আলি সংকলিত কোরানের কিছু তথ্য-

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০৩/২০০৬ - ৩:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উসমানের সংকলিত কোরান নিয়ে বিতর্ক এবং মুহাম্মদের কাছে শোনা কোরানের বানী নিয়ে উব্বায়ে ইবন মাসউদ এবং উসমানের সংকলিত কোরানের ভিতরের আয়াতের পার্থক্য , তাদের শাব্দিক পার্থক্য এবং আয়াত সংখ্যার পার্থক্য নিয়ে উসমানের সংকলিত কোরান বর্জন করে ইরাকের অধিবাসিরা। উসমানের মৃতু্যর পর আলি কোরান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন।
এ আলোচনার বিষয়বস্তু ওটাকে ঘিরেই থাকবে। এর আগে একজন প্রশ্ন করেছিলো এ বিষয়ের রেফারেন্সগুলোর উৎস কি? ওটার উত্তর হচ্ছে বেশির ভাগ তথ্যের প্রাথমিক উৎস তাবেরি- এই ভদ্্রলোক ইসলামের এইং ইসলামি ব্যাক্তিদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন 35 খন্ডের এক বিশাল সংগ্রহে। সেখান থেকে সংকলিত কিছু অংশ থেকে এ লেখা শুরু করেছি। আমি 35 খন্ড বইটির অনুবাদ পেলে সম্পুর্ন সঠিক বলে রায় দিতে পারতাম, কিন্তু এখহানে বর্নিত বোরাখি এবং মুসলিমের হাদিসগুলো দেখেছি সঠিক সুতরাং এই ভিত্তিতে বলছি যে সংকলনটা করেছে সে সত্যের অপলাপ করে নি। আরও একজন প্রাথমিক ইসলামের ইতিহাস লেখক আছেন ইবন সা'দ, তার কিছু অংশ সত্য মেনেই ব্যাবহার করছি। এটা একটা গবেষনা নিবন্ধের সংকলন, এবং এটা যাচাই করা হয়েছে।

------------------------------------
আলি খলিফা হওয়ার পর উসমানের সংকলনের ব্যার্থতায় এবং উম্মাহর মধ্যের বিরোধ নিরসনে কোরানের আয়াত সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন। তিনি যে কোরান সংকলন করেন তার ভিত্তি ছিলো কোরানের আয়াত যে ধারায় অবতীর্ন হয়েছে সে ধারায়। সুতরাং তার কোরানের প্রথম আয়াত হচ্ছে - ইকরা ....... হেরা গুহায় অবতীর্ন হওয়া প্রথম আয়াত।
আলি আয়াত নাজিল হওয়ার কালানুক্রম হিসেবে কোরানের আয়াত সংকলন করেছিলেন, এবং সাথে কিছু সহায়ক টিকা যোগ করেছিলেন, কেনো কি উদ্দেশ্যে এবং কোথায় এটা অবতীর্ন হয়েছিলো। তার ভাষ্য অনেকটা এ রকম, কোরানের এমন কোনো আয়াত নেই যা আমার গোচরিভূত নয়, এবং সে আয়াত গুলো কেনো অবতীর্ন হয়েছিলো এবং কার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ন হয়েছিলো এটাও আমার জানা।
এমন কি অনেক আয়াত যা পরে বাতিল ঘোষিত হয়েছে সেসব আয়াত কিছু আয়াত যা দুর্বল আয়াত হিসেবে পরিত্যাক্ত হয়েছে পরবর্তিতে এবং কিছু আয়াত যা কোরানে গ্রহন না করার নির্দেশ ছিলো মুহাম্মদের পক্ষ থেকে, এমন প্রায় 17000 হাজার আয়াত এবং বানীর সংকলন ছিলো সেটা। বর্তমানের কোরানে আয়াত সংখ্যা 6666 বাকি 11 হাজার আয়াত এবং খোদার পাঠানো বানী সম্পুর্ন হারিয়ে গেছে।
উসমানের সংকলিত কোরানে অনেকগুলো আয়াত নেই এটার কথা বলবো পরবর্তিতে।

*** আমার খটকা লাগলো যে খানে, তাবেরি এবং ইবন সা'দ 2 জনেই মেনে নিয়েছেন কোরানের অনেকগুলো আয়াত পরে বাতিল ঘোষিত হয়েছে, মুহাম্মদ নিজেও কিছু আয়াত রদ করেন। যদি কোরান আগেই লাওহে মাহফুজে রাখা থাকে, এবং সেটা যদি অপরিবর্তনীয় হয় তবে কেনো ভুল আয়াত নাজেল হবে? জিব্রাঈল কি অশিক্ষিত ফেরেশতা ছিলো? একটা সুত্র আছে , যেটার উৎস ধরে স্যাটানিক ভার্সেস নামের উৎপত্তি, সেখানে বলা আছে, মাঝে শয়তানের প্রভাবে কিছু ভুল আয়াত কোরানের বানী হিসেবে সংকলিত হয়, পরে মুহাম্মদ ভুল বুঝতে পারেন এবং সেসব আয়াত রদ করেন।
কিন্তু অনেক আয়াত যেগুলো শয়তানের প্ররোচনায় প্রাপ্ত নয় সেগুলোকে দুর্বল আয়াত ঘোষনা দিয়ে সংকলনে নিষেধ করেন। কারন খোদার মর্জি ছিলো ওগুলোর শক্তিশালি পরিবর্তিত আয়াত বা বদলি আয়াত আসবে। ******
আলি যা করেছিলেন তা তাফসির এবং সংকলনের মাঝামাঝি একটা বিষয়, কিছু আয়াতের ব্যাখ্যাও তিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন মুহাম্মদের জবানিতে।
এমনটা কথিত আছে মুহাম্মদ হাদিস সংকলন নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন,
এই কোরান সংকলন করার পর আলি এটা উপস্থাপন করেন, কিন্তু তার এই সংকলন পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়,
আলির সংকলনটা খুঁজে পাওয়া যায় নি এর পরে।

--------------------------------------
উসমানের সংকলনে কি কি আয়াত বাদ পড়েছিলো এবং কি কি ভুল আয়াত অনুপ্রবেশ করেছিলো ওগুলো নিয়ে বলার আগে ছোটো একটা তথ্য দেই।
আরবি ব্যাকরনের জনকের মৃতু্য হয় 117 হিজরিতে। এর আগে আরবির কোনো ব্যাকরন ছিলো না। তার প্রবর্তিত যের যবর পেশ, এবং যুক্ত বর্নে আরবি অক্ষরের ধাঁচ কেমন হবে এসব নিয়ম এখনও অনুসৃত হচ্ছে, প্রথম দিকে সংকলিত কোরানের কোথাও হরকত ছিলো না, এমন কি উপর নীচে অক্ষর নির্দেশক ফোটা গুলোও ছিলো না, জনকের নাম আবু ইসহাক, তার 2 জন ছাত্র পরে এ বিষয়ে কাজ করেন, এমন কি বাক্যগুলোর মধ্যে কোনো যতিচিহ্নের ব্যাভার ছিলো না।
লিখিত ভাষা, উচ্চারনজনিত সমস্যা, কোনো রকম -কার বিহিন বাক্য কিভাবে উচ্চারন করতে হবে এসব নিয়ে কোনো নির্দেশনা ছিলো না কোথাও, এ অবস্থায় ভ্রান্তি তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক।
আমরা যেই কোরানগুলো পাই তা লেখা হয়েছে 800খ্রিস্টাব্দের পরে, কোরান সংকলিত হওয়ার 150 বছর পরের ঘটনা, এর মধ্যে যদি কোনো কিছু বদলে যায় তাহলে আমরা কিছুতেই উদ্ধার করতে পারবো না এমন না, আমরা পর্যবেক্ষন করলে কিছু অসংগতি দেখতে পাবো। এটাই বলবে কোনো কিছু হারিয়ে গিয়েছে। এই ভাবেই বিভিন্ন সুত্র থেকে খুঁজে খুঁজে ইবন সা"দ এবং তাবেরি নিশ্চিত হন কোরানের অনেকগুলো আয়াত হারিয়ে গিয়েছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।