মতামতের উত্তর

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ২০/০১/২০০৬ - ৪:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধারনা, হরতাল আর বিজয় দিবস 96 এ ভ ুতএর মন্তব্য আর ধারনায় ওয়ালীরএবং তাসকিয়া ও ইমরান এর মন্তব্যের ভিত্তিতে কিছু বলব।

ভুত হরতালের বর্বর স্বভাব এর সাথে চাক্ষুস পরিচয় 95এ। এর আগে হরতাল বিষয়টার ভয়াবহতা বুঝি নি। নতুন এসেছি ঢাকায় আর তখন ম্যারাথন হরতাল শুরু হলো। 24,36,48,72,96 দিনদিন ঘন্টা বাড়ে। মাসিক হিসেবে হরতাল এর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না এমন অবস্থা।

96 ঘন্টার হরতালের তৃতীয় দিন মামাতো ভাইয়ের জন্মদিন। সেখানে যাচ্ছি। লোকেশন মতিঝিল। ব্যাংকপাড়া আর স্টকএক্সচেঞ্জের দুই পাশে সারিসারি ট্রাক। ট্রাকের উপরে বসে থাকা দিনমজুরের দল যারা উপার্জনের জন্যে এসেছিলো। অনেকে অনেক কাজে আসে। আমার কিংবা আমার সাথেযারা তাদের এবং তাদের পরিবারের আহার সংস্থানের চিন্তা কম। হরতাল আমাদের কাছে অঘোষিত ছুটি। সেই লোকগুলো ট্রাকে অসহায় বসে বিলাপ করছে এটা বুঝতে পারলাম সিগারেট কিনতে নেমে। তাদের একজন এসেছিলো টাঙ্গাইল থেকে উদ্দেশ্য হরতালের 2 3 দিন কাজ করে বেশী পয়সা পাবে। তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো , ঘরে অসুস্থ মেয়ে , তার চিকিৎসা ব্যায় ডাক্টারের কাছে নিয়ে যাওয়া-- যেকোন পিতা সন্তানের জন্যে যা করতে চায় কিছুই করতে পারছে না। উপরন্ত হাতে যা ছিলো সব শেষ। তারা আগামিকাল পৌছাবে কি না তাও জানে না। একজন 2 দিন ভাত খায় নি। খাওয়া বলতে সকাল সন্ধ্যা পাউরুটি চা। আমি জানি 2 টাকার পাউরুটি আর চা দিয়ে সারাদিন কাটানো কতটা কঠিন। তাদের কাজ নেই, ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই, রাত কাটানোর জন্যে ফুটপাত। মরিয়া সবাই ট্রাকে উঠে পড়েছে অন্তত রাতের কোন এক সময় তারা পৌছাবে ঘরে। আমি সামান্য কষ্ট পেতে পারি খানিকটা করুনা করতে পারি কিন্তু ঘোষিত হরতাল বন্ধ করতে পারি না। কাউকে বাধ্য করতে পারি না হরতাল ঘোষনা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ ঘোষনা দিতে। সম্মিলিত উদ্যোগে হয়তো সম্ভব এমন কিছু। এটা রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি সংগঠক না সমর্থক শ্রেনীর মানুষ। আমার পক্ষে আন্দোলনকে সাহায্য করা মিছিলে নির্বাক উপস্থিতি সম্ভব শুধু।

এই যে দলগুলো হরতাল করে,এত কলমবাজী এত এত বানীবিভ্রাট সব মধ্যবিত্ত শ্রেনীকে লক্ষ্য করে। দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্যে কেউ রাজনীতি করে না। দাবার সৈন্য কোন কাজের না। ওরা উচ্চবংশীয় বাকি সব ঘুটির পাহারাদার আর যারা শেষ ঘরে পৌছিয়ে মানসম্পন্ন হয় তারা সৈন্য স্বভাব ছেড়ে অভিজাত আচরন করে। আমি সমাজবিঞ্জানী না শ্রেনী মনস্তত্ত্ব বিষয়ে 2 4 পাতা পড়ে ভাসাভাসা মন্তব্য করতে পারি কিন্তু তা বলার মানুষ আছে অনেক। হরতালে দিন আনি দিন খাই মানুষের জন্যে কোন ঘোষনা থাকে না কারন হরতালের লক্ষ্য তারা না।
আর রাজপথে মৃতু্য তাৎক্ষনিক আলোড়ন তৈরী করে। লাশমিছিল হরতাল একটা শোকসভা বড়জোর। এর পর যে লাউ সে কদু। আবার কোন আদম মারা যাবে একই ঘটনাগুলো আবার ঘটবে। 1962 থেকে 1999 একটা শিক্ষা কমিশন এর সংশোধন কিংবা পরিবর্তনের দাবীতে প্রায় 10জন নিহত হয়েছে। এখন সেই দাবী বাস্তবায়িত হলো না। শেষ বার আমরা সচিবালয় যেতে চাইলাম কিন্তু পুলিশ পিটিয়ে পাছার চামড়া খুলে নিলো। আহত হলো বেশ কজন বন্ধু। একেবারে মরে যাওয়া বা ক্রমশ ধুকে ধুকে প্রাতবাদী মৃতু্যবরন যদি একটা উদ্দেশ্য সফল করতো স্বার্থকহতো। মিলন এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিহত। নিঝুম ভাষ্কর্য আরতার উপরে বসে গানজা খাওয়া ছেলেরা কি এর মর্মার্থ বুঝে। আর হাসিনা খালেদার কৌশলগত মিত্রতা সব মিলিয়ে একটা বর্জ্য ছাড়া কি? নুর হোসেনের প্রাপ্তি তাকে নিয়ে 2 3টা কবিতা লিখেছে।

সেসব অভিমান অপমান আক্ষেপ অনেকের ভিতরে জমে আছে। রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা বিরোধেও এমন কিছু উপাদন আছে। যেসব রাজনৈতিক ভুলের দায় প্রধান দুই দল নিচ্ছে না তাদের আদর্শিক বিরোধ সত্ত্বেও মতিউর রহমান নিজামী খালেদা জিয়ার সহচর। তারা 71এ অপরাধ করেছে একটা আন্দোলন প্রায় শেষ করেছিলেন জাহানারা ইমাম এবং সহযাত্রীরা। সেটার অকালমৃতু্য কৌশলগত মিত্রতায়। আর পরামর্শ রাজনৈতিক বিশ্লেষন কোনটাই ব্যাক্তি ইমেজে ধরাশায়ী দলগুলো পারবে না। কৌশল বিচারে জামায়াত এরশাদ অনেক এগিয়ে।

জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বের জন্যে বংশতালিকা বিচার করে না সত্য কথা তাদের সাথী রোকন আমির এসব ধারাবাহিক পদপুরনে জন্যে পরীক্ষা দিতে হয় তবে ওটা সামরিক বাহিনির মতো। নিয়মানুবর্তী একদল মানুষকে নেতৃত্ব দিতে তেমন পরিশ্রম নেই। আর এভাবে যারা নেতা হচ্ছে তাদের নেতৃত্ব গুনের প্রশংসা করলে একটা কথাই এর উত্তরে বলা যায় যদি নেতৃত্ব ক্লাশে শেখা যেত এবং এই ডিগ্রী পাওয়ার জন্যে অনেক লোক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতো।
আর ইমরান ভাই আপনাকে বলি মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই এমন অলীক আত্মীয়তা বর্তমানে সম্ভব নয়। বাংলাদেশেও মুসলিম বর্নপ্রথা আছে। আশরাফ আতরাফ মুসলিম শ্রেনী নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তা করতে নারাজ আর 10 হাজার মাইল দুরের কিছু মানুষের জন্যে মায়া কান্নার প্রয়োজন কি? মুসলিমরাও বর্বর। তাদের বর্বরতার ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে তিক্ততা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমার অবস্থান বাংলাদেশের নিজগোষ্ঠীর মানুষ। এ খানে প্রচলিত ইসলাম 1400 বছর আগের ইসলাম না। এটা পরিমার্জিত সংস্করন। ইরানের সংস্কৃতি উন্নত তারাও ইসলামী ধারনায় পরিমার্জন করেছে। আমার যুক্তি আমাদের প্রাচীন মানুষের সংস্কৃতি উন্নত বা অনুন্নত যাই হোক মৌলিক বিশ্বাসে মিল থাকা ছাড়া অন্য কোন যোগাযোগ নেই কারো সাথে।

সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর নেতৃত্ব পাওয়ার জন্যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া আছে কিন্তু অবশেষে অতিরিক্তনিয়মানুবর্তিতা অন্ধ করে মানুষকে। যদি লোকবিশ্বাস আর প্রচলিত নেতৃত্বের অন্ধ অনুসরন করতো তাহলে আমরা এখন কাচা মাংস খুবলে খেতাম, আর বিবাহ পিতা মাতা সামাজিক সম্পর্কগুলো পালন করতাম না। ধর্মভিত্তিক ধ্যানধারনার একটা মূল দুর্বলতা ওরা অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারে না।

ধরেন আদম হাওয়া প্রথম দুই নারী পুরুষ যারা আমাদের আদিপিতামাতা। তাদের সন্তানরা নিজেদেয ভিতরে সম্পর্ক করেছে যা কোরানের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ। প্রশ্নের উত্তরের আগে একটা কথা -- ইশ্বর 1400 বছর আগে কেন এই সম্পর্কগুলোকে নিষিদ্ধ করলেন। এর আগে তার এই বোধ জন্মালো না কেন?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।