স্বাধীনতা

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি
লিখেছেন মানিক চন্দ্র দাস [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/০৯/২০১১ - ১১:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুব সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠা লোকটার অভ্যাস। লোকটা বললাম, কোন নাম বলিনি কারন এই মানুষটার নাম নানা রকম সময় বদলায়, সে নিজেই বদলায়,নানা রকম সময় তার চেহারা থাকে নানান রকম। মানুষটা গত মাস দুয়েক যাবত দাড়ি রাখা শুরু করেছে। চেহারার মধ্যে খুব ধার্মিক একটা ভাব আনার চেষ্টা। সাথে পাঞ্জাবী-পায়জামা। মাথায় টুপি এবং চোখে সুরমা।মানুষটা জন্মসূত্রে ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তবে ইসলামের সাথে শান্তির যে কথাবার্তা জড়িত তাতে সে বিশ্বাস করেনা। তার মূলনীতি অ্যান আই ফর অ্যান আই ।

সকাল সাতটার সময় সে নিজের বাড়ির ভেতর থেকে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। সাইকেলের ক্যারিয়ারে একটা ডাক্তারী ব্যাগ। গ্রামাঞ্চল হলে সাইকেলের সাথে ডাক্তারী ব্যাগ মানিয়ে যেতো কিন্তু শহর বলে পুরো দৃশ্যটা মানাচ্ছেনা। তার আজ বিশেষ একটা কাজ আছে, এই কাজে ডাক্তারী ব্যাগ প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে।ঠিক সাড়ে সাতটার সময় হোটেলের পাশে সাইকেল দাড় করিয়ে সে ভেতরে ঢুকে গেলো নাস্তা খেতে।

গোটা ঢাকা শহরে তার মোটামুটি তিনটা হোটেলে নিত্য যাওয়া আসা। নিত্য যাওয়া আসার প্রথম কারন হোটেলগুলো প্রচন্ড ব্যস্ত আর দ্বিতীয় কারন হচ্ছে এরা ভালো রান্না করে।হোটেল ব্যস্ত হওয়া তার জন্যে জরুরী কারন ব্যস্ত হোটেলে কাষ্টমারের চেহারা মনে রাখার চেষ্টা বেয়ারারা করেনা। তিনি নিজে আহামরি কোন টিপস কখনোই বেয়ারাদের দেননা যে বেয়ারারা তাকে আলাদা করে মনে রাখবে। গোটা জীবনযাপনেই তার কর্মকান্ডের ছিরিছাঁদ এমনতরোই।

হালুয়া দিয়ে দুটো পরোটা, এককাপ চা। সকালের নাস্তা শেষ, সাশ্রয়ী এবং বেশ দ্রুত নাস্তা শেষ হয়ে গেলো। বিল মিটিয়ে বেরিয়ে আসতেই হোটেলের ম্যানেজার পেছন থেকে ডাক দিলেন, ভাইসাহেব, একটু শুনবেন?
মানুষটার মেজাজ খিঁচড়ে গেলো, কোন কাজে বেরুলে পেছন থেকে কেউ ডাকলে তার মেজাজ খারাপ হয়। নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র, উচ্চতর পড়াশোনাটা হয়েছে মানুষের চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর তারপরেও এই কুসংস্কার ভেঙ্গে তিনি বেরুতে পারেননি।

আমাকে ডাকছেন?
হ্যাঁ ভাইজান, আপনাকেই। একটু বসেন। আপনার সাথে কথা ছিলো।
কি কথা? এখন বলা যায়না? একটু তাড়া ছিলো। আচ্ছা আপনার নামটা যেন কি?
জ্বী ভাইজান আমার নাম ইদ্রিস আলী। একটু বসেন, গদিতে কাউরে বসায়া আমি আসতেছি।
বসতেই হবে??
না বসলেও চলে, আমি আপনার সাথে বাইরেই কথা বলতে চাইছিলাম।
খুব জরুরী কোন কথা কি? আমার একটু তাড়া ছিলো।
ম্যানেজার হেড়ে গলায় চিৎকার করলেন, ঐ শাহজাদা, গদিতে একটু আইসা বস। আমি দশ মিনিটের জন্যে আসতেছি।
মুহূর্তের মাঝে শাহজাদা নামের খুব ক্লান্ত একটা বাচ্চা ছেলেকে আসতে দেখা গেলো।
কি ব্যাপার ওস্তাদ?
গদিতে বস একটু সময়ের জইন্যে। আমি আইতাছি। ভাইজানের লগে আমার একটু বাৎচিত আছে।
ম্যানেজার সাহেব হোটেল থেকে বেরিয়ে এলেন।

ভাই আপনের নামটা আমি জানিনা।
মোহাম্মদ ইয়াকুব আমার নাম। বন্ধুরা বলে বেকুব। তারপর আপনার জরুরী কথাটা বলুন।
গতকাল রাত একটার দিকে র‌্যাব এর একটা গাড়ি এসেছিলো হোটেলে। তারা আপনার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলো আমি আপনাকে চিনি কিনা?
আমি বললাম চিনিনা। এখন আপনেরে দেইখা মনে পড়লো ছবিটা আপনার। তারা কি জন্যে আপনার খুঁজতেছে ইয়াকুব ভাই?
জানিনা তো।
আপনি কি কোন জংগী প্রতিষ্ঠানের সাথে আছেন?
হা হা হা হা হা। আমারে দেখলে কি আপনার জঙ্গী মনে হয়?
না ভাই তা না। তবে র‌্যাব আসছিলোতো তাই একটু ভয় পাইছিলাম। এখন নিশ্চিন্ত ।
এই আপনার জরুরী কথা?
জ্বী ভাই? আচ্ছা ব্যাপারটা পরে দেখা যাবে। আসি, আমার একটু তাড়া আছে।

সাইকেলে চড়ে সোজা বাড্ডায় চলে গেলো তথাকথিত ইয়াকুব মিঁয়া। এখানে তার বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার শওকত সাহেব থাকন। এই মানুষটাও ব্যাচেলর। তার দুইটা গাড়ি আছে,একটা টয়োটা করোলা আরেকটা মাইক্রোবাস। ইয়াকুব আসা মাত্রই মাইক্রোবাসটাকে দুই বন্ধু স্রেফ ষ্টিকার লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ফেললো।মাইক্রোর উপর একটা সাইরেন আর লাল,নীল বাতি লাগানোর পর মাইক্রোটা এখন পুরোদস্তুর অ্যাম্বুলেন্স।

অ্যাম্বুলেন্সটাকে নিয়ে দুই বন্ধু মিলে বেরিয়ে গেলো, প্রথমে নিশঃব্দে বেরিয়ে মূল রাস্তায় এসেই অ্যাম্বুলেন্সের বাতি জ্বালানো থেকে শুরু করে সাইরেন বাজানো শুরু হলো। ভেতরে অ্যাম্বুলেন্সের সব কিছু রাখা আছে।পার্থক্য একটাই এই অ্যাম্বুলেন্সে কোন অসুস্থ্য রোগী ওঠেনা, ওঠে সুস্থ্য লোকজন। তারা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর পুরোপুরি অচেতন থাকে। একসময় রাতের অন্ধকারে এই অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় তথাকথিত ইয়াকুবের বাসায়। বাসায় মানুষটিকে নামিয়ে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব চলে যান। বাকীটা দেখে সেই ইয়াকুব।

আজকের মিশন টংগীর এক ইউপি চেয়ারম্যানকে তুলে নিয়ে আসা।
(চলবে)


মন্তব্য

 তাপস শর্মা  এর ছবি

চলুক
লেখাটা প্রানবন্ত।
এটা বড় গল্প হতে যাচ্ছে না উপন্যাস গোছের কোন কিছু? স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট নিয়ে কিন্তু এই ধরনের রহস্যাবৃত লেখা প্রচুর বেড়িয়ে গেছে। আপনার লেখাটার আগামী পর্বে তাই একটু ভোল বদল আশা করছি। আর যেহেতু লেখার ক্যাটাগরিতে রাজাকারদের প্রসঙ্গ দেখলাম, আমার মনে হয় এদের কথাই এই কাহিনিটাতে টানলে ভাল হবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------------------

“সব অভিমান আকাশের চেনা চেনা
সবার জন্য সুদিন কি আসবেনা
উত্তর চেয়ে আকাশ পেতেছে কান
আমিও বেধেছি আমার প্রেমের গান।”

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

তাপস দাদা,
লেখাটা একটা বড় গল্প। আশা করছি আপনার ভোল বদলের বিষয়টা আপনি এই গল্পে পাবেন। এই গল্প বেরুলে আমার গর্দানের জন্যে জামাত- শিবির আবার মাথার দাম টাম ঘোষনা দিয়ে দিতে পারে। কিঞ্চিৎ শঙ্কায় আছি। ভালো থাকবেন

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

তাপস দাদা,
লেখাটা একটা বড় গল্প। আশা করছি আপনার ভোল বদলের বিষয়টা আপনি এই গল্পে পাবেন। এই গল্প বেরুলে আমার গর্দানের জন্যে জামাত- শিবির আবার মাথার দাম টাম ঘোষনা দিয়ে দিতে পারে। কিঞ্চিৎ শঙ্কায় আছি। ভালো থাকবেন

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবেনা রাজা সাহেব গুরু গুরু । লেখা পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

লিও হক এর ছবি

সরল গদ্য, ভাল আগাচ্ছে। তবে একটু হুড়োহুড়ি করে লেখা মনে হচ্ছে। বানান ভুল আছে বেশ কিছু। আশা করি পরের পর্বে ঘটনার মোড় চমকপ্রদ বাঁক নেবে-
না নিলেও ক্ষতি নেই লিখে যান।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই লিও। বাঁকের কথা বলছেন?? অবশ্যই হবে। হতেই হবে। নইলে এই ধরনের ভয়ঙ্কর একটা গল্প আমি লিখতে যেতাম না। প্রতিটি কর্মকান্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা থাকবে। ভালো থাকবেন ভাই।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই লিও। বাঁকের কথা বলছেন?? অবশ্যই হবে। হতেই হবে। নইলে এই ধরনের ভয়ঙ্কর একটা গল্প আমি লিখতে যেতাম না। প্রতিটি কর্মকান্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা থাকবে। ভালো থাকবেন ভাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।