কল্পবিজ্ঞান : ঘুষ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/০৬/২০০৯ - ১০:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টিরি ধাতব গলায় বলল, আপনাদের গ্রেফতার করা হল...

অফিসে বসে সকালবেলাতেই ভারী গল্প জমে উঠেছিল। কাজের সেরকম কোনো চাপ নেই। চেয়ার ঘুরিয়ে গোল করে বেশ একটা আড্ডার মতো বসেই আমরা গল্প করছিলাম।
আমার পাশের টেবিলে বসে এরিক। এরিক জার্মানির ছেলে। দারুণ জমিয়ে গল্প বলতে জানে। পর পর তিন-চারটা মজার গল্প বলে হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরিয়ে দিল।
এরপর শুরু হল তার নিজের জীবনের গল্প। সারাজীবনে সে ঘুষ দিয়ে কত রকমের কাজ বের করে এনেছে, সেসব গল্প শুরু হল। ঘুষ দেয়া খুবই খারাপ কাজ সন্দেহ নেই। কিন্তু এরিক এমনই একটা চমৎকার ছেলে, তার গল্প নিয়ে কোনো নীতিগত প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বরং কত কত ঘোড়েল লোককে সে ঘুষের টোপ দিয়ে কী মজার মজার সব কাণ্ড করিয়ে নিয়েছে, সেগুলো শুনে আমরা অফিসে বসেই অভদ্র রকমের গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগলাম!
আমাদের অভদ্রতা দেখার মতো অবশ্য কেউ এখানে নেই। সত্যি কথা বলতে কি, মানুষ বলতে আমরা এই তিনজনই। শুধু এই অফিসে না, পুরো গ্রহেই। ভুল হল, গ্রহ না, উপগ্রহ।
দু হাজার আশি সালের পর থেকেই পৃথিবীর বাইরে আর কোথায় মানুষের বসবাসের যোগ্য জায়গা পাওয়া যায়, সেই নিয়ে ভালো রকমের তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। চাঁদে, মঙ্গলে আর মঙ্গলের দুই উপগ্রহে বসতি গাড়ার পর আরো অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহেও আস্তে আস্তে পর্যবেক্ষণকারী দল ছড়িয়ে পড়ল।
সবগুলো দলই খুব বিচিত্র, সেখানে নানা ধরনের মানুষ, যাদের একজনের সাথে আরেকজনের পেশা বা নীতির কোনো ঠিকঠিকানা নেই। যেমন, আমাদের দলে ইয়েশিন একজন একজন যন্ত্রপর্যায়ের টেকনিশিয়ান মানুষ। কথা খুবই কম বলে, রাতেরবেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি আর সফটওয়্যার নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এই বসতিঘাঁটির সমস্ত টেকনিক্যাল ব্যাপার স্যাপার সেই সামলায়।
এরপর আছি আমি। বাংলাদেশের মানুষ। ইন্টারনেটের বিভিন্ন বাংলা ব্লগে রোমান্টিক কবিতা লিখতাম। সেখান থেকে আমাকে খুঁজে বের করে নির্বাচন করা হয়। একজন কবি স্পর্শকাতর মানুষ। আমি এই উপগ্রহের চেহারা, পরিবেশ মানসিকভাবে কতটা গ্রহণ করতে পারছি, আমার মনে খুব বেশি চাপ পড়ছে কিনা, এসব দেখার জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে এখানে। আমার মানসিকতা যাচাই করেই ঠিক করা হবে, ভবিষ্যতে বসতি গাড়তে আসা সাধারণ মানুষরা এই এলাকাকে কীভাবে নেবে।
আর আছে এরিক। সোনালি চুলের হাসিখুশি বছর তিরিশের একজন মানুষ। সে যে এখানে কেন আছে, তা আমরা জানি না। এরিক খুনের দায়ে জেল খেটেছে, একসময় ড্রাগস নিত, নানা ধরনের ধান্দাবাজি ব্যবসার সঙ্গে সে জড়িত। প্রতি অভিযাত্রী দলেই একজন করে এরকম কিছুটা ক্রিমিন্যাল মেন্টালিটির লোক নেয়া হয়। কেন, সেটার কারণ আমরা জানি না। তবে এরিককে ক্রিমিন্যাল বলা যাবে না। বরং বলতে হবে এই জীবনে এই ছেলেটির মতো দরদভরা মন আমি খুব কম দেখেছি। আমার একেবারেই নিজস্ব ধারণা, অল্পবয়সে বাপ-মা মরে যাওয়ার পর নানা পাকেচক্রে সে ক্রাইমের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল।
আমাদের এই তিনজনের বিচিত্র দলটি পৃথিবী থেকে আছে সবচেয়ে দূরে। আমরা আছি বৃহস্পতির একটি উপগ্রহে। এর নাম ইউনিটাস। আমরা ছাড়া আরো আছে সাতটি প্রতিরক্ষা রোবট। এদের বুদ্ধিবৃত্তি অতি নিম্ন পর্যায়ের। অল্প কয়টি জিনিস এদের কপোট্রনে চিরতরে গেঁথে দেয়া হয়েছে। যেমন, যেকোনো বিপদে যেকোনো মূল্যে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। আর সেটা করতে গিয়ে যে যত বীরত্ব দেখাতে পারবে, তাকে তত বড় রোবট কমান্ডারশিপ দেয়া হবে। এদের কোনো মানবিক বোধ নেই, কিন্তু বড় পদে কাজ করা এদের কাছে বিশাল ব্যাপার। এই কারণে বিপন্ন মানুষকে বীরত্বের সঙ্গে বাঁচানোর একটি সোনালী সুযোগের জন্য সব রোবটরাই মুখিয়ে থাকে। এই তো কদিন আগেই মঙ্গলে উপগ্রহ ডিমোসে অগ্নিকাণ্ডের শিকার এক বাড়িতে আটকে পড়া মানুষকে বাঁচাবার জন্য কে ঢুকবে তারই প্রতিযোগিতা করে তিন রোবট নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি চালিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেল! অথচ বাড়ির লোকজন আগুনের আঁচ টের পেয়ে পালিয়ে গেছে বহু আগেই!
যাই হোক, অফিসে বসে সারাদিন অল্পবিস্তর কিছু কাজ থাকে। কিছু চেকিং, কিছু রিপোর্ট পাঠানো। আমাকে যেমন লিখতে হয়, আমার মন কেমন আছে। আমি কী ভাবছি। কাল রাতে কী স্বপ্ন দেখেছি। নতুন কোনো কবিতা বা গল্প লিখলে সেটাও পাঠাতে হবে।
ইয়েশিন বোধহয় টেকনিক্যাল কিছু রিপোর্ট লেখে।
আর এরিক কী লেখে, সেটা আমাদের বলে না। জিজ্ঞেস করলে হাসে। আমরাও অবশ্য এ নিয়ে তাকে বেশি একটা ঘাঁটাই না।
যাই হোক, সকালবেলা এরিকের ঘুষের গল্প শুনতে শুনতে আমরা গলা ফাটিয়ে হাসছিলাম।
এরিক তার স্পাইক করা চুল সোজা করতে করতে বলল, আমি তো ছিলাম জেলে। আরো প্রায় পাঁচ বছর আমার মেয়াদ, শুনলাম ইউনিটাসে যাওয়ার জন্য লোক নেয়া হবে। ভাবলাম, চান্সটা কী করে বাগানো যায়... প্রথমেই জেলের প্রধান সেন্ট্রিকে দিলাম এক কার্টুন সিগারেট ঘুষ... সেই ব্যাটা আমাকে অসুস্থ দেখিয়ে জেল থেকে নিয়ে গেল হাসপাতালে। সেখানেও তো দারুণ পাহারা। ভাবছি কী করা যায়। তারপর হাসপাতালে আমার রুমে যে নার্স আসে, তার নাম সামান্থা। সামান্থাকে হাত করার জন্য বললাম, ডায়মন্ডের কানের দুলে তোমাকে ভারী সুন্দর দেখায়...
সামান্থা মেয়েটি বেশ গম্ভীর। সে বলল, থ্যাঙ্কস। কিন্তু এগুলো ডায়মন্ডের কানের দুল না!
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, বল কী! আমি তো ভেবেছিলাম...
--ডায়মন্ডের দুল কেনার সাধ্য আমার সারাজীবনেও হবে না!
তার কথা শুনে খানিকক্ষণ মন খারাপ ভাব করে বসে রইলাম। তারপর বললাম, আমার বউয়ের এক জোড়া ডায়মন্ডের কানের দুল আমার কাছে আছে। সে তো বেঁচে নেই, আমি যদি তোমাকে সেগুলো গিফট করতে চাই, তুমি কি মাইন্ড করবে?
সামান্থা এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল। অবাক গলায় বলল, কী বলছ?
--হ্যাঁ! অবাক হবার কিছু নেই! স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে ওগুলোর কোনো মূল্য আমার কাছে নেই। তুমি চাইলে নিতে পার। কিন্তু ডায়মন্ডের কানের দুল আমাকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। সেগুলো আমার বাসায় আছে। তুমি কি আমাকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারবে?
সামান্থা অস্বস্তিভরা গলায় বলল, তোমাকে বের হতে দেয়ার মতো সুযোগ আমার পক্ষে করে দেয়া সম্ভব না!
--কে বলে সম্ভব না? একমাত্র তোমার পক্ষেই সম্ভব!
এর ঠিক এক সপ্তা পরেই সামান্থা আমাকে বের হবার সুযোগ করে দিল। পেশেন্ট বাথরুমের জানলা টপকে বাইরে বেরোবার সময় শুধু সে আমার হাত চেপে ধরল। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই সামান্থা গম্ভীর গলায় বলল, এতগুলো মিথ্যে কথা না বললেও পারতে! তোমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি, তুমি কখনো বিয়ে কর নি, তোমার কোনো বউ মারাও যায় নি, ডায়মন্ডের কানের দুল তো পরের কথা!
আমি তখন কাঁচুমাচু মুখ করে কী যেন বলতে চেষ্টা করছি, সামান্থা মৃদু হেসে বলল, নো প্রবলেম... আই নো ইউ আর এ গুড ম্যান... কিন্তু এভাবে নিজেকে নষ্ট কোরো না...
আমি সামান্থার দিকে তাকালাম, সে চোখ নামিয়ে নিল। পলকের জন্য হলেও মনে হল, তার চোখ যেন একটু ভেজা ভেজা।
ইয়েশিন হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, এইভাবেই হাসপাতাল থেকে সটকে এলে?
আমি বললাম, কিন্তু এরিক, তুমি মেয়েটিকে পরে ডায়মন্ডের কানের দুল কিনে দিয়েছিলে তো!
এরিকের মুখে একটা বিষণœ ছায়া পড়ল। বলল, না। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার পর সব এত দ্রুত ঘটে গেল, চটপট আমাকে সিলেক্ট করে মামলা খালাস হাবিজাবি অনেক ঝামেলা করে ট্রেনিংয়ে ঢুকিয়ে তোমাদের সাথে পাচার করে দিল, ডায়মন্ডের কানের দুল তো দূরের কথা, সামান্থাকে একটু ধন্যবাদ জানাতেও যেতে পারি নি!
একটু থেমে এরিক বলল, তবে আমি ঠিক করে রেখেছি, আবার যখন পৃথিবীতে যাব...
এরিকের কথা শেষ হবার আগেই প্রচণ্ড একটা শব্দে কেঁপে উঠল সারাটা অফিস! ঝনঝন করে আমাদের অফিসের জানালার সবগুলো গ্লাস ভেঙ্গে পড়ল! ধারেকাছেই কোনো একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছে!
আমরা তিনজনই লাফ দিয়ে মেঝের ওপর শুয়ে পড়েছি। ইয়েশিন ফিসফিস করে বলল, কী হয়েছে?
তখনই ট্যার-র-র-র করে আগ্নেয়াস্ত্রের আওয়াজ শোনা গেল আর আমাদের অফিসরুমের বিভিন্ন জিনিস ছিটকে পড়ে ভেঙ্গেচুরে যেতে লাগল!
এরিক ঠাণ্ডা গলায় বলল, একদম চুপচাপ শুয়ে থাক। নড়বে না, বা ভয়ে দৌড় দেবে না...
আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম, আমাদেরকে লক্ষ্য করে ফায়ার করছে কারা? প্রতিরক্ষা রোবটরা কোথায়?
--প্রতিরক্ষা রোবটরাই গুলি করছে... এখানে অন্য কেউ আসবে কোথায়?
--প্রতিরক্ষা রোবটরা গুলি করছে? কী বলছ?
এরিক কোনো জবাব দিল না। ইয়েশিন দেখলাম থরথর করে কাঁপছে। আমার অবস্থাও প্রায় সেরকমই। ডান পাটা কোনো ইঞ্জিনের ডাণ্ডার মতো থর থর করে কাঁপছে। থামাতে চেষ্টা করে দেখলাম, থামে না। একমাত্র এরিকই সবচে ঠাণ্ডা। শুয়ে শুয়েই সে যোগাযোগের মডিউলটা দিয়ে প্রতিরক্ষা রোবটদের প্রধান টিরি-এর সাথে যোগাযোগ করল।
--টিরি, কী ব্যাপার!
ওপাশে টিরি কী কী বলল শুনলাম না। এরিক শুধু বলল, ও আচ্ছা! ঠিক আছে! এসো, আমরা অফিসেই আছি!
তারপর মডিউল বন্ধ করে দিয়ে এরিক আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ভয় খাওয়া গলায় বললাম, কী ব্যাপার?
--ব্যাপার তো খুবই ঘোরালো! এরকম একটা আভাস কদিন থেকেই পাচ্ছিলাম। বিশ্বমানবতাবাদি লরেন সরকারের পতন ঘটেছে! আজকে সকালেই ড্রাগ কিং ভিগারাসের দল সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে! গ্যালাকটিক হাই কমান্ড ব্যুরো এখন ওদের দখলে!
--বল কী!
এরিক বলল, হ্যাঁ। নির্ঘাৎ প্রচুর মানুষ মারা গেছে শহরগুলোতে! টিরি জানাল, প্রধানমন্ত্রী লরেন পলাতক। ভিগারাসের দল তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর সবচে বিপদের ব্যাপার...
এরিক থেমে গেল। আমরা চোখ তুলে তাকাতে এরিক বলল, টিরি আর অন্যান্য রোবটরা এখন আর আমাদের আন্ডারে নেই। এরা গ্যালাকটিক হাই কমান্ডের কথামতো কাজ করছে এখন। এদেরকে বলা হয়েছে, আমাদের নির্দেশ মানা যাবে না। আমাদের গ্রেফতার করে রাখতে হবে, প্রতিবাদ করলে মেরে ফেলতে। সাতজন রোবটের একজন রোবট সম্ভবত যুক্তি মেলাতে না পেরে আপত্তি তুলেছিল, তাকেই লেসার মেরে এরা উড়িয়ে দিয়েছে খানিকক্ষণ আগে!
আমরা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। কী সুন্দর ছিল সকালটা। মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিবেশ পাল্টে গেল!
ইয়েশিন ঢোক গিলে বলল, এবার আসছে আমাদের গ্রেফতার করতে?
--হ্যাঁ, হাঁটু গেড়ে মাথায় দু-হাত দিয়ে রাখ! আর... কোনো আপত্তি করতে যেও না!
আমি আর ইয়েশিন ধড়মড় করে উঠে হাঁটু গেড়ে বসে মাথার পিছনে দুই হাত রাখলাম।
উঠতে উঠতেই আমরা শুনতে পেলাম অফিসের করিডোরে রোবটদের পায়ের ধাতব আওয়াজ। এই আওয়াজ প্রতিদিনই শুনি, কিন্তু আজকে বড় অপরিচিত লাগল!

২.
টিরি ধাতব নিস্পৃহ গলায় বলল, মহামান্য ইউনিটাসবাসী অভিযাত্রী মানবশ্রেষ্ঠ, পরবর্তি কমান্ড না পাওয়া পর্যন্ত আপনাদের একটি ঘরে বন্দি থাকতে হবে!
ছয়টি রোবট আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এই গাধা রোবটগুলো আমাদের আশপাশে কতদিন ঘুরে বেরিয়েছে, তখন এদের তত ভয়ঙ্কর লাগে নি। আজকে একেকটাকে মনে হচ্ছে স্বয়ং মৃত্যু!
এরিক বলল, ঠিক আছে। আমরা আপত্তি করছি না। টিরি, তুমি গ্যালাকটিক হাই কমান্ডকে জানাও আমরা প্রধানমন্ত্রী ভিগারাসকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা তার আদেশ পালন করতে পারলে ধন্য বোধ করব!
টিরি বলল, ঠিক আছে, আমি জানাব। মিকা, তুমি এদেরকে স্টোররুমে নিয়ে যাও। দরজা লক করে পাহারায় থাক।
এরিক বলল, এক মিনিট টিরি। তুমি তো জানো, ইউনিটাসে অনেকদিন থেকেই আমরা কৃত্রিমভাবে হাই ক্লাস প্ল্যাটিনাম বানাবার পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছি। আমরা দেখেছি যে, এটি সম্ভব এবং পৃথিবীতে বসেই তা সম্ভব! আমাদের এই গবেষণার ফলাফল আমরা আমাদের মাননীয় নতুন প্রধানমন্ত্রী ভিগারাসকে উপহার হিসেবে পাঠাতে চাই। তুমি কি এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সাহায্য করতে পার?
টিরি খানিকক্ষণ কী যেন চিন্তা করল। তারপর বলল, আমি হাই কমান্ডের সঙ্গে কথা বলে দেখি।
এরিক বলল, ঠিক আছে। আমাকে জানিও।
তারপর ঘুরতে গিয়ে আবার ফিরে বলল, টিরি, তোমাকে আমি খুব কাছের মানুষ মনে করি। একটা নির্জন উপগ্রহে আমরা কাছাকাছি বাস করি। আমি চাই, উপহারটি যেন তোমার হাত দিয়েই মাননীয় ভিগারাসের কাছে পৌঁছায়। তোমাকে একটি উঁচু পোস্টে দেখতে চাই আমি! বিনিময়ে আমরা শুধু মুক্তি চাই...
বলেই এরিক হাঁটতে শুরু করল। এরিকের পেছন পেছন আমরাও।
শুনতে পেলাম, টিরি ফিসফিস করে বলছে, উঁচু পোস্ট! উঁচু পোস্ট! সম্মান! গর্ব!

৩.
স্টোররুমে বসে একবেলায়ই আমরা তিনটা বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরিক খিকখিক করে হাসতে হাসতে বলল, তিনটা খতম!
একটু পরেই টিরি এসে হাজির হল স্টোররুমে। তার একটা হাত উড়ে গেছে। সেখানে তখনো ধোঁয়া উড়ছে, হালকা হালকা স্পার্ক করছে। সে এসেই এরিককে বলল, তোমার প্রজেক্টটি কোথায়?
এরিক সাথে সাথেই তার পামটপটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এখানে!
--এখানেই সব আছে?
--হ্যাঁ, এরিক’স ম্যাটার ফোল্ডার-এ ঢুকে প্ল্যাটিনাম প্রজেক্ট নামের ফোল্ডারে ঢুকলেই পাবে! তোমার খোঁজার ঝামেলা করতে হবে না। পামটপটি হাই কমান্ডের হাতে দিলেই হবে!
--ঠিক আছে!
এরিক বলল, শিহা, রুকি আর মিশিকে দেখছি না!
টিরি পামটপটি হাতে নিয়ে রোবটসুলভ নির্বিকার গলায় বলল, ওরাও উঁচু পোস্ট পেতে চায়! তাই ওদের কপোট্রন গুঁড়িয়ে দিয়েছি!
--খুবই দুঃখের কথা। ওদের পেটে এত হিংসা কেন? উঁচু পদ তোমারই প্রাপ্য! ...তাহলে টিরি, কখন রওনা দিচ্ছ?
--এখনই! পিরি আর মিকা আপনাদের কাছে থাকবে! আপনাদের খাবারদাবার আর সব প্রয়োজন মেটাবে।
--আমরা কী এখনো বন্দি?
--হ্যাঁ। পরবর্তি কমান্ড না পাওয়া পর্যন্ত!
টিরি ঘুরে রওনা হতেই এরিক আবার ডাকল, টিরি!
টিরি ঘুরে তাকাল, হ্যাঁ, বলুন!
--গ্যালাকটিক কমান্ডের ওরা কী বলল?
--উনারা মাননীয় ভিগারাসের আনুগত্য স্বীকার করায় আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এরিক একটু অস্থির গলায় বলল, সেটা নয়। আমাদের প্ল্যাটিনাম প্রজেক্ট নিয়ে তারা কী বলল?
--উনারা আগ্রহ প্রকাশ করে সেটা দেখতে চেয়েছেন। আর আপনাকে তো বলেছিই যে, আমি রওনা হচ্ছি।
টিরি চলে যেতেই এরিক একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে ফিসফিস করে বলল, বাঁচিয়ে দিলাম! পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দিলাম!
আমি আর ইয়েশিন চোখ কপালে তুলে বললাম, মানে?
--তোমরা এই ইউনিটাসে কেন আছ তা তো জানো। আর আমি আছি কীজন্যে বল তো?
--কেন?
এরিক একটু হেসে বলল, পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাবার জন্য যেকোনো শয়তানি প্ল্যান ফাঁদতে! আমি হচ্ছি প্রবলেম ম্যানেজমেন্ট অফিসার! ...টিরির কাছে আমার যে পামটপটি পাঠিয়েছি, সেটা একটা দুর্দান্ত সফটওয়্যার এক্সপ্লোসিভ! আমি কোড ফিক্স করে দিয়েছি। পৃথিবীতে গ্যালাকটিক স্টেশনে নামামাত্র বোমাটি ফাটবে! আর এর মানে বুঝছই তো! ভিগারাস আর তার দলবলসহ পুরো হাই কমান্ডই উড়ে যাবে!
--আর সেখানকার মানুষজন!
--মানুষ কোথায় পেলে? এরিক বলল, সেখানে তো এখন সব শয়তানের বাচ্চায় ভর্তি! ভিগারাস আর তার সব সাঙ্গোপাঙ্গো!
--হাই কমান্ডের লোকজন টিরিকে বিশ্বাস করবে কেন? সে কী নিয়ে এসেছে চেক করবে না?
--করবে না! কারণ এই পামটপের প্ল্যান পৃথিবী ছাড়ার সময়ই করা হয়েছে। গ্যালাকটিক স্টেশনে আমাদের এখানকার কার্যক্রমের বিবরণীতে এমন তথ্য আছে যে, আমরা এখানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে উচ্চ মানের প্ল্যাটিনাম তৈরির গবেষণা করছি! কাজেই কেউ অবিশ্বাস করবে না!
ইয়েশিন বলল, কী সাঙ্ঘাতিক! আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না! এবারও একটা রোবটকে ঘুষ দিয়ে তুমি পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দিলে?
আমি বললাম, আমারও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না!
এরিক হাসল। তার সেই চিরপরিচিত ফিচেল মার্কা হাসি।
ইয়েশিন বলল, এই দুই মগা রোবটকে কোনো ঘুষ দিয়ে এই রুম থেকে বের হওয়া যায় না?
এরিক হেসে বলল, আমি ঘুষ নষ্ট করার মানুষ না। কাল সকালের পর এমনিতেই বেরোতে পারব!
ইয়েশিন আর আমি চরম অবিশ্বাসের চোখে এরিকের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এরই মধ্যে দুনিয়া কাঁপানো আওয়াজ শুনতে পেলাম স্পেসশিপের। টিরি সেই পামটপ নিয়ে রওনা হচ্ছে পৃথিবীর দিকে। এরিক যা বলছে, আসলেই কি তা সত্যি হবে?

৪.
পরদিন সকালেই ধড়াম স্টোররুমের দরজা খুলে গেল!
আমি আর ইয়েশিন ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখি দরজায় মিকা আর পিরি দাঁড়িয়ে। আমরা কিছু বলার আগেই মিকা আর পিরি বলল, শুভসকাল! গ্যালাকটিক হাই কমান্ড থেকে নির্দেশ এসেছে আপনাদের মুক্ত করার এবং আপনাদের পরবর্তি সমস্ত নির্দেশ মেনে চলার। আর স্যার এরিক, আপনার যোগাযোগ মডিউলটি নিয়ে এসেছি... প্রধানমন্ত্রী লরেন আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চান!
ইয়েশিন আর আমি হুর রে বলে চেঁচিয়ে উঠলাম লাগলাম গলা ফাটিয়ে, তারপর দুই হাত ধরাধরি করে নাচতে লাগলাম স্কুলের বাচ্চাদের মতো, যোগাযোগ মডিউলের ঐপাশে প্রধানমন্ত্রী লরেন অপেক্ষা করে আছেন জেনেও। ইয়েশিন বিশ্রি খ্যা-খ্যা শব্দে হাসতে লাগল আর আমার রাবার সোলের ঘষায় মসৃণ মেঝেতে জঘন্য একটা পচাত্ পচাত্ শব্দ হতে থাকল!
আমাদের হইহল্লার মধ্যেই এরিক কথা বলতে লাগল, ধন্যবাদ স্যার। অসংখ্য ধন্যবাদ। লজ্জা দেবেন না, আমি এত প্রশংসার যোগ্য নই... না না, খেতাব-পদবি ওসবে আমি লজ্জা পাই... জ্বি জ্বি... তবে অভয় দিলে বলি... আমি পৃথিবীতে ফিরতে চাই, জ্বি, বিয়ে-থার বয়স তো হল... পাত্রী? পাত্রী ঠিক আছে, হিলথাইজার হাসপাতালের নার্স সামান্থা... জ্বি জ্বি... পাহাড়ের ওপর একটা ছোট্ট বাড়ি হলেই আমাদের চলবে... এর বেশি আবার না... হয়ে যাবে? হা হা হা, আপনি বিশাল হৃদয়ের মানুষ... খুব ভালো হয় যদি সামান্থাকে বাড়িটা দু-চারদিনের মধ্যেই বুঝিয়ে দেয়া যায়... তবে ও যেন কিছুতেই না জানে কেন... জ্বি জ্বি জ্বি, সারপ্রাইজ আর কি! লজ্জা লাগছে আপনাকে এসব ছোটখাট জিনিসের কথা বলে... বেয়াদবি নেবেন না... হে হে হে! জ্বি, আমি এসেই দেখা করব আপনার সাথে...
যোগাযোগ মডিউলে কথা বলা শেষ করে উজ্জ্বল চোখে এরিক তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে। ইয়েশিন হো হো করে হেসে বলল, বাড়ি আর বউ দুটোই আদায় করে ফেললে!
আমি কোনো কথা বললাম না। এরিকের হাসিমুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছিল। আর কয়দিন পর ও আমাদের এই ইউনিটাসে থাকছে না জেনেও।


মন্তব্য

সাইফ এর ছবি

বস, অসাধারণ, টাশকি লাইগা গেলামগা উত্তম জাঝা!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

সত্যি? কী কন?
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনি তো অসাধারণ প্রতিভা! এমন গল্প, তায় এমন ছবি! খুব ভালো লাগলো পড়ে।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আরে না ভাই, প্রতিভা তো আপনি! আপনার লেখা আর আঁকার মুগ্ধ পাঠক এবং দর্শক আমি, আপনার ভূতের গল্প পড়ে তো দারুণ লেগেছে... চমৎকার পরিশীলিত লেখা...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

এনকিদু এর ছবি

এই জন্যই আমি খারাপ লোক হইতাম চাই ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রায়হান আবীর এর ছবি

প্রথমে ভাবছিলাম উত্তরাধুনিক কবি হবো কিন্তু এখন কদু ভাইয়ের মতো আমিও এখন খ্রাপ লোক হইতে চাই। দেঁতো হাসি

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

তরা দুইটাই খ্রাপ, এল্লাইগ্যাই তগোরে আমি হিরু মানি... চোখ টিপি
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

গল্পটা পড়ে আমিও ইয়েশিনের মত বিশ্রি খ্যা-খ্যা শব্দে হাসতে লাগলাম

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হো হো হো খ্যা খ্যা খ্যা খ্যা...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ বললেও আসলে কম বলা হয়।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

দুরু! কী কন!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

দ্রোহী এর ছবি

ভাগ্য ভালো আমি আগে থেকেই খুব খ্রাপ লোক!

মৃদুলদা, আপনে ডঃ জাফর ইকবালের ভাত মারবেন।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

হ, আপনার মতো খ্রাপ লোকই তো চাই! চাইরদিকে এত ভালো লোক যে মেজাজ খারাপ লাগে মাঝেমধ্যে!
জাফর ইকবালের ভাত? আরে নাঃ!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অনিকেত এর ছবি

মৃদুল ভাই,
আপনার তুলনা নাই

যা লিখেছেন বস---ঈর্ষায় আমার চোখ ছোট ছোট হয়ে এল। কি করে এমন ভাবে ছড়া,গল্প,ছবি---সব শাখাতেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান??

আপনি আমার কাছে এক অমীমাংসিত রহস্য হয়ে রইলেন...।!!!

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

আপনে এই কথা কন? আপনার মতো অকপট ভাষায় জীবনের কাহিনী শোনানোর সাধ্য আমার জীবনেও হবে না!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তুলিরেখা এর ছবি

খুব ভালো লাগলো, বহুকাল পরে এমন সুন্দর একটা কল্পবিজ্ঞান পড়লাম। ছোটোবেলার সেই কল্পবিজ্ঞান সংখ্যা মনে পড়ে গেল। সেই "ফিরে এসো", "দ্বিতীয় পৃথিবী", আরেকটা গল্পে সেই অজানা গ্রহে নেমে পাঁচজন বিপদে পড়ে, ঠিক হয় তাস তুলে লটারি হবে- সবচেয়ে কম দামের তাস যে তুলবে সে প্রাণ দিয়ে অন্যদের বাঁচাবে, দলপতি কায়দা করে নিজেই হেরে বেরিয়ে পড়ল যদিও সে বেশীদামের তাস তুলেছিল। কিন্তু দলের ছেলেমেয়েরা তার প্রাণপ্রিয়, তাদের কাউকে সে হারাতে রাজি নয়। বাকীদের তত্‌পরতায় তার প্রাণও অবশ্য বাঁচলো। সব মনে পড়িয়ে দিলো আপনার এই অপূর্ব গল্প!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ঐ গল্পটার কথা মনে আছে। আনন্দমেলার কোনো এক বেশ পুরনো শারদীয় সংখ্যায় ছিল গল্পটা এবং দারুণ গল্প। আমার মনে বেশ ভালোই গেঁথে আছে সেটার কাহিনী। আপনারও সেই গল্প মনে আছে দেখে মজা লাগল। কী যেন নাম ছিল দলপতির... সম্ভবত ক্যাপ্টেন মিলিন্দ!
আপনি কল্পবিজ্ঞান বলছেন দেখে লজ্জা লাগল। আমি নামের জায়গায় কল্পবিজ্ঞান লিখতে গিয়ে শেষে অন্যমনস্ক অবস্থায় সায়েন্স ফিকশনই লিখে দিয়েছি। কমেন্ট শেষ করেই ওটা বদলে দিচ্ছি!
আর গল্পটা আপনার ভালো লেগেছে দেখে খুশি হলাম!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তুলিরেখা এর ছবি

আরে হ্যাঁ তো! ক্যাপ্টেন মিলিন্দ। কিছুতেই গল্পটার নাম মনে পড়ে না আমার। মন খারাপ
আর একটা বিদেশী গল্পের ছায়ায় লেখা এক অসাধারণ কাহিনি ছিল মনে আছে, মৃত্যুতালিকা। এক শত্রুগ্রহে আটকা পড়ে যাওয়া মানুষের দলের মধ্যে মাত্র অর্ধেককে রেসকিউ করতে পারা যাবে, তাদের তালিকা তৈরী করছে কম্পুটার, বাকীরা মৃত্যুতালিকায়। পাইলট রাও মেনে নিতে পারলো না, জোর করে উঠতে গিয়ে একজনকে মেরে নিজে সিকিউরিটির হাতে মরলো, একজন লোকের জায়গা খালি হলো, তার জায়গায় কে উদ্ধার হতে পারতো জানার জন্য দলপতি কম্পুকে রান করিয়ে দেখলো পাইলট রাও নামটা উঠে এলো! গল্পটা মনে আছে আপনার?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ধুসর গোধূলি এর ছবি
মৃদুল আহমেদ এর ছবি

নতুন একজন চাকরি নিয়া যাবে। আপনেও যাইতে পারেন। তয় সামান্থারে ঠিক খুইজা রাইখা যায়েন। আর আপনি যতদিন ইউনিটাসে থাকবেন, তদ্দিন সামান্থার খোঁজখবর নেয়ার জন্য সচলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য টিরি, মিকি-রা তো আছেই! চোখ টিপি
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

মামুন হক এর ছবি

রাতেই পড়ছি, কিন্তু পড়ে এমুন টাশকি খাইলাম যে কমেন্ট দেয়া হইলনা। এখনো টাশকি খেয়ে আছি ...দেখি টাশকির ঘোর কাটুক তারপর কমেন্টাইব।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

টাশকি কী রে? সজু-র পরের ভার্সন নাকি? তোর তো এখনো ঘোর কাটল না!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

রণদীপম বসু এর ছবি

লা-জওয়াব !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হাই মৃদূল!
সমস্ত কৃতিত্বই আসলে তোমার।
তোমাকে অচীরেই সচল গ্রহায়তনের নিয়মিত সভাকবি, সভাগল্পকার আর সভাচিত্রকরের পদবী প্রদান করা হলো।

কাল থেকে পুরোনো অফিস ছেড়ে এখানে অফিস করা শুরু করো।
নতুন বাসাও ঠিক করা হয়েছে, তোমার অভিরুচি অনুসারে আসবাব ভরে নিও। এইসকল বিষয়ে সচলায়তন নামের একটি বেসরকারী সংগঠন তোমাকে সর্বৈব সহায়তা দেবে।

ইতি,
প্রধানমন্ত্রী লরেন।

রেনেট এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

থ্যাঙ্কিউ স্যার! তো... বাসায় গেলে সামান্থাকে দেখতে পাব তো? চোখ টিপি
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

রেনেট এর ছবি

চমৎকার গল্প! আগামী বইমেলায় একটা সায়েন্স ফিকশন বই পাচ্ছি তাহলে?
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আজকাল সচলায়তনে আসা হয়না, নিয়মিত পড়াও হয়না। আপনার লেখা সব সময়েই পড়তে চেষ্টা করি। এটি এক কথায় দুর্দান্ত হয়েছে। ভাল লেগেছে খুব।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্পর্শ এর ছবি

বাহ্‌! দারুণ লাগলো। এরকম আরো চাই। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

খেকশিয়াল এর ছবি

অসাধারণ লেখছেন অসাধারণ! হেভী মজা পাইলাম! আরো চাই!

------------------------------
'..দ্রিমু য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ভুতুম এর ছবি

চমেতকার হইছে। উত্তম জাঝা!

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

তানবীরা এর ছবি

এদের বুদ্ধিবৃত্তি অতি নিম্ন পর্যায়ের।

বেশ একটা হুমায়ূন আহমেদ টোন আছে পুরো গল্পটায়, নেতিবাচক বলছি না কিন্তু মৃদ্যুলদা ঃ)। মজার ছিল।

---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।