হরনেট ফ্লাইট-১

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি
লিখেছেন মানিক চন্দ্র দাস [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০১/১২/২০১০ - ৪:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হরনেট ফ্লাইট (প্রাক কথন)

০১


ঘটনাস্থল ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলবর্তী একটি শহর মোরল্যুন্ডে। ১৯৪১ সালের মে মাস চলছে। মাসের একেবারে শেষের দিন শহরের রাস্তায় বিচিত্র একটি যান দেখা গেলো।

যানটি হচ্ছে ডেনিস মেইড নিম্বাস মোটরসাইকেল। সাথে একটা সাইডকার। রাস্তায় মোটরসাইকেল থাকতেই পারে কিন্তু সময়টার কারনে মোটরসাইকেল রাস্তায় চলার দৃশ্যটি বিচিত্র হয়ে গেছে। কারন এলাকা তখন জার্মানীর দখলে এবং শুধু ডাক্তার ও পুলিশবাহীনি ছাড়া অন্য কারো কাছে পেট্রল বিক্রি বন্ধ। পেট্রল ছাড়া মোটরসাইকেল চলার কোন কারন নেই। ওদিকে পেট্রল বেচা বন্ধ আর এদিকে মোটরসাইকেল, একারনেই দৃশ্যটি বিচিত্র।

যাই হোক, মূল কথা হচ্ছে মোটরসাইকেলটিতে মৌলিক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। ফোর সিলিন্ডার পেট্রল ইঞ্জিনের জায়গায় একটা ষ্টীম ইঞ্জিন বসানো হয়েছে। সাইডকার থেকে সীট সরিয়ে সেখানে বয়লার, ফায়ারবক্স, এবং চিমনি বসানো হয়েছে। পেট্রল ইঞ্জিনের চেয়ে অবশ্য এই ইঞ্জিনের ক্ষমতা অনেক কম। এতে সর্বোচ্চ গতি পাওয়া যায় ঘন্টায় ২২ মাইল। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যে তীব্র শব্দ হয় তা এতে হয়না, তার বদলে হিস হিস জাতীয় শব্দ হয়।

সাইকেলের চালকের আসনে বসা হ্যারাল্ড ওলুফসেন। দীর্ঘকায়, সাদা চামড়ার সদ্য কৈশোর পেরুনো যুবক। চুল পেছনে ব্যাকব্রাশ করা, উঁচু কপাল, পড়নে স্কুল ব্লেজার। ছেলেটাকে দূর থেকে দেখতে বাচ্চা ভাইকিংদের মতো লাগছে। মোটরসাইকেলটি তারই। এই জিনিষ কিনতে বেচারা এক বছর টাকা জমিয়েছে। দাম ছয়শো ক্রাউন। সমস্যা হলো ঠিক যেদিন হ্যারাল্ড বাইক কিনেছে তার পরদিন থেকেই জার্মান বাহীনি পেট্রলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিলো।

এতে হ্যারাল্ডের মেজাজ ভয়াবহ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কিই বা করার আছে? জার্মান বাহীনির মুখের উপরতো কিছু বলার নেই। তা বলে হ্যারাল্ড বসে থাকেনি। বাইক তাকে চালাতেই হবে। সে স্বপ্ন পূরণ করতে লেগে গেলো আরও এক বছর। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বদলাবার জন্যে ক্রাউন দরকার। তাই সে স্কুলের ছুটির দিনগুলোতে কাজ করতো। আবার স্কুলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, তার জন্যে পড়াশোনাও করতে হতো। সবই ঠিক আছে। পড়াশোনাও হয়েছে, মোটরসাইকেলও রেডী। তাই হ্যারাল্ডের মনে বেজায় ফূর্তি। ফুরফুরে মেজাজে সে রওয়ানা দিয়েছে বারের দিকে। একটু জ্যাজ শোনা যাবে আর যদি মেয়েরা থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।
হ্যারাল্ডের প্রিয় বিষয় পদার্থবিজ্ঞান, ঠিক তার পরই আছে জ্যাজ সঙ্গীত। তার ধারনা জ্যাজ সঙ্গীতে আমেরিকান মিউজিশিয়ানরাই সেরা। অবশ্য জার্মান গর্দভ গুলোর জন্যে সবখানে জ্যাজ শোনা যায়না। তবে মোরল্যুন্ডেতে শোনা যায়। কারন এটা আন্তর্জাতিক একটা বন্দর। সারা বিশ্বের নাবিকেরা এখানে আসে।
ফুরফুরে মেজাজে, হালকা সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ক্লাব হটের দরজায় এসে থামলো হ্যারাল্ড। ক্লাবের দিকে তাকিয়ে সে অবাক। ক্লাব বন্ধ। দরজাতো বন্ধই, জানালাগুলোও বন্ধ। চারদিক শুনশান।

ঘটনা কি? রাত মাত্র আটটা বাজে, তার উপর আজ শনিবার। এরকম সেরা একটা বার এতো তাড়াতাড়ি বন্ধ হয় কি করে? অন্যদিকে কি দরজা আছে নাকি? হ্যারাল্ড পুরো বিল্ডিং এর চারপাশে একবার চক্কর দিয়ে এলো। কোথাও প্রাণের লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা। বিল্ডিংটা যেন মরে গেছে।

বিল্ডিং এর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো হ্যারাল্ড। কি করা যায়? এমন সময় পাশ দিয়ে এক লোক যাচ্ছিলো। সে বললো, “এইটা কি জিনিষ বাপ? ”
হ্যারাল্ড বললো, “নিম্বাস বাইক। ষ্টীম ইঞ্জিনে চলে। আচ্ছা এই ক্লাবের কি হয়েছে বলতে পারেন?”
“ আমি এই ক্লাবের মালিক। ইঞ্জিনে ফুয়েল কি দিতে হয়?”
“পোড়ে এমন কিছু দিলেই হয়। আমি কয়লা ব্যাবহার করি।”
“কয়লা?” বলেই লোকটা হাসতে শুরু করলো।
“ ক্লাবের দরজা বন্ধ কেন?”
“নাৎসীরা বন্ধ করে দিয়েছে।”
তীব্র বিরক্তি নিয়ে হ্যারাল্ড বললো, “কেন?”
“নিগ্রো মিউজিশিয়ানদের চাকরি দিয়েছিলাম, তাই বন্ধ।”

হ্যারাল্ড জীবনে নিগ্রো মিউজিশিয়ান দেখেনি। তবে তাদের রেকর্ড বলে নিগ্রোরাই সেরা। পুরো সন্ধ্যাটাই মাটি। হ্যারাল্ডের খুব রাগ উঠে গেলো, বললো, “শালার বাঞ্চোত নাৎসীগুলোতো দেখি বিরাট শুয়োর।”

ক্লাবের মালিক এদিক ওদিক তাকালেন ভয়ে ভয়ে। এই কথা কেউ শুনে ফেললেই বিপদ। জার্মানী এখনো ডেনমার্কে খুব কড়া শাষন জারি করেনি। তাতেও এখানে অবস্থা জার্মান অধিকৃত অন্যান্য দেশের মতোই। খুব সাহসী লোকজন প্রকাশ্যে জার্মান বাহিনীর বিপক্ষে কথা বলে, বাকী সবাই থাকে চুপ। অবশ্য আশেপাশে কেউ নেই যখন, তখন সমস্যা নেই।

ভদ্রলোক হ্যারাল্ডের বাইকের দিকে তাকালেন। বললেন, “এই জিনিষ কাজ করে?”
“অবশ্যই কাজ করে।”
“ কার বুদ্ধিতে এটা হলো?”
“বুদ্ধিও আমার, কাজও আমারই করা।”
ভদ্রলোকের চেহারায় প্রশংসার ভাব ফুটে উঠলো। “আপনার অনেক বুদ্ধি।”
“ধন্যবাদ।” বলেই মোটরসাইকেল ষ্টার্ট দিলো হ্যারাল্ড। “আপনার ক্লাবের এই হালের জন্যে আমি দুঃখিত।”
“আশা করছি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ক্লাব আবারো খুলতে পারবো। অবশ্য নিগ্রোদের কাজ না দেবার শর্তেই ক্লাব খুলতে হবে।”
“নিগ্রো ছাড়া জ্যাজ?” তীব্র অসন্তোষ ফুটে উঠলো হ্যারাল্ডের চেহারায়। “রেষ্ট্যুরেন্ট থেকে ফ্রেঞ্চ কুকদের সরিয়ে নিলে যা হবে, নিগ্রো ছাড়া জ্যাজও হবে সেরকম।” কথাটা বলেই রওনা দিলো হ্যারাল্ড।

হ্যারাল্ড একবার ভাবলো শহরের ভেতরে ঢুকবে। হয়তো কোন ক্যাফে বা বার খোলা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু জ্যাজতো শোনা যাচ্ছেনা। তাই সে সোজা হার্বারের দিকে রওনা দিলো। হ্যারাল্ডের বাড়ী ছোট্ট একটা দ্বীপ ‘স্যান্ডে’ তে। তার বাবা ঐ দ্বীপের চার্চের পাদ্রী। উপকূল থেকে কয়েক মাইল দূরে দ্বীপটা। দ্বীপে যাবার জন্যে ছোট্ট একটা ফেরী আছে। এই মুহুর্তে সেটি ডকে বিশ্রাম নিচ্ছে। হ্যারাল্ড সোজা গিয়ে উঠলো ফেরীতে। ফেরীতে অনেক লোক। প্রায় সবাই সবার চেনা। ছোট দ্বীপ হলে যা হয় আরকি। ফেরীতে একটা জেলেদের দল আছে, তার বেশ মৌজেই আছে। সবার হাতে ড্রিঙ্কসের গ্লাস, গলায় গান। দুজন ধোপদুরস্ত পোষাক পড়নে মহিলাও দেখা যাচ্ছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ সদস্যের এক পরিবার। বোধহয় এরা শহরে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো। এক দম্পত্তিকে দেখা যাচ্ছে। তাদের পড়নে বেশ দামী পোষাক। এদের চেনা যাচ্ছেনা। এরা খুব সম্ভবত দ্বীপের হোটেলে যাচ্ছে। দ্বীপে খুব উঁচু মানের একটা হোটেল আছে।

হ্যারাল্ড ফেরীতে ওঠামাত্র সবাই মোটরসাইকেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। দর্শকদের কারো কারো কাছে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন সম্পর্কে ব্যাখ্যাও দিতে হলো।

ফেরী ছেড়ে যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে একটা ফোর্ড সেডান উঠলো ফেরীতে। গাড়ীটা হ্যারাল্ডের চেনা। এক্সেল ফ্লেমিং এর গাড়ী। দ্বীপের দামী হোটেলটির মালিকও এই ফ্লেমিং পরিবার। হ্যারাল্ডের পরিবারের সাথে ফ্লেমিং পরিবারের সদ্ভাব নেই। দ্বীপে এক্সেল ফ্লেমিং সবচে ধনী ব্যাক্তি। তাই তার ধারনা দ্বীপের নেতৃত্ব তারই হাত। আর ওদিকে হ্যারাল্ডের বাবা, পাদ্রী ওলুফসেনের ধারনা যেহেতু ধর্মের বিষয়টি তারই হাতে তাই দ্বীপে স্বাভাবিকভাবেই তিনি নেতা। এক্সেল ফ্লেমিং আর পাদ্রী ওলুফসেনের ব্যাক্তিত্বের এই সঙ্ঘাতের প্রভাব পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপরেও পড়েছে। গাড়ী দেখে হ্যারাল্ডের মনে হলো এই ফ্লেমিং কি করে গাড়ীর পেট্রল যোগাড় করছে? ধনীদের জন্যে জার্মানরাও নিয়ম শিথিল করে? টাকায় শালা কি না হয়?

সাগরে বেশ ভালোই ঢেউ আছে। পশ্চিমাকাশে মেঘও দেখা যাচ্ছে। ঝড় আসছে। অবশ্য জেলেরা বলছে ঝড় আসার আগেই দ্বীপে পৌঁছে যাওয়া যাবে। হ্যারাল্ড সাথে করে আনা খবরের কাগজটি বের করে পড়া শুরু করলো।
কাগজের নাম ‘রিয়েলিটি’ । এটি একটি অবৈধ প্রকাশনা, অধিকৃত জার্মান বাহিনীর চোখের আড়ালে এই জিনিষ ছাপা হয় এবং লোকজনকে দেয়া হয় বিনামূল্যে। পত্রিকাটিকে ডেনিশ পুলিশ পাত্তাই দেয়নি আর জার্মান বাহিনীও এ নিয়ে চিন্তিত নয়। কোপেনহেগেনে ট্রেনে, গাড়িতে, প্রকাশ্য দিবালোকে এ পত্রিকা পড়ে লোকজন। কিতু এখানের বিষয়টা একটু আলাদা। শহরের লোকজনের মতো এখানকার লোকজন সাহসী না। সবকিছু এরা সহজভাবে নিতে পারেনা। তাই পত্রিকাটাকে একটু আড়াল করেই পড়া শুরু করলো হ্যারাল্ড।

পত্রিকায় বলা হচ্ছে,

দেশে মাখনের সংকট চলছে। প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড মাখন উৎপাদন করে ডেনমার্ক কিন্তু এখন সেই মাখন চলে যাচ্ছে জার্মানীতে। তাই উৎপাদনকারী দেশটিতেই চলছে মাখন সংকট।

এ জাতীয় খবরগুলো বৈধ পত্রিকাগুলোতে আসেনা।

দূরে দ্বীপের সমতল চেহারা দেখা যাচ্ছে। দ্বীপটি লম্বায় বারো মাইল আর চওড়ায় মাত্র এক মাইল। এর দক্ষিন প্রান্তে জেলেদের গ্রাম, চার্চ। দ্বীপের এ প্রান্তে একটা নেভিগেশন স্কুলও আছে। স্কুলটা দীর্ঘ সময় অব্যাবহার্য্য অবস্থায় ছিলো। এখন জার্মান বাহিনী দখলে নিয়েছে এই স্কুল। তারা এখানে মিলিটারী বেইজ বানিয়ে ফেলেছে। দ্বীপের হোটেল আর অপেক্ষাকৃত বড় বাড়িগুলো উত্তরপ্রান্তে। দুপ্রান্তের মাঝখানে বেশিরভাগই বালিয়াড়ী, অল্প কিছু গাছও আছে, তবে কোন পাহাড়-টাহাড় নেই। কিন্তু এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত প্রায় দশ মাইল লম্বা চমৎকার একটা সৈকত আছে।

ফেরী দ্বীপে লাগতেই বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু হলো। অভিজাত দম্পত্তির জন্যে হোটেল থেকে ঘোড়ার গাড়ি এসেছে। এক জেলে রমনী ভাঙ্গাচোরা এক ঘোড়ার গাড়ী নিয়ে এসেছে স্বামীকে নেবার জন্যে। হ্যারাল্ড ঠিক করলো সৈকত ধরে বাড়ী ফিরবে। মজার বিষয় হচ্ছে সৈকত ধূ ধূ নরম বালির না, বেশ শক্ত মাটির। মাঝে মাঝে এখানে রেসিং ক্লার ট্রায়াল দেয়া হয়।

ডক থেকে বাড়ী যাবার ঠিক মাঝপথে হ্যারাল্ডের ষ্টীম শেষ হয়ে গেলো। বাইকের পেট্রলট্যাঙ্ক টিকে হ্যারাল্ড পানি রাখার জন্যে ব্যাবহার করেছিলো। এখন মনে হচ্ছে ট্যাঙ্কের বদলে পাঁচ গ্যালনের অয়েল ড্রাম ব্যাবহার করতে হবে। ওটা পরের কাজ, এই মুহুর্তে কি করা যায়? বাড়িতে তো যেতে হবে।
আশেপাশে একটা মাত্র বাড়ি দেখা যাচ্ছে। সে বাড়িটি হচ্ছে এক্সেল ফ্লেমিং এর। সম্পর্কে তীব্র ধরনের তিক্ততা থাকলেও ফ্লেমিং এবং ওলুফসেন পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা হয়। প্রতি রোববার ফ্লেমিং পরিবারের সবাই এসে চার্চে সবার সামনে বসে। তার মধ্যে এক্সেল ফ্লেমিং ঘাড়ের রগ ফুলিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। এই বাড়িতে গিয়ে সাহায্য চাইবার বদলে অন্য বাড়িতে যাওয়া ভালো। অবশ্য আশেপাশে অন্য বাড়ি বলতে প্রায় একমাইল দূরের রাস্তা। কি আর করা! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্লেমিংদের বাড়ির দিকেই রওনা দিলো হ্যারাল্ড।
বাড়ির সামনের দরজায় নক না করে বাড়ির পেছনের আস্তাবলের দিকে চলে গেলো সে। বাড়ির কারো সাথে দেখা হবার সম্ভাবনা তাতে কম। কর্মচারীদের সাথে দেখা হলে অবশ্য সমস্যা নেই। আস্তাবলে ফ্লেমিংদের কর্মচারী গানারের সাথে দেখা হলো।

“ হ্যালো গানার, একটু জল নেয়া যাবে?”
গানার প্রশ্ন শুনে বেশ অবাক হলো প্রথমে। তারপর হাসি দিয়ে বললো, “সমুদ্রের মধ্যে আপনার জলের অভাব? ঐ যে ইয়ার্ডে ট্যাপ আছে। নিজেই নিয়ে নিন।”
ট্যাপের পাশেই বালতি পাওয়া গেলো। বালতিতে জল ভরে হ্যারাল্ড মোটরসাইকেলের কাছে চলে এলো। ট্যাঙ্ক ভরে বালতি ফেরৎ দিতে গিয়েই বাধলো বিপত্তি। দাড়িয়ে আছে পিটার ফ্লেমিং।

পিটার হচ্ছে এক্সেল ফ্লেমিং এর ছেলে। দুই পরিবারের ঝগড়ার আগে পিটার ছিলো হ্যারাল্ডের বড় ভাই আরনের প্রাণের বন্ধু। দু বন্ধু মিলে মেয়েদের পটাতো। আরনে পটাতো তার নিত্যনতুন শয়তানী বুদ্ধি দিয়ে আর পিটার পটাতো তার অভিজাত হাবভাব দিয়ে। পিটার এখন থাকে কোপেনহেগেনে। ছুটিতে বাড়ি এসেছে বোধহয়।

পিটার হাতে রিয়েলিটি পত্রিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পত্রিকা থেকে চোখ তুলে সে বললো, “তুমি এখানে কি করছো?”
“হ্যালো পিটার। পানি নিতে এসেছি।”
“এই পত্রিকা নিশ্চয়ই তোমার?”

হ্যারাল্ড পকেটে হাত দিলো। পকেটে পত্রিকা নেই। কোন ফাঁকে যে পড়ে গেছে সে টেরই পায়নি। বোধহয় বালতি নেবার সময় পড়ে গেছে।

হ্যারাল্ডের হাবেভাবে পিটার যা বোঝার বুঝে নিলো। তারপর বললো, “অবশ্যই তোমার। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই জিনিশ সাথে রাখার জন্যে যে জেলে যেতে হতে পারে, তা জানো?”

পিটারের কথা ফাঁকা বুলি না। সে পুলিশের ডিটেকটিভ। তার পক্ষে লোকজনকে জেলে ঢোকানো সম্ভব। হ্যারাল্ড মরিয়া হয়ে বললো, “এই পত্রিকা তো শহরে সবাই পড়ে।” কথাটা হ্যারাল্ড বললো ঠিকই কিন্তু গলায় ভীতির সুরটা রয়েই গেলো। পিটার মানুষটা খুবই বদ। তারপক্ষে হ্যারাল্ডকে জেলে ঢোকানোটা সহজ। এতে একধরনের পারিবারিক প্রতিশোধও নেয়া হবে।

হ্যারাল্ডের কথা শুনে পিটার বললো, “এটা তো কোপেনহেগেন না।”

হ্যারাল্ডের খুব ভালো করেই জানা আছে যে পিটার ওলুফসেন পরিবারকে হেয় করার কোন সুযোগই হাতছাড়া করবেনা। পিটারের এখন একটা সুযোগ যাচ্ছে। তাও সে ইতস্তত বোধ করছে। পিটারের ইতস্তত বোধ করার কারনটিও হ্যারাল্ডের জানা। সে বললো, “সারা দেশের অর্ধেক জনগন যে কাজ করছে, সেই কাজ করার জন্যে একজন স্কুল ছাত্রকে ছোট্ট এই দ্বীপ থেকে গ্রেফতার করলে কেমন যেন দেখায়, তাই না? আর তাছাড়া লোকজন যখন জানে ওলুফসেন পরিবারের সাথে ফ্লেমিং পরিবারের একটা শীতল যুদ্ধ আছে, তখন লোকজন আমাকে গ্রেফতারের কারনটা বুঝে ফেলবে। ঠিক না?”

হ্যারাল্ডের কথা শুনে পিটার খুব কষ্ট করে হাসলো। সে বললো, “স্কুল ছাত্র হোক আর বালক হোক, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।”
“ কাদের আইন? আমাদের নাকি জার্মানদের?”
“আইন আইনই। কারো ব্যাক্তিগত সম্পদ নয়।”

পিটারের কথা শুনে হ্যারাল্ড আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো। গ্রেফতার করার ইচ্ছে থাকলে পিটার কথা বলে অযথা সময় নষ্ট করার মানুষ না। পিটারের যখন গ্রেফতারের ইচ্ছে নেই, তখন কথা আরেকটু চালানো যেতে পারে।

“ কথাটা কেমন যেন নাৎসীঘেষা হয়ে গেলো না পিটার? অবশ্য আপনার এরকমই বলার কথা। নাৎসী অফিসারদের হোটেলে সেবা করে বেশ ভালোই টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। টাকায় তো কথা বলবেই।”

এই কথাগুলো পিটারের গায়ে একদম আঠার মতো লেগে গেলো। কথা সত্য। হোটেলটা জার্মান অফিসারদের পছন্দের জায়গা। ডেনিশ অফিসারদের চাইতে এখানে জার্মান অফিসারেরাই বেশী থাকে। খুব রেগে গিয়ে পিটার হিস হিস করে বললো, “বাপ তো দেখি তোমার মাথা খেয়েছে।”

পিটারের কথাও সত্য। পাদ্রী ওলুফসেন নাৎসীদের একেবারেই পছন্দ করেননা। তার বক্তব্য হচ্ছে, মহান যীশু ইহুদী ছিলেন।

পিটার আবার বললো, “তোমার বাবা কি জানেন, এইসব কথাবার্তা জার্মানদের কানে গেলে কি সমস্যা হবে?”

“আমি নিশ্চিত, বাবা জেনেই কথাগুলো বলে। আসলে কি, যে লোকটা খ্রীষ্টান ধর্মটার গোড়া পত্তন করেছে তাকেও লোকজন আগে মূর্তিমান সমস্যা মনে করতো।”

“ধর্ম নিয়ে শেখাতে এসোনা হ্যারাল্ড। আমিও ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা জানি।আমাকে চাকরীর সুবাদে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।”

“ কিসের নিয়ম পিটার? আমরা এখন পরাধীন। জার্মানরা দেশ দখলে নিয়ে নিয়েছে। এই নাৎসীগুলো আমাদের নিয়ম শেখানোর কে? ওদের পেছনে লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দেয়া দরকার।”

“জার্মানদের ঘৃণা করার কিছু নেই। ওরা আমাদের বন্ধু।” পিটারের গলায় বিনয় ধরনের একটা কিছু ছিলো। তাতে হ্যারাল্ডের মেজাজ গেলো আরও খারাপ হয়ে।

“আমি জার্মানদের ঘৃণা করিনা। আমার জার্মান ফুপাতো ভাইবোন আছে।”

পাদ্রী ওলুফসেনের বোন বিয়ে করেছিলো জার্মানী থেকে স্যান্ডে দ্বীপে বেড়াতে আসা এক জার্মান ইহুদী ডেন্টিষ্ট কে। সে ১৯২০ সালের কথা। এই দম্পত্তির বড় সন্তানের নাম মনিকা। মনিকা হচ্ছে হ্যারাল্ডের জীবনে আসা প্রথন নারী। মনিকাকে হ্যারাল্ড চুমুও খেয়েছিলো।

হ্যারাল্ড বললো, “নাৎসীরা আমাদের উপর যতটা অত্যাচার করেছে তার চেয়ে বেশী করেছে জার্মানদের উপরই।” হ্যারাল্ডের ফুপাকে নাৎসীরা মনগড়া একটা কারনে গ্রেফতার করে বিশেষ কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কারাগারটা ডাচাউ এর ছোট্ট ব্যাভারিয়ান শহর কঞ্জেন্ট্রাজিওনস্লেগার এ। নামটা বেশ শক্ত।

হ্যারাল্ডের কথায় পিটার খুব জ্ঞানীর মতো বললো, “লোকজন নিজেরা নিজের ভালো না বুঝলে কি করার আছে?” কথাটা বলেই পিটার উলটো দিকে হাঁটা শুরু করলো।

কথা শুনে পুরো হতভম্ব হ্যারাল্ড। নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো, “আপনি নিজেও নাৎসী বাহীনির হয়ে গেছেন পিটার।” কথাটাকে কোন পাত্তাই দিলোনা পিটার। সোজা বাড়িতে ঢুকে গেলো সে। হঠাৎ করেই পিটারের মনে হলো তর্কে সে হেরে গেছে। খুব হতাশ লাগলো তার।

সেও উলটো ঘুরে হাঁটা শুরু করলো। ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মোটরসাইকেলের কাছাকাছি আসতেই দেখা গেলো কয়লার আগুন বৃষ্টিতে নিভে গেছে। হতাশা থেকে এবার বিরক্তি বোধ করলো হ্যারাল্ড। আবার আগুন ধরাতে ইচ্ছে করছেনা। হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হবে। মোটরসাইকেলটাকে ঠেলে আরও আধ মাইল উজানে নিয়ে রাখলো সে। বছরের এই সময়টাতে এই এলাকায় রাত এগারোটা পর্যন্ত সন্ধ্যার আলো থাকে। আজ আকাশে মেঘ, তাই আলো নেই। তার উপর ভারী বৃষ্টি, চোখের দৃষ্টি চলছেনা। সারা শরীর ভিজে একসা। জলে নামলে মানুষ যেভাবে ভেজে, শরীর এখন সেরকমই ভেজা।

দুই ঘন্টা টানা হাঁটার পর সে পৌঁছলো জার্মান বেইজের দেয়ালের কাছে। বয়স কম, শরীরে মেদ নেই এতোটুকু তারপরেও হ্যারাল্ডের ক্লান্ত লাগছে। বেইজের ঠিক উলটো পাশেই তার বাড়ি। কিন্তু যেতে হবে পুরো বেইজটা ঘুরে। হাঁটতে হবে আরো দুই মাইল। অথচ বেইজের ভেতর দিয়ে শর্টকাট মারতে পারলে বাড়ি যেতে বড় জোর দুইশ মিটার হাটতে হবে। এখন যদি জোয়ারের সময় না হতো, তাহলে ও দুমাইল হেঁটেই মেরে দেয়া যেতো। জোয়ারের জল বেইজের দেয়াল ছুঁয়ে যাচ্ছে। এখন সাঁতরানো কি ঠিক হবে? এই আবহাওয়া, তার উপর অন্ধকারে কিছু দেখা যায়না, শরীরটাও ক্লান্ত। নাহ, সাঁতরানো যাবেনা।
বেইজের দেয়াল বেয়ে উঠে গেলো হ্যারাল্ড।

বৃষ্টিটা হঠাৎ করেই ধরে এলো। আকাশে চাঁদ আছে। মেঘেরা খুব দ্রুত উড়ে যাচ্ছে। মেঘের ফাঁক গলে নিচে নামছে চাঁদের আলো। সেই আলোয় সামনে ছয় ফুট লম্বা চিকেন ওয়্যার ফেন্স দেখা যাচ্ছে। তার মাথায় দুই প্যাচের বার্বড ওয়্যার। দেয়ালটা পেরুনো একটু ঝামেলার, তবে হ্যারাল্ডের তেমন একটা সমস্যা হলোনা। ফেন্সের পঞ্চাশ ইয়ার্ড পরেই ঝোপঝাড় শুরু হয়েছে। আসলে কায়দা করে ফেন্সটাকে ঢাকা দেবার একটা চেষ্টা করা হয়েছে ঝোপ দিয়ে।
ঝোপ এতো ঘন যে এরপর কি আছে তা বোঝা যায়না। তাতে অবশ্য সমস্যা নেই। ঝোপের পর কি আছে, তা হ্যারাল্ডের জানা। জানার কারন আছে। গত সামারে এই বিল্ডিং বানাতে হ্যারাল্ডও লেবারের কাজ করেছে। তখন যদি জানা যেতো যে এই বিল্ডিং জার্মানদের মিলিটারী বেইজ হবে তাহলে হ্যারাল্ড কাজ করতো না। এখন এজন্যে মাঝেমধ্যে তার আফসোস হয়। বেইজ বানানোর আগে এখানে ছিলো একটা নেভিগেশন স্কুল। পরে স্কুল বিল্ডিং এর দু পাশে আরও দুটি নতুন বিল্ডিং তৈরী করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন বেইজ। স্কুল উধাও। বেইজের সবকটা বিল্ডিং সাগরের দিকে পেছন ফেরানো। বিল্ডিং গুলোর ধারে কাছে না গিয়েই বেইজের ভেতর দিয়ে শর্টকাট মারা সম্ভব। এই মুহুর্তে হ্যারাল্ড যেখানে দাঁড়িয়ে সে অংশটায় ঝোপঝাড়ের পরিমান বেশি। লুকিয়ে থাকার জন্যে ঝোপ ভালোই কাজে দেবার কথা। শুধু পেট্রল গার্ডের দিকে চোখ রাখলেই হবে।

ফেন্স বেয়ে ওপাশে গিয়ে নামলো হ্যারাল্ড। কোন সমস্যাই হলোনা। এরপর চারপাশে একবার চোখ বুলানো। গাছপালার আকৃতি দেখা যাচ্ছে। বিল্ডিং চোখে পড়ছেনা তবে দূর থেকে বাজনার শব্দ আর মাঝে মাঝে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। আজ শনিবার। সৈনিকেরা হয়তো বিয়ার টিয়ার খেয়ে মৌজ করছে। অফিসারেরা তো সব গেছে এক্সেল ফ্লেমিং এর হোটেলে।

নীচু হয়ে হাটা শুরু করলো হ্যারাল্ড। চাঁদের আলো-আঁধারীতে সে হাটছে দ্রুত গতিতে। হাটার সময় ঝোপের পাশে পাশেই থাকতে হচ্ছে। ডানপাশ থেকে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন আর বামপাশ থেকে গানবাজনা, অট্টহাসি। বেশ লম্বা মতো একটা জিনিশ পড়লো পথে। মনে হচ্ছে সার্চ লাইট টাওয়ার। অবশ্য এই আলো-আঁধারীতে নিশ্চিত হবার কোন উপায় নেই। বেইজে সার্চলাইট খুব ইমার্জেন্সী না হলে ব্যাবহার করা হয়না।

হঠাৎ করেই বাম পাশে বাজনার শব্দ তীব্র হয়ে উঠলো। হ্যারাল্ড মাথা নীচু করে বসে পড়লো। হৃৎপিন্ডের গতি বেড়ে গেছে। নিজের বুকের ধুকপুকানি এখন সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে। মাথা উঁচু করে হ্যারাল্ড তাকালো বিল্ডিং এর দিকে। দরজা খুলে একজন সৈনিক বেরিয়ে এসেছে। হাটা শুরু করেছে কম্পাউন্ড বরাবর। পাশের বিল্ডিং থেকে আরেকটা দরজা খুলে গেলো। সৈনিকটি সেদিকেই চলে গেলো সোজা। একটু শান্ত হলো হ্যারাল্ড।

আবারো হাটা শুরু হলো। পাশেই কোনা করে ছাঁটা কিছু গাছ, তার পাশ দিয়ে মাটি নেমে গেছে নিচের দিকে। অন্ধকারে বিচিত্র আকৃতির কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। জিনিশটার আকৃতি ঠিক পরিস্কার না। তবে হ্যারাল্ড নিজে যখন এখানে কাজ করেছে, তখন যে এই জিনিশ বসানো হয়নি তা সে নিশ্চিত। হ্যারাল্ড বিচিত্রদর্শন জিনিশটার দিকেই এগিয়ে গেলো। মনে অদম্য কৌতুহল। কাছে যেতেই দেখা গেলো প্রায় মাথা সমান উঁচু একটা অবতল আকৃতির দেয়াল। দেয়ালের উপর কিছু একটা নড়াচড়া করছে। হালকা গুঞ্জনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। শব্দটা বোধহয় ইলেকট্রিক মোটরের।

স্থানীয় জনগনকে কাজ থেকে বিদায় করে জার্মানরা নিজেরাই এই জিনিশ বসিয়েছে। আশ্চর্য্য তো! নির্বিচারে মানুষ মারা ছাড়া জার্মানরা আর কিছু করতে পারে বলে তো জানা ছিলো না। আচ্ছা, এটাকে বাইরে থেকে দেখা যায়না কেন? একটু খেয়াল করে দেখেই এই জিনিশ কেন বাইরে থেকে দেখা যায়না তা হ্যারাল্ড বুঝে ফেললো। আশপাশটা উঁচু গাছপালা দিয়ে ঢাকা এবং মাটির সমতল থেকে বেশ কিছুটা গভীরে বসানো হয়েছে এই জিনিষ।

পুরো বস্তুটিকে ঠিকমতো দেখার জন্যে ঘাড় উঁচু করে তাকালো হ্যারাল্ড। বৃষ্টির পানি ঢুকে যাচ্ছে চোখে। দেখতে সমস্যা হচ্ছে। তাও কৌতুহলের জয় হলো। এইসময় হঠাৎ মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের আলো বেরিয়ে এলো। সেই আলোয় দেখা গেলো অবতল দেয়ালের উপর ওভারসাইজ ম্যাট্রেসের মতো একটা ধাতব একটা গ্রীড বসানো। পুরো ধাতব গ্রীডটা মেরী-গো-রাউন্ডের মতো ঘুরছে।

হ্যারাল্ড পুরোপুরি মোহগ্রস্থ হয়ে গেলো। এই রকম যন্ত্র জীবনে এই প্রথম দেখলো সে। তার ভেতরে যে ইঞ্জিনিয়ার মানুষটি বাস করে সেই তাকে আটকে রাখলো। পরিস্থিতি কতটা বিপদজনক তা সে ভুলেই গেছে। কি কাজ এই যন্ত্রের? এরকম করে ঘুরছে কেন জিনিশটা? এটা যে কোন ধরনের মারনাস্ত্র না তা হ্যারাল্ড নিশ্চিত। কারন এতে গোলা বেরুবার কোন ব্যারেল নেই। হ্যারাল্ডের মনে হচ্ছে খুব সম্ভবত রেডিওর সাথে এই জিনিশের একটা যোগাযোগ আছে।

পাশ থেকে হঠাৎ কে যেন কেশে উঠলো। বাস্তবে ফিরে এলো হ্যারাল্ড এবং তার প্রতিক্রিয়া হলো মারাত্মক। কোন রকম চিন্তা ছাড়াই দেয়ালের প্রান্ত ধরে সে উঠে গেলো দেয়ালের উপর। কিছুক্ষন শুয়ে রইলো সেখানে। কোন নড়াচড়া নেই। দেয়ালের এপাশে কি নামা যায়? নামলে যন্ত্রের কোন সমস্যা হবে নাতো? এতো বড় যন্ত্র, রক্ষনাবেক্ষনের জন্যে এর ভেতরে মানুষ ঢোকার কথা। ভেতরে মানুষ ঢুকলে হাটাহাটি করার জায়গা থাকার কথা। এসব ভেবে দেয়ালে এপাশে নেমে গেলো হ্যারাল্ড। এখন যন্ত্রের গুঞ্জন অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে। জিভে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। অনুভূতিটা বিদ্যুতের।

আচ্ছা কাশলো কে? সম্ভবত পাশ দিয়ে কোন সেন্ট্রি হেটে যাচ্ছিলো। বাতাসের কারনে লোকটার পায়ের শব্দ পাওয়া যায়নি। বাতাস থাকাতেই বাঁচোয়া। সেজন্যেই হ্যারাল্ডের পায়ের শব্দ ব্যাটার কানে যায়নি। কিন্তু সেন্ট্রিটা কি ওকে দেখে ফেলেছে?

দেয়ালের সাথে লেপ্টে রইলো হ্যারাল্ড। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে। নিজের হৃৎপিন্ডের শব্দটাকেও বড় বেশি মনে হচ্ছে। এরপর কি হবে? সার্চলাইটের শক্ত আলো পড়বে শরীরে? আচ্ছা ধরা পড়লে কি হবে? জার্মানরা যদি খারাপ কিছু নাও করে, তবুও তুলে দেবে ডেনমার্কের পুলিশের হাতে। তারপর কি হবে তা ঠিক ধারনা করতে পারছেনা হ্যারাল্ড।

একটু অপেক্ষা করলো সে। সার্চলাইটের আলো এলোনা। নিজেকে শান্ত করে সামনের যন্ত্রটাকে ঠিকমতো দেখা শুরু করলো হ্যারাল্ড। ভারী, মোটাসোটা কিছু তার এসে যন্ত্রটার নিচ দিকে ঢুকে গেছে। তার গুলোর অপরপ্রান্ত ঢুকে গেছে দেয়ালের গর্তের ভেতর। এই তার নিশ্চয়ই বিল্ডিং এর ভেতর গিয়ে শেষ হয়েছে। এই জিনিশ কি তাহলে রেডিও সিগন্যালই দিচ্ছে? নাকি রিসিভ করছে?
বেশ কয়েক মিনিট কেটে গেলো। সেন্ট্রি চলে গেছে মনে হচ্ছে। আবারও দেয়ালে চড়ে বসলো হ্যারাল্ড। বৃষ্টির মধ্যেই দেখতে হবে। দেখতে অবশ্য কষ্ট হচ্ছে। যন্ত্রের মূল গঠনটার পাশে গাঢ় কালো, গোলাকার দুটো অবয়ব দেখা যাচ্ছে। এ দুটোও নিশ্চয়ই যন্ত্রেরই অংশ। আশেপাশে কোন সেন্ট্রি দেখা যাচ্ছেনা। দেয়ালের ওপাশে নেমে গেলো হ্যারাল্ড। বাইরে বেরিয়ে এলো কোন ঘটনা ছাড়াই।

প্রথমেই সে গেলো চার্চে। চার্চের ছোট ছোট জানালা দিয়ে আলো আসছে বাইরে। নিশ্চয়ই চার্চে কেউ আছে। শনিবার এইসময় কারো চার্চে থাকাটা একটু অস্বাভাবিক। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকালো হ্যারাল্ড। বাজনার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। পিয়ানোর সামনে বসে আছে আরনে। তার ভাই। মগ্ন হয়ে জ্যাজ সঙ্গীতের সুর তুলছে সে। ভাইকে দেখে খুশী হলো হ্যারাল্ড। আরনে ছুটিতে এসেছে বাড়িতে। হ্যারাল্ড মানুষটাকে খুব পছন্দ করে । আরনে যেখানে থাকে সেখানটা কেমন করে যেন ও মাতিয়ে রাখে।

এন্ট্রান্স দিয়ে চার্চে ঢুকলো হ্যারাল্ড। পেছনে না তাকিয়েই পিয়ানোর সুর বদলে ফেললো আরনে। জ্যাজ থেকে সে চলে গেলো ধর্মীয় সঙ্গীতের সুরে। মুচকি হাসলো হ্যারাল্ড। আরনে নিশ্চয়ই পায়ের শব্দে ভেবেছে চার্চে বাবা ঢুকেছেন। বাবা নিজে জ্যাজ পছন্দ করেন না, তার উপর চার্চে জ্যাজ ! অসম্ভব !

হ্যারাল্ড বললো “ ভয় পেয়োনা, আমি।”

ঘুরে বসলো আরনে। তার গায়ে বাদামী আর্মি ইউনিফর্ম। বয়সে সে হ্যারাল্ডের চাইতে বছর দশেকের বড়। কোপেনহেগেনের কাছে, একটা ফ্লাইং স্কুলে আর্মি এভিয়েশন ট্রুপসের পক্ষ থেকে ইন্সট্রাকটরের চাকরি করে সে। জার্মান বাহিনী ডেনমার্ক দখলের পর থেকে ডেনিশ মিলিটারীর কাজকর্ম বন্ধ। তাদের সব এয়ারক্রাফট মাটিতে বসে ঝিমায়। তবে ফ্লাইং ইন্সট্রাকটরদের কাজ আছে। তারা ইদানিং লোকজনকে গ্লাইডিং শেখাচ্ছে।

“আবছা দেখে মনে হলো বাবা এসে গেছেন।” হ্যারাল্ডের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বোলালো আরনে। চোখে স্নেহ। “তুই দেখতে একেবারে বাবার মতো হয়ে যাচ্ছিস।”
“তার মানে কি? আমার মাথাতেও টাক পড়বে?”
“পড়ার কথা।”
“আর তোমার ?”
“পড়বেনা। আমি মায়ের দিকটা পেয়েছি।”

আরনের কথা সত্য। আরনে দেখতে তার মায়ের মতো। মাথায় ঘন কালো চুল, চোখের রঙ সবুজ। আর হ্যারাল্ড পেয়েছে সব বাবার বৈশিষ্ট্য। ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ, লম্বা, মাথায় চুল পাতলা আর চোখের রঙ নীল। এ চোখে মানুষকে বিদ্ধ করা যায়।

হ্যারাল্ড বললো, “দাঁড়াও তোমাকে একটা জিনিশ শোনাবো।” আরনে পিয়ানোর সামনের টুল থেকে সরে গেলো। টুলে বসলো হ্যারাল্ড। সে বললো, “ স্কুলে একজন একটা রেকর্ড এনেছিলো। সেখান থেকে শিখেছি। আচ্ছা ভাইয়া, তুমি ম্যাডস কির্ককে চেনো?”
“আমার কলিগ পলের কাজিন।”
“ঠিক বলেছো। ক্লিয়ারেন্স পাইন টপ স্মিথ নামের এক পিয়ানিষ্টকে আবিস্কার করেছে ম্যাডস। বাবা কোথায় আছেন জানো?” প্রথমে একটু ইতস্তত করলো হ্যারাল্ড।

“আগামীকালের প্রার্থনা লিখছেন।”

“গুড।” সন্তুষ্ট হলো হ্যারাল্ড। বাবার প্রার্থনা লেখার কথা পার্সোনেজ এ বসে। জায়গাটা চার্চ থেকে প্রায় পঞ্চাশ ইয়ার্ড দূরে। অতদূরে পিয়ানোর শব্দ পৌঁছায়না। তার উপর আজকের আবহাওয়া ভালোনা। শব্দ চার্চের ভেতরেই থাকার কথা। হ্যারাল্ড ‘পাইন টপের বুগি-উগি’ বাজানো শুরু করলো। অদ্ভুত মাদকতাময় দক্ষিন আমেরিকান সুরে ভেসে গেলো চার্চের ভেতরটা।

হ্যারাল্ড চমৎকার পিয়ানো বাজায়। বাজাতে বাজাতে একসময় সে দাঁড়িয়ে গেলো, লাথি দিয়ে সরিয়ে দিলো বসার টুল। এখন বাজানোতে অল্প স্বল্প ভুল হচ্ছে কিন্তু সুরের কারনে অসঙ্গতিটা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। শেষ কর্ডটা বাজিয়ে হ্যারাল্ড ইংরেজিতে চিৎকার করে বললো, “দ্যাটস হোয়াট আই এম টকিং এবাউট ।“ আসল রেকর্ডেও এই কথাগুলোই আছে।

হেসে উঠলো আরনে। “খারাপ না।”
“আসলটা শুনলে বুঝতে। শুনে নিও।”
“এদিকে আয়। পোর্চে দাড়া, আমি সিগারেট ফুঁকবো।”
“বাবা জিনিশটা একদম পছন্দ করেন না।”
আরনে বললো, “আমার বয়স এখন আঠাশ। এই বয়সে আমি কি করবো না করবো, তা যদি বাবা বলতে আসেন, তাহলে তো সমস্যা।”
“আমি না হয় বুঝলাম। বাবা কি মানবেন?”
“বাবাকে তুই ভয় পাস নাকি?”
“অবশ্যই। মা ভয় পায়। এই দ্বীপের প্রায় প্রত্যেকেই পায়। তুমিও পাও।”
“তা অবশ্য ঠিকই বলেছিস।”

দুভাই চার্চের বাইরে গিয়ে দাড়ালো। দূরে পার্সোনেজ দেখা যাচ্ছে। এর কিচেনের জানালা দিয়ে আলো আসছে বাইরে। পকেট থেকে সিগারেট বের করলো আরনে।

হার্মিয়ার কোন খবর পেয়েছো? প্রশ্ন করলো হ্যারাল্ড। হার্মিয়া আরনের বাগদত্তা। জাতে ইংলিশ। জার্মানী ডেনমার্ক দখল করার পর থেকে আর এই মেয়ের সাথে দেখা হয়নি আরনের।

মাথা ঝাঁকালো আরনে। “কয়েকবার চিঠি লিখেছিলাম। গোয়েনবার্গের একটা ব্রিটিশ কনস্যুলেটের ঠিকানা পেয়েছিলাম।“

ডেইনস থেকে সুইডেনে চিঠি পাঠানো যায়। কারন সুইডেন নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।

“আমি ঐ ঠিকানার উপর প্রাপক হিসেবে হার্মিয়ার নাম লিখেছিলাম। কনস্যুলেট অফিস তা ঠিকানায় লিখিনি। শুধু বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম খুব বুঝি কতৃপক্ষকে ফাঁকি দেয়া গেলো। কিন্তু আসলে দেখা গেলো আমার চালাকি কোন কাজে দেয়নি। কমান্ডিং অফিসার চিঠি সহ আমার সাথে দেখা করলেন। হাতে চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, পরের বার এমন হলে সোজা কোর্ট মার্শাল। কোন হাংকি পাংকি চলবেনা।“

হ্যারাল্ড হার্মিয়াকে বেশ পছন্দ করে। হার্মিয়ার আগে আরনের যতগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিলো, সবকটা ছিলো আস্ত গর্দভ। হার্মিয়া সেরকম না। তার মাথায় প্রচুর বুদ্ধি। তারচে বড় কথা হার্মিয়া হ্যারাল্ডকে ছোট হিসেবে বিবেচনা করে কথা বলেনি। কথা বলেছে সমবয়সীদের মতো। এই ব্যাপারটা ভালো লেগেছে হ্যারাল্ডের।

“তুমি এখনো ওকে বিয়ে করতে চাও?”
“গড-অবশ্যই-অবশ্য যদি এখনো বেঁচে থাকে বেচারী।”
“এই অনিশ্চয়তাটুকু নিশ্চয়ই খুব যন্ত্রনার, তাই না?”
নড করলো আরনে। “তারপর, তোর খবর বল। কিছু হলো ?”
শ্রাগ করলো হ্যারাল্ড। “আমার বয়সী মেয়েরা স্কুলবয়দের পাত্তা দেয়না।” কথাটা হালকা ভাবে বললেও হ্যারাল্ডের এই সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত।
“যারা বেশ টাকা-পয়সা ওড়াতে পারে তাদের পেছনে ছোটে তোদের বয়সী মেয়েরা।”
“ঠিকই বলেছো। আর এরচে ছোট মেয়েগুলো... ঈষ্টারে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। বিরগিট ক্লাউসেন।”
“ক্লাউসেন? ওদের পারিবারিক ব্যাবসা কি নৌকা বানানো না?”
“হ্যাঁ। মেয়েটা সুন্দর। কিন্তু বয়স মাত্র ষোল। ওর সাথে কথা বলতে খুব বিরক্ত লাগে।”
“ঐ মেয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে দে। ওদের পরিবার ক্যাথলিক। বাবা মেনে নেবেন না।”
“তা জানি।” ভ্রু কুঁচকে গেলো হ্যারাল্ডের। “একটা জিনিশ খুব অদ্ভুত ভাইয়া। বাবা সবসময় চার্চে সহনশীলতার কথা বলেন, আর নিজে কি করছেন সেটা খেয়াল করেন না।”
“ধূর, বাদ দে ওসব।” সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ছুড়ে ফেললো আরনে। “চল ভেতরে যাই, বুড়োর সাথে দেখা করে আসি।”
“আচ্ছা ভাইয়া, আরেকটা কথা।”
“কি বলবি ? বল।”
“আর্মির অবস্থা কি?”
“ভালোনা। আমরা নিজের এই দেশটাকেই বাঁচাতে পারছিনা। আমাদের উড়তেও দেয়া হয়না। অদ্ভুত অবস্থা।”
“এরকম আর কদিন চলবে?”
“কে জানে? হয়তো সারাজীবন। এই নাৎসী বাহিনী সবকিছু জয় করে ফেলছে। একমাত্র ব্রিটিশরা ছাড়া ওদের আর কোন প্রতিপক্ষ নেই। এবং এই ব্রিটিশদের ভাগ্যও ঝুলছে সূতোর উপর।”
এবার হ্যারাল্ড নিচু গলায় বললো, “কোপেনহেগেনে কেউ নিশ্চয়ই রেজিষ্ট্যান্স মুভমেন্ট শুরু করেছে, তাইনা?”
শ্রাগ করলো আরনে। “যদি সত্যি এরকম কিছু হতো এবং আমি তা জানতাম, তাহলে তোকে কি আমি কিছু বলতাম?”

হ্যারাল্ড কিছু বলার আগেই কিচেনের দিকে রওনা দিলো আরনে। বৃষ্টি কোন পাত্তাই পাচ্ছেনা তার কাছে। দূর থেকে দৃশ্যটা হ্যারাল্ডের খুব ভালো লাগলো। দৃশ্যটাতে কেমন যেন কুচ পরোয়া নেহি একটা গন্ধ আছে। বড় ভাইয়ের চরিত্রের এই দিকটি হ্যারাল্ডের খুব ভালো লাগে।

(চলবে.........)


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দারুণ লাগল, চলুক চলুক
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন। ভালো থাকবেন।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

বুকমার্ক দিয়ে রাখলাম(আজকে আর পড়ার সময় নেই বলে মন খারাপ ) তবে আগাম শুভেচ্ছা (পড়ার পর বাকি মন্তব্য)।


আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা


love the life you live. live the life you love.

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

তারাপ ভাই,
আমি আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় আছি। আগেই বলি, এটি বিখ্যাত থ্রিলার লেখক কেন ফলেট এর লেখা 'হরনেট ফ্লাইট' উপন্যাসের অনুবাদ। অনুবাদ কেমন লাগছে তা অবশ্যই জানাবেন। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

মানিক ভাই, চমৎকার হাত আপনার। চলুক।

অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় অমিত্রাক্ষর,
আপনার মন্তব্যের জন্য ঠিক কি বলা উচিৎ আমি জানিনা। আশীর্বাদ বা দোয়া যেটা ইচ্ছে, আমার জন্য করবেন। পেশাগত কারনে সবসময় ঠিক সময় করে উঠতে পারিনা। তারপরেও নিয়মিত দেয়ার চেষ্টা করি। দেখা যাক এবার কি করতে পারি। ভালো থাকবেন।
ডা. মানিক

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

অপেক্ষায় ছিলাম...এরকম ধারাবাহিকে এত দেরী করলে আগের কাহিনি ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, ব্যাতিক্রম হয়নি, তাই আগের পর্ব পুরোটা আবার পড়ে এটা পড়তে হলো। মন খারাপ
ব্লগে উপন্যাস পড়ার একটা সমস্যা হয় সাধারনত, লেখাটাকে উপন্যাস না ভেবে 'উপন্যাসের মতো' ভাবা আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছিল, কিন্তু 'হারনেট ফ্লাইট' পড়তে এমন অনুভূতি টের পাচ্ছি না।
ভালো লাগছে। আবারও বলছি, দৌড়াক! হাসি
('জিনিস' বানানের নাটকীয়তা লক্ষণীয়, জিনিশ+জিনিষ দুটোই পাওয়া গেল, সুযুগ থাকলে ঠিক করে নেবেন)

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় দিগন্ত,
কিছু বানানে আমার ঝামেলা আছে। আর কিছু টাইপিং মিসটেইক। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লীজ। আশা রাখছি সামনের পর্ব গুলোতে এই ভুল গুলো হবেনা। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ আমার অনুবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্যে।

তপু [অতিথি] এর ছবি

পরের পর্বটার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। বেশী দিন অপেক্ষায় না রাখার অনুরোধ করা হলো।

মূলত পাঠক এর ছবি

দারুণ লাগছে আপনার অনুবাদ। ১ম পর্বে মৌলিক লেখা পড়ছি ভেবে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম, যা সাবলীল অনুবাদেরই ফল। পরে ট্যাগ দেখে খোঁজখবর নিয়ে বুঝলাম গপ্পোটাও বেশ জমজমাট। পরের পর্বের প্রতীক্ষায় রইলাম।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ মূলত পাঠক। দোয়া রাখবেন।

বইখাতা এর ছবি

ভাল লাগছে। আপনার অনুবাদ ও উপন্যাস - দুইটাই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অফটপিক: মানিক ভাই, আপনি মানুষটা ভালো না। কাক বন্ধ কেন? কাক দেন, নাহলে এটা পড়ছি না।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রকৃতি প্রেমিক ভাই,
হরনেট ফ্লাইট ০১ টা পেছনের পাতাতে গেলেই কাক দিয়ে দেবো পুরোটা একসাথে। মাঝখানে কোলকাতার একটা লিটল ম্যাগ গুরুচন্ডালী আমার এই লেখাটিকে তাদের পূজোবার্ষিকী তে পাশবিক সঙ্খ্যায় চেয়েছিলো। আমি দিয়েও দিয়েছিলাম। মজার বিষয় হচ্ছে ওরা আমার লেখার তেরোটা বাজিয়ে দিয়েছে। পুরোটা প্রকাশ করেনি। মাঝে ইলাষ্ট্রেশনের নামে কিছু জঞ্জাল ছবি বসিয়েছে। ওরা আমাকে জানালো আমরা যেহেতু প্রকাশ করছি তাই আর সচলে দেবেন না। তখন কি জানতাম যে ছাপার নামে এই তুঘলকি কান্ড চালাবে ওরা। বেরিয়েছে ওয়েব ভার্ষানে। অর্ধেক। তাও কি যে অবস্থা! ওরা যেহেতু পুরোটা ছাপেনি তাই আমি এখানে বাকীটা দিয়ে দেবো। এখন কাক নিয়ে খুব অনুশোচনায় ভুগছি। আমার সচল ছেড়ে গুরুতে যাওয়া উচিৎ হয়নি। আমি আমার সকল পাঠকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।
ডা, মানিক

তারাপ কোয়াস এর ছবি

"প্রাক কথন" এর মত এই অনুবাদটাও একদম সহজ, সাবলীল। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।
(ছোট্ট সাজেশন: বানান বিভ্রাটের জন্য অভ্র স্পেল চেকার ব্যাবহার করতে পারেন)


আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা


love the life you live. live the life you love.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।