দৈনিক নিরপেক্ষতা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: সোম, ১৬/০১/২০০৬ - ২:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেশে প্রতিদিন অন্তত 500 দৈনিক প্রকাশিত হয়। 500 প্রকাশক সম্পাদক প্রতিদিন ভোরে গত দিনের আশা হতাশা মনুষ্যত্ব পাশবিকতা সব তুলে ধরছেন। তাদের অবদান তারা নিজেরা যে বিষয়টাকে সবাইকে জানানোর প্রয়োজন ভাবেন সেটা দৈনিকে প্রকাশ করেন। রহিম করিমের বাসায় ছিচকে চুরির সংবাদমূল্য নেই। লোকজন পয়সা খরচ করে এই খবর পড়বে না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর বাসায় চুরি হয়ে যাওয়া খবর। আমি তুমি সে ছিনতাইকারীর কবলে পড়লে খবর হয় না কিন্তু সাংবাদিকের ছিনতাই হওয়া খবর।

এসব খবর কোন বিতর্ক তৈরি করে না। বিতর্ক তৈরি করা খবরগুলো কেন বিতর্কিত হয় এটা বলার আগে এইটুক বলি সংবাদ পত্র একটা আদর্শ নিয়ে প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রদানের সাথে সাথে তা আদর্শ প্রচার করে। তারা নির্দিষ্ট চেতনার এক শ্রেনীর কাছে তাদের মতামত পৌছাতে চায়। দেশের 6 কোটি মানুষের বাজারে তাদের ক্রেতার সামাজিক রাজনৈতিক মতাদর্শ তাদের জানা। তারা শুধুমাত্র সেই লোকগুলোর কাছে তাদের সংবাদবিশ্লেষন জানায়।

দেশের ভিক্ষুক শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করলে সেখানে ছাপা হতো কোন এলাকায় কারা ভিক্ষা দেয় বেশী। কিন্তু বুদ্ধিজীবি সমাজ এই দৈনিক পড়তো না। দেশের সব সংবাদপত্রের নির্দিষ্ট ধারনা আছে তারা ঠিক সংজ্ঞা জানে নিরপেক্ষ মানুষ বলতে তারা ঠিক কি ধরনের মানুষকে বোঝায়। মুক্তমনা মানুষ হিসেবে কি ধারনা চেতনা লালন করতে হবে তাও ওরাই ঠিক করে দেয়। আপনি আমি নিয়ন্ত্রিত তাদের মতাদর্শে।
ঘটনা ঘটে, তার রাজনৈতিক পটভূমি যেটাই হোক , যে ঘটনাটা আমাদের জানায় তার আদর্শিক অবস্থান প্রকাশ পায় ঘটনার বিশ্লেষনে। সে নিজের আর সংবাদপত্রের আদর্শের প্রতিফলনে সংবাদ দেয় । এমনকি প্রশাসনের নিজস্ব প্রকাশনা আছে। বিভিন্ন সরকারী দপ্তর প্রেস রিলিজে তাদের বক্তব্য জানায়। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের মতাদর্শ প্রচারের জন্যে সংবাদপত্র প্রকাশ করে। দেশে জে এম বি বোমা মেরে ঝাঝড়া করে ফেললো তাদের লিফলেটে তাদের আদর্শ লেখা। সরকারী দলের প্রেসরিলিজ বিরোধী দলের কাজ। দেশে 10 ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার হলো তার দায়িত্ব বিরোধী দলের। বিরোধী দল বলছে কাজটা সরকারের। এই চলছে। সরকার প্রেসরিলিজ দেয়। এটা বিশ্বাস করার মানুষ আছে। মানুষ বিশ্বাস করে।
এসব খবর সবাই জানে। ইনকিলাবের মাঝের পাতায় কয়েকদিন পর পর ইমাম মেহেদীর জন্ম হয়েছে। এই কেয়ামত আসন্ন । এই ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটবে। প্রচারনা চলছে। আমি 90 থেকে পড়ছি। সেই প্রথম ইমাম মেহেদীর বয়েস হয়ে গেল 25 কিন্তু তার কেরামতি দেখলাম না।

ইত্তেফাকে খবর আসলো 2 মাথা 6 পায়ের বাছুর জন্মেছে। আচমকা সব দৈনিকে আজব সব জন্তুর জন্মসংবাদ আসা শুরু হলো। বাঙ্গালীর অনুকরনপ্রিয়তা হতে পারে নেপথ্য কারন।

সংবাদপত্রগুলো কি খবর বের করবে কি ব্যাখ্যা দেবে তা সংবাদ পত্রের আদর্শ নির্ধারন করবে, তারা কিভাবে চলমান রাজনীতি প্রশাসনের নীতি, দেশের জনজীবন তুলে ধরবে এটা সংবাদ পত্রই ঠিক করবে। আমাদের স্বাধীনতা আমরা নিজেরা বাজারে গিয়ে ঠিক করবো কোন মতাদর্শের খবর আমরা চাই। আমাদের মনভরানোর চেষ্টা করছে তারা। তারা সংবাদপত্রের সাহায্যে জনমত তৈরি করছে। যারা সফল তাদের প্রচার সংখ্যা বেশী। তাদের প্রচার সংখ্যা হিসেব করে কোন মতাদর্শের মানুষ বেশী এটা নির্ধারন করতে পারেন।

আমার মনে হয় সংবাদের নেশা পানের জর্দার মতো বা সিগারেটের মতো যার যে ব্রান্ড পছন্দ সে তাই কিনবে। তার স্বাদ উপভোগ করবে।

নতুন আরও একটা মুদ্রাদোষ শুরু হয়েছে ইদানিং কিছু হলেই আজকের প্রজন্ম হেন আজকের প্রজন্ম তেন। আপনার আদর্শ মানে এমন 10 জন থাকলে মানে না এমন আছে 90 জন তাই বড়জোর সমমনা ব্যাবহার করা যায় পুরা প্রজন্ম নিয়ে টানাটানি কেন????

1997 সম্ভবত আই আর এর কোন এক শিক্ষক এর বিরুদ্ধে ছাত্রীনিপীড়নের অভিযোগ, ছাত্র দল ছাত্র লীগ দুই দলই বিরোধী পক্ষে। সাধারন ছাত্রছাত্রী ব্যানারে প্রতিবাদ চলছে, আর ছাত্র সন্ত্রাসে বিপর্যস্থ দেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে আন্দোলন চলছে। প্রতিদিন অমুক তমুক বিবৃতি দিচ্ছে। এর মধ্যে সাধারন ছাত্র ছাত্রী ব্যানারের আন্দোলন হিট করলো। সুপার হিট। কারন সংবাদ পত্রের দাবী সাধারন সচেতন ছাত্রেরা প্রতিবাদ করতে পারে এর জন্যে আনুষ্ঠানিক ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন নেই। তারা প্রতিদিন সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, আর সাধারন ছাত্রেরা ধাওয়া খাচেছ। সেই আন্দোলন নিয়ে বা এর পরে 2002 তে উপাচার্জের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা পরে বলা যাবে। শুধু এজন্যে উদাহরন দিলাম- সংবাদপত্রগুলো একটা আদর্শ প্রচার করে আর তার সমর্থক সব খবর গুরুত্ব দিয়ে ছাপায়।

অনেক উদাহরন অনেকেরজানা। আমি নির্বোধ মানুষ বেশী কথা বললে ভুলের হার বাড়বে। যারা নিয়মিত দৈনিকের সিরিয়াস পাঠক তারা দৈনিকগুলোর রাজনৈতিক আনতি জানেন আমি পরি খেলার পাতা সাময়িকি বিনোদন এই অবস্থায় প্রথম শেষ মাঝের পাতার বিশ্লেষন সম্ভব নয়।

যারা যে আদর্শে বিশ্বাস করেন তারা সেই আঙ্গিকে বিচার করেন কিন্তু অন্য একটা মানুষের আদর্শ বা চেতনাকে প্রশ্ন করলে পালটা প্রশ্ন হবে । অন্তত আমরা পরস্পরের মতাদর্শ মানতে না পারলেও শ্রদ্ধা করতে পারি। আর কোন একটা সম্প্রদায়কে নির্দিষ্ট করে কথা বলা সাম্প্রদায়িকতা।

71এ কিছু মোল্লা শ্রেনীর লোক যুদ্ধবিরোধী ছিল কিন্তু যুদ্ধের সপক্ষেও অনেক মওলানা ছিলো। যদি সব মওলানাকে রাজাকার বলা হয় এটাও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক আচরন।
কিন্তু কেউ কেউ এই শালীনতা ভুলে উগ্রপন্থী মন্তব্য করছে। এটা বিব্রতকর।


মন্তব্য

মাসুদ সজীব এর ছবি

শালীনতা? নিরপেক্ষতা? এখন সবগুলো অনলাইন পত্রিকা এক একটি চটিবাক্স। সেক্স বিষয়ক খবর সবচেয়ে বড় কাটতি, তাই সানি লিওন-রা হলো মূল বিষয়।

আর বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো এখন ভীষন নিরপেক্ষ। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারলে তারা হরতাল-অবরোধকারীদের দোষারপ করে না, তাদের দিকে আঙ্গুল তুলে না। দুর্বৃত্ত নামক অচেনা এক প্রজাতি এই কাজ করেছে বলিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। খাইছে

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।