ফেলে আসা ছেলেবেলা পাঠ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: শুক্র, ১৯/১০/২০০৭ - ৬:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : লেখাগুলো পড়ে একদম যা মনে হয়েছে তাই লিখেছি। কোনো ভাণ ভণিতা ছাড়া... কেউ মন খারাপ করলে আমি দায়ী না।

ঈদ শেষ করে গতকাল ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম... টানা কয়েকদিন কাজ করবো বলে। কিন্তু তা আর হলো কই ? ফেলে আসা ছেলেবেলা পড়তে বসলাম... আর দৌড়াতে লাগলাম নিজের ছেলেবেলার চারণভূমিতে। আহা...
প্রচ্ছদটা দেখেই এত্ত মায়া লাগলো... মনে হলো সেই তিন বালকের হাত ধরে আমিও ফিরে যাই সেই দিনগুলোতে। ফিরে যাই ঘুড়ির মতো ভো-কাট্টা সুখের দিনগুলোতে... মার্বেলগুলোতে... লাটিমগুলোতে। অসাধারন।
ছোট্ট বলাই দিয়ে শুরু... তার সাথে বটমূলে পাটি বিছিয়ে ক্লাশ করতে করতেই পৌঁছে গেলাম অমিত আহমেদ'র স্বপ্ন বোঝাই কাগজের নৌকায়। দারুন একটা ছেলেবেলা তার... খুব ভালো লাগে তার দূরন্তপণাগুলো... আরও ভালো লাগে মিরপুরের পোলা শুনে (আমিও মিরপুরের তো) আর ঈর্ষা লাগে তার একখান ছোটভাই ছিলো বলে। আমার সারাজীবনের খায়েশ ছিলো আমার যদি একটা ছোট ভাই বা বইন থাকতো... কিন্তু কপালমন্দ। আর এই ছেলেবেলা পড়তে গিয়ে দেখি প্রায় প্রত্যেকেরই একটা করে ছোট ভাই বা বোন ছিলো। ইশ্...। তবে অমিত'র ছেলেবেলাটা সত্যিই খুব মজার... এত্ত বড় লেখাটা পড়েও একটুও বিরক্ত লাগেনি। অরূপ'র ছেলেবেলাটাও... একটু বিজ্ঞানভিত্তিক।
অলৌকিক হাসান'র প্রেজেন্টেশনটা সুন্দর... ভালো লাগছে... মারামারির ঘটনাগুলো কমন পরে গেছে।
আমার ছোটবেলায় জ্বীন পরীর ঘটনা নেই একটা। তাই আনোয়ার শাদাত শিমূল'র ছেলেবেলাটা আমার কাছ থেকে আলাদা মনে হয়। আমাকে স্পর্শ করে কম। আরণ্যক সৌরভ'র পাঁক পেরিয়ে যেইনা আবু সায়ীদ জিয়া উদ্দিন'র ছেলেকালে ঢুকি... উফ... দারুন। কি কপাল তাইনা ? উনি বিজয় দেখেছেন। ইশ্... ঈর্ষা হয়।
আহমেদ রাহিদ অমিত'র বর্ণনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার স্মৃতিটা আবছা আবছা উঠে আসে... ছোটবেলায় আমি ঐ অঞ্চলে একা একা হাঁটতাম অনেক। হুদাই। ইশতিয়াক রউফ'র দাঁত পড়ে যাবার ঘটনায় মনে পরে হুদাই ঘুষাঘুষি করতে গিয়া নিপুনের একটা দাঁত আমি ফালায়ে দিছিলাম। ইশ্... ক্ষমা করিস বন্ধু। মাহবুব মুর্শেদের লেখাটা আগেই পড়ছিলাম। সেই একই অনুভূতি... বাবাকাতর হৈলাম আবার। বাপরে।
নিঘাত তিথির লেখাটা পড়তে বসলাম... হায়... লেখা এত ছোট কেনে ? কনফুসিয়াসও দেখাদেখি একই কাজ করলেন ? বিস্কুট দিয়েই ছেলেবেলা পাড় ?
প্রকৃতি প্রেমিকের ছেলেবেলাতে খালি ইশ্কুল ইশ্কুল গন্ধ... আর এমন দুম করে শেষ করে দিলেন যে ?
ফারুক হাসান মনে ধরিয়ে দিলেন নৌকায় করে বরযাত্রীর ঘটনা... ছেলেবেলায় আমিও এরকম এক বরযাত্রীর সাথে ফিরেছিলাম রাতে... নৌকায় শুয়ে... আকাশে ছিলো লক্ষ লক্ষ তারা... ছায়াপথ বুঝি। আহা... সেই রাতে আমার প্রথম বিয়ে করার ইচ্ছে যাগে। আহ্
বিপ্লব রহমান'র পাজলে ছোটর চাইতে বড়র গন্ধই বেশি লাগলো... একটা অনেক পরিণত চোখ... ছোটত্বটা হারিয়ে গেলো কেমন।
তবে মাশীদ'র পলকের এক ছেলেবেলাটা দারুন লাগলো... ঝরঝরে একটা ছেলেবেলার ঝরঝরে বর্ণনা। দারুন।
দ্রোহীর ছেলেবেলাটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। খুব মজাসে শুরু... হাসতে হাসতে পেটে খিল... গরুর একটা পোঁদ আছে বা খালেদা জিয়াকে বিয়ে করার খায়েশ... হা হা হা... হাসতে হাসতে কখন যে কাঁদতে চলে গেছি... শেষটা খুব ছুঁয়ে গেলো... সত্যি।
মুকিত'র বেঁচে থাকার সংগ্রাম ছাড়িয়ে বাবা উঠে আসেন। আবারো আমি বাবাকাতর হই। আর এটা শেষ করতে না করতেই শেখ জলিল'র বাবাকে মনে পড়ে... উফ... কি শুরু হইলো ? ওমা... হাসিব মাহমুদও যে বাবারই গল্প শুরু করলেন। আমার ছেলেবেলা ভর্তি বাবাবেলা দেখি। তবে মসজিদ শবেবরাতের স্মৃতিগুলো মজার... একেবারে আমার ছেলেবেলার মতো।
হাসান মোরশেদ'র হাসিনাকে ঘিরে কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ লেখাটা চমৎকার... ছুঁয়ে যায়... কিন্তু এটাও কেমন জানি বড়দের চোখে দেখার মতো লাগে... ছোটত্বটা পাইনা।

তবে সবমিলিয়ে সত্যি দারুন লাগলো... দুনিয়ার কাজ ফেলে সারাদিন শুধু এটা নিয়েই পরে থাকলাম কি আর সাধে ? দারুন... আরিফ জেবতিক'কে সত্যি খুব ধন্যবাদ। আর আসলে সবাইকে ধন্যবাদ। গোটা একটা দিন আমার নষ্টালজিয়ায় কাটলো... রাতটাও কাটবে নিশ্চয়ই।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এক চুমুকে প্রায় পুরোটা হাসি
বেশ ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আসলে এটা পড়ে শেষ না করলে কাজে হাত দিতে পারছিলাম না... তাই একদমে শেষ করে ফেললাম। তারপরেও চিন্তাভাবনা কাজে ডোবাতে পারছিলামনা বলে বৃহৎ মন্তব্যটা করে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। তারপর বউ বাচ্চা নিয়ে ঘন্টাখানেক ঘুরাঘুরি করলাম... ফুচকা খাইলাম।
এখন সটান কাজে বসবো...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসিব এর ছবি

সতর্কীকরণটা পড়ে সেকেন্ড দশেক থম মেরে ছিলাম । ঠিক যেন স্কুলে অংক পরীক্ষার এক্সাম হলে খাতা বিলি করছে স্যারেরা এরকম সময় যে অনুভুতি হতো সেরকম । তবে পুরোটা পড়ার পর প্রশ্ন সোজা হয়েছে টাইপের অনুভুতি আসলো ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হো হো হো

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হা হা হা হা... মন্তব্যটাতে মজা পাইলাম। প্রশ্ন আসলেই সোজা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অমিত আহমেদ এর ছবি

জটিল বিশ্লেষণের জন্য বিপ্লব!
দ্বিতীয় পর্বে আপনার ছেলেবেলা পাচ্ছি তো?


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভালো বিশ্লেষণ।

দ্রোহী এর ছবি

আপনার বিশ্লেষণটাও চমৎকার হয়েছে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছেলেবেলা লেখাটা কঠিন না... আমি নিশ্চিত লেখতে বসলেই গড়গড় করে লিখে ফেলতে পারবো... কিন্তু মূল সমস্যাটা হবে এরপর... লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে... সেটা কেটে ছোট করাটা কঠিন... দেখি তাও লিখতে চেষ্টা করবো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

নজরুল ইসলাম লিখেছেন:
ছেলেবেলা লেখাটা কঠিন না... আমি নিশ্চিত লেখতে বসলেই গড়গড় করে লিখে ফেলতে পারবো... কিন্তু মূল সমস্যাটা হবে এরপর... লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে... সেটা কেটে ছোট করাটা কঠিন... দেখি তাও লিখতে চেষ্টা করবো।

বড়ো লেখা লেখতে আপনার অসুবিধাটা কী?
পরের কিস্তিতে জুবায়ের ভাইয়ের লেখা আসছে ।শব্দ সংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি । হো হো হো

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বড় লেখা লেখতে আমার সমস্যা নাই... কিন্তু এত বড় একটা লেখা দিতে অস্বস্তি... মাইনষে কি কইবো ? ঠিক আছে... ২৫ তারিখের পরে বইসা একদিনে নামায়া ফেলবো লেখা। তারপর আপনে ভরসা।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রকৃতি প্রেমিকের ছেলেবেলাতে খালি ইশ্কুল ইশ্কুল গন্ধ... আর এমন দুম করে শেষ করে দিলেন যে ?

কী করব ভাই, লেখালেখি শিখছি মাত্র। তবে ছেলেবেলাটা আবার নতুন করে লিখব। সেখানে স্কুলের পাশাপাশি দিনযাপনের বিষয়গুলোও তুলে ধরব। আমি ঠিক করেছিলাম ছেলেবেলাকে হাইস্কুলে না নিয়ে যেতে। লেখা বড় হচ্ছিলনা, তাই ওটা করেছি।

ডেডলাইনের আগের রাতে মাঝরাত পর্যন্ত জেগে জেগে লিখেছি। তাই দুম করে শেষ না করে উপায় ছিলনা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আর ঈর্ষা লাগে তার একখান ছোটভাই ছিলো বলে। আমার সারাজীবনের খায়েশ ছিলো আমার যদি একটা ছোট ভাই বা বইন থাকতো... কিন্তু কপালমন্দ।

আর আমার খায়েশ ছিলো ঠিক উল্টা, মানে একটা বড় ভাই পাওয়ার শখ! ইশ, আপনার লগে যদি আর বছর বিশেক আগে পরিচয় হইতো! মন খারাপ

এই সংকলনটা আমি ডাউনলোড কইরা রাখসি। পেইজগুলা উল্টায়াও দেখসি, কিন্তু পড়া হয় নাই। আপনার রিভিউ পড়ার পর এখন অসমাপ্ত কাজটা শেষ করার ইচ্ছা আরো বাড়লো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।