সাম্প্রতিক বিকলাঙ্গ ভোটার তালিকা এবং মোবাইল সিমের ভুঁয়া রেজেস্ট্রেশনের সংবাদ পড়ে।

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৫/২০০৮ - ১২:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিকলাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রসব করেছে নির্বাচন কমিশন। পাইলট প্রকল্প যখন সমাপ্ত হয় তখনও ভুল ছিলো। তবে সেই ভুলকে অবজ্ঞা করেই নির্বাচন কমিশন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলো। সেটার ফলাফল ভয়াবহ বিপর্যয়।

ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার ছবি দেখে বুঝবার উপায় নেই এটা আসলে কার ছবি। ভোটারকে শনাক্ত করবার জন্যই ভোটার আইডি কার্ডে ছবি সংযোজনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিলো, তবে সেই ছবির হাল যদি বেহাল হয় তবে এত টাকা খরচ করে এই ছবি তুলবার যন্ত্র কেনো খরিদ করা হয়েছিলো? কেনো রাষ্ট্রের এত অর্থের অপচয়? কেনো এত সময়ক্ষেপন?
দুই বছরের মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছিলো আমাদের জলপাই বাগানের মালীরা, তাদের এই সময়টা দেওয়ার জন্যই অনেক রকম টাল-বাহানার প্রয়োজন ছিলো, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার নির্ভুলতার গল্প শুনিয়ে আমাদের নেশাগ্রস্থ করবার একটা প্রচেষ্টা ছিলো।

সংবাদপত্রে সম্পূর্ণ পাতার রঙ্গীন ছবি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞাপন দেখে হাসি লাগছে এখন। তারা ভুলের পরিমাণ দেখে শঙ্কিত। তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসন্ন নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে তারা ভোটার আইডির ভুলগুলো সংশোধন করবে। এত বেশী ভুল হয়েছে যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকল্পই অর্থহীন হয়ে গেছে।

তখনও আমার বক্তব্য ছিলো এটা শুধুমাত্র অর্থের অপচয়, সেই বক্তব্য থেকে সরে আসবার কোনো কারণ এখনও খুঁজে পেলাম না। বরং এখন মনে হচ্ছে এই নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের যদি অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য, কিংবা রাষ্ট্রের প্রায় কোটি টাকার সম্পদ অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতার করে অন্তত জিইসি দিয়ে কয়েক দিন নির্যাতন করে জেল হাজতে প্রেরণ করতে পারতাম তবে সেটাও উপযুক্ত শাস্তির কম হতো।

যাই হোক তখন নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ছিলো যেহেতু ছবিসহ জাতীয় পরিচয় পত্রের কাজ শুরু হয়েছে তাই এই ভোটার তালিকা প্রকল্প সেটার সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। এই ভোটার তালিকায় যেসব মানুষ আছে তাদের নির্ভাবনায় জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া যায়। এতে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় হবে।

আমি যদিও জানি না এটা কিভাবে অর্থ সাশ্রয়ী প্রকল্প হবে? যাদের ভোটার তালিকায় ভুক্তি থাকবে তারা ছাড়া যেসব শিশুরা পরিবারের অংশ তাদের জন্যও তো একই ভাবে ক্যাম্প করতে হবে, একই ভাবেই তাদের জন্য ছবি তোলার ব্যবস্থা করতে হবে, একই ভাবে তাদের জন্য কিছু কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

এইসব খরচতো হবেই, এখানে সাশ্রয় হলো কোথায়? না কি আমাদের শিশুদের জাতীয় পরিচর পত্রের প্রয়োজন নেই?

ছবিসহ ভোটার তালিকা হলে না কি জাল ভোটের সংখ্যা কমে যাবে, মানুষ জাল ভোট দিতে পারবে না, সাখাওয়াত সাহেবতো আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে নির্ধারিত ডাটাবেসের সবকটা ভুক্তিতে তদন্ত করে দেখতে চান কারো ফিঙ্গার প্রিন্ট দুই বার নেওয়া হয়েছে কি না। তিনি একেবারে নির্ভুত ভোটার তালিকার সে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এবং নির্বাচন কমিশন আলো করবার আগে টিভিতে তার যোগ্যতা এবং কর্মদক্ষতার যে বানী দিয়েছিলেন সেসব বানীর জোশ কমে এসেছে।
ফাঁপা বুলিতে পরিণত হয়েছে সব কথাই।

এই ভোটার তালিকা নির্ভুল তো নয়ই বরং অনেকক্ষেত্রেই অনেক ভোটার এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে নি, কারণ সবার বাসায় বাসায় গিয়ে ফর্ম পূরণ করবার কথা থাকলেও কর্মীবাহিনী সবার বাসায় যান নি, কেনো যান নি তারা এই প্রশ্নের উত্তর তারা ছাড়া আর কেউ জানে না । বরং ঘোষণা দিয়ে ভোটার আইডি কেন্দ্রে সবাইকে ডাকা হয়েছে, সেখানে উপস্থিত একজন সাদা মনের মানুষ শনাক্ত করে বলেছেন আসলেই ভোটার হতে আসা মানুষটা তার অঞ্চলের অধিবাসী।
তাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই ভোটার আইডি কার্ডে জাল ভোটের সংখ্যা কমাবে হয় তো তবে আমার মনে হয় ভোট কারচুপি ঠেকাতে পারবে না এই ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবস্থা। এর আগে জোর করে মানুষের ভোট দিয়ে চলে যেতো দুর্বৃত্তরা, এবার ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিবে তারা। পেশী শক্তির প্রভাব এড়াতে পারবে না নির্বাচন। বরং অনেকের কাছেই ভোটার আইডি কার্ড কেড়ে নেওয়ার সাম্ভাব্য ভবিষ্যত বানী করে রাখছি এখনই।

সরকার নানাভাবে উদ্যোগী হয়ে ভালো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলো। তার একটা ছিলো মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশন। মোবাইল কোম্পানিগুলো যেভাবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের গ্রহক সংখ্যা এত এত এত , সেটা বাস্তবে বিক্রীত সিমের সংখ্যা, আসল হিসেবে সেটার পরিমাণ বিক্রিত সিমের অর্ধেকও হতে পারে।
মোবাইলের মাধ্যমে চাঁদাবাজী, খুনের পরিকল্পনা এবং যোগাযোগসহ নানা অপরাধ নির্মূল করবার জন্য তারা এই প্রকল্প গ্রহন করেছিলো। তবে খবরটা পড়ে ভালো লাগলো,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে প্রায় হাজার সিম রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে, হয়তো কাজটা এত দিনে সমাপ্ত হয়ে গেছে-
এই প্রকৃত পরিচয়হীন হাজার মোবাইলের সিম, এদের কোনো বৈধতা নেই,

একটেলের একজন কর্মী জানালো কিছু উৎকট রসিকতা- সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রাপ্ত কিছু ফর্মের কথা জানলাম

নাম: আরাফাত রহমান কোকো
মা: খালেদা জিয়া
বাবা: মোসাদ্দেক হোসেন ফালু

নাম: রানী মুখার্জি
মা: প্রীতি জিনতা
বাবা: সাইফ আলী খান
কথা হলো তাদের ছবি দেওয়া যাবে, একটা ঠিকানাও দেওয়া যাবে, এটা নিশ্চিত করবার কোনো ব্যবস্থাতো নেই/
এই মোবাইল সিম ব্যবহার করে একটা অপরাধ করা হলো, ডিবি পুলিশ কি রানী মুখার্জীকে অপরাধী মানবে?

কর্পোরেট নমনীয়তা এবং কর্পোরেট বিজনেস পলিসির অনেক ফাঁকফোকর, এখান দিয়ে কোনো ভাবেই অপরাধ নির্মুল করা সম্ভব না। দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব না। আমাদের সচেতনতার অভাব থাকলে আসলে কোনোদিনও এটা সম্ভব হবে না।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

মোসাদ্দেক হোসেন নয়, মোসাদ্দেক আলি। এভাবে কথিত কোকোর কথিত বাবার নাম বিকৃতির তীব্র পেতিবাদ জানাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রেজওয়ান এর ছবি

যেভাবে এবং যে পরিস্থিতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার লিস্ট হচ্ছে সে জন্যেই মনে হয় সবার মনে আস্থা জাগছে না।

তবে আমি অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের পক্ষে। সিম রেজিস্ট্রেশনের যেই সমস্যার কথা বললেন, একটি পরিপূর্ন জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেইজ থাকলে সেটি রোধ করা সম্ভব। ইউরোপের অনেক দেশেই জাতীয় আইডি কার্ড রয়েছে সে থেকেই এখন তৈরি হচ্ছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। চিকিৎসা, ভ্রমন, ব্যন্ক একাউন্ট, ভোটার লিস্ট, শিক্ষা, আয়কর যা কিছূই বলুন না কেন পরিচয় ওই ডাটাবেজকে কেন্দ্র করেই। তাহলেই না দুর্নীতি রোধ সম্ভব।

আমাদের দেশে হতে সময় লাগবে। তবে নকল হবে বলে সেপথে আমরা এগুব না এমন মনোভাব থাকলে আমরাই অনেক পিছিয়ে যাব। আগামী বছর থেকেই অনেক দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ম্যান্ডেটরী হচ্ছে। একদিন ঠেকে পড়েই অনেক টাকা খরচ করে বাংলাদেশ সরকারকে ওই পথে যেতে হবে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

অপ বাক এর ছবি

আমি ঠেকানোর পক্ষে না বরং এটাকে প্রকৃত পরিচয়পত্র করার পক্ষে।
এত খরচ করে একটা নিয়ম তৈরি করা হয়েছে, সেটা যথাবিধি পালিত হচ্ছে কি না এটার তদারকি করবার মানসিকতা নেই কারোই। এটাই দুঃখজনক।

পয়সার শ্রাদ্ধ করে যদি কোনো ভালো আউটপুট পাওয়া না যায় তাহলে পরিচয়পত্র দিয়ে কি হবে। কাজটা ধীরে সুস্থে হোক, তবে সঠিক ভাবে হোক, তড়িঘড়ি করে হাজার ভুলে ভরা পরিচয়পত্র চাই না। এটাও এক ধরণের হয়রানি, এখন ভোটার আইডি নিয়ে যেমন হচ্ছে, মানুষ বিভিন্ন মহলে গিয়ে যোগাযোগ করছে, তারা নিজেরাও জানে না কোথায় গেলে ভোটার আইডি সংশোধন করা যাবে।

আর মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে সমস্যা একটাই, মোবাইল কোম্পানিগুলো বাড়তি জনবল নিয়োগ করবে না এটাকে যাচাই করতে, তাদের নাম ঠিকানা প্রয়োজন, সেটা পেলেই তারা খুশি, সেটা বৈধ কি না, প্রকৃত ক্রেতারাই রেজিস্ট্রেশন করছে কি না এটাও তারা যাচাই করছে না।
একজনের আঙ্গুলের ছাপ, আরেকজনের নাম, আরেকজনের বাবার নাম, আরেক জনের ঠিকানা ব্যবহারে রেজিস্ট্রেশন করা সিম আদতে অপরাধনির্মূলে কোনো ভুমিকা রাখবে না।অবশ্য আমি নাগরিকদের সংখ্যায়িত করবার বিপরীতে।

তাই এইসব সামাজিক নিরাপত্তার খাতিরে চিহ্নধারী নাগরিকদের বৈধতা এবং অন্য সবার অবৈধতা হয়তো জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য উপযোগী সহজসাধ্য বিষয় হতে পারে- তবে এটা সার্বক্ষতিন টহলদারির মতো একটা বোধ আনে আমার ভেতরে।

যাই হোক আমার পক্ষে সম্ভব হলে আমি এইসব চিহ্নিতকরণ পদ্ধতির বাইরে চলে যেতাম- এমন অনেক নাগরিকের বোধ তৈরি হয়েছে।

দ্রোহী এর ছবি

আমাদের নীতি নির্ধারকদের যা বুদ্ধি তা দিয়ে তারা কোনদিনও বুলেটপ্রুফ আইডিয়া বের করতে পারবে না। আমি বরং দ্রোহী স্টাইলে একটা আইডিয়া দিয়ে দিই:

ওসব মোবাইল সিম, বরবটি, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দিয়ে আমাদেরকে ঠেকানো যাবে না। আমাদের ঠেকাতে চাই বুলেটপ্রুফ আইডিয়া।

ওয়েষ্টার্ণ গল্পের গরুর পোঁদে ছাপ দেয়ার মত করে প্রত্যেক ভোটারের পোঁদে গরম লোহা দিয়ে ছাপ দিয়ে ভোটার তালিকা করতে হবে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অপ বাক এর ছবি

ব্রান্ডিং হলে ভালো তবে সবার জন্য কি আলাদা নাম্বার না কি সবার জন্য একটাই ব্রান্ডিং লোগো?
জায়গাটা একটু উপরে করলে হয় না? মানে ভোটের দিন গিয়ে দেখাতে হবে তো। সবাই কি আর লুঙ্গী পড়ে ভোট দিতে যাবে?

দ্রোহী এর ছবি

যারা লুঙ্গী পরবে তারা নিচের কাপড় উপরে তুলবে আর যারা প্যান্ট জাতীয় কাপড় পরবে তারা নিচে নামাবে।

ছাপ একেবারে পাছা বরারব দিতে হবে। উপরে নিচে হলে চলবে না। ভোটার হবার জন্য নিচের তথ্যগুলোই যথেষ্টঃ-

নাম: রানী মুখার্জি
মা: প্রীতি জিনতা
বাবা: সাইফ আলী খান
নাগরিক নম্বর: ১০,১১,৪৫,৬৩৪

কেউ যদি নিজের পাছায় অন্যের নাম লেখাতে চায় তাকে বাধা দেয়া চলবে না। কেননা পাছাই হবে একমাত্র পরিচয়পত্র।

ধরুন "করিম মিয়া" বাজারে যাচ্ছে। পথিমধ্যে এক ড়্যাব কর্মকর্তা তার পরিচয় নিয়ে সন্দিহান হয়ে করিম মিয়াকে চ্যালঞ্জ করে বসল।
করিম মিয়া তখন পাছার কাপড় তুলে উপুড় হবে। ড়্যাবের কর্মকর্তা পড়বেন:-

নামঃ - করিম মিয়া
পিতাঃ - দুদু মিয়া
মাতাঃ - খাদিজা বেগম
নাগরিক নাম্বারঃ - ১০,০৯,৩২,৪৫৬

ব্যাস, ল্যাঠা চুকে গেল।


কি মাঝি? ডরাইলা?

রণদীপম বসু এর ছবি

ভোটার আইডি হবার আগে আমাদের অন্তত একটা পরিচয় ছিল। শেষ পর্যন্ত সেইটাও হারাই কিনা ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আলমগীর এর ছবি

ঠিকই আছে। একটু ভুল তো হবেই। একবারে এত বড় কাজ করা সম্ভব না।

অপ বাক এর ছবি

এত বড় একটা কাজে ভুল হবেই , এটা মেনে নিয়েই বলছি ভুলের পরিমাণটা কম রাখা যেতো যদি আমরা তাড়াহুড়ো না করতাম। আমাদের ছবিসহ ভোটার কার্ড প্রয়োজন, নির্বাচনে ভোট চুরি ঠেকানোর জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ ততটাই গুরুত্বপূর্ণ এটা ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য।

ছবিযুক্ত ভোটার তালিকায় একজন ভোটার তার নিজের ভোট দিতে পারবেন। এইটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, জাল ভোটের পরিমাণ কমবে। তবে অন্য একটা সম্ভবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না- আগে যারা জালভোট দিতো এইবার তারা প্রকৃত ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আসতে দিবে না। এটাও একধরণের কারচুপি , তবে এই কারচুপিতে ভোটকেন্দ্রের অনেক দুরে শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টা থাকবে।

যাই হোক আমার আপত্তি এই হুড়ো দিয়ে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির প্রকল্প এবং এর ভুলগুলো নিয়ে। আমরা যদি ৫ বছর, বছর সময় নিয়ে কাজটা করতে পারতাম। আমরা অন্তত নিশ্চিত করতে পারতাম আমাদের কাজটা সুসম্পন্ন হয়েছে। ২০০৮ এর নির্বাচনেই আমাকে ছবিসহ ভোটার আইডি দিয়ে ভোট দিতে হবে এমনটা চাই নি, চেয়েছিলাম এই কাজটা এমনভাবে সম্পন্ন হোক যেনো ২০১৩ সালের নির্বাচনে ছবিসহ ভোটার তালিকা কিংবা একটা জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে লোকজন ভোট দিতে পারে।

হয়তো এ বার নির্বাচনেও ভোটার আইডি দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকবে না। যদি এই বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে রেখে বাজারে গিয়ে শাড়ী বাছাই করবার মতো এই ভোটার তালিকা করবার প্রয়োজনীয়তা তেমন ছিলো না।

আইন কিংবা আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ হয়েছে প্রথমত- কারণ আদালতের নির্দেশনা কিংবা প্রচলিত বিধি হলো সর্বশেষ যে ভোটার তালিকা হয়েছে সেটাকে প্রামাণ্য ধরে ভোটার তালিকা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এই কাজটা না করে সম্পূর্ণ তালিকাটাই প্রথম থেকে তৈরি করা শুরু করেছে।
দ্বীতিয়ত এই অর্থের অপচয়, সময়ের অপচয়।
যদি ছবি নিয়ে মাতলামি না করতো তাহলে ভোটার তালিকা সংশোধন, যোজন বিয়োজন করতে হয়তো সর্বাধিক ৬ মাস সময় লাগতো- নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠিত হওয়ার পরে পার হয়েছে ১৬ মাস এখনও কাজ সমাপ্ত হয় নি।

তৃতীয় যে বিষয়টা পীড়াদায়ক মনে হয়েছে নির্বাচনী আসন বিন্যাস পরিবর্তনের প্রচেষ্টা। প্রথম থেকেই এটা অনুমিত ছিলো এই আসন বদলের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলো মানবে না। এবং এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হবে। আদালতে অন্তত হাজার খানেক মামলা হয়েছে এই আসনের সীমানা পরিবর্তন বিষয়ে- এইগুলো সুরাহা না হলে নির্বাচন হবে না?
নির্বাচন হবে, এবং তখন যা হবে সেটা হলো এই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্থগিত রাখবে আদালত।অহেতুক অস্থিরতা এবং জটিলতা বাড়িয়ে কি পেলো নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত?

সংবিধানে বিধি আছে প্রতিবার নির্বাচনের আগে আসনের সীমান বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে, প্রয়োজনমতো আসনের সীমানা পরিবর্তন করতে হবে। এই বিধিটা অনুমোদন এটার গ্রহনযোগ্যতা যাচাই- এসবের জন্য একটা নির্বাচিত সংসদ প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশন বড়জোর সুপারিশ করতে পারে, সেটাকে অনুমোদন দেওয়া এবং সেটাকে বিধিতে পরিণত করবার কাজটা সবসময়ই নির্বাচিত সংসদের।

এই অহেতুক গা জোয়ারি প্রবনতা আমাদের তেমন কোনো ভালো অবস্থানে পৌঁছায় নি এখন। এখন নির্বাচন হবে হয়তো ১৮ থেকে ২০শে ডিসেম্বর নির্বাচন হবে- সেসময় বাংলাদেশের পরিস্থিত কেমন হবে? কোনো আসন সীমানা পরিবর্তিত হবে না, কোনো ভোটার আইডি কার্ড দেখানোর বাধ্যবাধকতা থাকবে না। পেশী শক্তির প্রদর্শন কমানোর জন্য হয়তো নির্বাচনের দিন আগে কিংবা একসপ্তাহ আগে সেনাবাহিনী টহল দিবে রাস্তায়- আমাডের বিজয়ের অনুষ্ঠানের কুচকাওয়াজের পরে সেনাবাহিনী শহরের রাস্তায় টহল দিবে, আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা চলবে।
সুতরাং মোটামুটি ডিসেম্বর থেকে ২১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহ আমাদের নিয়মিত সেবাসদস্যদের দেখতে হবে। তাদের ব্যটন চালানো তাদের কানধরে উঠবস করানো সব কিছুই হজম করতে হবে জরূরি অবস্থামুক্ত একটা পরিবেশে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দেখুন সিস্টেমের ভিতরে থেকেও অনেকে অসহায়ের মতো কোন কিছুই করতে পারে না। আর আমরা সিস্টেমের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছি। কতটা কী করা সম্ভব হবে? আগে মানুষ পত্রিকায় ছাপানো সংবাদকে গুরুত্ব দিত। প্রশাসন নড়েচড়ে বসতো। এখন প্রশাসন কোনকিছুকেই পাত্তা দেয়না। কারণ তারা পাওয়ার প্র্যাকটিস করে। পাওয়ার। এর স্বাদ অন্যরকম; এর মধ্যে নেশা আছে, ধোঁয়াশা আছে, রহস্য আছে; নেই শুধু যৌক্তিকতা - আমরা এসবের কী বুঝি? পাছায় ব্র্যান্ডিং করতে চাইলেও কাপড় তুলতে রাজি হতে হবে।

জিজ্ঞাসু

হিমু এর ছবি

আমার মনে হয় এই জাতীয় পরিচয়পত্র করার পদ্ধতিটাকে ডিস্ট্রিবিউট করে দিতে পারলে ভালো হয়।

উদাহরণ দিচ্ছি। ধরা যাক আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করা হবে, এমন লক্ষ্য নির্ধারিত হলো। হাটেমাঠেঘাটে ক্যাম্প করে কাজটা শুরু করার আগে একে বিভিন্ন নাগরিক সেবাসংস্থার মধ্যে বিতরণ করে দেয়া সম্ভব। যেমন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যদি আগে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়ে না থাকে, সেক্ষেত্রে স্কুল তাদের সেই পরিচয়পত্রের কাজটি তদারক করবে। একই কাজের ভার কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়কেও দেয়া যায়। পরীক্ষার সার্টিফিকেটের সাথে ট্যাগ করা থাকবে বলে সেখানে ভুয়া তথ্য দিলে পরে ভোগান্তি জুটবে নিজের কপালেই। একই সাথে ভুল তথ্য দেয়ার শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা, অনাদায়ে দশ বছরের জেল নির্ধারিত হোক, কোন চুদির ভাই তখন এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে মস্করা করতে যাবে না।

এ তো গেলো পড়ুয়া লোকদের ছাপ্পা মারার ব্যবস্থা। একই সাথে এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা যেতে পারে সরকারী ও বেসরকারী ফোন-গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আর ব্যাঙ্কগুলির ওপর। ব্যতিক্রম ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর কড়া জরিমানা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পূর্বোক্ত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

অনির্দিষ্টকাল পর পর স্থানীয় প্রশাসনের ওপর পোস্টপ্রসেস ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এছাড়া ভুয়া তথ্য প্রদানকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে মোটা পুরস্কারও ঘোষণা করা যেতে পারে। এর ফলে জনগণের মধ্যেও একটা উৎসাহ কাজ করতে পারে সাইফ আলি খানের মেয়ে প্রীতি জিনতাকে ধরিয়ে দেবার জন্যে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

পরিচয়বিহীন এর ছবি

ভোটার তালিকা তৈরীর সময় আমি ঢাকা থেকে গাজীপুরে বাসা বদল করি। আমি থাকা অবধি ঢাকার বাসার ঠিকানায় ভোটার তালিকা তৈরীর কাজ শুরু হয়নি। গাজীপুরে নতুন বাসায় গিয়ে তালিকা-কর্মির জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এক সময় জানলাম এই এলাকায় ভোটার তালিকা তৈরীর প্রাথমিক কাজ ইতঃমধ্যে শেষ। গেলাম স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে। একটি তারিখ জানলাম যেদিন নিকটবর্তী স্কুলে ভিন্ন একটি নির্দিষ্ট এলাকার লোকদের ছবি তোলা হবে। গেলাম এবং জানলাম অপর একটি তারিখের খবর যেদিন সকল এলাকার বাদ পড়া জনগণের ছবি তোলা হবে। আবার গেলাম, কিন্তু বিধি বাম। আমাকে জানানো হলো ভোটার তালিকাভুক্ত করার ছাপানো ফরম শেষ, কাজেই এ মুহূর্তে আর ভোটার তালিকাভুক্তি সম্ভব নয়। আমি সস্ত্রীক জাতীয় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেলাম। আমি নিতান্তই বেচারাম হয়তো নয়। একটি স্বায়ত্বশাসিত জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। এছাড়া সমস্যার শুরু থেকেই পরামর্শ নিচ্ছিলাম আমার এক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু, ইয়ারমেট ও রুমমেটের নিকট থেকে যিনি ভিন্ন একটি এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তা। সর্বাত্মক চেষ্টাসত্ত্বেও আমি ও আমার স্ত্রী ভোটার তালিকাভুক্ত হতে তথা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই। আমি স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের অফিসে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে থাকি। ভোটের পরে, ২০০৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হলে আমাদের নাম ঠিকানা স্থানীয় প্রতিনিধীর নিকট তালিকাভুক্ত করাই। এক সময় ছবি তোলার তারিখ পাই। গিয়ে দেখি কিছু অল্পবয়ষ্ক ছেলে/মেয়ে (পজিটিভ অর্থে তরুন/তরুনী) ছবি তোলার কাজ করছেন। কিন্তু তাদের আচার-আচরণ দেখে বড়ই হতাশ হই। বাংলাদেশের সরকারী অফিসের কিছু দাম্ভীক করণিক কিংবা কর্মকর্তা সাধারন জনগনের সাথে যেমন যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করেন, সরকারী কাজ (সম্ভবতঃ চুক্তিভিত্তিক) করতে এসে এই সব অর্বাচীনরা তাদের থেকে একধাপ উপড়েই দুর্ব্যবহার করছেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে শুরুতে তারা মারমুখি হয়ে ওঠে। পরে পরিচয় দেয়ার পর, কিছুটা প্রশমিত হন এবং আমাদের ছবি ও স্বাক্ষরের ছবি তোলেন। এরপর বছরখানিক সময় আমি খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেই হালনাগাদ তালিকার অবস্থা জানতে পারিনি। পরবর্তিতে উচ্চশিক্ষার জন্য সপরিবারে বিদেশ পাড়ি দেয়ায় এখনো অনিশ্চিত যে শেষ পর্যন্ত সেই তালিকাতে আমাদের নাম-ঠিকানা উঠেছে কি না! বিশেষভাবে ভীত এই কারনে যে, ওয়েব-ক্যাম ও ল্যাপটপ এক্সপার্ট সেইসব ছবি-কর্মিরা ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু গোলমাল না করে দেয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।