খেয়ালি খেলায়

মর্ম এর ছবি
লিখেছেন মর্ম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৩/০২/২০১১ - ৫:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“আই থট কানাডা উড স্কোর এইটি এইট!”

তামিমের কব্জির ছোঁয়া পেয়ে কোন এক কানাডিয়ান পেসারের আরো একটা বল যখন গোবেচারার মত স্কয়ার লেগ সীমানার দিকে ছুটছে, তখন অল্প পরিচিত নিউজিল্যান্ডবাসী আইসিসি কর্মকর্তার কথায় অবাক হয়ে চোখ না ফিরিয়ে পারলাম না! আরেকবার তাকিয়ে বলের সীমানাছাড়া হওয়া নিশ্চিত করার পর (মাঝে মাঝে এমন মনে হয়- যদি চোখ ফিরিয়ে নেই কোন কারণে, যা হতে যাচ্ছিলো তা হবে না- মন্দটা নয় চোখ ফিরিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা করা যায়, তা ভাল তা কেন ঠেকাতে যাবো?!) চোখে প্রশ্ন ঝুলিয়ে তাকাই তাঁর দিকে- “অত কিছু থাকতে ‘এইটি এইট’ কেন?!”

বেশি খোলাসা না করলেও অন্ততঃ চেষ্টাটা করেন ভদ্রলোক, “বাংলাদেশের কাছে কানাডা একটা ‘মিনো’ টিম! আর ইদানীং বাংলাদেশের যা ফর্ম তাতে- মনে হয়নি কানাডা অত করে ফেলবে। আর প্রথম ৫ উইকেট কততে পড়লো মনে আছে?!”

আড়চোখে ডিসপ্লে স্ক্রিনে কানাডা’র জড়ো করা রানের হিসাবে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেই, এরপর অনেকটা কৈফিয়তের সুরেই বলি- “শেষ দুটো উইকেট যা ঝামেলা করলো- নয়তো তোমার কথাই ঠিক হত!”

ব্যাপার অনেকটা তা-ই। খেলা নিয়ে, বিশেষ করে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহের অভাব কোনকালেই ছিল না, কিন্তু কোন অজানা কারণে মাঠে গিয়ে খেলা দেখিনি কখনো। সে সুযোগ হাতের মুঠোয়, তার উপর আবার বিশ্বকাপের জানান দেয়া ম্যাচ- গ্যালারী থেকে তো টিভির সাহায্য ছাড়া টসের হালহাকিকত বোঝা যায় না- কতগুলো স্ক্রিনশট দিয়ে দিন পার করে দেয়া ডিসপ্লে স্ক্রিন-ই ভরসা। বাংলাদেশ যখন টসে জিতে বোলিং বেছে নিলো একটু হতাশ-ই হলাম, মনের অবচেতন তামিমের মারকাটারী দেখে হয়তো ‘মেঠো দর্শকে’র অভিষেক চাইছিল। কি আর করা যাবে ভেবেই মাঠে চেয়ে থাকা, কিন্তু সবুজে জড়ানো এগারোজনকে যখন মাঠের সবুজে নামতে দেখলাম মন জুড়িয়ে গেলো।

পর পর তিনটা বল দেখলাম, চোখ ফেরাই নি একটুও- আমি ক্যামেরায় তাকিয়ে, ক্যামেরা মাঠে। কিছু হয় না, শফিউল বল করে আর কানাডার ওপেনার কেবল ছেড়ে দেয়, মুশফিক-ও দিব্যি বল হাতে জমায় নিশ্চিন্তে। কি হল কে জানে, চার নম্বর বলে চোখ ফিরিয়ে একটু গেছি পেছনে- অমনি সবার চিৎকার! আউট!! আমি হতভাগা কেবল দেখলাম ব্যাটসম্যান বেরিয়ে যাচ্ছে, আর বাংলাদেশের খেলোয়ারেরা জটলা পাকাচ্ছে উইকেটের এক পাশে।

একবার হলে কথা ছিল- পরের ওভারেই রুবেল আরো একজনকে সাজঘরের পথ দেখালো- এবারো কোন এক রাজকার্যে জড়িয়ে মিস করলাম। এভাবে একের পর এক। পুরো খেলায় দুটো উইকেট নিজে দেখলাম, সাকিবের নেয়া কানাডার শেষ উইকেট আর তার প্রায় সতের ওভার পর আমাদের তামিমের উইকেট- দ্বিতীয়টা না দেখতে হলেই খুশী হতাম। তবে এটাও ঠিক, পঞ্চাশ পুরোবার পর যেভাবে খেলছিল তামিম, তাতে আউট না হওয়াটাই অবাক করার মত ব্যাপার হত! আটচল্লিশ থেকে লং-অন দিয়ে অসাধারণ এক ছয়ে চুয়ান্নতে পৌঁছানোর পর বাকি পনের রান করতেই ‘লাইফ’ মিলেছে দুইবার- একবার কভারে, আরেকবার মিড অফে ক্যাচ পড়লো। আরেকটাকে ‘লাইফ’ বলা যায়, না বললেও ক্ষতি নাই- ফিল্ডার লং-অফ থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ায় ওটা এক ড্রপে সীমানা পার হল। তবে বাষট্টি থেকে ছেষট্টিতে পৌঁছানোর পথে খেলা সোজা পাওয়ার শটটা চোখে লেগে আছে এখনো- একদম সোজা তুলে দেয়া শট, ব্যাটের ফুল সুইং, বলের অবধারিত ঠিকানা জেনে আস্তে ব্যাটটা আস্তে নীচে নামিয়ে আনা, বোলারের ফলো-থ্রু শেষের আগেই বলের সীমানা ছাড়া হওয়া- ওয়াও!

শট তো একের পর এক খেলেছেই- ফ্লিক, কভার ড্রাইভ, কাট- সব-ই ছিল, তবে আমার চোখে ঐ চারটি রানই তামিমের আজকের সেরা।

ইমরুল বরাবরের মতোই- বাড়তি কিছু করার আগ্রহ নেই, “একে তাকে দেখিয়ে দোবো”র ঔদ্ধত্ব নেই, কেবল নিজের কাজটা আস্তে করে যাওয়ার চেষ্টা, ধ্বংসযজ্ঞে নামা সঙ্গীর সাথে মাঝে মাঝে তাল মিলিয়ে মাঠের এদিক-ওদিক দিয়ে বিজ্ঞাপনের বোর্ডিগুলো ছুঁতে পাঠানো- এইতো। এমনি করে করেই সাঁইত্রিশ নট আউট, কাজ সেরে বাড়ি ফেরা সুবোধ ছেলে!

প্র্যাকটিস ম্যাচ বলেই কিনা, দর্শকেরা খেলা দর্শন করেছেন ঠিক- কিন্তু মাতিয়ে রাখেন নি পুরো খেলা জুড়ে। হয়ত বিশ্বকাপের জন্যই জমিয়ে রাখা সব- নাকি সহজে এসে যাওয়া জয় আর আমাদের তেমন টানে না? সুযোগ পেলেই জানান দেয়া “ডিজে রাতুল, ঢাকা থেকে” মাঝে মাঝে চেষ্টা করেছেন মাইক ফাটিয়ে, হাততালি জুটেছে অনুরোধের পর, কিন্তু ‘ম্যাক্সিসান ওয়েভ’ চোখে পড়েনি পুরো ম্যাচে- নাকি এটাও মিস করে বসলাম ঐ উইকেটগুলোর মত?! আহা বড় আশা ছিল- ম্যাক্সিসান ওয়েভ দেখবো!

আইসিসির ঐ কর্তাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম, “বাংলাদেশ কত ওভারে খেলা শেষ করবে বলে মনে হয়?” বেশ খানিকক্ষণ ভেবে ‘প্র্যাক্টিস ম্যাচ’, ‘বেশিক্ষণ ব্যাটিং’ ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে তিনি রায় দিলেন, “আই থিংক- থার্টি ওভার!”

অত ওভার যে লাগেনি তাতে আমার জন্য ভাল হয়েছে, সাতটার ভেতর স্টেডিয়াম ছাড়তে হবে, রাতেই ঢাকায় ফেরার তাড়া- তামিমের অমন ব্যাটিং যদি বাংলাদেশের ইনিংসটাকে টি-টুয়েন্টি না বানিয়ে ছাড়তো তাহলেতো মাঠে থেকে খেলা দেখার অভিষেকে জয় দেখে ফেরাটা আমার অধরাই থেকে যায়!

ধন্যবাদ তামিমকে, আর অভিনন্দন-ও।

নতুন মোড়কে বাজানো গান ভালো লাগে না সব সময়- কিন্তু খেলার শেষ পর্যায়ে আজকে যখন “আমরা করবো জয়’-এর নবতম সংস্করণ শুনছিলাম- তখন তো শরীরের রোমগুলো ঠিকই শিউরে উঠলো!

ছোট ভাইটিকে খেলার খবর জানানোর পর ওর এস এম এস পেলাম, “আর মাত্র দশ ম্যাচ!” অতিকল্পনা, অসম্ভব। তাতে কি?

আমরা করবো জয় একদিন!!!


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আশ্রাফুলরে দেখিতে চাহিয়াছিলাম, বজ্জাত তামিমের ঝাঁটাপেটায় সব বরবাদ হইয়া গ্যাছে মন খারাপ মন খারাপ মন খারাপ

আর মাত্র দশ ম্যাচ!” অতিকল্পনা, অসম্ভব

অতিকল্পনা হতে পারে কিন্তু আমার মনে হয় অসম্ভব নয়। আপনার ছোট ভাইয়ের মত স্পিরিট যদি দেখাতে পারি তবে

আমরা করবো জয় একদিন!!!

না বরং হবেই হবে "আমরা করি জয় প্রতিদিন!!!"

-অতীত

মর্ম এর ছবি

আশরাফুলের আশায় আমিও ছিলাম, সে আশায় গুড়েবালি...!!! মন খারাপ

যাহোক, যে খেলুক যেভাবে খেলুক, প্রতি খেলার শেষে ড্রেসিং রুমে ওরা "আমরা করবো জয়" গাওয়ার উপলক্ষ পেলেই আমি খুশি!! হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অমিত আহমেদ এর ছবি

লেখা বেশ হয়েছে। সাথে দু'একটি ছবি দিলে আরো জমতো। বাক্যগুলো যদি ছোট ছোট করে লিখতেন, পড়তে আরাম হতো। বানানেও একটু সাবধান থাকার প্রয়োজন আছে। অন্য খেলাগুলো যদি দেখতে যান, আশা করছি সেগুলো নিয়েও লিখবেন।

মর্ম এর ছবি

বানান-প্রসঙ্গেঃ এক-কালে সচলে কতিপয় মহানুভব সদস্য ছিলেন যারা ভুল ধরে দিয়ে অশেষ উপকার করতেন। তাঁরা এখন নির্বাক, ভুলেরা তাই সচল! মন খারাপ

যদি পরে আরো লেখার সুযোগ আসে আপনার পরামর্শ অবশ্যই মনে থাকবে। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ লেখা! আরও লিখবেন আশা করি। হাততালি

অন্ততঃ=অন্তত (শব্দান্তে বিসর্গ হয় না)
এইতো=এই তো*
তাহলেতো=তাহলে তো*

*তো একটি পূর্ণাঙ্গ শব্দ

কুটুমবাড়ি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

স্টেডিয়ামে একবারই খেলা দেখতে গেছি। ঐদিনই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে বিজয় এসেছিলো। হাসি

পরের খেলাগুলো নিয়ে লিখবেন আশা করি।

মর্ম এর ছবি

...ঐদিনই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে বিজয় এসেছিলো।

অমন বলতে পারলে কতই না ভাল লাগবে! হাসি

সচলে খেলা নিয়ে নিয়মিত লিখতে থাকা লেখকটির মন্তব্য পেতে ভাল লাগলো- এটা আড়ালে জানিয়ে রাখি।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আমরা করবো জয় একদিন!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

পরের খেলাগুলো নিয়ে লিখবেন আশা করি। হাসি
---------------------------------
Sad Poems
Sad Stories

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।