সাপ্তাহিক স্বর্গবার্তা ০১

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: শনি, ০৭/০২/২০০৯ - ৭:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জনৈক নেকবন্দ ব্যক্তি, ধরিয়া লই উহার নাম মোঃ এক্স, স্বর্গে আসিয়া দারুণ গোলযোগের জন্ম দিয়াছেন।

পুণ্য তাহার বহু ছিলো, প্রার্থনা-উপবাস-তীর্থ-দানছত্র সবই তিনি করিয়াছেন, বীজমন্ত্র ঘনঘন জপিতেন, জপমালা টিপিতেন, পাপের মধ্যে পাপ ছিলো মাঝে মাঝে কাজের মেয়েকে ধরিয়া জোরপূর্বক রমণ করিতেন। স্কন্ধারূঢ় দুই স্বর্গদূত, যাহারা পাপপুণ্যের হিসাব জাবদায় টুকিয়া রাখে, তাহার আগে সাইফুর নামে জনৈক হিসাবরক্ষকের স্কন্ধে দীর্ঘকাল ডিউটি দিয়াছে, কিভাবে হিসাবে গন্ডগোল বাহির করিতে হয়, তদ্রুপ কিরূপে হিসাবে গন্ডগোল গুঁজিয়া দিতে হয় তাহারা বিলক্ষণ জানে, বুয়ারমণ পর্বে তাহারা আশমানি কলম কানে গুঁজিয়া থ্রিয়েক্স দেখিয়াছে, তাই পাপের খাতা হালকাই ছিলো। তাই মোঃ এক্স তড়বড় করিয়া সাঁকো পার হইয়া স্বর্গের কাননে পা ফেলিয়াই দারুণ উল্লসিত হইয়া পড়িলো। সাড়ে তিন কুড়ি সুন্দরী অপ্সরা আসিয়া তাহাকে ঘিরিয়া ধরিলো। বার কয়েক রমণ করিয়া সে কিঞ্চিৎ হাঁপাইয়া পড়িলে এক গেলমান আসিয়া সোনার পাত্রে করিয়া দ্রাক্ষারস আনিয়া দিলো। ঢকঢক করিয়া সেই রস পান করিবার পর মোঃ এক্স ছটফট করিতে করিতে খিঁচুনি দিয়া পড়িয়া মরিলো!

ঈশ্বরের কাছে সংবাদ পৌঁছাইতে তিনি আসমান হইতে পড়িলেন। স্বর্গে মানবের মৃতু্য হয় কেমন করিয়া? ইহা কি সম্ভব? তিনি স্বর্গের কোয়ার্টারমাস্টার স্বর্গদূতকে তলব করিলেন। সে আসিয়া সেলাম ঠুকিলো।

"খোদাবন্দ, এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা।" সে গলা খাঁকরাইয়া কহিলো। "স্বর্গে মানুষের মৃত্যু এই প্রথম।"

ঈশ্বর কহিলেন, "আরে ব্যাটা আগে বল সে মরিলো কেমন করিয়া?"

কোয়ার্টারমাস্টার কহিলো, "তদন্ত চলিতেছে জাঁহাপনা।"

ঈশ্বর চটিয়া উঠিয়া কহিলেন, "তদন্তের গুষ্টি মারি, কারণটা বল।"

কোয়ার্টারমাস্টার মাথা চুলকাইয়া কহিলো, "আসামী বাঙ্গালি ছিলো জনাব। সারাটা জীবন ভ্যাজাল খানাপিনা করিয়া পেটের অবস্থা করুণ করিয়া তাহার পরে স্বর্গে আসিয়াছে। স্বর্গের নির্ভেজাল দ্রাক্ষারসকে জীর্ণ করিতে গিয়া তাহার কলিজার উপর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই সে মরিয়াছে।"

ঈশ্বর ভড়কাইয়া গিয়া কহিলেন, "আরে, সব্বনাশ। এর আগে আর কখনো বাঙ্গালি স্বর্গে আসে নাই?"

কোয়ার্টারমাস্টার কহিলো, "খাদ্যে ভ্যাজাল প্রয়োগের আগের আমলে আসিয়াছে প্রচুর, ইদানীং আসে নাই।"

ঈশ্বর বলিলেন, "এখন যদি ও পঁচে গন্ধ ছড়ায়, ব্যাপারটা কেমন হবে?"

কোয়ার্টারমাস্টার মুখ কালো করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলো।

ঈশ্বর কহিলেন, "নরকের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করিলে কেমন হয়?"

কোয়ার্টারমাস্টার শিহরিয়া উঠিয়া কহিলো, "জাঁহাপনা, ঐ কর্ম ভুলেও করিবার উয্যুগ লহিবেন না, সবংশে বিনাশ হইবেন। এমনিতেই নরকে তুমুল পলিটিক্স চলিতেছে, সেই অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়া হইবে তাহলে ...।"

ঈশ্বর ঘাবড়াইয়া গিয়া কহিলেন, "বল কী, উহারা এখনও নিবৃত্ত হয় নাই?"

কোয়ার্টারমাস্টার কহিলো, "মোটেই না। নরক এখন গুলজার। জাতীয়তাবাদী নারকী দল, নারকী লীগ, জামাতে নারকী, আর নারকী পার্টির উৎপাতে নরকের স্বর্গদূতরা পর্যন্ত এখন পলিটিক্সে জড়াইয়া গিয়াছে। ইদানীং বিকল্প ধারার নারকী রাজনীতিও শুরু হইয়াছে। উহারা আবার মাঝে মাঝেই নিজেদের মধ্যে কী সব জোট বাঁধিয়া হুটুপুটি করে ...।"

ঈশ্বর কহিলেন, "ওফ, বুকের বাম দিকটায় বড় ব্যথা ...।"

কোয়ার্টারমাস্টার কহিলো, "বড় করিয়া দম নিন ... যাহা বলিতেছিলাম, ঐ গোলমালের মধ্যে যদি আবার একটা লাশ তাহাদের হস্তগত হয়, নরক ফাটিয়া গিয়া স্বর্গকে ভস্ম করিবে। তখন আমার পক্ষে সামলানো দায় হইবে।"

ঈশ্বর কহিলেন, "তাহলে এই ডেডবডি লইয়া কী করি? আঞ্জুমানে মফিদুলও তো নাই যে দাখিল করিবো ...।"

কোয়ার্টারমাস্টার কহিলো, "স্বর্গদূত আত্মাহরকে দিয়া ব্যাটাকে আবার পৃথিবীতে পাঠাইয়া দিন। ল্যাঠা চুকিয়া যায়।"

ঈশ্বর কহিলেন, "পৃথিবীতে পাঠাইবো কী রূপে? স্বর্গে আসিয়া মরিয়াছে হতভাগা ...।"

কোয়ার্টারমাস্টার কহিলো, "উহাকে কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারী কর্মকর্তা করিয়া পাঠাইয়া দিন, বেশি নড়াচড়া করিতে হইবে না, লোকে কিছু টের পাইবে না ...।"

ঈশ্বর কহিলেন, "বেড়ে বলিয়াছিস। তবে তাই হোক।"

মোঃ এক্স এখন কোন এক সরকারী দপ্তর সামলাইতেছেন। কেউ টের পায় না যে তিনি জীবন্মৃত। স্বর্গের আলোবাতাসের গুণে শরীরে পচন ধরে না তাহার, কিন্তু প্রাণের অভাবে কাজকর্মাদিও আগায় না।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

বাপ্রে বাপ!! মারাত্মক। এমন আইডিয়া কইত্থেকে পান?

=============================

এনকিদু এর ছবি

মোঃ এক্স এখন কোন এক সরকারী দপ্তর সামলাইতেছেন। কেউ টের পায় না যে তিনি জীবন্মৃত। স্বর্গের আলোবাতাসের গুণে শরীরে পচন ধরে না তাহার, কিন্তু প্রাণের অভাবে কাজকর্মাদিও আগায় না।

... বুয়াদিগের উপরেও আর চড়াও হয় না ।

আমি খুশি দেঁতো হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মুখফোড়, এইটা কী লিখেনরে বস্‌...

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

দারুণ আইডিয়া

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কিছু বলার নাই। ওয়ান-পিস।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হো হো হো

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অনিশ্চিত এর ছবি

সোনা দিয়া বান্ধাইয়া রাখিলে এইরম লেখা আর পাইবো না বলিয়া বান্ধাইলাম না।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

তাহমিনা এর ছবি

ওরে বাবা এযে জববর লিখেচেন, কি ভাবে লেখেন এত্ত সুন্দর করে?!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
When I'm right nobody remembers; when I'm wrong nobody forgets!

When I'm right nobody remembers; when I'm wrong nobody forgets!

ামি এর ছবি

ফাটাফাটি

নতুন অতিথি।।। এর ছবি

জোস হয়েছে মামা----

সাইফ এর ছবি

ঈশ্বর কহিলেন, "তাহলে এই ডেডবডি লইয়া কী করি? আঞ্জুমানে মফিদুলও তো নাই যে দাখিল করিবো ...।" বস বস, এরকম বস সচল এ আরেকটা নাই চোখ টিপি হে হে হে, একটু মনে হ্য় বেশি হইয়া গেল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।