গৃহভৃত্যের সংগঠন গড়ে উঠবে কবে?

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ২৮/০৫/২০০৮ - ৮:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছুটা ক্ষোভ কিছুটা আক্ষেপ থেকে একটা লেখা লিখেছিলাম গত পরশু। মোহাম্মদপুরের জনৈক ডিস ব্যবসায়ী মামুনের বাসার দুই গৃহভৃত্যা তার ৬ তাল বাসার স্যানিটারি পাইপ বেয়ে নীচে নেমে পালাতে চেয়েছিলো। তবে তারা পালাতে সক্ষম হয় নি, বরং পাশের ৩ তলা বাসার ছাদের উপর লাফিয়ে পড়ে তারা গুরুতর আহত হয়।
তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পুলিশের কাছে তারা অভিযোগ করে গৃহস্বামী মামুন তাদের উপর যৌন নির্যাতন করেছে। ডিস ব্যবসায়ী মামুনের জন্য এই অপরাধ নতুন নয়। সে আগেও এমন কিশোরী একজনকে যৌন নির্যাতন করেছিলো। সেই আক্রান্ত মেয়েটি পুলিশের কাছে আইনী সহায়তার জন্য পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছিলো, তখন মামুনের বাসার গেট খোলা থাকতো।

তবে এই ঘটনার পরে সেই মেয়েটার ভবিষ্যত কি হয়েছিলো সেটা জানা যায় নি। মামুন সাবধানতার জন্য সার্বক্ষণিক দরজা তালাবদ্ধ রাখতো। এ কারণেই গৃহভৃত্যা দুজনকে ৬ তলার ছাদের উঠে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো।

আমাদের গৃহভৃত্যার ইতিহাসের পাতা বলে আমাদের গৃহস্বামীদের ভেতরে একটা প্রবণতা বিদ্যমান, তারা সকল কাজের মেয়ের সাথে নিরাপদ সঙ্গমে লিপ্ত না হয়ে তাদের গর্ভবতী করে ফেলেন, তাদের পরিবারের কিশোর যুবক এবং বেড়াতে আসা মানুষের যৌন অভিজ্ঞতার ঋদ্ধ হতে থাকে আমাদের গেরোস্থালী শ্রমিক। কিশোরের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা সেটাও গৃহভৃত্যাই দিয়েছে।

আমাদের গৃহভৃত্যাদের কি বলে শ্রদ্ধা জানাবো আমি? তারা আমাদের উঠতি কিশোরদের হাতে কলমে যৌনশিক্ষা প্রদান করছে- যদিও নিরোধবিহীন সঙ্গমে তাদের অনেকেই গর্ভবতী হচ্ছেন, গর্ভপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তাদের এই নিরলস অধ্যাবসায়কে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।

এটা আলাদা কোনো ঘটনা নয়। বাংলাদেশের গেরস্থালী শ্রমিকের উপরে নির্যাতনের অনেক ঘটনাই প্রকাশিত হয় না। তাদের বাথরুমে আটকে রেখে নির্যাতন করা, তাদের পিঠে খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া, নিয়মিত প্রহার এবং যৌনপ্রহারের ঘটনাগুলোও নিতান্তই বাস্তব। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বৌ পিটালেও নিরব থাকে, সন্তানকে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেললেও নিরব থাকে। সেখানে অনাত্মীয় গৃহভৃত্যাকে নির্যাতন করলে প্রতিবেশীর বিবেকে বাধে তবে তারা প্রতিবাদ করে সেই নির্যাতিত গৃহভৃত্যাকে কোনো নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে না।

এই ঘটনার পরে অনেকের কাছেই গৃহভৃত্যা নির্যাতনের গল্প শুনলাম, তাদের অর্থনৈতিক ভাবে বঞ্চিত করবার প্রচেষ্টা এবং তাদের পারিশ্রমিক তছরুপ করবার প্রবণতার কথাও জানলাম।

ঘটনাগুলো ঘটেছে অধিকাংশই সম্পন্ন পরিবারে, তাই অর্থসম্পদ বাঁচানোর ফিকির এটা নয়। যারা এই গৃহভৃত্যাদের নিয়মিত নির্যাতন করেন তারা সবাই অধিকতর স্বচ্ছল মানুষ। তাদের গৃহভৃত্যার মাসিক বেতনের ১০০০ টাকা মেরে বড় লোক হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। তবে এরপরেও তারা গৃহভৃত্যার পারিশ্রমিক দিতে গড়িমসি করে।

গেরোস্থালী শ্রমিক প্রসঙ্গে একটা অনুভুতিই জাগে, বঞ্চিতদের বঞ্চনার প্রামাণ্য দলিলগুলো এখানেই রচিত হয়। আমাদের সুশীল সুবোধ মানবিক মানুষেরা নিজেরাই নিজের বাসার শ্রমিককে ঠকাতে পারলে আনন্দিত হন। তারা বাসার কাজের ছেলে কিংবা মেয়েকে বঞ্চিত করেন, পুষ্টিবঞ্চনা- শিক্ষাবঞ্চনা, আর্থিক বঞ্চনা-

সামাজিক ক্ষমতার তলানিতে পড়ে থাকা এই মানুষগুলোর ভেতরেও বঞ্চনাবোধ রয়েছে- তারা যে অবস্থার কারণেই এই বঞ্চনার শিকার এই বোধটাও তাদের ভেতরে রয়েছে, তবে তাদের ভেতরে প্রতিরোধ নেই।

জন্তু যেমন নিজের প্রাণ আর নিজের আহার্য রক্ষার জন্য শঙ্কিত বনে ঘুরে বেড়ায়, আমাদের অধিকাংশ গৃহভৃত্যের বাস্তবতা এমনই। তাদের উপরে যৌন নির্যাতন যে একটা অন্যায়- একটা অপরাধ- তাদের শরীরের উপরে তাদের অধিকার যে সমাজ স্বীকৃত একটা অধিকার এই বোধটা তাদের নেই মনে হয়। তাদের আর্থিক বঞ্চনার বোধটা থাকলেও শরীরের অধিকার বিষয়ের বোধটা উবে যায়,

তারা ধর্ষিত হয় কিংবা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়- তবে এটাকে তারা খাদ্য গ্রহন এবং নিত্য প্রহারের মতোই স্বাভাবিক মেনে নিয়েছে বোধ হয়- তাই তারা নিজের শাররীক অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠতে পারছে না।
অবশ্য অধিকারের স্বীকৃতি কিংবা অধিকারের চর্চা না থাকলে অধিকার বোধ জাগ্রত হয় না। আমাদের গৃহভৃত্যারা নানাভাবে নির্যাতিত হলেও তাদের ভেতরে অধিকারবোধ জাগে না। নিয়মিত নিষ্পেষিত মানুষের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদটাই যখন বড় হয়ে যায়, যখন বেঁচে থাকাটাই বিষম দায়ের বিষয় হয়ে যায় তখন সেখানে অন্য সব মানবিক অধিকার এবং এই অধিকার সচেতনতা কিংবা অধিকার রক্ষার তাগিদ বা লড়াই তাদের উদ্দীপ্ত করতে পারে না।

গত বছর মে মাসের শ্রমিক দিবস উপলক্ষে একটা লেখা লিখেছিলাম, বাংলাদেশের সর্ববৃহত শ্রমিক সংগঠন হতে পারতো যদি আমাদের গেরোস্থালী শ্রমিকদের কোনো সংগঠন থাকতো। আপন গৃহের বাইরে শ্রমে নিয়োজিত নারীদের সবচেয়ে বড় অংশই গেরোস্থালী শ্রমিক । এখানে নারী শিশু এবং নারী উভয়েই বিদ্যমান।

কাজের ছেলে আব্দুল এবং কাজের মেয়ে ময়নার মা কিংবা ফুলি যে নামেই পরিচিত হোক না কেনো দেশের শ্রমিকের একটা বড় অংশই গৃহস্থালী শ্রমিক। তাদের শ্রমিক হিসেবে মূল্যায়নের কোনো প্রকল্প নেই। সম্প্রতি কিছু এনজিও এই বিষয়ে নীতিমাল তৈরির সুপারিশ করছে। তাদের হঠাৎ করেই এই ক্ষেত্রকে প্রতিশ্রুতীশীল অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র মনে হয়েছে। গেরোস্থালী শ্রমিকের অধিকার আদায়ে যদি এরা কিছু অর্থ উপার্জন করেও ফেলে এর পরও আমরা যদি একটা গেরোস্থালী শ্রমিক নীতিমালা পাই সেটা এই নির্যাতন রোধে বড় অস্ত্র হতে পারে।

আমার ক্ষুদ্র দাবি ছিলো এই গেরোস্থালী শ্রমিকদের নির্দিষ্ট চুক্তি থাকতে হবে, সেখানে বলা থাকবে এই শ্রমিক ঠিক কি কি গেরোস্থালী কাজে সহায়তা করবে, তার চাকুরির বিধি কি, তার প্রতিটা কাজ, তার শ্রমঘন্টা নির্দিষ্ট থাকতে হবে।
তার নির্ধারিত কাজের বাইরে অন্য কোনো কাজ করালে তাকে সেটার জন্য পারিশ্রমিক দিতে হবে।

একটা বিধি থাকলে একটা সংগঠন থাকলে তারা সেখানে নিজেদের অধিকারের চর্চা করতে পারতো, তারা নিজের অধিকার সচেতন হলে হয়তো এই নিয়মিত যৌনদাসত্ব এবং শ্রমদাসত্ব করতে হতো না তাদের।


মন্তব্য

অপ বাক এর ছবি

এ লেখাটি যখন পড়ছেন তখন অন্য এক কিশোরীর জন্য কিছুটা অশ্রুপাত করেন।কথিত চুরির অভিযোগে সপরিবা এই মেয়েটাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

তাকে উদ্ধার করে যে মানুষটা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন এবং হাসপাতালের উপস্থিত রোগীরা গুরুতর আহত অবস্থায় সে মেয়েটিকে সমবেদনা জানিয়েছেন, যখন তার গৃহস্বামীর পরিচিতা একজন হাসপাতালে এসেও তাকে চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করেন তখন এই উপস্থিত মানুষেরাই তার হয়ে প্রতিবাদ করেছে।

মেয়েটা খুন হয়েছে এবং গৃহস্বামী সপরিবারে নিখোঁজ। হয়তো অন্য কোথাও তারা আস্তানা গাড়বে, হয়তো মেয়েটার পরিবারকে কিছু টাকা দিয়ে তারা এই হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।
যাই ঘটুক না কেনো, এমন নির্মম গৃহস্বামীদের হাতে নির্যাতিত এবং খুণ হয়ে যাওয়া গৃহভৃত্যাদের সংখ্যা কমবে না। আমাদের পরিসংখ্যানের তালিকায় আরও আরও নাম যুক্ত হবে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

অপ-বাক - সবসময়ই খুব দরকারী কিন্তু অনালোচিত বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসেন বলে আপনাকে ধন্যবাদ! এই গৃহভৃত্যের ব্যপারটা নিয়ে আমার নিজের একধরনের অপরাধবোধ আছে - না, না, অত্যাচার টত্যাচার ভেবে বসবেন না যেন হাসি আমাদের বাড়িতে ৩৫ বছর ধরে এক দম্পতি ছিলো গতবছর আমার মা বেঁচে থাকা পর্য্যন্ত। তাদের মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী কলেজে, ইডেনে কলেজে পড়েছে/পড়ছে - অতএব বুঝতেই পারছেন। কিন্তু যত 'আপন' বা 'পরিবারের সদস্যদের মত'ই তারা হয়ে থাকুক না কেন, রাগের মুহূর্তে অনেক দূর্ব্যবহার তো করেছি ঠিকই! গল্পও করেছি, তাদের অসুখে সেবাও করেছি - কিন্তু নিজের মনে খুব ভালো করেই জানি - আসলে কখনোই তাদের সমতলে নেমে দাঁড়াইনি। যতই যাই হোক, তারাও জানতো আর আমিও জানতাম আসলে আমরা 'প্রভু শ্রেণী' আর ওরা .........

সত্যি যদি কোনদিন গৃহভৃত্যদের সংগঠন গড়ে ওঠে - শুধু অত্যাচারই কমবে না হয়তো আমাদের একেবারে ভেতরকার এই 'অব'মূল্যবোধগুলোও নাড়া খাবে, সংগঠনের 'ভয়ে'ই নাহয় আরেকটু সম্মান দিতে শিখবো।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কোনো দিন সেই সংগঠন যদি গড়ে ওঠে, আর তাদের কেউ যদি নিজেদের লাঞ্ছনা আর পীড়নের ইতিহাস লেখে, দেখা যাবে আমরা ভদ্রলোকেরা প্রত্যেকে একেকজন দাসপ্রভুর থেকে কম কিছু না! ওদের প্রতিপক্ষেই তো আমাদের গার্হস্থ্য জীবন তকতকে থাকে। এসব দেখে মানুষে বিশ্বাস হারানো কাউকে আর পাপী মনে হয় না, মনে হয় পূণ্যবান!


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ। সহ ব্লগার সবার কাছে আমার দাবী- আসুন সবাই সোচ্চার হই।

তদারকী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ব্যাপারে যেন একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। সেই সঙ্গে আবেদন করছি যে, প্রতিটি আবাসিক সহযোগী এবং গৃহকর্তা-কর্তৃর পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্ব-উদ্যোগে গ্রহন করার ব্যবস্থা নিন। এবং প্রতি মাসে স্থানীয় সমাজ- প্রতিনিধির মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ না হলে ওদের উপর নিপীড়ন থামবে না।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

আলমগীর এর ছবি

ভাল লিখেছেন। কাল ট্রুথ কমিশনের লেখায় মন্তব্য করার সময় ভাবছিলাম একটা খোঁচা দিই, এ বিষয়টা আপনার চোখে পড়ল না কেন। এখনই লেখাটা দেখলাম। ধন্যবাদ।

দ্রোহী এর ছবি

গৃহভৃত্যদের সংগঠন গড়ে উঠার কোনরুপ সম্ভাবনা আপাতত নেই। কারন ঈশ্বর থাকেন ভদ্রপল্লীতে। গৃহভৃত্যদের মত অস্পৃশ্যদের সংগঠনে পদধূলী দেবার সময় তার নেই।


কি মাঝি? ডরাইলা?

স্নিগ্ধা এর ছবি

গৃহভৃত্যদের সংগঠন গড়ে উঠার কোনরুপ সম্ভাবনা আপাতত নেই।

খুবই ঠিক, তবে কোলকাতায় গৃহভৃত্য 'সরবরাহের' এজেন্সী আছে যদ্দূর জানি,
আশায় আশায় থাকি হয়তো আমাদের পরের প্রজন্মে এটা হলেও হতে পারে ......

অমিত এর ছবি

গৃহকর্তা আর কাজের লোকের মধ্যে যে একটা দাস-প্রভু টাইপ সম্পর্ক বিদ্যমান, সেটা দূর করাটা খুব একটা সহজ ব্যাপার হবে না। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমি সম্পর্কটা অবচেতন ভাবে মেনে চলেছি। দূর্ব্যবহার করেছি বলে মনে পড়ে না, তবে নিজের সংগে একাই কাতারে রাখিনি তাদের। বৈদেশে আসার পর একদিন কাজ থেকে ফেরার পর হঠাৎ এই কথাটা মনে হল যে, আমার সংগে তো ঐ শ্রেণীভুক্ত লোকজনের কোনই পার্থক্য নাই। নিজের শহর ছেড়ে কতদূর আমি চলে এসেছি কাজের জন্য, ওরাও তো ঠিক সেই একই ভাবে এসেছিল, আসছে এবং সামনেও আসবে। একটা বাসায় কাজ নেয়া আর একটা অফিসে কাজ নেয়ার মধ্যে তো বেসিকালি সেরকম কোন পার্থক্য নাই।আশা করি আমার মত ঐ পর্যায় দিয়ে যাওয়া ছাড়াই মানুষ একদিন তাদের অধিকারের মূল্য দেবে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত গৃহভৃত্য-নির্যাতনের খবর পড়ে আমার এমন একটা ধারণা হয়েছে, দেশের স্বচ্ছল জনগোষ্ঠীর বড়ো একটা অংশ (পুরুষ-নারী নির্বিশেষে) স্যাডিস্ট।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত গৃহভৃত্য-নির্যাতনের খবর পড়ে আমার এমন একটা ধারণা হয়েছে, দেশের স্বচ্ছল জনগোষ্ঠীর বড়ো একটা অংশ (পুরুষ-নারী নির্বিশেষে) স্যাডিস্ট।

ঈশ্বর থাকেন ভদ্রপল্লীতে।

সরকার ইচ্ছে করলে একটা সংবিধিবদ্ধ আইন প্রণয়ন করতে পারে - যার জের ধরে গার্হস্থ্য শ্রমিকদের সংগঠন হতে পারবে। কিন্তু ওঁদের কি সেদিকে নজর দেয়ার সময় হবে?

দেশের বেশিরভাগ মানুষকেই আমার স্যাডিস্ট মনে হয়। সামনে ভদ্র বেশ কিন্তু কি ভয়ঙ্কর সব অত্যাচারী, অসহিষ্ণু মনোভাব। এর আগেও এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় বেশ তোলপাড় হয়েছিল। পরে থেমে গেছে। ঐ সমস্ত মামলাগুলোর কী হয়েছিল তার আর ফলোআপ দেখিনি পত্রিকায়। হয়তো টাকাপয়সার তোড়ে ভেসে গেছে।

জিজ্ঞাসু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

এরাই আবার ড়্যাবের ক্রসফায়ার আর পিটিয়ে ছিনতাইকারী হত্যার সমর্থক, মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত কেবল স্যাডিস্ট নয় অনেকক্ষেত্রে ফ্যাসিস্টও!!!


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

শামীম এর ছবি

কিছু আপাত-স্বাভাবিক মানসিকতা: ঘাম ঝরানো রিক্সাওয়ালা ১টাকা বেশি চাইলে চড় থাপ্পড় মারা হয়, কিন্তু ভিক্ষুককে অবলীলায় ২টাকা দান করে। তাহলে কোনটাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে ... বা অবচেতন মনের গভীরে কর্মহীনতাকে/কর্মবিমূখতাকে উৎসাহিত করার একটা প্রবণতা আছে।

বাসায় একজন কর্ম সহায়িকা আসেন সকালে। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই কাজ করে চলে যান। উনি ঘর ঝাড়ু + মোছা এবং কাপড় ধুয়ে দেন। এছাড়া রাত্রের এঁটো বাসন ধুয়ে দেন অথবা একটা বাথরুম ধুয়ে দেন। আসতে না পারলে মোবাইলে খবর দেন। মাসে ৪/৫ দিন না আসলে কোনই আপত্তির কারণ দেখি না ... কারণ এটাও একটা বেতন ওয়ালা চাকুরী। চুক্তি মাসিক ৭৫০ টাকা।

কাজ নেয়ার আগে এরকম কাজের হিসাবে বেতন নির্ধারণের রেওয়াজটা বেশ কয়েকবছর যাবৎ-ই চালু আছে। বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি কাজ ২০০- ৩০০ টাকা। অবশ্য সেক্ষেত্রে বাসার আকার মোটামুটি ১০০০ বর্গফুটের মধ্যে হতে হয়। বাসা বড় হলে কাজের দর বেশি হয়। সুতরাং আপনার যে চিন্তাধারা সেটার কিছুটা বাস্তবায়ন এখনই ঘটছে। কিছু মহিলা কয়েক বাসায় এরকম কাজ করে একজন গার্মেন্টস কর্মীর চেয়ে অনেক বেশি উপার্জন করেন।

কাজটির পরিচয়ে "বুয়ার কাজ" বলার চাইতে "গার্মেন্টসে চাকুরী" শুনতে বেশি সম্মানজনক শোনায় বলে উপার্জন বেশি হওয়া সত্ত্বেও এটা আকর্ষনীয় পেশা নয়। তাছাড়া সামন্তপ্রভুর মনোভাবধারী লোকজনও এ কাজে আকর্ষিত না হওয়ার পেছনে দায়ী - আর এই ধরণের ঘটনাগুলোর সামান্য কিছু অংশ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে "কাজের লোক" বলতে আমার ঘোর আপত্তি। আমরাও কাজের লোক (অকাজের নই) - সুতরাং অযথা আরেকজনকে এই উপাধি দেবো কেন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ঘাম ঝরানো রিক্সাওয়ালা ১টাকা বেশি চাইলে চড় থাপ্পড় মারা হয়, কিন্তু ভিক্ষুককে অবলীলায় ২টাকা দান করে।

একটু অন্যভাবে বলি, ঘাম ঝরানো রিক্সাওয়ালা ১টাকা বেশি চাইলে চড় থাপ্পড় মারা হয়, কিন্তু ওয়েটারকে অবলীলায় ১০-২০-৩০ টাকা টিপস দেয়া যায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

শুধু স্যাডিস্ট না, রীতিমতো হিংস্র আর অসহিষ্ণু! গত দেড় দশকে এটা আরো বেড়েছে! আমাদের রক্তের ভেতর থেকে মধ্যযুগ এখনো বিদায় নেয় নি। আক্রমণ, প্রহার, রক্ত দর্শনের তৃষ্ণা, নিদেনপক্ষে খিস্তিখেউড়... এগুলো আমাদের ভেতরে লালিত হয় যত্নের সাথে! চলতে ফিরতে রাস্তাঘাটে একটু এদিক সেদিক হলেই দেখবেন চট করে আপনার পাশে বসে থাকা নিপাট ভদ্রলোকটির ভেতর থেকে নোখ-দাঁত বেরিয়ে এসেছে...
খুব অবাক হই, আহত হই কখনো কখনো! সবসময়েই পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু শেষপর্যন্ত গায়ের ওপর এসে পড়লে আমাকেও বাধ্য হয়ে একটু দাঁত-নোখ দেখাতে হয়... কী আর করা! টিকে তো থাকতে হবে!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।