অষ্টম মনু আখ্যান

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৮/০৯/২০১১ - ৭:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাশ্যপ মুনির দুই পত্নী। একজন দিতি: দৈত্যমাতা; অপরজন অদিতি: দেবমাতা। দেবমাতা অদিতি অধিকতর রূপবতী। দিতি গুণবতী বটে, তবে স্বর্গলোকে রূপই আসল। সেহেতু অদিতির পুত্রদিগকে মর্ত্যলোক দেবতা হিসাবে শ্রদ্ধা, পূজা, ইত্যাদি করিয়া মাথায় করিয়া রাখে। দিতির পুত্রদিগকে বলা হয় দৈত্য, তাহাদের প্রতি মানবকূলের অপরিসীম ঘৃণা। কাশ্যপের এক পুত্র কাশ্যপেয়— উহাকে মর্ত্যলোকে মানবজাতি সূর্যদেব আখ্যায়িত করে। দেবহেতু বোঝা স্বাভাবিক সূর্যদেব অদিতির পুত্র।

দেবকূলে বার্ধক্য নির্বাসিত। সকলের বয়স যৌবনেই স্থিরতা লাভ করে। সূর্যদেবের পুত্রের বয়সও যৌবনে পা রাখিয়া স্থির হইয়াছে। কি স্বর্গলোক, কি মর্ত্যলোক, সর্বব্যাপী সুখ বিরাজমান ছিলো। সূর্যপুত্রের যৌবনপ্রাপ্তি উপলক্ষে স্বর্গলোকে তখন আনন্দ-উৎসব।

হঠাৎ মহাদেবের রোষে মর্ত্যলোকে প্রলয় নামিয়া আসিলো। স্বর্গলোকের দেবতারা তাহা প্রসন্নভাবে উপভোগ করিতেছিলেন। মন্বন্তর আসিলো। সপ্তম মনু পদত্যাগ করিলেন। সূর্যপুত্রকে অষ্টম মনু নির্বাচন করা হইলো। এই পর্যন্ত সব সঠিক পথে ছিলো(!)।

সমস্যা বাধিলো যখন পুনরায় জগত প্রতিষ্ঠাহেতু মনুর স্ত্রী হিসাবে এক শতরূপা নির্বাচনের ক্ষণ আসিলো। অষ্টম মনু সূর্যপুত্র তাহার ভালোবাসার উপন্যাস প্রকাশ করিলেন। দেবকূলে হায় হায় রব পড়িয়া গেলো। জানা গেলো, সূর্যপুত্রের তাহারই পিতামহী অদিতির সাথে গোপন সম্পর্ক। অদিতিদেবী নিজের পৌত্রকে চিনিতেন না। বুঝিয়াই তিনি ‘ছি! ছি!’ করিয়া উঠিলেন। মনুও তাহার পিতামহীকে চিনিতেন না। তিনি কহিলেন: কাশ্যপ মুনির জীবীতাবস্থায় অদিতিদেবী আমার সহিত এইরূপ ছলনা কিভাবে করিলেন? এ জীবন আমি রাখিবো না।

মনু ক্রোধে নিজ বুকে ছুরি চালাইতে উদ্যত হইলেন। সূর্যদেব তাহাকে নিরস্ত করিলেন (অবশ্য অবিনশ্বর মনু মরিতেন না)। সূর্যদেব কহিলেন: পুত্র, যাহা বিগত, তাহা ভাবিয়া কোনো উপকার পাইবে না। তুমি অষ্টম মনু। তুমি হইবে অষ্টম জগতের আদিপিতা। দ্যা অ্যাডাম।

মনু নিশ্চুপ থাকিলেন। এ নীরবতার কারণ বুঝিতে পারিয়া সূর্যদেব হাসিতে হাসিতে বলিলেন: বুঝিয়াছি। ইভ এর খোঁজ করিতেছো তো? এইবার শতরূপা নির্বাচন ব্যর্থ হইলেও সহস্র শতরূপা শতরূপে মর্ত্যলোকে থাকিবে। তাহাদের মাধ্যমে তুমি পুনরায় মর্ত্যলোকে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিবে। শতরূপাবর্গ নশ্বর হইলেও তোমার অস্তিত্ব অষ্টম মন্বন্তরের পরেও টিকিয়া থাকিবে। তুমি স্বর্গলোকে ফিরিয়া আসিবে অতঃপর। মাত্র কয়েক নিযুতকাল মর্ত্যলোকে থাকো বৎস, একটু কষ্ট হউক।

অতিশয় উৎফুল্ল হইয়া মনু মর্ত্যলোকে তাহার কার্য শুরু করিয়া দিলেন।

এদিকে অপসান সহ্য করিতে না পারিয়া অদিতি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালাইলেন। বিষপান করিলেন, গলায় ফাঁস লাগাইলেন, স্বর্গের পুষ্করিণীতে ডুবিয়া থাকিলেন কয়েকশত দিবস, মর্ত্য হইতে অর্ডার দিয়া ধুতুরা আনিয়া খাইলেন; কিছুই হইলো না। স্বর্গবাসীদের মৃত্যু নাই, কোনো আঘাতে তাহাদিগের ব্যথা অনুভূত হয় না। কাশ্যপ মুনিও রাগিয়া অদিতিকে হত্যা করিবার শুভচেষ্টা করিলেন; ইহাতে অদিতি মরিলো না বটে, তবে স্বর্গরাজ ইন্দ্রদেব কাশ্যপকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাতালবাসে পাঠাইয়া দিলেন। অদিতিদেবী অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিলেন ইন্দ্রদেবের নিকট।

২.
অষ্টম মনুর দিনগুলি উদাসীনভাবে কাটিতেছে। শতরূপাবর্গের মৃত্যু হইয়াছে সহস্রবছর পূর্বেই। মর্ত্যরাজের এ উদাসীনতায় মর্ত্যে নামিয়া আসিয়াছে শোক, দুর্ভিক্ষ, রাহাজানি। মর্ত্যবাসীরা নিজেদের হত্যা করিতেছে নিজেরাই। কোনো সবুজের চিহ্ন নাই, কোন রঙ নাই, মর্ত্যবাসীর আকাশ কদাকার হইয়া গিয়াছে; মর্ত্য আজ নরকতুল্য। অষ্টম মনুর এক অঙ্গুলি সংকেতেই সব ঠিক হইয়া যায়। কিন্তু এই ভাবুক মনু এইরূপ অবস্থায় তাহা না করিয়া অদিতির রূপ নিয়া একখানা কাব্য লিখিয়া স্বর্গে ডাকযোগে প্রেরণ করিলেন।

অদিতিদেবীর নিকট উহা পৌঁছাইয়া দেবার লোক মিলিলো না। সকলে অদিতিদেবীর রূপভয়ে ভীত। কিভাবে ওই কাব্য ইন্দ্রপত্নী শচিদেবীর হস্তে পড়িলো। কাব্যে মুগ্ধ হইয়া শচিদেবী মনুর প্রশংসা করিয়া পত্র প্রেরণ করিলেন মর্ত্যে। মনুও তাহার উত্তর দিলেন। ইন্দ্রের অজ্ঞাতেই পত্রালাপ চলিতে থাকিলো সহস্র বৎসরব্যাপী। মর্ত্যলোকের হাহাকার মনুর কর্ণগহ্বর পর্যন্ত আসিলো না।

একদিন মনু মর্ত্যলোকের সমস্ত সম্পদ খরচ করিয়া শচিদেবীর জন্য প্রদীপ জ্বালিয়া তাহাকে আহ্বান করিলেন।

স্বর্গলোক ইন্দ্রদেবের। প্রত্যেক কার্য সেথা ইন্দ্রের বাণীতে সম্পন্ন হয়। ইহা ভাবিয়া শচিদেবী বলিলেন: আমি কিভাবে আসিবো সূর্যপুত্র? আমার যে পদে পদে বাধা!

মনু বলিলেন: কাব্যের মাধ্যমে।

অষ্টম জগত ধ্বংস হইলো অতঃপর।

- সূর্যপুত্র


মন্তব্য

guest_writer এর ছবি

চলুক

অতিথি_পদ্মজা এর ছবি

আহারে! বেচারা নিরো'ই খালি ধরা খাইয়া গেলো! চোখ টিপি

সূর্যপুত্র এর ছবি

হাসি :)

তারেক অণু এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

আহা
শিলে পাটায় ঠোকাঠুকি মরিচের যায় প্রাণ

কল্যাণF এর ছবি

হেহ হেহ হেহ

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

মরিচ ছাড়া যে মশলা হয়না, লীলেন ভাই।
লেখককে ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ

সূর্যপুত্র এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

চলুক

অতীত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।