একটি অনুগল্প : বায়োকেমিস্ট রাশেদের আশ্চর্য আবিস্কার

কীর্তিনাশা এর ছবি
লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: বুধ, ১৪/০১/২০০৯ - ৪:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বায়োকেমিস্ট রাশেদ সাহেব তার নিজস্ব গবেষনাগারে বসে কি সব নাড়াচাড়া করছিলেন। হঠাৎ সেখানে ঝড়ের বেগে তার গৃহ ভৃত্য নুরুর আগমন। সে একটানা হেসেই যাচ্ছে - হা হা হা, হো হো হো। রাশেদ সাহেব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন - কি রে অমন ফ্যাক ফ্যাক করে হাসছিস কেন? লাফিং গ্যাস ঢুকেছে নাকি পেটে?

নুরু তার হাসির ফাকেই বলতে লাগলো - সার রাস্তার মোড়ের মাঠে মতিগো গরুডার পিঠে একটা কুত্তা উঠছে। তারপর চাইর পায় গরুডার পিঠ খামচাইয়া ধইরা ইচ্ছা মতো গরুডার হোগা মারতাসে। গরুডা ল্যাজের বাড়ি মাইরাও কুত্তাডারে সরাইতে পারতাসে না। ঐ ল্যাঞ্জার ফাক দিয়াই কুত্তাডা সমানে মাইরা যাইতাসে। হো হো হো!

রাশেদ সাহেব হাসি মুখে বললেন - বলিস কি?

নুরু বলল - হ সার! মতি মিয়া একটা লাডি দিয়া কুত্তাডারে সমানে পিডাইতাসে। তাও কুত্তাডা নামে না। হে হে হে! নুরুর হাসি আর থামতেই চায় না।

পরিচিতদের কাছে পাগলাটে বলে ক্ষ্যাত রাশেদ সাহেব তিড়িং করে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর দু'পাক নেচে নিলেন হুররে বলে। দেখে নুরুর হাসি থেমে গেল। সে জিজ্ঞেস করলো - কি হইসে সার?

রাশেদ সাহেব বললেন - সে কথা পরে হবে। আগে বল তোর গা থেকে এমন মাছের গন্ধ আসছে কেন? গন্ধে আমার বমি পেয়ে যাচ্ছে। এদিকে আয়! নুরু গোমড়া মুখে রাশেদ সাহেবের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো আর মিন মিন করে বলল - মাছের বাজার দিয়া আসছি। মাছের গন্ধ আইবো না তয় কি ফুলের গন্ধ আইবো?

রাশেদ সাহেব টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট শিশি বের করলেন। তারপর শিশির মুখটা খুলে নুরুর গায়ে তা থেকে কিছু তরল ছিটিয়ে দিলেন আর বললেন - নে তোর গায়ে আঁতর ছিটালাম। আর দুর্গন্ধ আসবে না। এখন যা মোড়ের দোকান থেকে গরম চা আর সিঙ্গারা নিয়ে আয়। তোর জন্যও আনিস দুজন মিলে খাবো।

নুরু টাকা নিয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই হঠাৎ বাইরে তুমুল একটা শোরগোল শোনা গেল। কেউ একজন তারস্বরে চেঁচাচ্ছে - ওরে মারে! ওরে বাবারে! খাইয়া হালাইলো রে! মাইরা হালাইলো রে! আর সেই সাথে কিছু কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকারও শোনা গেল। এর মাঝেই নুরু এসে ঘরে ঢুকলো। তারপর সপাটে দরজা বন্ধ করে দিল। হাপাচ্ছে সে ভিষন। রাশেদ সাহেব আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

একটু নিজেকে সামলে নিয়ে নুরু বলল - সার রাস্তার কুত্তাগুলা সব পাগল হইয়া গেছে। সবগুলা মিল্লা আমারে এমন দৌড়ানি দিছে! ধরতে পারলে আমার জানটা গেছিল আজকে। বাইরে তখনো কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে - ঘেউ ঘেউ ঘেউ!

রাশেদ সাহেব আবারো নেচে উঠলেন সাথে চিৎকার - হুররে ! মার দিয়া কেল্লা! তার আচরনে নুরু আবারে থমকে গেল। বলল - সার এদিকে আমার জান নিয়া টানাটানি আর আপনে করেন নাচানাচি। এইটা কেমন ইনসাফ হইলো?

রাশেদ সাহেব হেসে উঠলেন - আরে রাগিস না রে গাধা! তুই জানিস না কত বড় আবিস্কারে তুই সাহায্য করেছিস আমাকে। এখন যা গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে আয়। তোর সামনে এখন অনেক কাজ।

নুরু গজ গজ করতে করতে গোসল করতে গেল। সে ফিরে আসতেই রাশেদ সাহেব তার দিকে অনেক গুলো আঁতরের শিশি এগিয়ে দিলেন সাথে একটা কাগজ - এই নে এই আঁতরগুলো এই কাগজে লেখা ঠিকানাগুলোয় কুরিয়ার করে দিয়ে আয় এক্ষুনি।

নুরু জিজ্ঞেস করলো - কিন্তু সার, এতকিছু থাকতে আঁতর পাডাইতাছেন কারে? রাশেদ সাহেব আবারো হাসলেন - শোন এটা যেই সেই আঁতর না। এই আঁতরে এমন এক সুগন্ধি ব্যাবহার করেছি আমি যা কোন কুকুরের নাকে গেলে সেই কুকুর পুরোপুরি কামোন্মাদ হয়ে যাবে। এই গন্ধ যার শরীর থেকেই আসুক, সে মানুষ, গরু কি বাঘই হোক কুকুর তার দিকে ছুটে যাবে যৌনাকাঙ্খা মেটানোর জন্য। আর মদ্দাগুলো কোন একটা ছিদ্র পেলেই হোল, অমনি তার অঙ্গখানা ঢুকিয়ে মারা শুরু করে দেবে। সকালে আসার পথে ঐ গরুটার গায়ে এই আঁতর ছিটিয়ে দিয়েছিলাম কিছুটা তাই গরুটার ঐ দশা। তোর গায়ের মাছের গন্ধও দূর করেছিলাম এই সুগন্ধী দিয়ে। তাই তোকেও কুকুর তাড়া করেছিল। যাক সে কথা এখন যা ওগুলো কুরিয়ারে দিয়ে আয়।

এসব কথা শুনে নুরুর মুখ হা হয়ে গেল। বলল - সার এত বড় সব্বোনাশটা কার করতে চাইতাসেন? যারাই এই আঁতর মাখবো তারাই তো কুত্তামারা খাইবো!

আরে সেটাই তো আমি চাই - রাশেদ সাহেব বললেন - ঠিকানার নামগুলো দেখ সবগুলা যুদ্ধাপরাধী। একাত্তরের রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস। ওদের জন্যই আমার এ আঁতর আবিস্কার। আরো ঠিকানা জোগাড়ের চেষ্টা করছি। একে একে সবগুলার কাছেই পাঠাবো। শয়তান গুলার একটাও যদি কুকুরের কাছে ধরা খায়, তাহলেই আমার আবিস্কার স্বার্থক।

নুরু বলল - তাইলে যাই সার, অক্ষনই কুরিয়ারে দিয়া আসি। কিন্তু সার ব্যাটারা যদি এইটা নিজে ব্যাবহার না কইরা অন্য কাউরে দেয়?

দিলে তো ওদের সাঙ্গ-পাঙ্গ, বন্ধু-বান্ধবকেই দেবে - রাশেদ সাহেবের উত্তর - যারা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সম্পর্ক রাখে তাদেরও শাস্তি পাওয়া দরকার। যা তুই দিয়ে আয়।

নুরু : হ সার, দিয়া আসি। হালারা মাগনা আঁতর পাইয়া খুশি হইয়া গায়ে মাখবো আর রাস্তায় বাইর হইলেই কুত্তামারা খাইবো। কেন খাইলো বুঝবারও পারবো না। খা হালারা কুত্তামারা খা!!


মন্তব্য

আরিফুর রহমান এর ছবি

হাহাহাহ! বেড়ে আবিষ্কার।

কি কি সব ফেরোমেন মিশিয়ে এ্টা তো বাস্তবেই করা সম্ভব!

কীর্তিনাশা এর ছবি

তাই নাকি? জানতাম না তো !

হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

eve এর ছবি

সত্যি যদি এরকম আতর তৈরি করা যেতো!

কীর্তিনাশা এর ছবি

হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আহারে !
এইরকমটা সত্যি হলে কি ভালোই না হতো !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

কীর্তিনাশা এর ছবি

হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নিবিড় এর ছবি

নাশু ভাই আপনার কারখানা দেখি আবার পুরাদমে চালু হইছে চলুক পারফিউম সিনেমার গল্প মনে পড়ে গেল আপনার এই অণুগল্প পড়ে ।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

কীর্তিনাশা এর ছবি

না রে ভাই ঠিক করছি ফ্যাক্টরি আর চালামু না।

পারফিউম সিনেমাটা কি খুব ভালো? তাইলে দেইখা ফালামু।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

নাশু ভাইয়ের ফ্যাক্টরীতে দেখি আতর-ও তৈরি করা হয়! এই অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের জন্য নাশু ভাইকে মেডেল দেয়া হলো হো হো হো

কীর্তিনাশা এর ছবি

মেডেল কি তামার না দস্তার?
গোল্ড তো দিবেন না জানিই। মন খারাপ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সোনা, রূপা, হীরা, পিতল, তামা - সব মেডেলই থাকবে। যে-টা খুশি বেছে নিয়েন খাইছে

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা হা ! এক্কেবারে নাশ করছে, কীর্তি নাশ করছে...!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কীর্তিনাশা এর ছবি

মন খারাপ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

কীর্তিনাশা এর ছবি

তথাস্তু গুরু গুরু গুরু

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রুমি [অতিথি] এর ছবি

ভাই,
কঠিন লেখা।
তয়, এই আতরের খুব দরকার হয়ে পড়েছে।

কীর্তিনাশা এর ছবি

হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
কীর্তিনাশা এর ছবি

চুটকিই তো বস্ হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ঝরাপাতা এর ছবি

একটু ইয়ে হলেও ইয়েটা খারাপ হয়নি..... ইয়ে মানে বুঝে নিয়েন।


নিজের ফুলদানীতে যারা পৃথিবীর সব ফুলকে আঁটাতে চায় তারা মুদি; কবি নয়। কবির কাজ ফুল ফুটিয়ে যাওয়া তার চলার পথে পথে। সে ফুল কাকে গন্ধ দিলো, কার খোঁপায় বা ফুলদানীতে উঠলো তা দেখা তার কাজ নয়।
___________________________ [বুদ্ধদেব গুহ]


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

কীর্তিনাশা এর ছবি

বুঝছি হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

অ্যাঁ

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।