অবৈধ সম্পদ উপার্জনের রাষ্ট্রীয় বৈধতাকে সমর্থন করছি না

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: সোম, ২৬/০৫/২০০৮ - ১১:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ট্রুথ কমিশন গঠিত হলো। দুর্নীতিবাজ মানুষদের অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ এবং সম্পদের বৈধতা প্রদানের এই পন্থাকে আমি সমর্থন করতে পারছি না। কোনো ভাবেই একটা সমর্থনসূচক ভাবনা মনে আসছে না আমার।

বরং বারংবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে, সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমরা সামাজিক অসমতাকে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলাম কেনো?

আইনের চোখে সবাই সমান। আদালতের কাঠগরায় ধনী গরীব ভেদাভেদ নেই। সবাইকেই সুবিচার দেওয়া হবে। মানব আইনে সুবিচারের সংজ্ঞা আছে। প্রতিষ্ঠিত বিধি আছে , যে বিধিতে নির্দিষ্ট হয়ে আছে সামাজিক অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ঠ অপরাধের শাস্তি।
চুরি ডাকাতি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি নির্ধারিত। তবে অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে একটা বিষয় প্রতিষ্ঠিত, এই অপরাধগুলো জামিন অযোগ্য।

বিজ্ঞ বিচারক চুরির ঘটনা তদন্ত করে যে শাস্তির বিধান দেবেন, কিংবা যে জরিমানা ধার্য করবেন চোর কিংবা ডাকাতকে সেই শাস্তি স্বীকার করে নিতে হবে। সামাজিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এই আইননিষ্ঠতাকে আমি সম্মান করি।

তবে সামাজিক সমতা কি নিশ্চিত হয় ট্রুথ কমিশনের ক্ষেত্রে। যে মানুষটা বদনা চুরির জন্য জেল হাজতে গেলো, জামিন অযোগ্য বলেই তাকে পুলিশ গ্রেফতার করবার পরে আদালতে সমর্পন করলো। আদালত তার জামিনের আদেশ দিতে পারবে না, বিধিতে নেই তাই। তার বিচার যদি প্রথম দিন আদালতে আনবার পর পর সমাপ্ত হয়ে যায় তাহলে ভোগান্তি নেই- নইলে কোর্টে ডেট পড়বার অপেক্ষা, কখনও কখনও সেই ডেট পড়তে পড়তে তার বিধিমোতাবেক প্রদত্ত শাস্তির হাজতবাসের সময়সীমাও অতিক্রান্ত হয়ে যায়।

যারা অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করছে। যারা দুর্নীতির পৃষ্টপোষক এবং যারা দুর্নীতির পালক, তারা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থের বিবরনি দিয়ে আবেদন করবে এবং তারা ছাড় পেয়েও যাবে।

সামাজিক ক্ষমতা এবং আইন প্রণয়নের ভার যাদের কাছে তারা নিজেদের মতো আইন তৈরি করে নিজেদের পিঠ বাঁচাবে এটা কোন ধরণের সাম্যতা।

আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবো, ন্যায়ভিত্তিক এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলবো। ন্যায় প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র আদালতে গিয়ে প্রদত্ত বিধিমালা মেনে শাস্তির ব্যবস্থা করা নয়, বরং অপরাধের গুরুত্ব বুঝে শাস্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট করা। আমি যে অপরাধে একজনকে একবছর মেয়াদের জেল দিলাম, তার চেয়ে গুরুতর অপরাধে আমি যদি ১ মাস হাজত বাসের নির্দেশ প্রদান করি সেটা আইনের বিধিতে বিচারক হিসেবে আমি প্রদান করতেই পারি- তবে আমি এখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলাম।

আইনের চোখে সবাই সমান। আদালতের কাঠগড়ায় ধনী-গরীব ভেদাভেদ নেই। তবে আইনের বিধি তৈরির সময় একটা ফারাক রেখে দেওয়া, সেখানে কোনো সময়ই চুরির মতো ক্ষুদ্র অপরাধের জন্য জামিনটা বৈধ হবে না। কিন্তু ট্রুথ কমিশনের বিধি মেনে চললে সম্পদের বিবরনী এবং অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিলে কোনো শাস্তি হবে না।

সংযুক্ত হিসেবে বলতে পারি- ৫০০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে একজনের ৩ বছরের জেল আর ১ লক্ষ টাকা জরিমানা হলো। রাজউককে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে প্লান পাশ করিয়ে নেওয়া মানুষগুলোর কোনো শাস্তি হলো না। শাস্তি হলো না এবং হবেও না বিভিন্ন সরকারী অফিসে ঘুষ খাওয়া বড় বড় আমলা এবং কর্মকর্তাদের।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আইন বড়লোকের কাছে তামাসা মাত্র!
-এমন একটি কথা অনেক বছর আগেই আমাদের জ্ঞানীরা বলে গেছেন। তবে আক্ষেপেরে কিছুই নেই। প্রকৃতিই একদিন তার ভারসাম্য ঠিক করে নেবে। ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

অপবাক, আপনার লেখা গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়ি। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ সহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সামান্য সতর্কতার শর্তে মোটামুটি সাফাই-ই গাইলেন ট্রুথ কমিশনের। যুক্তি, উদাহরণ দিয়ে। এগুলোর উপর কিছুটা আলোকপাত করলে লেখাটা পরিপূর্ণ হতো বলে মনে করি।
সবাই ভাবে কিন্তু লেখেনা কেউই- এমন সব বিষয় নির্বাচনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শামীম এর ছবি

ইচ্ছামত দূর্নীতি করবো .... আর ওগুলো জায়েজ করার জন্য পরের ট্রুথ কমিশনের অপেক্ষায় থাকবো ..... ...... এইটাই হইলো মেসেজ।

সারাজীবন পাপকাজ করে হুজুরকে কিছুমিছু দিয়ে তওবা করলে উপরের আদালতে সব মাফ .... .... একই রকম আইডিয়া আগে থেকেই প্রচলিত করে রেখেছে সুবিধাবাদীরা।

পোস্টে (বিপ্লব)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ট্রুথ কমিশন বিষয়টা শেষতক ফেইল মারবো বইলাই আমার ধারণা। এইখানে সব স্বীকার করলে নাহয় এই সরকার সাতখুন মাফ করবো... কিন্তু তারপরে? পরবর্তী সরকার আইসা যদি এই সরকারের এবং ট্রুথ কমিশনের সবকিছু নাকচ কইরা দেয়? তখন স্বীকারোক্তি দেনেওয়ালারা কি করবো? বা তাগোর কি হইবো?
অবশ্য তখন বন্দুকের জোরে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হইছি টাইপ কথারও অভাব হইবো না...
এই দেশে আসলে কিছুতেই কিছু হইবো না... সব কায়দাই বিফল...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যতদূর মনে পড়ে কালকে রাতে আপনার আরো একটা পোস্ট দেখেছিলাম... গৃহভৃত্যা বিষয়ে... সকালে পড়বো বলে রেখে দিয়েছিলাম... কোথায় গেলো সেটা? নাকি আমারই দেখার ভুল?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আলমগীর এর ছবি

অপবাক
আপনার অন্যান্য লেখাতে যে যুক্তি দেখি এ লেখাটিতে তা অনুপস্থিত। আমি আমার ব্যক্তিগত মনে ট্রুথ কমিশনকে ভাল চোখে দেখি। কারণ:

১. রাষ্ট্র নাগরিকের বেসিক প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থানের যোগান দিতে পারছে না। নিজেরদের পেটের জন্য যারা রাষ্ট্রের নীতি মানছে না তারা আইন ভাঙছে, কিন্তু কোন ফৌজদারী অপরাধ তারা করছে না। দুর্নীতির প্রধান কারণ যে দারিদ্র্য এটা তো স্বীকার করবেন?

২. টিআইবির হিসাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি হয়। তারপর পুলিশ, তারপর স্বাস্থ্য। পুলিশের চাকরি যারা করে তারা কী খেয়ে বেঁচে থাকে এ প্রশ্নটা নিজেকে করা দরকার আগে। জিডি লেখার খাতাটাও ওসিকে কিনতে হয়। পুলিশ লাইনে পুলিশ কীভাবে থাকে গিয়ে একটু দেখে আসুন।

৩. যারা দুর্নীতি করে সম্পদ করেছে, এখন ধরা পড়েছে, তারা একদিনে কাজটা করেনি। সমাজ এবং বিচার ব্যবস্থা এটা হতে দিয়েছে। দুর্নীতির প্রতিবাদে কেউ জিরোপয়েন্টে আগুন দিয়েছে গায়ে এমন খবর দেখিনি। তারা দোষ করেছে, কিন্তু সেটার জন্য সমাজের দায় কম নয়।

৪. আপনি দু:খ করছেন যে তারা জেল থেকে বের হয়ে যাবে আর বিনা অপরাধে, বা লঘু অপরাধে কেউ কেউ বছর-কে-বছর জেল খাটবে। বিনা অপরাধে মানুষের জেল খাটাটা নতুন কোন ঘটনা নয়, পৃথিবীর উন্নত দেশেও হয়েছে। বিনা বিচারে মানুষ মারার ঘটনাও হরহামেশা ঘটছে। ড়্যাব যাদেরকে মারছে তারা তো তাদের বিচারের কোন সুযোগই পেল না। সারা বিশ্বে গণতন্ত্র বিক্রী করে বেড়ায় আমেরিকা। তারা বিনা বিচারে কী করছে? কমুউনিস্ট রাশিয়া কী করেছে? গেল বছর পশ্চিমবংগে সিপিএম কী করল? পৃথিবী জুড়ে সব সময়ই অন্যায় হয়, খুব কম ক্ষেত্রেই তার বিচার হয়। বড় বড় অপরাধের বিচার হয়ই না। মিলাসোভিচ তো এক দিনও জেল খাটল না।

৫. আমরা পুঁজিবাদকে মান্য ধরে নিয়েছি। আপনার গত লেখায়, আপনি ধরে নিয়েছেন, তেমনটাই বুঝেছি। তাই যদি হয়, পুজিবাদী কোন দেশে আয়কর ফাঁকির জন্য জেল হয়? অধিকাংশ সময় বিশাল জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, তা না হলে তার ব্যবসা চলবে না। ফালুকে ধরে রেখে কী লাভ হচ্ছে সরকারের?

৬. দেশের অর্থনীতিতে বন্ধ্যা চলছে এটা এক বাক্যে সবাই স্বীকার করবে। এর কারণ কী, তাও আমরা জানি। উত্তরণের জন্য কী করণীয়? বিশ ত্রিশ বছর ধরে চলে আসা সিস্টেমকে একদিনে শোধরানো যাবে না। এটা তদারকি সরকার এতদিনে বুঝেছে।

একটানে লিখলাম, ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে।

ভাল থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।