একজন গ্যালিলিও ও ধর্মের মৃতু্য

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শনি, ১৮/০২/২০০৬ - ১০:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে মানুষের বসবাসের জন্য, এত এত গ্রহ নক্ষত্র, পৃথিবীর সব জীব বৈচিত্র সবই মানুষের জন্য, পৃথিবী মহাবিশ্বের গুরুত্বপূর্ন একটা জোতিষ্ক। এই দার্শনিক মতবাদের উপর ভিত্তি করেই প্রধান প্রচলিত ধর্মগুলো জন্ম নিয়েছে। এই দর্শনের নাম পৃথিবীকেন্দ্রিকতা। মানুষকে মহাবিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট অবস্থান দিয়েছে এ মতবাদ। আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের প্রাধান্য লুণ্ঠিত হলে ধর্ম অসার হয়ে যাবে এই ধারনাটা গ্যালিলিওর সাথে চার্চের বিরোধের একটা প্রধান কারন।
ধারনাটা অন্ধ হলেও এর যুক্তিগুলো দেখা যাক বিচার করে।

পৃথিবী অন্যতম বিশিষ্ট একটা জোতিষ্ক, মহাবিশ্ব আবর্তিত হচ্ছে এই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে, সূর্য্য চন্দ্র, সবই আবর্তিত হয় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে , এই হলো সার কথা এ দর্শনের। এখানে এই পরিবেশে পরিপুষ্ঠ মানবপ্রজাতি মহাবিশ্বের অহংকার। এদের জন্য ইশ্বর ধর্ম তৈরি করে পাঠিয়েছেন। তাই হাজার হাজার নবী রাসুল এসেছেন। মানুষকে পথ দেখাতে।
যা বলতে চাইছি তার সারাংশ এমন যে, মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সে বাস করে পৃথিবীতে , এখানেই হাজর হাজর নবী রসুল জন্মেছেন , ইশ্বরের বিশেষ কৃপা আছে এই গ্রহের উপরে, এজন্যই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। তাওরাত ইঞ্জিল , কোরান সবখানেই এ ধারনাটা দেওয়ার চেষ্টা।
চার্চ বাইবেলের ধারক ও বাহক, ওদের গাত্রদাহের কারন গ্যালিলিওর আবিষ্কার।
কিন্তু মুসলিমদের কিছুই যায় আসে না, শুধু প্রচলিত ধারনাটা বলি এতে এই দর্শনের গুরুত্ব মুসলিম সমাজে কতটা তা অনুভুত হবে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এজন্য যে মোহাম্মদ জন্ম নিবেন, তাকে পৃথিবীতে পাঠাবেন বলেই এত আয়োজন। এই ধারনাটা যদি ভ্রান্ত প্রমানিত হয় তবে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ধুলিস্যাৎ হবে। কিন্তু ভ্রান্তেরা বিজ্ঞানের পথ অনুসরন করবে না। যদি এটা প্রমানিত হয় যে পৃথিবী খুবই সাধারন মানের একটা গ্রহ, কোনো ঐশরিক বিবেচনায় এটা শ্রেষ্ঠ নয়, এটা মানুষের মুর্খতা যে তারা নিজেদের অধিক প্রাধান্য দিয়েছে। অহেতুক নিজেদের বৈশিষ্ঠমন্ডিত ভাবছে। তবে তারা ধর্মিয় হানাহানির পথ ছেড়ে চলে আসবে এটা ভাবা বোকামি।

প্রারম্ভিকা ছেড়ে আসল কথায় আসি। মহাবিশ্বের নক্ষত্র সংখ্যাটা আনুমানিক 1 এর পরে 22টা শুন্য দিলে যত হবে ততটা। এর বেশীও হতে পারে। এর প্রতি 1 কোটিতে 1টাতে যদি সৌরজগত ধাঁচের কিছু থাকে তবে সে সংখ্যাটা হবে 1 এর পরে 15টা শুন্য দিলে যত হবে তত। যদি সৌরজগত সহ নক্ষত্রগুলোর প্রতি লাখে একটাতে জীবনের উদ্ভব হয় সে সংখ্যাটা হবে 1 00মিলিয়ন। এর 1000 এ যদি মানুষের মতো প্রানি পাওয়া যায় তবে প্রায় 100000 গ্রহ বিদ্যমান যেখানে মানুষের মতো সভ্যতা থাকতে পারে। নিতান্তই সংখ্যাতাত্তি্বক হিসেব।
গ্যালিলিও যা প্রমান করেছিলো তা হলো, মহাবিশ্বের সবকিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না। তার ঘরে বানানো টেলিস্কোপে সে দেখেছিলো বৃহস্পতির উপগ্রহগুলো বৃহস্পতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। তৎকালিন চার্চের প্রানে বড় করূন হয়ে বাজলো এ সুর। তাদের পৃথিবীকে ঘিরে মহাবিশ্ব আবর্তিত হওয়ার ধারনা গেলো ধ্বসে। গ্যালিলিওর বিচার হলো। সমাজের কাছে মানুষের পরাজয় হলো। কিন্তু এর পর কোপার্নিকাস কেপলার দেখালেন সূর্য্যকে কেন্দ্র করে গ্রহসমুহ আবর্তিত হচ্ছে এমনটা দেখালে গ্রহসমুহের উদ্ভট কক্ষপথের সুন্দর একটা ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। সভ্যতার শুরু থেকে পৃথিবীর উপর যে চাপটা ছিলো সেটা কমে গেলো। ওটা এখন সূর্য্যকে ঘিরে আবর্তিত হওয়া সাধারন মানের একটা গ্রহ। তবে মানুষ নতুন আশায় বুক বাধলো। পৃথিবী শ্রেষ্ঠ না হলে কি হবে সূর্য মহাবিশ্বের মুল আকর্ষন। একটা নতুন দর্শন প্রসারিত হলো। হেলিওসেন্ট্রিক মতবাদ। বেশ পরিপুষ্ঠ হলো সেটা। ধর্ম তখনও বগল বাজাচ্ছিল, সুর্য্য দেব আছেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠত্ব চুরি করে সুর্য্য দেব আছেন আকাশে প্রজ্জ্বলিত। 1900 সালের দিকে কিছু নাসারা ইহুদি এটাতেও আঘাত দিলো। তারা কিভাবে কিভাবে টেলিস্কোপে আকাশ দেখে বুঝে নিলেন সূর্য একটা গ্যালাক্সির কোনার দিকে পরে থাকা সাধারন মানের তারা। এমন কি নিজ গ্যালাক্সির কেন্দ্রও নয় সূর্য। এর পর আরও জটিল প্রশ্ন এলো, তাহলে আমাদের গ্যালাক্সিই শ্রেষ্ঠ, মহাবিশ্ব এ গ্যালাক্সিকে ঘিরে আবর্তিত হয়, হমম না সত্যি নয় এ ধারনাও। মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা আনুমানিক 1 ট্রিলিয়ন। মানে 1এর পর 12টা শুন্য বসালে যা হবে তাই। প্রতিটাতে আনুমানিক 1 থেকে 100 বিলিয়ন নক্ষত্র। যাই হোক সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো যে মহাবিশ্বের কোনো কেন্দ্র নেই। আমরাও বিশিষ্ট কেউ না তবে আনন্দের কথা কেউই বিশিষ্ঠ না।
সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে নক্ষত্রগুলো স্থির। সাত আসমানের শামিয়ানায় চুমকির মতো লাগিয়ে দেওয়া । সেখানে মিটমিট করে জ্বলছে বেচারারা। কিন্তু যেহেতু তারা চুমকির মতও বসিয়ে দেওয়া তাই তাদের মধ্যের ব্যাবধান স্থির। তারা একে অন্যের কাছথেকে দুরে সরে যায় না।
আন্নস্টাইন 1916তে যখন জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন, তার কিছুদিন পরে একটা সমাধানে বের হয় মহাবিশ্ব বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসারে প্রসারিত হচ্ছে। আইনস্টাইনের পছন্দ হয় নি এ সমাধান। তিনি একটা ধ্রুবক আনলেন যার কাজ হবে এই প্রসারনের বিপরীতে কাজ করা। 1953তে আইনস্টাইন মেনে নেন এই মহাবিশ্বিয় ধ্রুবক তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। এর আগে 1930এ হাবল পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন করে বললেন মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে।

অথর্্যাৎ আকাশের গায়ে চুমকির মতো লেগে থাকা তারাগুলো স্থির নয়, তারাও গতিশীল। এটার যে প্রমানটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে সেটা জানাই।

রাতের আকাশ অন্ধকার এটাই সবচেয়ে বড় প্রমান পৃথিবি প্রসারিত হচ্ছে। এ ধারনা উনবিংশ শতাব্দির. তবে প্রমানিত হয়েছে 1930 সালে।
কেমন??
ধরেন মহাবিশ্ব স্থির। পৃথিবীর চারপাশে প্রায় কোটি কোটি কোটি তারা , তাদের সব আলো সব দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, এই আলো গুলোর একটা অংশ পৃথিবির দিকে আসবে( কারন মোমবাতি ঘরে থাকলে সব দিকেই আলো যায়) যদি সবগুলো নক্ষত্রের সামান্য সামান্য আলো পৃথিবির দিকে আসে তবে রাতের আকাশ অনেক উজ্জল হওয়ার কথা। রাত দিনের মতো আলোময় হওয়ার কথা। সেটা হচ্ছে না বিধায় এটা প্রামনিত হয় নক্ষত্রগুলো পরস্পর থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। যুক্তি যাদের পছন্দ হয় নি তাদের জন্য, আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে প্রায় 3 লক্ষ কিলোমিটার। তাই মহাবিশ্ব যত বড়ই হোক না কেনো এক দিন না একদিন নক্ষত্রের আলো পৃথিবিতে পৌছাবেই। মহাবিশ্বের সৃষ্টি প্রায় 1200 কোটি বছর আগে, সুতরাং এত দিনে রাতে চলাফেরার জন্য আমাদের বাতি বা চাঁদের উপর ভরসা না করলেও হতো। নক্ষত্রের আলোয় পথ চলতাম আমরা।
ধর্মের কি গেলো কি আসলো এই বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে? কিছুই না । আবার সবকিছুই। পৃথিবীর জন্য এ মহাবিশ্বের জন্ম না এটা প্রমানিত হলো। পৃথিবী যদি গুরুত্বপুর্ন না হয় পৃথিবীর মানুষও গুরুত্বপুর্ন কিছু না, তাদের দেখাশোনা করার জন্য যে নবী রসুলগন এসেছেন তারাও আসলে কোনো কেষ্টু বিষ্টু না। সাধারন মানুষ। তাদের কথা চিন্তা করে ইশ্বর এত কিছু করেন নি।
ইশ্বর আছে? উত্তর অমীমাংসিত। মহাবিশ্বের সূচনার পর থেকে এর বর্তমান পর্যন্ত ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রনের জন্য ইশ্বরের কোনো ভুমিকা নেই। ইশ্বর মহাবিশ্বের জন্মের পর এর উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়েছেন। সূচনা আগে কেউ ছিলেন কি না এটা প্রমান করা সম্ভব নয়। তাহলে এই যুক্তিতে আসলে গত 5000 বছর ধরে আরব উপদ্্বীপে এত এত নবি রসুল এবং ধর্মগ্রন্থ প্রেরন করার ক্ষমতা ইশ্বরের নেই। তাহলে কেনো ইশ্বরের বানী হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা চলছে বাইবেল তাওরাত কোরান কে? কেনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘাত? উত্তর গ্যালিলিওর বিচার। এটাই ধর্মের উপর মরন আঘাতের মতো। তবে নির্বোধের সংখ্যা সব সময় বেশী। তাই নবী রসুল এত কম।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।