মৃত্যুও সুন্দর হতে পারে

শিক্ষানবিস এর ছবি
লিখেছেন শিক্ষানবিস (তারিখ: সোম, ১৫/০৯/২০০৮ - ৬:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মহাবিশ্বে বিনা কারণে কিছুই ঘটে না। কিন্তু কারণ কি ঘটনার আগে না পরে? বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বলে, প্রাকৃতিক নিয়মে সবকিছু ঘটে। এই প্রাকৃতিক নিয়মটাই যদি কারণ হয়, তাহলে তো বলতেই হয় কারণ আগে। কিন্তু মানবীয় তত্ত্ব (anthropic principle) কারণটাকে পরে নিয়ে যায়। এই তত্ত্ব বলে, মহাবিশ্বকে আমরা এরকম দেখি কারণ মহাবিশ্ব অন্যরকম হলে তা পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা থাকতাম না। সবকিছু মানবকেন্দ্রিক করে ফেলা আর কি। এই তত্ত্বের অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে বলা যায়, যেকোন ঘটনা ঘটে আমাদেরই দেখবার জন্য।

এরকম আত্মম্ভরিতা আমার পছন্দ না। কিন্তু এটা যেকোন সুন্দর জিনিস উপভোগে একটা নতুন মাত্রা যোগ করে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি দেখব বলে সে এতোটা সুন্দর হয়েছে, এই বোধ কোন কিছুকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
auto
কবির মধ্যে এরকম ভাব হরহামেশাই জেগে উঠে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এতোটা ভাবুক হয়ে উঠতে পারেন না। এজন্য অনেক বিজ্ঞানীই কবি ও কাব্যের অভাব অনুভব করেন। কয়েকদিন আগে কার্ল সেগান রচিত ও রবার্ট জেমেকিস পরিচালিত “কন্টাক্ট” সিনেমাটা দেখলাম। বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানের মাধ্যমে বহির্জাগতিক সভ্যতার সাথে যোগাযোগ হয়। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যিনি যান তিনি নতুন এক ছায়াপথের অদ্ভুত সৌন্দর্য্য দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। অস্ফুটে বলে উঠেন, “আমাকে না পাঠিয়ে একজন কবিকে পাঠানো উচিত ছিল”।
কারণ যা দেখেছে তা সে বিজ্ঞানের ভাষায় বর্ণনা করতে পারবে না। আজকে খবর পড়ে এই সিনেমার কথাই মনে হল। সিনেমার নায়িকাকে ঐ ছায়াপথের বদলে সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ নীহারিকার দৃষ্টিসীমায় দাড় করিয়ে দিলে, হয়ত সে নিজেই কবি হয়ে যেতো।

যে অদ্ভুত সুন্দর ঘটনার কথা বলার জন্য এতো লম্বা ভূমিকা ফাঁদলাম সে ঘটনার বিষয়বস্তু গ্রহ নীহারিকা। মানুষের মতই একটা তারার জীবন নানা নাটকীয় ঘটনায় ভরপুর। কিন্তু মানুষের জীবনের সাথে তার একটা মৌলিক পার্থক্য আছে। মানুষের মৃত্যু কখনও সুন্দর হয় না (অন্তত এখন পর্যন্ত হয়নি)। কিন্তু তারার মৃত্যু সুন্দর হতে পারে, শুধু সুন্দর না অদ্ভুত সুন্দর হতে পারে। গ্রহ নীহারিকাই এর অন্যতম সেরা উদাহরণ।

আজকের খবরে এই গ্রহ নীহারিকা নিয়ে যা পড়লাম তার সারমর্ম হচ্ছে, স্পেনের আলমেরিয়াতে অবস্থিত “Calar Alto Observatory”-র বিজ্ঞানীরা আমাদের ছায়াপথের পাঁচটি গ্রহ নীহারিকা পর্যবেক্ষণ করে দুটি নতুন আবিষ্কার উপহার দিয়েছেন। তাদের আবিষ্কার দুটি হচ্ছে:
১। গ্রহ নীহারিকার কেন্দ্রীয় তারা থেকে বাইরের দিকে যেতে থাকলে বর্ণবলয়ের (halo) অভ্যন্তরভাগে এসে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়
২। যে তারাগুলো গ্রহ নীহারিকায় পরিণত হয় তাদের বিবর্তনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভর হারানোর ইতিহাস জানা গেছে
এই আবিষ্কার দুটোর মর্মার্থ বোঝার জন্য প্রথমেই গ্রহ নীহারিকা এবং তার বর্ণবলয় কি তা বুঝে নেয়া প্রয়োজন।
auto

চন্দ্রশেখর সীমার কথা আমরা অনেকেই জানি। সূর্যের ভরের ১.৪ গুণ ভরকে চন্দ্রশেখর সীমা বলে। যেসব তারার ভর এর থেকে বেশী তারা মৃত্যুর সময় ভরবিশেষে অতিনবতারা (supernova) বা কৃষ্ণ বিবর হতে পারে। আর যাদের ভর এর থেকে কম তাদের মৃত্যু হয় শ্বেত বামনে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে। এদের অনেকেই আবার গ্রহ নীহারিকার সৃষ্টি করে। প্রক্রিয়াটা এরকম:
তারাগুলোর ভেতরে নিউক্লীয় সংযোজন (nuclear fusion) বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরাম হাউড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরী হতে থাকে। এই বিক্রিয়ায় যে শক্তি বিমুক্ত হয় তা-ই তারাকে অভিকর্ষের প্রভাবে নিজের উপর ধ্বসে পরা থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ বহির্মুখী অভিকর্ষ বল আর সংযোজন বিক্রিয়া থেকে আসা বল একে অপরের বিপরীতে ক্রিয়া করে ভারসাম্য রক্ষা করে।

বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে জ্বলার পর তারার কেন্দ্রের সব হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যায়। এতে অভিকর্ষ বল জয়ী হয়। ফলশ্রুতিতে তারাটির কেন্দ্র চুপসে যেতে থাকে, একই সাথে তাপমাত্রা বিপুল হারে বাড়তে থাকে। কেন্দ্রের অতি উচ্চ তাপমাত্রা বাইরের স্তরগুলোকে উত্তপ্ত করে তোলে। গ্যাসের ধর্ম অনুযায়ী তাপ পেয়ে বাইরের স্তরগুলো প্রসারিত হতে শুরু করে। এর ফলে তারার সামগ্রিক আয়তন অনেক বেড়ে যায়। এই দশাটিকেই লোহিত দানব বলে।
কেন্দ্রভাগের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন ১০০ মিলিয়ন কেলভিনে পৌঁছায় তখন সেখানে আবার নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়া শুরু হয়। তবে হাইড্রোজেন না, হিলিয়ামের সংযোজন ঘটে। সংযোজন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম থেকে কার্বন ও অক্সিজেন তৈরী হয়। এর থেকে যে শক্তি মুক্ত হয় তা অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে কেন্দ্রের সংকোচন থামিয়ে দেয়। এ সময় কেন্দ্র গঠিত হয় কার্বন ও অক্সিজেন দ্বারা, এর চারদিকে সংযোজন বিক্রিয়ায় রত হিলিয়ামের স্তর থাকে, তারও বাইরে সংযোজন বিক্রিয়ায় রত হাইড্রোজেনের স্তর থাকে। এ সময়ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে একে লোহিত দানব বলা যায়।

এই লোহিত দানবের হিলিয়াম যে সংযোজন বিক্রিয়া ঘটাচ্ছে তা তাপমাত্রার প্রতি খুব সংবেদনশীল। তাপমাত্রার মাত্র ২% বৃদ্ধিতে বিক্রিয়ার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। পুরো ব্যবস্থাটা খুব অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এমন সময় সামান্য তাপমাত্রার বৃদ্ধিতেই বিক্রিয়ার হার অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিমুক্ত শক্তিও বেড়ে যায়। কেন্দ্রের চারপাশের হিলিয়াম স্তরটা বিপুল হারে প্রসারিত হতে শুরু করে। প্রসারিত হতে গিয়ে আবার তার তাপমাত্রা কমে যায়, ফলশ্রুতিতে বিক্রিয়ার হারও কমে যায়। কিন্তু, এই প্রক্রিয়ায় যে প্রবল স্পন্দনের সৃষ্টি হয় তা তারার পুরো বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডলটাকে মহাকাশে ছুঁড়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এর ফলে তারার দুটি অংশ তৈরী হয়। কেন্দ্রের মৃতপ্রায় অংশটাকেই গ্রহ নীহারিকা বলা যায়, আর যে গ্যাসগুলোকে সে মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে তা অন্য অংশটি গঠন করে যাকে এক ধরণের নাক্ষত্রিক ঝড় বলা যেতে পারে।
auto
তারা থেকে আলগা হয়ে যাওয়া এই গ্যাসগুলো তারার চারদিকে মেঘের মত করে অবস্থান নেয়। যত বেশী গ্যাস মুক্ত হয় ততই তাদের স্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ভেতরের স্তরগুলোর তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশী থাকে। এভাবে অভ্যন্তরভাগের কোন না কোন স্তর ৩০,০০০ কেলভিন তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসে যায়। তারার কেন্দ্রভাগ থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি এই তাপমাত্রায় গ্যাসীয় স্তরের পরমাণুগুলোকে আয়নিত করে ফেলে। আয়নগুলো যখন তাদের হারানো ইলেকট্রন ফিরে পায় তখন ফোটন বিমুক্ত হয়। এই ফোটন মানেই আলো। এই ফোটনই আলো হিসেবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণেই তারার কেন্দ্রভাগের চারদিকে অবস্থিত গ্যাসীয় স্তরটা জ্বলজ্বল করতে থাকে। এই জ্বাজ্জ্বল্যমান স্তরকেই গ্রহ নীহারিকার বর্ণবলয় বলা হয়। এটাই তার সৌন্দর্য্যের উৎস।

এবার আবিষ্কার দুটো বুঝতে কোন অসুবিধাই হবে না।

প্রথম আবিষ্কারের বিষয় হল বর্ণবলয়ের অভ্যন্তরভাগের তাপমাত্রা। দেখা গেছে অভ্যন্তরভাগের তাপমাত্র খুব বেশী। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারার কেন্দ্রের চেয়েও বেশী। বিজ্ঞানীরা গ্রহ নীহারিকাগুলোর কেন্দ্রভাগ থেকে বর্ণবলয় পর্যন্ত তাপমাত্রার বিন্যাস কাঠামো প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে তিনটিতেই দেখা গেছে, বর্ণবলয়ের অভ্যন্তরভাগে এসে তাপমাত্রা হঠাৎ খুব বেড়ে যাচ্ছে। Calar Alto Observatory-র বিজ্ঞানী “সি স্যান্ডিন” এর মতে কেন্দ্র থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মির কারণে বর্ণবলয়ে যে আয়নিত অবস্থার সৃষ্টি হয় তার জন্যই হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে তা আবার স্বাভাবিকে নেমে আসে। এজন্যই এই বৃদ্ধিকে “ট্রানজিয়েন্ট” অবস্থা বলা যেতে পারে।

দ্বিতীয় আবিষ্কারের বিষয় ভর হারানোর ইতিহাস। গ্রহ নীহারিকার উৎপত্তি প্রক্রিয়াটাই এক ভর হারানোর ইতিহাস। কারণ যতই দিন যায় মূল তারাটি ততই ভর হারাতে থাকে। ততই গ্যাসীয় পদার্থগুলো মহাকাশে বিমুক্ত হতে থাকে। এই হারানোর বিষয়টাই সবচেয়ে রহস্যময়। তাত্ত্বিক সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু ব্যবহারিক অনেক কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না। বিশেষত ভর হারানোর ইতিহাসের শেষ অংশটা বিজ্ঞানীরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এই দোষ অবশ্য যন্ত্রের। এমনিতেই বর্ণবলয় খুব একটা দেখা যায় না, কারণ ১০,০০০ বছরের মধ্যে ভর হারানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। তার উপর চিরায়ত বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রগুলো সূক্ষ্ণভাবে বর্ণবলয় বিশ্লেষণ করতে পারে না। বর্ণবলয় থেকে যে ফোটন আসে সেটা বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করাটাই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য।

auto

এই উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেন। এর নাম “ইনটিগ্রেটে ফিল্ড স্পেকট্রোস্কোপি” বা “সমন্বিত ক্ষেত্র বর্ণালিবীক্ষণ”। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, আকাশের বিশাল এলাকা থেকে আসা বর্ণালি একসাথে বিশ্লেষণ করতে পারা। Calar Alto-তে পৃথিবীর অন্যতম সেরা “ইনটিগ্রেটে ফিল্ড স্পেকট্রোস্কোপি” যন্ত্র আছে যার নাম “Potsdam Multi-Aperture Spectrophotometer” বা PMAS। এই যন্ত্রকে একটা ৩.৫ মিটার দুরবিনের সাথে যুক্ত করেই Calar Alto-র বিজ্ঞানীরা অসাধ্য সাধন করেছেন। এর মাধ্যমেই পাঁচটি গ্রহ নীহারিকার দ্বিমাত্রিক গঠন নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা।

পর্যবেক্ষণকৃত নীহারিকা পাঁচটির নাম: Blue Snowball Nebula (NGC 7662), M2-2, IC 3568, Blinking Planetary Nebula (NGC 6826) এবং Owl Nebula (NGC 3587)। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই ভর হারানোর ইতিহাসের একেবারে শেষ পর্যায়ের কাহিনীগুলো আমরা জানতে পেরেছি। এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্যান্ডিন বলেন,

অন্যান্য প্রক্রিয়ার মত আমরা ভর হারানোর হার নির্ণয় না করে বরং নাক্ষত্রিক ঝড়ে মোট কি পরিমাণ গ্যাস আছে তা নির্ণয় করেছি।

এই নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সময়ের সাথে ভর হারানোর পরিমাণ জানা গেছে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন ভর হারানোর শেষ ১০,০০০ বছরের ইতিহাসে ভর হারানোর হার ৪-৭ এর ফ্যাক্টরে বৃদ্ধি পায়।

বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা চালিয়েই যাবেন। পরবর্তীতে ম্যাজেলানীয় মেঘের নীহারিকা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ছোট ভরের তারাগুলোর বিবর্তনের শেষ পর্যায়ের অনেক ঘোলাটে বিষয়ই পরিষ্কার হবে এবং ভর হারানোর পুরো প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ সঠিক সিম্যুলেশন তৈরী সম্ভব হবে। আর চূড়ান্ত উদ্দেশ্য “নাক্ষত্রিক ঝড়” বিষয়ক চূড়ান্ত মডেল দাড় করানো।

এই যে গ্রহ নীহারিকা নিয়ে এতো মাতামাতি, এর কারণ কি? এটা আমাদের কি দেবে? বিজ্ঞানমনস্ক ও বিজ্ঞানীদের সৌন্দর্য্য ও বিজ্ঞান পিপাসার বাইরে এর আর কি উপযোগিতা আছে। বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ের মতই এর উপযোগিতার দিকটা কেবল বিজ্ঞানের কাছেই, বিশেষভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাছে। গ্রহ নীহারিকার এ ধরণের পর্যবেক্ষণের বিশেষ কারণগুলোর এরকম:
- গ্রহ নীহারিকা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ ছায়াপথে ছড়িয়ে দেয়। তাই আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম নিয়ে জানতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। জ্বলজ্বল করার কারণে বর্ণবলয়ের পদার্থগুলো বিশ্লেষণের এই সুযোগটা আমরা নিতে পারি। মহাকাশের বিরান স্থানের নিঃসঙ্গ পদার্থগুলোকে যতদিন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না, ততদিন এর কোন বিকল্প নেই।
- গ্রহ নীহারিকা বেশ উজ্জ্বল ও বড়। তাই অন্যান্যা ছায়াপথের মধ্যেও এদের সনাক্ত করা সম্ভব। সেই ভিনদেশী গ্রহ নীহারিকা গবেষণার মাধ্যমে তাদের মাতৃ ছায়াপথ নিয়েও অনেক কিছু জানা সম্ভব। এমনকি এর মাধ্যমে দূর দূরান্তের ছায়াপথগুলোতে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের প্রাচুর্যও জানা যাবে।

আর এই জটিল বিষয়গুলো জানার কোন দরকার আছে কি-না তা তো সময়ই বলে দেবে। মানুষের নাক্ষত্রিক যুগে প্রবেশের জন্য যেমন আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তেমনি ছায়াপথীয় যুগে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন ছায়াপথ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আমরা তো সে পথেই এগোচ্ছি। সে পথে যেতে যেতে যদি কোন বহির্জাগতিকের সাথে দেখা হয়ে যায় তাহলে তো কথাই নেই। নিজেদের অন্তরের কথাগুলো তাকে না জানাতে পারলেও দু’জনে মিলে এসব মহাজাগতিক সৌন্দর্য্য দেখে সময় কাটানো যাবে। সেই সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞান আর গণিতের ভাষায় কিছু তথ্যও আদান-প্রদান করা যাবে।

---------------------------------
ছবি: উইকিপিডিয়া


মন্তব্য

পলাশ দত্ত এর ছবি

লেখার শিরোনামটা চমত্কার।

পুরো লেখা এক বসায় শেষ করা, এই মুহূর্তে, কঠিন।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

শিক্ষানবিস এর ছবি

হুম, লেখাটা একটু বড়ই হয়ে গেছে। গ্রহ নীহারিকার জন্মের ইতিহাসই ব্যাখ্যা করতে গিয়েই এমনটা হয়েছে। আসল খবর আর তার ব্যাখ্যাটা লিখলে এতো বড় হতো না।

পলাশ দত্ত এর ছবি

লেখা বড় হইছে তাতে অসুবিধা নাই। আমাদের মতো মহাকাশ-অক্ষর গোমাংসদের জন্য তাতে লাভ বৈ ক্ষতি নাই।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

শিক্ষানবিস এর ছবি

কি কন ভাই। কবিরা মহাকাশ বুঝবো না তো কে বুঝবো!

স্বপ্নাহত বালক এর ছবি

লাস্টের দিকে আইসা যদিও অক্সিজেনের অভাবে একটু খাবি খাইসি কিন্তু তারপরও অদ্ভুত লাগলো পড়তে হাসি

টাইটেলটাইতো পুরা আকর্ষণ করার মত।

শিক্ষানবিস এর ছবি

আপনার খাবি খাওয়া তাইলে পুরা বিফলে যায় নাই। দেঁতো হাসি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

২ -৩ -৪ প্যারা পড়তে একটু হামাগুড়ি দিতে হইছিল। তবে লাস্টের দিকে এসে তারা দুইজনে মিলে দেখবেন না কী যেন বললেন।

দাঁড়ান বিন্তি ভাবীরে গিয়া বইলা আসি। দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

শিক্ষানবিস এর ছবি

ভাই, বিন্তি-ডা কেডা? চিনলাম না তো।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আখেরী যমানা চইলা আইল রে। নিজের ইয়েরে নিজে চিনতে পারতিসেনা। দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অভিজিৎ এর ছবি

সুন্দর হয়েছে লেখাটা কিন্তু!
কন্টাক্ট সিনেমাটা এখনো দেখা হয়নি। কি রকম সিনেমাটা?



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

শিক্ষানবিস এর ছবি

সিনেমাটা খুব ভাল লেগেছে। সত্যি বলতে, এটা দেখে আমার রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়ার পুরান ইচ্ছাটা আবার নতুন করে জাগ্রত হয়েছে। হতেই হবে।
তবে এটা মানতে হবে যে, কাহিনীর যে গাঢ়তা সে তুলনায় সিনেমার গাঢ়তা কম ছিল। আরও গভীরভাবে বানানো যেত, সেক্ষেত্রে ইতিহাসেও সিনেমাটা স্মরণীয় হয়ে থাকত।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কন্ট্যাক্ট আমার খুব ভাল লাগসিলো। দারুন একটা সিনেমা। আর জোডি ফস্টার আমার অল টাইম ফেভারিট।

লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। বরাবরের মতই অনেক তথ্যবহুল, উপকারি আর সুলিখিত।
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

পরিবর্তনশীল এর ছবি

জোডি ফস্টার আমার অল টাইম ফেভারিট।

হাত ''মিলা''ন। শুধু সৌন্দর্য বাদ দিলে আমারও। ট্যাক্সি ড্রাইভারে ১১ বছরের জোডি ফস্টাররে দেখছিলেন?

আর সৌন্দর্য বিবেচনা করলে আদ্রে হেপবার্ন- নাতালি পোর্ট্ম্যান- কেট হাডস্ন এবং চিরসুন্দরী মেরিলি স্ট্রীপ । দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

শিক্ষানবিস এর ছবি

জোডি ফস্টার আমারও ফেভারিটের মধ্যে পড়ে। সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্ব্‌সে সবচেয়ে ভাল লাগছে। ট্যাক্সি ড্রাইভারে তো ১২ বছরের জোডি ফস্টারকে দেখে তাশ্‌কি খাইছি।
কন্টাক্টের এই চরিত্রে তার মত কারও অভিনয় করাই দরকার ছিল। তবে কন্টাক্টে তারে ল্যাম্ব্‌সর মত সুন্দর লাগে নাই। বয়স হইছে তো।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

তবে কন্টাক্টে তারে ল্যাম্ব্‌সর মত সুন্দর লাগে নাই। বয়স হইছে তো।

এইসব খাইস্টা কথা-বার্তা এখন তাইলে নিয়মিত বলা শুরু করছেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক। দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

স্বপ্নাহত এর ছবি

হ। মুহাম্মদ এর হইলোডা কি। দিন দিন দেখি আমগো চেয়েও খাইস্টা হয়া যাইতেসে দেঁতো হাসি

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

শিক্ষানবিস এর ছবি

সামনাসামনি কইতে পারি না দেইখাই তো ব্লগের আশ্রয় নিছি। তারপরও তুমগোর তুলনায় এ তো শিশু বচন

পরিবর্তনশীল এর ছবি

নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক। এই পুলা এতো খাইষ্টা ক্যান?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আমি তো বিজ্ঞান দেখলেই পালাই।
কিন্তু এইটা অতি চমৎকার লাগলো, ভাইজান।
ছবিগুলো দারুণ !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

শিক্ষানবিস এর ছবি

থ্যাঙ্কু। ছবিগুলোর জন্য অবশ্য হাবল মহাকাশ দুরবিনকে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। দেঁতো হাসি

অনিকেত এর ছবি

বস, আর সব সময়ের মত এ লেখাটাও দুর্দান্ত।

কিছু মন্তব্য করছি (প্রথমটা খানিক ভয়ে ভয়ে):

১। Anthropic principle এর বাংলাটা কি 'মানবীয় তত্ব' বলব? নাকি 'মানব-বাদী' তত্ত্ব?

২। ছবিগুলো দারুন হয়েছে।

৩। অত্যন্ত প্রাঞ্জল, একেবারে 'প্রান জল করে' দেয়া লেখা।

শিক্ষানবিস এর ছবি

anthropic principle এর বাংলাটা বাংলা একাডেমির "জ্যোতির্বিজ্ঞান শব্দকোষ" থেকে নেয়া।
অর্থের দিকটা বিবেচনায় রাখলে মানব-বাদী হয়। কিন্তু এই শব্দকোষের লেখক আক্ষরিক অনুবাদ করেছেন। anthropic শব্দের আক্ষরিক বাংলা অবশ্য মানবীয়-ই হয়। তাই এটাই ব্যবহার করছি।

বজলুর রহমান এর ছবি

anthropos= নৃ
principle = সূত্র
কিন্তু এ সমন্বয় সম্ভবত অচল।
বাদ <= ism
এখানেও সমস্যা।

আপনারা যাঁরা বাংলায় নতুন বিজ্ঞান সম্পর্কে লেখেন, তাঁদের পথ সত্যি প্রস্তরময়, একটা একটা করে উঠিয়ে চলতে হয়। তবু লেখা সুখপাঠ্য , তাই অভিনন্দন।

শিক্ষানবিস এর ছবি

জ্যোতির্বিজ্ঞান শব্দকোষে নৃ শব্দটা না নিয়ে মানব নেয়া হয়েছে বোধহয়। নৃবিজ্ঞান মানে তো এক অর্থে মানব নিয়ে বিজ্ঞানই। সেথান থেকেই মানবীয়। তবে প্রিন্সিপ্‌ল এর বাংলা করাটা ভুল হয়েছে। আপনার মন্তব্য পড়ে তা বুঝতে পারলাম। সূত্র বা নীতি বলা যায়। আমি তাই এখন থেকে "মানবীয় নীতি" লিখব। এটাও অবশ্য পরিবর্তন হতে পারে। পরিভাষা সংকট বশশ জটিল। এজন্যই অনেক ক্ষেত্রে মূল ইংরেজিটা বাংলাতে লিখি।
বিজ্ঞান বিষয়ক যেকোন লেখায় আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকি। আপনার অভিনন্দন সানন্দে গ্রহণ করলাম।

Shadhoo [অতিথি] এর ছবি

কলপনা =15%
তথ্য ও বিশ্লেষন = 85%
ভাল লেগেছে ।

শিক্ষানবিস এর ছবি

আপনার পর্যালোচনা ভাল্লাগলো। আমি আসলেই কল্পনা মেশাতে চেয়েছিলাম। কারণ, মহাবিশ্ব আমাদের সাহিত্যিক কল্পনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে আর বেশী দেরি নেই। এখন থেকেই একটু একটু শুরু করা যায়। আমি অবশ্য সাহিত্যিক না। কিন্তু যারা আছেন তারা হয়ত মহাবিশ্বের কথা পড়ে নতুন মাত্রায় কল্পনা করতে উৎসাহিত হবেন।

নিরিবিলি এর ছবি

বিজ্ঞান বুঝিও কম,জানিও কম কিন্তু আমি এতো বড় একখানা পোস্ট পড়ে ফেলেছি।
ভাল লাগলো বিশেষ করে ছবিগুলো।
কন্টাক নাম শুনেছি দেখা হয় নি। লিখতে থাকো হাসি

শিক্ষানবিস এর ছবি

উৎসাহ দেয়ার জন্য থ্যাঙ্কু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অজ্ঞানের জন্য বিজ্ঞান প্রযোজ্য নহে। বিজ্ঞান বিষয়ক আমার সর্বোচ্চ পড়া পদার্থবিদ্যার মজার কথা। সেইটা পইড়াও কোনো বিজ্ঞানের কাজে লাগে নাই। এককালে জাদুবিদ্যা শেখার ব্যাপক বায়ূ চাপছিলো, সেখানে কিছু কাজে লাগছিলো।
শিক্ষানবিসের লেখা আমি প্রতিবার ভাবি এখন না, একদিন সময় করে পড়তে হবে। কিন্তু পড়া হয় না আর।
তবু ভালো লাগে ছেলেটা কি দারুণ লেখে তা ভেবে। লেখার টাইটেলটা দিয়া তো কাব্য হইতে পারে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

বস, বিজ্ঞানের কথা পরে! উইন্ডোজ রিইন্সটল করা শিখছেন? হাসি


কী ব্লগার? ডরাইলা?

স্বপ্নাহত এর ছবি

রি ইনস্টলের আগে ইন্সটল করতে হয়। সেইটার কথা আগে জিগান হাসি

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

শিক্ষানবিস এর ছবি

ভাই আর কইয়েন না। কোন না কোন দিক দিয়া আমরা সবাই অজ্ঞান। এইটা জানি তো ঐটা জানি না। এজন্যই তো মাঝে মাঝে নিজের ট্র্যাক ছাইড়া অন্যদিকে উঁকি দেওন লাগে। এই যেমন আপনি এইখানে উঁকি দিলেন। বড় ভাল্লাগলো।
টাইটেল আর থিমটা দিয়া কেউ কাব্য লেখা শুরু করলে চরম হইত। দেঁতো হাসি

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

সময় নিয়ে পড়লাম, মনে হচ্ছে আবারো পড়তে হবে, ভীষন ভালো লেখা। অভিনন্দন
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

শিক্ষানবিস এর ছবি
কীর্তিনাশা এর ছবি

ভালো লাগলো।

কন্ট্যাক্ট ছবিটাও ভালো লাগছিল।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

শিক্ষানবিস এর ছবি

কন্টাক্ট ছবিটার কথা এক ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়ে ভালই করেছি। অনেকেই দেখেছেন শুনে ভাল্লাগলো।

দ্রোহী এর ছবি

কয়েকটা বাংলা প্রতিশব্দে এখনো খাবি খেতে হয়! উৎসাহবশতঃ কিঞ্চিত পড়াশোনা করেছিলাম এ ব্যাপারে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, লেখাটি চমৎকার হয়েছে।

কন্ট্যাক্ট ছবিটা দেখেছিলাম শায়েস্তা খাঁর আমলে। কার্ল সেগানের "পেল ব্লু ডট" পড়ে শেষ করার সুযোগই পাচ্ছি না।


কী ব্লগার? ডরাইলা?

শিক্ষানবিস এর ছবি

বাংলা প্রতিশব্দ ভালৈছে জেনে খুব খুশি। দেঁতো হাসি
কার্ল সেগানের একটা বইই পড়ছি। কসমস। সসমসের বাংলা অনুবাদ বের হইছে। সেটাই পড়ছি। আর সেগানের ভক্ত হইছি "কসমস" সিরিজটা দেখে। পুরোটা দেখি নাই। মাত্র দুই পর্ব। পেল ব্লু ডট-ও পড়তে হবে। লিস্টে থাকল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।