বাংলা সংস্কৃতি বাংলার ধর্ম

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: রবি, ২৬/০৩/২০০৬ - ৭:৪৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষের নৃশংসতার তুলনা মানুষ নিজেই। দখলের লড়াই চলছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে, এবং লড়াই যখন তখন স্বভাবতই এর পক্ষ বিপক্ষ থাকে। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের সভ্যতার লড়াই মূলত ত্রিমুখী হয়েছে, একটা সবসময়ের প্রতিদন্ড ী প্রকৃতি আর দ্্বী তিয় এবং তৃতীয় প্রতিদন্ডী স্বজাতি। অর্থনীতি, আদর্শ, অস্তিত্বের প্রয়োজন এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করেছে।

যখন মানুষের আত্তিকরণের লোভ বেড়ে যায় পৃথিবী তার জন্য খুব ছোটো একটা ভূখন্ড। পৃথিবী জয় করার নেশায় অনেক নৃপতি যুদ্ধ করেছেন নিতান্ত অপ্রয়োজনে। ক্ষমতাবলয় ছড়িয়ে দেওয়া!!!র কারনে? কারন করদ রাজ্যের করে তার রাজধানী আর তার প্রাসাদের শোভা বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক প্রসিদ্ধ নৃপতি আছেন পৃথিবীর ইতিহাসে যারা একটা সময় পৃথিবীর অনেকটা অংশ দখল করতে পেরেছিলেন। এমন কি কলম্বাসের 100 বছর আগে চীনের রাজবংশের প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য প্রেরিত নৌবহর স্পর্শ করেছিলো বর্তমান আমেরিকার উপকূল।

এসব ইতিহাসের কপচানি বাদ দিয়ে একেবারে বাংলায় ফিরে আসি। বাংলা সবসময় তার উর্বরতার জন্য ক্ষমতাবানদের লালসার শিকার হয়েছে। বিশাল গাঙ্গেয় বদ্্বীপের পাললিক সমতল ভূমি তার উর্বরতার জন্য জগতবিখ্যাত , এবং একই সাথে বিখ্যাত তার অধিবাসিদের উদারতা এবং সহনশীলতার উদাহরন হিসেবে। আমোদপ্রিয় একটু অলস অতিথিবৎসল বাঙ্গালি কাউকেই ফিরিয়ে দেয় নি কিন্তু এই সমতলের মানুষ তেমন দুর্ধর্ষ ছিলো না। ব্যাতিক্রম থাকেই, এখানেই এক নৃপতি জন্মেছিলো যার সেনা গিয়ে দখল করেছিলো কোরিয়া উপদ্্বীপ, দখল করেছিলো ইন্দোনেশিয়া, সেই একজনকে বাদ দিলে বাঙ্গালির স্বভাব একেবারে নিরীহ।
কিন্তু এই বাঙ্গালি জাত বলে আলাদা নৃতাত্তি্বক কোনো জাত নেই। এটা একেবারেই ভূমিভিত্তিক ভাগ। এই এলাকায় যারা যারা বসত করেছে তারাই বাঙ্গালি। ধর্মসহনশীলতার ঐতিহ্যধারী আমরা, পৌত্তলিক দ্্রাবিড়, আর্য হিন্দু, পরিশীলিত আর্যমত বৌদ্ধ এবং আর্যধর্মের খ্রিস্টান এবং মুসলিম শাখাকেও আমরা এখানে স্থান দিয়েছি। সবাই পাশাপাশি থেকেছে, থেকেছে অগি্নউপাসক পার্শিরা, বৈষ্ণব, বাউল, মরমিবাদ, সবকিছুর জগাখিচুড়ি। এখনের মুসলিম হিন্দুর মন্দিরে মানত করেছে, হিন্দুরা প্রসাদ দিয়েছে মুসলিম দরগায়।
ভূমির প্রভাবেই হয়তো এখানের মানুষ খানিকটা আধ্যাত্ববাদী , খানিকটা দার্শনিক, কৃষ্ণপ্রেম -ইশ্বরপ্রেম, মানবপ্রেম প্রেমে প্রেমে প্রেমময় এ ভূমির বাসিন্দারা। এখনও তাই। কিন্তুএই সহনশীলতার চর্চায় বাধা হয়ে আসছে উগ্র ইসলামি মৌলবাদ। এটা বাঙ্গালি সংস্কৃতির শেকড় কেটে গাছের ডগায় পানি দেওয়ার মনস্তত্ত্ব নিয়ে আসছে। বাঙ্গালির মনস্তত্ত্ব অনুযায়ি এই মাটির সবচেয়ে চমৎকার ধর্মমত হতে পারতো বাউল ধর্ম যেখানে বৈদ্ধ ধর্মের উদারতা, খ্রিস্ট ধর্মের মানবপ্রেম, ইসলামের নিশর্ত সমর্পন,একেশ্ববাদের অসীমের খোঁজ, সূর আর ছন্দ মিলেছে একসাথে, যেখানে একটা পর্যায়ে মানুষে মানুষে বিভেদ মুছে গিয়ে মানুষই অন্বিষ্ঠ হয়ে উঠে, মানুষের ভিতরেই বিশ্বরূপের খোঁজ, এবং এই প্রথার এক পর্যায়ে এটা তুমুল পৌত্তলিক, বাঙালি জাতির মতোই, যে জাতি 2500 বছর আগেই সাহিত্যচর্চায় 2টা ভিন্নধর্মি ভাষার ব্যাবহার করেছে, সাধারন জনগনের জন্য সাধারনের বুলিতে লেখা হয়েছে গান, লেখা হয়েছে নাটক, লেখা হয়েছে কবিতা, এমন ভাষার ঐতিহ্য কোথায় আছে?
মানুষে মানুষে মিলনের এমন নিদর্শন কোথায়। বাউল আমাদের ধর্ম হবে না কেনো? কিন্তু এই বাউলদের নিধন করা শুরু করেছে উগ্রপন্থার মুসলিম হুজুররা। এই ইতিহাসটা না বুঝলে লালনের মানবতাবাদী দর্শনের উৎস বুঝা যাবে না তেমন করে। লালনের দর্শন এক অর্থে বাঙ্গালি দর্শনের প্রতিরূপ। তাই এই ভূমিতেই বাউলের সৃজন হয়েছে, অন্য কোথাও বাউল নেই তেমন করে।

মুসলিম উগ্রবাদি একটা ধারা বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছে 47 পরবর্তি সময়ে। বাংলার মতো এমন ঐতইহ্যবাহী ভাষার বর্নমালা পরিবর্তনের দাবী জানিয়েছেলো, তারাই 71এ বিরোধী পক্ষে ছিলো, এখনও বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিরোধী তারা। মুসলিম জাতিয়তাবাদি বলে নিজেদের দাবি করছে এবং পক্ষান্তরে বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিরোধিতা করছে। অবশ্য আরবের সংস্কৃতি সবটাই ধার করা। বালিতে সৌধ দাড়ায় না, বালিতে কিছুই নির্মান হয় না, বালি পানির মতো বহমান, তাই আরবের কবিতা কখনই বাংলা কবিতার মতো দানা বাধে না, ওগুলোর গাঠনিক বৈচিত্রের কারনে ওদের বলা হয় মুক্তার মালা ধাঁচের কবিতা, যেখানে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর এক এক পংক্তির কবিতা আছে, এবং ওদের পরস্পরের মিলমিশ কম। এরা কবিতার পংক্তিতেও বিচ্ছিন্ন। ওদের কবিতাই দানা বাধে নি, ওরা তাবুর নীচে ছিলো, কখনই গেরস্থ বাড়ী নির্মান করেনি, নির্মানের ঐতিহ্য নেই, আর যাযাবর বলে রক্তে বিনাশের নেশা। দখলের নেশা। এদের ঐতিহ্য ধারণ করে, মনস্তত্ত্ব ধারণ করে ইসলাম এসেছে, ইসলামের মানবপ্রেমের ধারাটাই গ্রহন করেছে বাঙ্গালি, মানুষ হত্যার ধারাটা বর্জন করেছে। কিন্তু মানব বিদ্্বেষের এই ধারাকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে যারা তাদের নৃশংসতায় আমরা ক্রমশ অসহায় হয়ে যাচ্ছি।
এরা বাঙ্গালি সংস্কৃতির উদারতায় বসবাস করে, মানবপ্রেমের ঐতিহ্যে লালিতপালিত হয়ে রক্তলোভী শ্বাপদের মতো বাঙ্গালির রক্তে উদরপূরণ করছে, এদের প্রতিরোধে বাঙ্গালি জাগবেই। মানুষের নৃশংসতার তুলনা মানুষ নিজেই , ইসলামের অন্তর্গত বিভেদে এরা মুসলিমদের হত্যা করছে অবলীলায় এদের মুখে ইসলামের সহনশীলতার বানী যে নির্জলা মিথ্যা এটা সবাই বুঝলেও এরা নিজেরা ভাবে ওরা অনেক চালাক, ওদের মানববিদ্্বেষী ভুমিকা সবাই মেনে নিবে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।