আমার বন্ধু শ্যাম

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শনি, ২৮/০১/২০০৬ - ৮:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শ্যাম, আমার স্কুলজীবনের বন্ধু।একই পাড়ায় থাকা,একই মাঠে খেলা। পরে আমি অন্য স্কুলে চলে গেলাম, আর সে স্কুল , পাড়া ছেড়ে গেল গ্রামে। কাঞ্চন গ্রাম, তার নানা বাড়ি। বছরখানেক পরে দেখা, স্কুলের বেতন দিতে পারবে না তাই তার শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি, শোলা দিয়ে বিভিন্ন খেলনা তৈরী করছে। আমি হাতের কাজে পটু না তাই চেষ্টা করেও খেলনা তৈরীর বিদ্যা শিখতে পারি নি। পাখি তৈরীটা আমার লোভের জিনিষ ছিলো। ওটার সাথে একটা ধনুকের মতো কঞ্চি থাকতো, চাপ দিলে পাখি মাথা নাড়াতো। তখন বিশাল বন্যা। 88 , স্কুল বন্ধ। শ্যামে র সাথে দেখা, যাচ্ছে গ্রামে। বললাম আমিও যাবো। চল, বলে রওনা হলো। রেল লাইন ধরে হাটা। হাটতে হাটতে রেল ব্রীজ, শিমুল তলা, শ্মশানের হাট, আমার দুরত্বের সব সীমা শেষ। যতবার বলি আর কতদুর, বলে এইতো আর একটু সামনে।

আমার গল্প উপন্যাসের বাইরে প্রথম গ্রাম দেখা। রেল লাইনের দুই পাশে ধানক্ষেত, ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। কালভার্টের নীচে ঝকঝকে পানি, মানুষ খুড়ি দিয়ে মাছ ধরছে। দুরে ফিতার মতো রাস্তা, ধুসর সবুজ দিগন্ত। আর ওইসবের ওপারে ভারত। চলতে চলতে ঘন্টা গেল, আরও এক ঘন্টা যায় যায়। কাঞ্চন স্টেশন এলো। এই স্টেশন পার হয়ে একটু গেলে গ্রাম। কিছুক্ষন ঘুরলাম। শুনলাম সংক্রান্তিতে পাশের গ্রামে বিশাল মেলা বসে। ওখানে প্রচুর ব্যবসা হয়। ওর এইসব জ্ঞানের আমি মুগ্ধ শ্রোতা। ট্রেন আসার আগে দুরের না দেখা বাঁকে দেখা যায় ধোঁয়া, তারপর শব্দ হয়, তারপর হুউশ ট্রেন দেখা যায়। এসব সাধারন বিষয়, কিন্তু আমার মতো পাবলিক যার দৌড় বাসা থেকে স্কুল আর স্কুল থেকে বাসা। মাঝেমাঝে রিকশায় আত্মীয়র বাড়ী যাওয়া আর দলবেধে বড় মাঠ, সেখানে এসব দৃশ্য নেই। কথা ছিলো আমরা পরের মেলায় আসবো। আমার সেই মেলায় যাওয়া হয় নি। শ্যাম আসেনি সে বছর। পরের বছর আমি হোস্টেলে। এর পর কলেজ। অনেক উত্তেজনা। শ্যামের সাথে যোগাযোগ নেই। শ্যামের বাবা মারা গেলেন। শ্যামের ছোট দুই ভাই মা সবার সাথেই আসতে যেতে দেখা হয়। শুনলাম শ্যাম ইন্ডিয়া গেছে। পরে একদিন শুনলাম ইন্ডিয়ায় ট্রেনে চড়ার সময় ও ট্রেনের নীচে পড়েছে। পা কাটা পড়ছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু। আমরাতখন যাই দুই ঈদে। আব্বার বদলি হওয়ায় মাঝের ছুটিতে আড্ডা জমে ঢাকায়। হয়তো 98 কিংবা তার পরে হঠাৎ দেখা হলো শ্যামের সাথে। সব ঠিক আছে শুধু হাটুর উপর থেকে পা নেই। আমি কোনমতে একটু হেসে চলে গেলাম। শুনলাম ও দর্জির কাজ করে সামনের মার্কেটে। ঈদের যন্ত্রনা একটাই সবাই বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসায় আসে। একই এলাকায় ছোট থেকে বড় হওয়ায় সবাই মামা চাচা খালা। তাদের আড়াল করে বিড়ি খেতে গিয়ে ঢুকলাম মার্কেটে। সামনের দর্জির দোকানের দরজা থেকে শ্যাম ডাক দিলো। কিরে তুই লুকায়া সিগারেট খাস। এই খানে বস। প্রায় 10 বছয পর কথা হলো। বললাম, কি রে কি খবর? বলল এইতো ভালো আছি। পা টা দেখলি। কোথাও যাইতে পারি না। ভালো লাগে না। এসব মুহূর্তে বলার মতো শব্দ খুব কম। আমার ঠেংঠেঙগা দুইটা পায়ের লজ্জা। কিংবা ভিতরে উঠলে ওঠা করুনার দলা, কোনটার কারনে জানি না, কোনমতে সিগারেট শেষ করে চলে আসলাম। মনে হলো আর কোনওদিন সেই মেলায় যাওয়া হবে না। সেই রেলব্রীজ সেই শিমুলতলা, সেই শ্মশান সব এক একটা স্থিরচিত্র। আবার নতুন করে তোলা হবে না।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।