ডিটেকটিভ গল্প: সেলিব্রিটি প্রবলেমস ৮

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: রবি, ১২/০৮/২০০৭ - ১০:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সমস্ত অফিস জুড়ে যেন একটা হিমশীতল বাতাস প্রবাহিত হয়ে গেল। আতংকে মুখ চেপে আছে রেশমা আর লুৎফা। আখতারকে হঠাৎই কেমন খুব অবুঝ শিশুর মতো নিরূপায় দেখাচ্ছে। ভয়ে একেবারে জমে যাবার মতো অবস্থা হয়ে গেছে লাবু ভাই আর হামিদ সাহেবের। তুলনামূলকভাবে টুটুল খানিকটা স্বাভাবিক, বিরক্ত দেখাচ্ছে তাকে খানিকটা। সবার অনড় অবস্থা দেখে হাসনাইন নিজেই উঠে গেল, গার্ডম্যান মুসলিমকে ভেতরে ঢুকিয়ে এনে বলল, 'কি হয়েছে খুলে বলুন। কে খুন হয়েছে?'

'একজন মহিলা! ম্যাডামের গাড়ির ভিতরে লাশ হা কইরা আছে।' আতংকিত মুসলিমের গলা,'আর রক্তে চারপাশ ভাইসা গেছে, পার্কিংয়েও রক্ত গড়াইতেছে।'

'নো! নো!', রেশমা চিৎকার করে উঠে, 'এটা নিশ্চয়ই পিয়া না?' আতংকিত আর অবসন্ন দেখায় হঠাৎ রেশমাকে, লুতফা শক্ত করে ধরে রাখে রেশমাকে, যেন নাহলে সে এখনই পড়ে যাবে মেঝেতে।

'নাহ্, উনি তো আরো দুজনের সাথে বেরিয়ে গেলেন' হাসনাইন বলল।

'ও তো ফিরে এসেছিলো। বেশ আগেই, বলেছে নীচে অপেক্ষা করছে। ওহ গড!! পিয়া'জ গন্??' শব্দ করে কেঁদে ওঠে রেশমা, তাকে দেখে মনে হয় হাতের কাছে যা পাবে তাই ছিঁড়ে ফেলবে। অদ্ভুত ধরনের এক আর্তনাদে গোঙাতে থাকে সে। লুৎফা আর আখতারের আতংক এখনও কাটেনি, তাও তারা তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, লাবু ভাই বলে, 'আগেই আপনি অমন খারাপ কিছু ভেবে বসবেননা। ইনশাল্লাহ পিয়া ম্যাডাম ভালোই আছেন।'
'লর্ড! পিয়া ফোন ধরছেনা!!' বলেই আরো শব্দ করে কান্না শুরু করে রেশমা।

হাসনাইন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, 'এখন কেউ বেরুবেননা। রেশমা ম্যাডাম, আর ডি.জে আপনারা, আপনারা স্টুডিও রূমের ভেতর বসে থাকুন। হামিদ সাহেব, লাবু ভাই, টুটুল সাহেব আপনারা এই রূমে। এমনও হতে পারে খুনী এখনও এ বিল্ডিংয়েই আছে, এবং তার মূল টার্গেট কিন্তু ম্যাডাম। আপনারা কোনভাবেই বেরুবেননা, মনে থাকবে? অফিস ভেতর থেকে লক করে রাখুন, আমাকে ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেবেননা।' সবাইকে যথাযথ করে তারপর গার্ডম্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, 'আর আপনি চলুন আমার সাথে।'

লিফটের পাশের বারান্দা থেকে কালামকে সাথে নিয়ে লিফটের পাশের সিঁড়িটি দিয়েই নিচে নেমে যায় হাসনাইন, নামতে নামতে রাজুকে ভুঁইয়া টাওয়ারের পার্কিংয়ে আসতে বলে আর গুলশান থানায় ফোন করে জানায় যে অন্ততঃ পাঁচজন স্পট স্পেশালিস্টকে পাঠাতে।

খুনটা হয়েছে বেইসমেন্ট পার্কিংয়ে। লিফট দিয়ে নেমে গেলে বেশ খানিকটা পথ ঘুরে যেতে হয় সেখানে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেও একই, প্রথমে ভুঁইয়া টাওয়ারের লবি, লবির শেষ মাথায় গিয়ে একটা প্যাসেজ ধরে হেঁটে যেতে হয় বামে। সেখান থেকে আবার ডানে খানিকটা গেলে গার্ডম্যানের রুমের কাউন্টার জানালা। জানালা পার হয়ে সামনে গেলে বেইসমেন্ট পার্কিংয়ের দরজা। হাঁটতে হাঁটতেই ক্লান্ত হয়ে যাবার উপক্রম সবার, মুসলিম সবাইকে নিয়ে পার্কিংয়ে পথ দেখায়।

পার্কিংয়ের ১ম সারিতেই শুধু দুটো গাড়ী দেখা যাচ্ছে, একটা সবচেয়ে ডানে রাখা, জীপ টাইপের গাড়ী, আর আরেকটা সেডান কার মাঝামাঝি অংশে রাখা। সেডানটার চারপাশটা রক্তে ভেসে একাকার হয়ে গেছে। কাছে গিয়ে আলো ফেলে গাড়ীর ভেতরের ডেডবডি সনাক্ত করে হাসনাইন, নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে নিহত মেয়েটি পিয়া ছাড়া আর কেউ নয়। বজ্রাহতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে হাসনাইন, কয়েক মিনিট সময় লাগে তার ধাতস্থ হতে।
তারপর কালাম আর রাজুকে বলে রক্ত যতটুকু ছড়িয়েছে শুধু ততটুকুএলাকার চারপাশটা চকের দাগ দিয়ে ঘিরে দিতে, বাকীটা স্পট স্পেশালিস্টরা আসলে যা করার করবেন। এই ফাঁকে সে নিজেও মুসলিমের থেকে কিছু তথ্য নিয়ে নেয়।

মুসলিমকে এখনও ধাতস্থ দেখাচ্ছেনা, আতংকে তার দুচোখ বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। এমনিতেই মৃতদেহটি প্রথম দেখেছে সে, এবং এমন ঘটনা এর আগে কখনও সে দেখেনি। তারওপর পার্কিংয়ের আশপাশে কাউকে সে ঢুকতেও দেখেনি আজ। কে কখন ঢুকে খুন করলো -- এটুকু ভাবতেই তার মাথা ঘোরা শুরু করে, সে বুঝতে পারেনা সে কি কৈফিয়ত দেবে। তারওপর হাসনাইন যখন সবাইকে রেখে শুধু মুসলিমকে নিয়ে নিচে নেমে আসে তখন তার আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড়।

হাসনাইন মুসলিমের কাঁধে হাত রেখে খুব শান্তস্বরে বলল, 'আপনার নাম কি'।

'স্যার, আমার নাম মুসলিম, মুসলিম মিঞা।' কাঁদো কাঁদো স্বরে জবাব দেয় মুসলিম।

'আচ্ছা মুসলিম মিঞা, শোনেন, আপনি একটুও ভয় পাবেননা, আমি শুধু আপনার থেকে কিছু কিছু জিনিস জেনে নেব। যে জিনিসগুলো আমি জানিনা সেগুলো আপনাকে জিজ্ঞেস করব। আপনি শুধু সবকিছু সম্পর্কে যা যা জানেন, আমাকে পরিষ্কারভাবে বলবেন। কিচ্ছু লুকোবেননা, ঠিক আছে?'

'আইচ্ছা স্যার, আইচ্ছা।' মুসলিম আর থাকতে পারেনা, কেঁদেই ফেলে, 'আমি লুকামু ক্যা! আমি তো অন্যায় কিছু করিনাই স্যার।'

'আপনি ভয় পাবেননা, আমি আপনাকে মোটেও সন্দেহ করছিনা।' হাসনাইন সাহস দেয় মুসলিমকে, তারপরই জিজ্ঞেস করে, 'ঠিক কখন আপনি আবিস্কার করলেন খুনের ব্যাপারটা?'

'স্যার, প্রত্যেকদিন দশটার আগে আমি পার্কিং আর একতলার লবিতে রাউন্ড দেই একবার। আজকেও দিলাম, শুরু করছি পার্কিং দিয়া, এই মুনে করেন দশটা বাজার ৫ মিনিট আগে।' মুসলিম বলে যায়।

'আপনি কি কাঁটায় কাঁটায় বলতে পারবেন? রাউন্ড দিতে বের হবার আগে ঘড়ি দেখে নেননা?'

'হ স্যার, দেখছি, ঐ যে পভা রহমানের গান শেষ হইলনা, তার পরপরই বাইর হইয়া গেছিলাম।'

হাসনাইন ডায়েরীতে নোট করে নেয়।
তারপর আবার জিজ্ঞেস করা শুরু করে, 'তখন পার্কিংয়ে কয়টা গাড়ী ছিল?'

'দুইটা, এই দুইটাই, স্যার।'

'আর কিছু ছিলনা? এই ধরেন, মোটর বাইক, বা সাইকেল?'

'না স্যার? এইখানের সিস্টেম তো কড়া। বাইরে থেকা বেজমিন্টে গাড়ী ঢুকতে হইলে পরথমে গেইটের বাইরের বুতাম চাপতে হয়, তখন আমার এইখানে ক্যামেরার মাইধ্যমে ছবি আসে, আমি ভিতর থেকা বুতাম টিপা গেইট খুইলা দিই।'

'ছবি দেইখা ক্যামনে বুঝেন ঢুকতে দিবেন কি দিবেননা?'

'ছবি দেখিনাতো, রেজিস্টার বুকে গাড়ী নাম্বার লেখা থাকে, সেইটা দেইখা মিলাই।'

'আজকে সন্ধ্যায় মোট কয়টা গাড়ী ঢুকেছে, সেগুলো কখন ঢুকেছে কখন বের হইছে এইসব রেকর্ড কি আপনার কাছে আছে?'

'আছে স্যার, সব আছে। আমার রুমের কাউন্টার জানালার সামনে খাতা আছে, ঐখানে সবাই ঢুকার আর বাইর হওনের সময় নাম আর সময় লিখা যায়। তবে স্যার, ম্যাডামের ডাইভার যখন গাড়ী নিয়া ঢুকল, তারপর থেকা আর কেউ ঢুকে নাই, বাইরও হয়নাই।'

'ম্যাডামের ডাইভার মানে?'

'ঐ যে মহিলা মারা গেল, উনিই ম্যাডামের গাড়ী চালায়না? আরেকটা যে জীপ টাইপের গাড়ী ঐডা হইল গিয়া তারুণ্যের মালিক হামিদ ভাইয়ের।'

'ম্যাডামের ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে কখন এসেছে, সময় মনে আছে আপনার?'

'পুরাটা তো খেয়াল নাই, তবে নয়টার আগেই আসছে বইলা মনে হয়। পভা রহমানের অনুষ্ঠান শুরু হইলনা? তার আগে আগেই।'

'আপনে তো মনে হয় সারাক্ষণ প্রভা রহমানের অনুষ্ঠানই দেখছেন, আপনের চোখ ফাঁকি দিয়া কেউ পার্কিংয়ে ঢুইকা খুন কইরা আবার বাইর হইয়া যায়নাইতো?'

'না না স্যার! এইডা ক্যামনে হয়? পার্কিংয়ে ঢুকার পথতো এই একটাই, আমি তো এই জানালার সামনেই বইসা থাকি।'

'সারাক্ষণ বইসা থাকেন? আপনার টিভি কোথায়? আপনি যখন প্রভা রহমানের গান দেখতেছিলেন, তখন কেউ ঢুকে খুন করে যায়নাই নিশ্চিতকরে বলতে পারবেন?'

'স্যার। আমি গান দেখছি সইত্য, কিন্তু কেউ এইখান দিয়া গেলে টের পামুনা?' বলতে বলতে মুসলিমের গলা শুকিয়ে আসে, আজকে সে আসলেই কিছু খেয়াল করেনি। প্রভা রহমানের অনুষ্ঠান শুরু হবার পর তো আরো না। কারণ, আজ তার কাছে বেইসমেন্ট পার্কিং বুকিংয়ের জন্য শুধু রেশমার গাড়ীর নাম্বারই এসেছে, তো সেটা ঢুকে যাওয়ার পর মুসলিম ভেবেছে তার মূল কাজ তো আজ শেষই। কিন্তু একথা বলার সাহস সে কোনভাবেই পাচ্ছেনা! বরং, পার্কিংয়ের যে গেইট দিয়ে বেইসমেন্টে গাড়ী ঢুকে সেটার ফাঁকফোকর দিয়ে শুকনো একটা মানুষ যে সহজেই ঢুকে যেতে পারে এটা বলাকেই সে বেশী নিরাপদ মনে করে। হাসনাইন সেটারও নোট নেয়।

এরমধ্যেই স্পট স্পেশালিস্টরা চলে আসল, তারা নানান মাপজোক করে মার্ডার এরিয়া কে ব্লক করে দিল। গাড়ীর ভেতর থেকে পিয়ার লাশ বের করে এনে প্রাথমিক চেকআপের পর যে রিপোর্ট দিল তা হলো, পাথর দিয়ে মাথায় উপর্যুপুরি আঘাতে মারা হয়েছে তাকে। খুনটা ঘটেছে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে, পিয়া গাড়ী ড্রাইভ করলেও ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে ছিল, যেখানে সাধারণত রেশমা বসে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে বলা যায় যে পিয়া আত্নরক্ষার জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি, বা সেজন্য সে কিছুই করতে পারেনি। খুনের সময়টা অনুমান করা হচ্ছে নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে।

হাসনাইন তার চিন্তাগুলোকে আবার সাজাতে বসল, কিন্তু প্রথমেই তার মাথায় যা আসল তা হলো, 'এখানে খুন হতে যাবে কেন?'

রাজু এসে জানাল, পাথরটা পাওয়া গেছে কিন্তু তাতে কোন হাতের ছাপ নেই। আর পিয়ার গায়ে রেশমার কার্ডিগান ছিল যেটা থেকে রাজুর ধারনা খুনী রেশমাকেই খুন করতে এসেছিল, কিন্তু ভুল করেছে। কারণ পিয়াকে পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়েছে মাথার পেছনে, রাজুর মতে, খুনী পিয়ার মুখই দেখেনি।

'কিন্তু পিয়ার চুল কোঁকড়ানো, আর রেশমার চুল সোজা' হাসনাইন বলে।

'স্যার, এই আলোতে চুলের টাইপ বোঝার কথা না, এর চেয়ে অফহোয়াইট কার্ডিগান অনেক হাইলাইটেড হবে।' কালাম রাজুর পক্ষে যুক্তি দেয়।

চুইংগাম চিবোতে চিবোতে রাজু বলে, 'যেই ছোকরা দুটোকে নিয়ে মেয়েটা বের হয়ে গিয়েছিল, ওরা কোথায়? হাসনাইন ভাই, ওদেরও ধরে আনতে হবে।'

হাসনাইন খানিকক্ষণ ভেবে বলল, 'ঠিক আছে, আগে উপরে চল। রেশমা ম্যাডামকেও ব্যাপারটা ব্রিফ করতে হবে।'

তারুণ্যের অফিসের ভেতরে তখনও থমথমে অবস্থা। রেশমা বজ্রাহতের মতো বসে আছে, মনের কুডাকের কারণেই সে সবাইকে বারবার বলে যে নিহত মানুষটি পিয়া ছাড়া আর কেউ না। আটটা চল্লিশে পিয়া এস.এম.এস করে জানিয়েছে যে এখন সে গাড়ী পার্কিংয়ে ঢোকাচ্ছে, তাই আর কে খুন হবে রেশমার গাড়ীতে বসে থেকে। লুৎফা তার পিঠে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করছে, আখতার এখনও আতংকিত। লাবু ভাই ঘরের ভেতর আর থাকতে পারছেনা, হাসনাইন এসে ঢোকা মাত্রই বলে,'হাসনাইন সাহেব, আর কতক্ষণ আমরা আটকা থাকব? কে মারা গেছে?'

হাসনাইন দম নিয়ে আস্তে আস্তে বলে, 'রেশমা ম্যাডাম, আই এ্যাম ভেরী স্যরি, আপনার সেক্রেটারী মিস পিয়াই খুন হয়েছেন।'

রেশমার চেহারা দেখে মনে হলো তার শেষ আশাটাও টুপ করে নিভে গেছে, কোনমতে যদি এমন হতো যে মুসলিম যে গাড়ীটাকে রেশমার গাড়ী ভেবেছে সেটা আসলে অন্য কারো -- এটুকু আশা সে করছিলো লুৎফার সাথে, কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেল। রেশমার আদরের ছোটবোন, আপন না হোক, এবং সিনে বিজনেসে তার সবসময়ের সঙ্গী পিয়া নেই! চেহারা ফ্যাকাশে হতে হতে একেবারে সাদা হয়ে গেল যেন তার।

এরমধ্যেই হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল, টুটুল ফোন ধরল। টুকটাক কি কথার পর মুখ তুলে রেশমাকে বলল, 'ম্যাডাম জানিনা আসল না নকল, রুনা লায়লা আপনার সাথে কথা বলতে চায়।'

রেশমা অবাক হয়ে ছুটে গেল ফোনের দিকে, বিহবলের মতো কথা বলল, বেশীর ভাগই 'অনেক ধন্যবাদ', 'অবশ্যই' 'দোয়া করবেন' ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফোন রাখার পরই হামিদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, 'আসলেই রুনা লায়লা?'

রেশমা কিছুটা উচ্ছসিত মুখে বলল, 'হ্যাঁ, উনিই। বললেন আমার গান বিশেষ করে খালি গলার গানটা তাঁর অনেক ভাল লেগেছে। অবশ্য একটু খোঁটাও দিয়েছেন, বললেন, নিশ্চয়ই আমি খালি গলায় গানটা অনেকবার প্র্যাকটিস করেছি, আসলে তো একবারও সময় পাইনি।'

'কি বললে? আসলেই রুনা লায়লা!' লুৎফা যেন এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল একটু আগে কি ঘটেছে, এসে জড়িয়ে ধরল রেশমাকে। হামিদ সাহেব, লাবু ভাইর চোখও একটু সুখী সুখী দেখাচ্ছে।

আখতারও কিছুটা উচ্ছসিত হয়েই বলল, 'ওয়াও, কূল! কি চমৎকার একটা প্রোগ্রাম হলো আজ' একটু দম নিয়ে হতাশার সাথে বলে উঠল, ' নো! শিট্! হু দ্য হেল কেইম টু কিল সামবাডি টুডে!!'

আখতারের চিতকারে সবাই হতভম্ব ও বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকায়। রেশমাও স্তম্ভিত হয়ে যায় ছেলেটির এমন বক্তব্যে। কারণ তাকে এত উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে কেউ কখনও দেখেনি।

শুধু হাসনাইন টেবিলের দিকে মুখ নীচু করে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসে। মনে মনে বলে, 'ক্রিমিনাল বাবাজী! তুমি নিজেই তো সবস্বীকার করে ফেললে।'

হাসনাইন যখন তার ক্রুর হাসিটা মুখে রেখেই মাথা উপর দিকে তোলে, তখনও সবাই আখতারের দিকে হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ তখনও জানতে পারেনি যে গোয়েন্দা হাসনাইন খুনের রহস্যটিকে প্রায় গুছিয়ে ফেলেছে।

প্রিয় পাঠক, এখন নিশ্চয়ই আপনারও বুঝতে বাকী নেই যে কে জড়িত খুনে?

(চলবে)


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এদিক জল ঢালার মত কল কল করে লেখে যায়।
শুধু জ্বিন না জ্বিনের বাদশা!

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পাঠক এখনই বোঝে নিতে চায়না । লেখক সাহেবকে আরো সময় দিতে চায় ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

শোহেইল ভাই, জিনরাও যোগ দিছে, রহস্য উদঘাটন বলে কথা! হাসি
মোরশেদ ভাই, সময় নিলাম হাসি ,,, আর ২ পর্ব
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কিন্তু ওদিকে যে নং ৯ নেমে গেলো দেখলাম হাসি
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই পুরো সিরিজ ব-eহিসাবে সংরক্ষন করলেন না কেনো?
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ব-e র ব্যাপারটা মাথায়ই আসেনি ,,, আসলে এই প্রথম এত বড় গল্প লিখতে পেরেছি ,,, আসলে মাথায় প্লট অনেক ,,, কিন্তু সময় নেই ,,, লেখালেখিও কখনও করিনি ,,, এখন নেটের বাংলার সুবাদে লেখালেখির চেষ্টা আর কি হাসি

বস্,ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য ,,, সিরিজ শেষ হলে আরেকটু ঘষামাজা করে ঢোকাব ব-e তে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

খুব ভালো খবর ।
এরকম লেখাগুলো অবশ্যই ব-eহিসাবে সংরক্ষন করবেন যেনো একজন নতুন পাঠক সহজেই প্রথম পাতা থেকে পড়ার সুযোগ পায় ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি তো স্বপ্ন দেখি,সচলায়তনের লেখকেরা একসময় শুধু সচলায়তনের জন্যই ভালো ভালো লেখা দেবেন । পাঠকেরা সচলায়তনে আসবে তার প্রিয় লেখকের লেখা পড়ার জন্য ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শ্বাসরুদ্ধকর পর্ব। দারুণ হয়েছে। বিবরণে মেদ নেই। আমি ইম্প্রেসড!
থ্যাংকস ভ্রাত:!

অতিথি এর ছবি

ব্যাপার কী? কাজিন কাম সেক্রেটারি মইরা গেছে, আর রুনা লাইলার ফোন পাইয়া নাচে??

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

শিমুল, ধন্যবাদ অনুপ্রেরণাদায়ক কমেন্টের জন্য
অতিথি, দূঃসম্পর্কের কাজিন তো ,,, আর একজন গায়িকার কাছে রুনা লায়লার ফোন ফাটাফাটি কিছু এরকম দেখাতে চেয়েছি আরকি হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।