার চেক করতে হবে। তাই যদি করতে হয় তাহলে এ কাজ শেষ হবে কখন আর রিপোর্ট জমা দেবে কখন- ভাবতেই মাথা হাল্কা ঝিমঝিম করতে থাকে ওর!

ঋদ্ধ কাল রাতের কথামত এর মধ্যে দু’বার ফোন করে মনে করিয়ে দিয়েছে টিকিট করার কথা, ও সায় দিয়ে গেছে। আজকে কোন এক সময় করে নিলেই হবে, ইফতেখার ভাইকে বললেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

আপাততঃ এ ব্যাপারে কিছু করা যাবে না অবশ্য- রিপোর্ট ছাড়া এখন ইফতেখার ভাইয়ের সামনে পড়লে খবর আছে!

[চলবে?!]


মন্তব্য

দিগন্ত এর ছবি

বিশ্বকাপের টিকিট নিয়ে ঝামেলার খবর পড়েছি। বাংলাদেশে এত লোকে খেলা দেখতে চায় সে তুলনায় স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যা সীমিত। ঢাকার স্টেডিয়ামে আসনসংখ্যা ৩৫,০০০ আর চট্টগ্রামে ২০,০০০ মত। শ্রীলঙ্কার স্টেডিয়ামগুলোতেও এর থেকে বেশী লোক ধরে। ইডেনে আসনসংখ্যা ৮২,০০০। দর্শকাসন না বাড়ানোর কোনো কারণ দেখি না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

বইখাতা এর ছবি

চলুক, চলুক। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় মিরপুর স্টেডিয়ামের চাইতে আমার মনিটরের স্ক্রীন বড় চোখ টিপি আমি টিভিতেই খুশি হাসি

-অতীত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।