ডিটেকটিভ গল্প: সেলিব্রিটি প্রবলেমস ৬

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: শুক্র, ১০/০৮/২০০৭ - ৭:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাসনাইন যখন এসব নানান ছাইপাশ ভাবছিলো তখন অনুষ্ঠান চলতে থাকে নিজের মতো, স্টুডিওর সবাইও যার যার কাজে ব্যস্ত। এরই মধ্যে সিগারেট টানার জন্য লাবু ভাই তার চেয়ার ছেড়ে জানালার পাশে চলে যান। সেটা দেখেই কিনা বোঝা যায়না, তবে এর একটু পরেই হামিদ সাহেব বের হয়ে আসেন, হেলতে দুলতে একেবারে হাসনাইনের পাশের চেয়ারেই বসেন।

হাসনাইনের চোখ তখনও মুগ্ধভাবে রেশমাকেই দেখছে শুধু, এমনকি হামিদ সাহেবের বের হবার শব্দ সে টেরও পায়নি। তবে হামিদ সাহেব এসে তার পাশের চেয়ারে বসার সাথে সাথে টের পেয়েই রেশমার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অফিসরূমে ঝুলতে থাকা ক্যালেন্ডারের দিকে নিয়ে খুব মনোযোগের সাথে দেখার ভান শুরু করে সে, এমনকি হামিদ সাহেবকে জিজ্ঞেসও করে বসে, 'এই মাসে দু'টা সরকারী ছুটি?'। পাশ থেকে কোন জবাব আসেনা, হাসনাইন মুখ তুলে হামিদ সাহেবের দিকে তাকায়, আশা করে হয়ত তিনি কিছু বলবেন। কিন্তু দেখা গেল তিনিই এখন একদৃষ্টিতে রেশমার দিকে তাকিয়ে আছেন, তীর্থের কাক না বুভুক্ষু বেড়াল, বোঝেনা সে।

হঠাৎ বিড়বিড় করে বলতে শুরু করেন হামিদ সাহেব, 'দেখলেন হাসান সাহেব, মেয়েটা ফার্স্টক্লাস না?'

বিড়বিড়ের কি উত্তর দেবে হাসনাইন ভেবে পায়না, সে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, 'ইয়ে, আমার নাম হাসনাইন, হাসান না।'

'ও হলো আরকি! একইতো! একই রূমে হাসান আর হাসনাইন নামের দুজন থাকার সম্ভাবনা অনেক কম।' হামিদ সাহেব এখনও চোখ সরাচ্ছেননা।

হাসনাইন লোকটার কথাবার্তার ঢংয়ে আশ্চর্য হলো, ড্যাম কেয়ার ভাবে মুগ্ধ হয়ে এক নারীকে দেখছে, আবার মাথার ভেতর ঠিকই প্রবাবিলিটির হিসেবও কষছে! এই না হলে রেডিও কোম্পানীর মালিক! হাসনাইন ভাবে, এই সুযোগে লোকটার সাথে কথা বলে নেয়া যায়; যেই ভাবা সেই কাজ, ইনিয়ে বিনিয়ে সে বলার চেষ্টা করল, ' ইয়ে মানে, বলছিলাম কি...'

'কি বলতে চান? পরিষ্কার করেই বলুন।' হামিদ সাহেব হাসনাইনের দিকে হাসিমুখে আস্বস্ত করার মতো করে মোলায়েম গলায় বললেন।

'আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমি একটু জানতে উৎসাহী এই ব্যাপারে যে, আপনারা গত কয়েকটি অনুষ্ঠানে কাদের কাদের, কোন কোন শিল্পীকে আমন্ত্রণ করেছিলেন।' হাসনাইন হঠাৎ যেন জেরার সুরে জিজ্ঞেস করে।

হঠাৎ হাসনাইনের গলার কাঠিন্যে হামিদ সাহেব একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, 'হুমম, আমার তো অত ডিটেইলে সব নাম মনে নেই, লাবু বলতে পারবে হয়তো রোস্টার দেখে। কিন্তু কেন? আমি তো জানি আপনি রেশমাকে প্রোটেকশন দিতে এসেছেন, এরসাথে আমরা গত কয়েক অনুষ্ঠানে কাকে কাকে আনলাম তার সম্পর্ক কি?' এবার হামিদ সাহেব উল্টো জেরা করে বসেন।

'সেজন্য তো না। আমি শুধুই জানতে চাচ্ছি যে গত কয়েকপর্বে যারা এসেছেন তাদের কারো সাথে রেশমার এখানে দেখা হয়েছে কিনা? ইনফ্যাক্ট রেশমা এখানে এর আগে এসেছিল কিনা?' হাসনাইনের হঠাৎ গলা কড়া শোনায়।

'হ্যাঁ এসেছিল, চারদিন আগেই এসেছিল, একটা অনুষ্ঠান দেখেছেও কিছুটা। তবে আমার সাথে দেখা হয়নি, আজই আমাদের প্রথম দেখা হলো।' হামিদ সাহেব এই মুহূর্তে বুঝতে পারছেননা হাসনাইন কেন এসব ছাইপাশ জিজ্ঞেস করছে। তিনি বিব্রতবোধ করা শুরু করেন।

'কি বলেন!' হাসনাইনকে বেশ আশ্চর্য শোনায়, 'আপনাদের একটু আগে কথা দেখে তো মনে হলো আপনারা পরস্পর বেশ পরিচিত।'

'ওহ নো, সেটা আসলে আমরা ফোনে কয়েকবার কথা বলেছি। ইউ নো, ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে, উনি তিনঘন্টা ধরে আমাদের প্রোগ্রামে থাকবেন, তাও শুক্রবারে, আর আমি মালিক হয়ে তাঁকে ফোন করে গ্রীট করবনা?' হামিদ সাহেব মুখস্থের মতো বলে যায়।

'তাই বলুন!' হাসনাইন খানিকটা স্বাভাবিক হয়, একটু গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'কথা কি ল্যান্ডফোন না সেলফোনে করতেন।'

'সেটা জেনে আপনি কি করবেন, ডিটেকটিভ সাহেব?' হামিদ সাহেব ভ্রূ কুঁচকে তাকান, হাসনাইনের দিকে মুখ এগিয়ে এনে বন্ধুসুলভ হাসি দিয়ে বলেন, 'আপনার লাগবে নাকি সেলফোন নাম্বার? লাগলে বলবেন, আমার কাছে অন্ততঃ ৫০ জন হালের মডেল কাম নায়িকা কাম গায়িকা কাম সবকিছু'র ফোন নং আছে, হে হে হে।' হামিদ সাহেবকে দেখে মনে হচ্ছে আবার তিনি আগের দিলখোলা মুডে ফিরে এসেছেন।

'আচ্ছা, আপনাদের সমস্যাটা কি? ফোনের কথা জিজ্ঞেস করলেই বলেন নাম্বার লাগবে নাকি? নো থ্যাংকস। ' হাসনাইন শ্রাগ করার ভান করে।

এই মুহূর্তে হাসনাইনের হামিদ সাহেবের সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা, তবে সেটা মোটেও তার ওপর রাগ করে নয়; বরং তাঁকে সম্ভাব্য তালিকা থকে আপাততঃ বাদ দিতে পেরে সে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। হাসনাইনের সামান্যও মনে হচ্ছেনা যে এই ইনোসেন্ট টাইপের লোকটা একটা মেয়ের ভয়াবহ অশান্তির কারণ হতে পারে। তবে লোকটা প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েছে বেশ পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে; যেজন্য হাসনাইনের সন্দেহ হলো, যদি কয়েকজন মিলে কোন জটিল পরিকল্পনা করে রেশমাকে যন্ত্রণা করে থাকে, তাতে এই হামিদ সাহেবের হাত থাকতেও পারে! তবে আপাতত, হি ইজ ক্লীন এ্যান্ড ক্লিয়ার।

কয়েক সেকন্ডের নীরবতার পর হাসনাইন যেই সামনে পড়ে থাকা 'রোবট প্রযুক্তি' নামক একটা পত্রিকা হাতে নিতে যাবে, অমনি হামিদ সাহেব হাসনাইনের দিকে ঘুরে বললেন,
'আচ্ছা হাসান সাহেব, আপনারা কতক্ষণ থাকবেন আজ?'

হাসনাইন সচকিত হয়ে উঠে, হামিদ সাহেব তাকে হাসান ডাকল না হাসনাইন ডাকল সেটা বড় ব্যাপার হয়না। কিন্তু তারা কতক্ষণ থাকবে না থাকবে তা নিয়ে সে চিন্তিত কেন?

'কেন? কোন সমস্যা?' হাসনাইন ভদ্র ও বিনীত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে।

'নাহ্, তা না। এমনি জানার জন্য আরকি! আমার অফিসে ডি.বি'র লোক আসবে আর আমি জানবনা তারা কতক্ষণ থাকবে?'

হাসনাইন বলতে থাকল, 'আসলে আমি তো নিশ্চিত করে বলতে পারিনা যে কখন শেষ হবে, তবে রেশমা ম্যাডাম আর তার লোকজনেরা ঠিকমতো বাসায় পৌঁছেছে এটা তো নিশ্চিত হতে হবে।'

'আপনি একা এত সামাল দেবেন?' চোখ গোলগোল করে হামিদ সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেন।

'না না, সেটা তো সম্ভব না।' হাসনাইন হালকা হতে চেষ্টা করে, 'আমার সাথে আরো দুজন আছে। ওরা নিচে পজিশন নিয়ে আছে।'

'পজিশন' শব্দটা শুনে একটু ভড়কে যান হামিদ সাহেব, তারপর সামলে নিয়ে পুলকিত গলার ভাব করেই বলেন,'তাই? বেশ এক্সাইটিং মনে হচ্ছে?'

তারপরই লাবু ভাইর দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলে ওঠেন, 'ওহহোওও, তাহলে তো আরো তিনটা মিলের অর্ডার দিতে হয়; লাবু ভাই, লাবু ভাই! আজকের ডিনারে তিনটা বেশী এ্যাড কইরো। '

লাবু ভাই যেন এই কথাগুলো শোনার জন্যই রেডী ছিলেন, জানালার কাছ থেকে একটানে টেবিলের কাছে এসে বললেন, 'স্যার দুটাতেই হবে, আজকে তো ফিরোজ আসেনি।'

'কি?' হামিদ সাহেবের তিক্তবিরক্ত গলা শোনা যায়, 'ফিরোজ আজও আসেনি? কাজকর্ম ভাল পারে দেখে কি হয়েছে? এভাবে ইচ্ছামতো অফিস ফাঁকি দিলে চলবে কিভাবে??'

'আমি আর টুটুল মিলে কাজ চালাতে পারবতো' লাবু ভাই বড়সাহেবকে আশ্বস্ত করে।

রেশমার সৌন্দর্য্যে এতই মশগুল ছিলেন যে ফিরোজের অনুপস্থিতিই তাঁর চোখে পড়েনি। বড় কোন যান্ত্রিক গোলযোগ হলে লাবু ভাই বা টুটুল সামাল দিতে পারবেনা, ভালোই জানেন হামিদ সাহেব। হঠাৎমেজাজ খারাপ করে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে ঢুকে যান তিনি, একটু পরেই মাথার খুলির অংশটুকু টুক বের করে বলেন, 'লাবু ভাই, ডিনার শুরু হইলে ডাক দিবা, তার আগে না।'

'আচ্ছা বস্' সিগারেটে টান দিতে দিতে লাবু ভাইর নিরুত্তাপ জবাব।

তারুণ্যের অফিসরূমেই ডিনার শুরু হয়ে গেছে, হাসনাইনের মনে হচ্ছে সোয়াঘন্টার প্রোগ্রামেই আখতার আর লুৎফার সাথে রেশমা বেশ ক্লোজ হয়ে গেছে। অবশ্য আখতার ছেলেটা একটা জিনিয়াস, জায়গামতো পারফেক্ট কমেন্ট করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। আর আজকের প্রোগ্রাম জমেছেও ভাল, এখন পর্যন্ত সোয়া ঘন্টায় প্রায় ২৫টি ফোনের জবাব দিয়েছে রেশমা, আর টেলিফোন অপারেটররাও জানাচ্ছে যে 'কথাবলো' কোম্পানীর মোবাইল নেটওয়ার্কে ভীষন ভীড় এখন ।

এরমধ্যে স্ট্যাটিস্টিক্স এসেছে আজকের স্রোতার সর্বোচ্চ পার্সেনটেজ ২৪.২৪%, লাবু ভাইর হাসি আর দেখে কে?
সেকেন্ড হাফের শুরু থেকে ১০ মিনিট পরে সবচেয়ে বেশী শ্রোতা থাকে, কারণ ঐ সময় টিভি নাটক একটা শেষ হয়ে আরেকটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, এ্যাডের ফাঁকে আজকালকার তরুণ-তরুণীরা বেশ রেডিও শোনে। লাবু ভাই তাই আজ ভীষন এক্সাইটেড, ভাগ্য ভাল হলে শুক্রবার সকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'বিলবোর্ডে'র রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে আজ তার অনুষ্ঠান 'তারার সনে'। লাবু ভাইয়ের সমস্ত চেহারাজুড়ে একটা চকচকে জেল্লা লক্ষ্য করা যায়, হামিদ সাহেবও খুশী, বেশ খুশী। নিজের কোম্পানীর জনপ্রিয়তা দেখে কেই বা খুশী না হয়!

ব্রেকের আগেআগেই বিরিয়ানী চলে এসেছিলো, সবাই খুশী মনে গরম গরম বিরিয়ানী খাওয়া শুরু করতে যাবে, তখনই হামিদ ভাই মিনমিনিয়ে বলার চেষ্টা করলেন, 'রেশমা চলো আমরা গেস্টরুমে বসে খাওয়া দাওয়া করি।'
সবাই হামিদ ভাইয়ের দিকে সন্দেহের চোখে তাকানোর আগেই রেশমা বলল, 'নাহ্, হামিদ ভাই। এখানেই ভাল লাগছে, সবার সাথে। এনিওয়ে থ্যাংকস' রেশমার ভুবনভোলানো হাসি দেখে হাসনাইনের বুক কেঁপে উঠল খানিকটা।

নিজের বিরিয়ানীটা প্লেটে ঢেলে হাসনাইন লাবু ভাইকে বলল, 'লাবু ভাই আমার সাথে আরো দুজন এসেছেন।'

'ও, হ্যাঁ হ্যাঁ, এক্ষুনি ডেকে পাঠাচ্ছি' বলেই লাবু ভাই দরজার কাছে গিয়ে ডাকতে লাগলেন 'জগা, এই জগা, এদিকে আয়তো।'

হাসনাইন ব্যাস্তসমেস্ত হয়ে ছুটে যায় লাবু ভাইয়ের দিকে, বলে, 'লাবু ভাই ওদের নিজেদের জায়গা থেকে সরানো যাবেনা। আমাদের পুরো এ্যালার্ট থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপরে। কাজেই ডেকে পাঠানোর চেয়ে প্যাকেট পাঠিয়ে দিন।' জগাকে হাসনাইন খুব ভালভাবে বুঝিয়ে দেয় কালাম আর রাজুকে কোথায় কোথায় খাবার দিতে হবে। এস.এম.এস করে দুজনকে জানিয়ে দেয়া হয় যে আরেকটু সহ্য করো রাতের খাবার এখনই আসছে; তবে এসএমএসে বেশী লেখা যায়না বলে অসাধারণ মেন্যুটার কথা জানাতে পারেনা হাসনাইন।

ফখরুদ্দিনের মাটন বিরানীর সাথে খাঁটি বাঙালী সালাদ, সেদ্ধডিম হালকা আঁচে ভাজা, মিষ্টি বড়ই আচার আর কোল্ড ড্রিংকস। খাবারটা নিঃসন্দেহে জমজমাট; খেতে খেতেই লুৎফা হঠাৎ চিৎকার করে বলে, 'এবিসিডি টিভির রেডিওটা ধরেন টুটুল ভাই, তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি।'

'কেন?' আখতার কিছুটা অবাক!

'আরে এখন প্রভা রহমানের একক শো লাইভ করতেছেনা? দুবাইর বুরুজ হলে' লুৎফা একটানে বলে যায়, 'একটু শুনি, যদি উনার গানটান কিছুটা ইমপ্রুভ করে।'

'এই মহিলা একটা হাজব্যান্ড পাইছেও' টুটুল আপনমনে গজগজ করে, 'গান জানেনা, পৃথিবীর যেখানে সেখানে শুটিং/শো কইরা বেড়ায়!' গজগজ করতে করতে টুটুল এবিসিডি টিভির রেডিও স্টেশন ধরে, রেডিও স্টেশনে টিভিতে যা দেখায় সেটারই অডিও অংশটা প্রচার করে। শোনা যায় এই মুহূর্তে প্রভা রহমান গাইছেন, 'পাখিরে তুই কেন এমন দুষ্টুলা ...'

শুনতে শুনতে লুৎফার মুখ দিয়ে বের হয়ে এল 'হি হি হি! এত এত স্টেজে যে গাইল মহিলা, সেগুলার রিহার্সেল করতে করতেই তো মানুষের গান শিখে ফেলার কথা! আহারে বেচারী?' তারপর রেশমার দিকে তাকিয়ে বলে, 'আপু তুমি কি বলো উনার গান সম্পর্কে? একে কি নিজেদের সমগোত্রীয় ভাব?'

'নো কমেন্টস' বলে একগাল হাসি দিয়ে রেশমা যা বলার বলে দিল।

'হা হা হা', 'হি হি হি' , 'হো হো হো', 'হে হে হে', এরকম নানান শব্দে তারুণ্য অফিস আরো তারুণ্যময় হয়ে ওঠে মুহূর্তেই; এর মাঝেই রেশমাকে একদৃষ্টে খেয়াল করতে থাকা হাসনাইন দেখল যে মেয়েটার চোখমুখ ভয়াবহ বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে।

খাওয়া দাওয়া শেষে অনুষ্ঠান আবার শুরু হলে সবাই যার যার জায়গায় ফিরে যায়। যথারীতি লুৎফার প্রাণখোলা হাসি, আখতারের উইটফুল চটুল কমেন্ট, জমিয়ে ফেলা আসর। অফিসের বি.জি.এমে সারাক্ষণ সাধারণত এই রেডিওই চলে, তাই ওপাশে স্টুডিওতে ওরা কি সম্প্রচার করছে তা শোনা যায়। এই মুহূর্তে হাসনাইনের আর রেডিওর প্রোগ্রাম শুনতে ভাল লাগছেনা। কিছু করার নেই দেখে সে কিছুটা অস্থির ভাবে টেবিলের উপরে রাখা ম্যাগাজিনগুলো ঘেঁটে দেখআর চেষ্টা করে, তবে তাতেও থিতু হতে পারেনা। মজার ব্যাপার হলো হাসনাইনের এ অস্থিরতাটা খেয়াল করলেন লাবু ভাই, বেচারার কিছু করার নেই দেখে তাকে রেশমার একটা রিসেন্ট সিডি আর সিডিম্যান দিয়ে লাবু ভাই বললেন, 'রেশমার গান শুনেন, হাসনাইন সাহেব। জ্যাজ আর রকের অসাধারণ মিক্সচার!'

করিডোরের পাশে টিভির রূমে বসে মাথা খানিকটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে জ্যাজ আর রকের অসাধারণ মিক্সচার শুনে মিনিট বিশেক কাটায় হাসনাইন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, এই মিক্সচার তার হজম হচ্ছেনা, খুব একটা মজাও পাচ্ছেনা। ফিরে এলো অফিসে।
ঠিক তখনই তার চোখে পড়লো আরেকটা সি.ডি, উপরের কভার একটা সাদা কাগজ, সেখানে হাতে লেখা 'মনের কথা মন বোঝেনা'।
টাইটেলটা দেখেই হাসনাইনের উৎসাহ বেড়ে গেল, এই 'মনের কথা মন বোঝেনা'ই তো আজ রেশমার গাওয়ার কথা খালি গলায়। রওনক আর তানিম সিডিটা নিয়ে এসেছিল সরাসরি প্রোডাকশন হাউজ থেকে, কোন এক ব্রেকে রেশমা গেস্টরুমে গিয়ে গানটা আরেকবার শুনে নেবে ফাইনাল প্র্যাকটিসের জন্য -- এই উদ্দেশ্যে।

হাসনাইন ভাবল এইতো সুযোগ, সবার আগে আমিই শুনে নেই গানটা, এখনও রিলিজড হয়নি যেহেতু, এমন গান শোনার চার্মই আলাদা! যেই কথা সেই কাজ, সিডিম্যানের সিডিটি পাল্টে, মনের ভুলে পুরোনো জাজরকের মিক্সচার সিডিকে নতুন গানের সিডির বাক্সে রেখে হাসনাইন শুনতে লাগল রেশমার লেটেস্ট রিলিজ,'মনের কথা মন বোঝেনা' ।
সম্পূর্ন মনের ভুলেই সিডির বাক্সের ওলট-পালট বা অদল-বদল করে ফেলেছিলো হাসনাইন, তবে এই সিডি পাল্টে দেয়াটাই যে কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটাবে সেটা সেই মুহূর্তে সে কল্পনাও করতে পারেনি।

সিডিটা অন করে মুহূর্তের মধ্যেই যেন অন্যজগতে চলে গেল হাসনাইন, মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে শুনতে লাগল রেশমার অসাধারণ এই নতুন রিলিজ -- 'মনের কথা মন বোঝেনা'। গানের অস্থায়ীটা শুনেই হাসনাইন বুঝল, রেশমা অসাধারণ গায়, তার মনে হলো শীগগিরি নতুন যুগের রুনা লায়লার আবির্ভাব হতে যাচ্ছে বাংলা গানে। কিন্তু তখনও যা সে জানতোনা তা হলো এমন অনেক সম্ভাবনাই অংকুরে নষ্ট হয়ে যায়। হঠাৎ আত্মা কেঁপে ওঠে হাসনাইনের।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হাসনাইন ছেলেটা একটু ভালো মানুষ টাইপের মনে হচ্ছে ।
নাম পালটে হাসান করে দিলে অবশ্য স্বভাব ও বদলে যেতো চোখ টিপি

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হা হা হা ,,,
সিইও হামিদ তাকে অবশ্য হাসানই বলে

আমাদের এই গোয়েন্দাটা একটু বোকা বোকা চোখ টিপি

ধন্যবাদ বস্, পড়ছেন জেনে ভাল লাগছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ঝরাপাতা এর ছবি

পড়ছি কিন্তু বোকা ডিটেকটিভের গল্প।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ ঝরাপাতা ,,,
আর ৪ পর্ব
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনি ভ্রাত: বেশী বেরসিক। মিসেস রহমানকে এভাবে খোঁচা দিলেন? ঐ যে পাখি নিয়ে গানটা, কী যেন কথা, পাখি তুই গিয়ে বল তারে এভাবে একা একা কি মানুষ বাঁচে টাইপ কিছু একটা, ওটা কিন্তু আমার ফেভারিট ছিলো।
এ পর্ব একটু ধীর গতির মনে হলো। সামনে কি ঘটবে তার অপেক্ষায় - - -

অতিথি এর ছবি

হামিদ সাহেবের চরিত্রে আমি কিংবদন্তী ব্লগার ধারাপাতুল ওরফে হেবো মহারাজের ছায়া দেখতে পাই।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

যাক! মিসেস রহমানকে নিয়ে কমেন্ট এসেছে হাসি
আমি এই মিসেস রহমানকে এখানে ফিট করতে পেরে শান্তি পাইছিলাম হাসি
সত্যি কথা@শিমুল ,,, ৫/৬/৭ পর্বে কাহিনীতে রিপিটেশন ছিল ,,, আসলে হাসনাইন কি ভাবছে সেটা তুলে ধরতে গিয়ে পুরোনো কথাগুলো রিপিট হয়েছে ,,,ঘষামাজা লাগবে হাসি

অতিথি, বাস্তবের কোন চরিত্রের সাথে এই লেখার ,,,, চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।