১৬ ফেব্রুয়ারি ও একজন নিষ্ঠুর মানুষ

মৃদুল আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন মৃদুল আহমেদ (তারিখ: রবি, ১৬/০২/২০১৪ - ১১:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাপলুডু খেলায় একটা মইয়ের অপশন আছে। গুটি সেখানে পড়ামাত্র ধাঁ ধাঁ করে ওপরে উঠে যায়। আমার বয়স যখন আঠারো, তখন আমার জীবনের গুটি সেরকম একটা মইয়ের ঘরে গিয়ে পড়ল। আমার বয়স ধাঁ ধাঁ করে আঠারো থেকে আটত্রিশ হয়ে গেল!
চার ভাইবোনের মধ্যে আমি ছিলাম সবচে ছোট, হয়ে গেলাম সবার চেয়ে বড়!
ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে শুক্রবার সকালে ধুড়ুম ধাড়ুম করে ঘর থেকে বেরোচ্ছিলাম আমি। ভীষণ ব্যস্ত। আমার এক বন্ধুর বাবার প্রোগ্রাম প্রেসক্লাবে। আমি সেখানে তবলা বাদক। বনগাঁয়ে শেয়াল রাজার মতোই তবলাবাদক হিসেবে আমার সেখানে বিশেষ কদর। গর্বে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। নাস্তা না খেয়েই বেরোচ্ছি, মা পথ আটকালেন।
--কিছু না খেয়ে খালি পেটে এই সাতসকালে কোথায় যাচ্ছিস?
বললাম, মা আমার এখন মরারও সময় নাই! আমার এখনই যেতে হবে, ঐখানে গিয়ে স্টেজফেজ সব চেক করতে হবে, হারমনি কোথায় বসবে, তবলা কোথায়... ইত্যাদি ইত্যাদি!
মা ঠাণ্ডা গলায় সংক্ষেপে বললেন, তিনি মরার পরে আমি যা মন চায় তা করতে পারি, কিন্তু এই মুহূর্তে একটা ডিমভাজা অন্তত না খেয়ে গেলে আমার কপালে যথেষ্ট দুঃখ আছে!
মা এমনিতে ঠাণ্ডা সুস্থির ভালোমানুষ, খেপে গেলে খবর আছে। একজন প্রতিশ্রুতিশীল সদ্য যশপ্রাপ্ত তবলাবাদক হয়েও তাই আমি মাথা নত করতে বাধ্য হলাম। ভালোমানুষের মতো একটা ডিমভাজা আর ঠাণ্ডা এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে গলায় ঢেলেই দৌড়!
আমার মায়ের সাথে সেই আমার শেষ দেখা।
ভালো করে বললে বলা যায়, আমি আমার মাকে এরপর আরো একটু দেখার সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু মা আর পান নি।
সেদিন সন্ধ্যায় তবলা বাজিয়ে, করতালি মাথায় নিয়ে, ফুরফুরে মনে বাসায় ফিরেই দেখি মা বিছানায় শুয়ে ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকছেন, বমি করেছেন বেশ কয়েকবার। বড় ভাইবোনেরা পাংশু মুখে ঘুর ঘুর করছে এদিকসেদিক। আমি ডাকলাম তাঁকে, মা এই যে আমি! দেখছেন আমাকে?
মা আমাকে দেখলেন না। আমার কথাও শুনতে পেলেন বলে মনে হল না। তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হল। ডাক্তার জানালেন, ব্রেন হেমারেজ। উচ্চ রক্ত চাপের এই রোগীনি নিয়মিত ওষুধ না খেয়ে খেয়ে তাঁর সর্বোচ্চ সর্বনাশটি ঘটিয়ে বসে আছেন! আমরা ভাইবোনরাও ছোট ছোট, বাবা হার্টের রোগী, ওষুধের নিয়ম তদারক করার সুযোগও আমরা খুব একটা পাই নি।
অপারেশন করা হল। মায়ের মাথার লম্বা লম্বা চুল কেটে ফেলে দেয়া হল। মাথায় সেলাই নিয়ে মা অচেতন চোখ বুঁজে শুয়ে আছেন বেডে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। কী হচ্ছে এসব? এগুলো কি সত্যি? আসলেই কি এমন কিছু ঘটছে? নাকি দুঃস্বপ্ন দেখছি? সবকিছু তো দিব্যি ঝকঝকে সুন্দর তাল মিলিয়ে চলছিল, আচমকা এ কী হল?
আমার আঠারো বছরের জীবনে এক বিশাল অভিজ্ঞতা। মায়ের একটু চেতনা ফিরল অল্প সময়ের জন্য। কথা বলতে পারলেন না। চোখ দিয়ে দরদরিয়ে পানি পড়তে লাগল। বাবা বললেন, উফফ, তুমি কাঁদছ কেন? আমরা সবাই আছি তো, এই যে তোমার কাছাকাছিই আছি!
বাবার কথাটা মিথ্যা হয়ে গেল কদিন পরেই। ঠিক এই তারিখেই, ফেব্রুয়ারির ১৬।
একটা ফোনকল এল হাসপাতাল থেকে, আপনারা আসুন একটু, রোগীর অবস্থা ভালো নয়, অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে!
আমরা সবাই ছুটে গেলাম। এখনো মনে আছে আমার। বেবিট্যাক্সি ছুটছে। আমি এক হাতে বেবিট্যাক্সির লোহার গ্রিল শক্ত করে ধরে রেখেছি, আরেক হাতে আমার বাবাকে। ছোটবেলায় বেবিট্যাক্সির ঠিক ঐ রডটাই আমি ধরে আমি শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতাম মটরসাইকেলের হ্যান্ডেলের মতো। ভান করতাম আমিই চালাচ্ছি বেবিট্যাক্সিটা। কদিন আগেরই বা কথা সেটা! এর মধ্যে এতকিছু বদলে গেল?
আমার বড় বোন মায়ের পাশেই ছিল। সে আমাদের দেখে দৌড়ে এল--মার অবস্থা খুব খারাপ। খুব ছটফট করছিল, ওরা মুখে অক্সিজেন দেয়ার পর এখন শান্ত আছে।
বেচারা বোকা মেয়েটা জানেও না তার মা আর নেই, দয়ার্দ্র ডাক্তার তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে রেখেছে!
সবাই কাঁদল। কিন্তু আমার চোখে খুব একটা পানি দেখে নি কেউ। আমি চট করে বড় হয়ে গেলাম। মনে হল, আমার বাবাকে বাঁচাতে হবে। হার্টের রোগী এই মানুষ দুঃখেকষ্টে যেন শেষ না হয়ে যায়। আমার ভাইবোনদের তো আমাকেই দেখতে হবে। মা-ছাড়া হয়ে এরা যেন অযত্নে না পড়ে। আমি অনেক বড় হয়ে গেলাম, ভীষণ বড়। মায়ের শেষকৃত্যের আয়োজনে ছোটাছুটি করতে লাগলাম, ভাইবোনদের ধমকাতে লাগলাম বাবার সামনে তারা যেন বেশি কান্না না করে! আমার লৌহকঠিন মন দেখে আত্মীয়স্বজনরা বিস্মিত হল, আমি নিজেও অবাক হলাম। মায়ের জন্য আমার তত শোক হচ্ছে না, আমার শুধু মনে হচ্ছে, বাঁচাতে হবে, আমার বাবাকে বাঁচাতে হবে! আমার ভাইবোনদের ঠিকমতো দেখেশুনে রাখতে হবে!
হায়! তখনও বুঝি নি মৃত্যুশোক নেয়ার মতো বোঝার মতো বয়স আসলে তখন আমার হয় নি। আমি জানতাম না, মৃত্যু আসলে একদিন দুদিনের বিষয় না, বাবামায়ের মৃত্যু আসলে সারাজীবনের ক্ষতি, সেই মৃত্যু সন্তানকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দিয়ে যায়।
আস্তে আস্তে দিন কেটে যেতে লাগল। সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠতে শুরু করল। ঘরে হাসি ফিরে এল, টিভি চলতে শুরু করল, সিনেমা-নাটক-মজার অনুষ্ঠানের আওয়াজে ঘর গমগম করতে লাগল।
আর আমি বোবা বিস্ময়ে আবিষ্কার করতে শুরু করলাম, আমার মা আর ফিরে আসবে না। কোনোদিন না। সবাই যখন সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে গেল, আমি তখন সবাইকে লুকিয়ে বালিশে মুখ চেপে হাউমাউ করে কেঁদে চুপচাপ চোখ মুছে স্বাভাবিক মুখ করে এসে বসতাম। জানি না কেউ টের পেত কিনা।
এরপর বিশ বছর কেটে গেছে, কোনোদিন আমি আমার মায়ের ছবি হাতে নিয়ে দেখি নি। অ্যালবাম ওল্টাতে গিয়ে আচমকা এসে গেলে চট করে পাতা উল্টে ফেলেছি।
ব্যাপারটা অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। আমি নিজেও ভেবেছি, কেন আমি এমন করি? আসলে আমি একজন অসহায়, অতি দুর্বল মানুষ! ক্ষত শুকোলেই তবে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা যায়, যে ক্ষত কাঁচাই থেকে যায় সারাজীবন, ব্যান্ডেজের গজ কাপড় তুলে তা দেখার সাহস কজনের আছে?
মায়ের কথা মনে হলেই নিজের ভয় আর অসহায়ত্বের কথা ভুলে যাবার জন্য আমি একটা স্বপ্নের কথা মনে করার চেষ্টা করি। মায়ের মৃত্যুর বেশ কিছুদিন পর স্বপ্নটা আমি দেখেছিলাম। একটা অজানা অচেনা স্টেশন থেকে আমি ট্রেনে চেপেছি, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে উদাস তাকিয়ে আছি। লোকজন হাত নাড়ছে প্রিয়জনদের বিদায় দিতে, কেউ হাঁটছে, কেউ বসে আছে, আচমকা এদের মধ্যে দেখি আমার মা দাঁড়িয়ে আছেন! হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি দেখতে পাচ্ছি তাঁকে স্পষ্ট, ঐ তো মায়ের পরিচিত শাড়িটা, মায়ের মুখে রোদ এসে পড়েছে, মা মৃদু মৃদু হাসছেন, আমি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি তাঁর দিকে, কী জীবন্ত কী আশ্চর্য, সত্যিই তো মা!
মা হাসছেন, আমি চুপচাপ একইসাথে বেদনা আর আনন্দভরা চোখে তাকিয়ে আছি। আমি জানি, ব্যস্ত হয়ে ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা করে লাভ নেই। ফিরে গেলে তার দেখা কিছুতেই পাব না। মা স্রেফ এক ঝলকের জন্য দেখা দিলেন, তাঁর মুখে বরাভয়ের হাসি। শুধু বলে গেলেন, আছি! আমি তো তোর আশেপাশেই আছি! ভয় কী রে ব্যাটা?
আমি চোখ বুঁজে মনে মনে স্বপ্নটা দেখতে থাকি...


মন্তব্য

চরম উদাস এর ছবি

অনেক চিন্তা করেও কিছুকিছু লেখায় মন্তব্য করার মতো কোন ভাষা খুঁজে পাওয়া যায়না।

আশালতা এর ছবি

কিছু না-ই বলি বরং।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অদ্ভুত অনুভূতি হলো। আবারো অনুভব করলাম বাবা-মা এক বিশাল রহমত (ব্লেসিং)। তাদের জন্য সবসময় দোয়া করবেন।

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

সাড়ে ৪ বছর মা বাবা কে দেখি না। মনটা আদ্র হয়ে গেল।
আর কিছু বলার মত ভাষা পাচ্ছি না।

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কিছু কিছু লেখায় বলার মতন কোন ভাষা থাকেনা...........................

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ছোটবেলায় আমিও বাবাকে হারিয়েছি, আমার অভিজ্ঞতাও এমন কষ্ট মেশানো চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসের মতো। মন খারাপ

মাসুদ সজীব

মন মাঝি এর ছবি

কিছু কিছু বিষয়ে মিল খুঁজে পেলাম।

কোনোদিন আমি আমার মায়ের ছবি হাতে নিয়ে দেখি নি। অ্যালবাম ওল্টাতে গিয়ে আচমকা এসে গেলে চট করে পাতা উল্টে ফেলেছি। ব্যাপারটা অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। আমি নিজেও ভেবেছি, কেন আমি এমন করি?

আমারও কিন্তু অনেকটা এরকমই হয়। অনেকেই দেখি পরলোকগত বাবা-মা'র ছবি এনলার্জ করে বাসার ড্রয়িং রুমের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখেন বা শোকেসে সাজিয়ে রাখেন। এমনকি আমার ভাইয়ের বাসাতেও আছে। কিন্তু আমি পারিনি আজও।

আর হ্যাঁ, আপনার স্বপ্নটা খুবই অর্থময়। ভুলে যাওয়ার বিকল্প হিসেবে - কষ্টকে শক্তি আর বিচ্ছেদকে সম্পদ হিসেবে নিতে পারাটাও একটা পথ হতে পারে হয়তো।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

বাবা মা যে সন্তানের জন্যে কী তা যারা হারায় তাদের মতো করে কেউ হয়তো বোঝেনা।

আপনার জীবনের সেই কষ্টের কথা পড়তে পড়তে মনের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠলো।

খন্দকার আলমগীর হোসেন এর ছবি

অনেকে বলে, বড় হলে আর হারিয়ে যাওয়া বাবা মাকে মনে পড়ে না। কেউ কেউ স্টাইল করে বলে, they lived their life । আমি একমত হতে পারিনা। এখনও নিমিষে দু'চোখ ছলোছল করে ওঠে, গলা বুঁজে আসে ভাবতে বসলে।

আপনার লেখাটা একদম হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

____________________________________________________________________
ইতিহাস পড়ি না, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশকে প্রতিদিন যেভাবে দেখেছি, সেটাই বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস।

এক লহমা এর ছবি

আশাদি'র মতই কিছু না-ই বলি বরং।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে। বাবা-মাকে নিয়ে কখনো কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না। বড় স্পর্শকাতর মনে হয়। পাছে কিছু ভেঙ্গে পড়ে। আজকে কী মনে করে লিখলাম মাকে নিয়ে। পরে দেখি ঠিক ঠিক বিশ বছর আগে এই দিনে মাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

যে কারণে সবার সাথে বসে এলবামে মায়ের ছবি আড় চোখে দেখেও পাতা উল্টে ফেলি, ঠিক সে কারণেই মা কে নিয়ে কিছু লিখলেও সবার সামনে সে লেখা সহজে নিয়ে আসতে পারিনা।

ক্ষত শুকোলেই তবে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা যায়, যে ক্ষত কাঁচাই থেকে যায় সারাজীবন, ব্যান্ডেজের গজ কাপড় তুলে তা দেখার সাহস কজনের আছে?

অনিকেত এর ছবি

কিচ্ছুটি বলার সাহস হল না আমার---
মাথা নীচু করে চোখে জল নিয়ে বসেছিলাম অনেক'খন---

স্পর্শ এর ছবি

মৃদুল ভাই, খুব ছুয়ে গেল লেখাটা।
আমরা পাশে আছি জানবেন…


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

শান্ত এর ছবি

লেখা পড়ে আমার বাবার কথা মনে পড়লো। দুই বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। হাসপাতালের বিছানায় সারারাত ব্যাথায় ছটফট করে ভোরের দিকে ঘুমালেন। উনার এক পাশে আমিও শুয়ে পড়লাম। বাবার পায়ের দিকে আমার কাকাও মাথা বিছানায় রাখলেন। সকাল সাতটার দিকে কাকার ডাকে ঘুম ভাঙলো। বাবার পালস পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর ডাক্তারকে ডাকা, ছুটোছুটি, হেন তেন মেশিন ইত্যাদি ইত্যদি করতে করতেই সকাল সোয়া সাতটার দিকে ডাক্তার ঘোষনা করলেন "সব শেষ"। আসলেই সব যেন শেষ হয়ে গেলো।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক এই মুহূর্তে আমার সামনে থাকলে আপনার মাথা-গলা জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে থাকতাম। যার গেছে কেবল সে-ই জানে তার কী গেছে। যাদের গেছে তাদের মধ্যে কোন বাক্য বিনিময়ের দরকার পড়ে না। চুপচাপ বসে থাকলেও পরস্পরের নিঃশব্দ আর্তনাদগুলো তারা শুনতে পায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হৃদয় ছুঁয়ে গেল! মা! মাগো!

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চোখের পানি মুছতে হল লেখা পড়ে শেষ করে।
প্রার্থনা থাকল আপনার মায়ের জন্য, সকল মায়ের জন্য, সকল বাবার জন্য।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কেন লেখেন এসব মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে। সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে দীর্ঘসময় ভালো থাকুন, এটাই কামনা।

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

Saif এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে কাদলাম।আমার বাবাকে খুব মিস করি।তাকে শেষ বার যখন দেখি -আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কাদছিলেন আর আমি বিদেশ পথযাএি ছেলে তার চোখ মুছে দিতে চেষটা করছিলাম।বাবা নে‌ই ২০০৮ সাল থেকে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনার লেখাটায় ঢুকতে চাচ্ছিলাম না ঠিক যে কারণে, সেটাই এখন ঘটছে। আমি জোরে জোরে চোখ ডলে ভান করছি যে কিছু হয় নাই, আমার মা যেন পাশের ঘর থেকে হুট করে চলে এসে দেখে না ফেলে আমাকে। ভালো থাকুন সব মা, সব বাবারা। এই হারানোটা থেকে দূরে থাকুক সন্তানেরা যতদিন পারা যায়।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

দুঃখ যতদিন সম্পদ, ততদিন ভালো থাকুন প্রিয় মৃদুল আহমেদ। এই স্বপ্ন আরো লক্ষবার ছুঁয়ে যাক আপনাকে।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

শুধু এইটুকু বলি - আপনার লেখাটা পড়ে হঠাৎই অফিসের বাথরুমে যাওয়াটা জরুরী দরকার হয়ে পড়লো। এই তো ক'মাস আগে মাতৃবিয়োগের বেদনার মধ্য দিয়ে আমার যেতে হয়েছে। আজো এই মানুষটার অনুপস্থিতিতে অভ্যস্ত হতে পারলাম না!

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার নিজেকে শক্ত আর সাহসী মনে হয় ভেবে যে, আমরা একই মানসিকতার অনেকগুলি মানুষ বহুদুরে বহুদুরে থেকেও একসাথে আছি।

মাহিন

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

চোখে পানি চলে আসলো! মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।