নববর্ষের ভাবনা

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: রবি, ২৩/০৪/২০০৬ - ৭:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো জানেন তারা এটা স্ব ীকার করবেন যে এই মৌলিক অধিকারগুলো পুরনের দায়িত্ব সম্মিলিত মানুষের সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রের পালন করা উচিত। মানুষের আহার-বস্ত্র-বাসস্থান- চিকিৎসা-শিক্ষা এবং কাজের পরিবেশ তৈরি করা এবং পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের সম্পন্ন নাগরিকদের সামর্থ্য আছে, তারা বাজার থেকেই জীবনের প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করতে পারে, এদের ছেলেমেয়েরা প্রয়োজনে শিক্ষা এবং ডিগ্রিও কিনতে পারে আজকাল, চিকিৎসা সেবার জন্য অনেকেই বিদেশ ভ্রমনের সামর্থ্য রাখে, বাসস্থানের বা আহারের চিন্তা এদের নেই, এমন কি প্রান্তিক মধ্যবিত্ত মানুষেরও মোটামুটি জোড়াতালি দিয়ে জীবনযাপনের উপকরন সংগ্রহ করে ফেলানোর ক্ষমতা আছে, কিন্তু বাংলাদেশের বার্ষিক আয়ের বিচারে কতজন দারিদ্্রসীমার নীচে বসবাস করে? কতজনের দৈনিক উপার্জন 200 টাকার বেশী?
যদিও সামষ্টিক আয়ের সাথে সর্বমোট জনসংখ্যা ভাগ দিয়ে মাথাপ্রতই কত টাকা পরে সে হিসেবে মাথাপিছু বাৎসরিক আয়ের হিসাবটা করা হয়, কিন্তু একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিক যতই হোক তাকে তার পরিবার পরিজনসহ সব সময়ই দারিদ্্রসীমার নীচে বসবাস করতে হয়। এই রকম দিন আনি দিন খাই মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশের সর্বমোট জনসংখ্যার 80% হবে। এখানে একজন ঋনখেলাপি সালমান এফ রহমানের সম্পদের পরিমান( এর বেশীর ভাগই বাংলাদেশের বাকী জনসংখ্যার আমানত ) কয়েক হাজার কোটি টাকা, যখন হিসেব করা হয়, এই সব শিল্পপতি ঋনখেলাপিদেরও সেখানে আত্তিকরন করা হয়, সুতরাং দিনান্তে 100টাকা পাওয়া একজনশ্রমিক, দিনান্তে 50 থেকে 80টাকা পাওয়া একজন গার্মেন্টসের কর্মির মাসিক উপার্জন কখনই দারিদ্্রসীমা ছুঁতে পারে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই সংখ্যাগুরু মানুষের দিকে নজর দেওয়া। তাদের জন্যই রাষ্ট্রের মনোযোগি হওয়া দরকার। গ্রামীন ব্যাংকের ইউনুস সাহেবের অনেক দরদ দরিদ্্র জনতার জন্য, কিন্তু তার পরিচালিত এন জিও যখন দরিদ্্র এক মহিলার ঋন শোধের অসাসমর্থতার জন্য গলায় গামছা বেধে আনে , বা ঘরের চাল খুলে আনে তখন তার এই দরিদ্্রপ্রেম কোথায় থাকে, কোথায় থাকে শ্রদ্ধেয় জনাব আনিসুল হকের হাসিমুখ যখন গার্মেন্টস দূর্ঘটনায় নিহত একজন মানুষের জীবনের মূল্য ধার্য হয় 50 হাজার থেকে 1 লক্ষ টাকা, কোথায় আমাদের বিখ্যাত জোতিষ জলিল সাহেব, আমাদের মাননিয় সাংসদ(ভুতপূর্ব) ইকবাল সাহেব, যার ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ঋন দেওয়া হয়, সবাই( মানে আমাদের সামগ্রিক রাজনীতির মধ্যে পুঁজিবাদী ক্ষতগুলো) এখন রাজনীতির মুল স্রোতে আবর্জনার মতো ভাসছে। তাদের আমরা রাষ্ট্রের নির্বাহী নির্বাচিত করেছি, তাদের দায়িত্ব দেশের সকল নাগরিকের জন্য একটা সহনশীল এবং বাসযোগ্য দেশ উপহার দেওয়া, একজন রাজনৈতিক হিসেবে দেশ সেবার দায়িত্ব তাদের, সেখানে আমাদের বাসস্থান সমস্যা প্রকট, বস্তির পরিবেশ যারা বস্তির ভেতরে প্রবেশ করেন নি তারা বুঝতে পারবেন না, জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো কতটা অবহেলায় লুণ্ঠিত হয়েছে ওখানে, ঢাকা শহরের অর্ধেক মানুষ বস্তিবাসী, বাকি মানুষ এই একটা শহরে যেভাবে বসবাস করে তার পরিবেশও বস্তির তুলনায় উন্নত কিছু নয়, মোহাম্মদপূরের দেয়ালের সাথে দেয়ালের প্রেম মাঝে হাওয়ার আনোাগোনা নেই, বিষম সঙ্গম বসতভিটার। মিরপূরের দিকে এখনও কিছুটা বাসযোগ্য জায়গা আছে, অভিজাত ধানমন্ডি কিংবা পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এখনও সবুজলুণ্ঠিত হয়ে সম্পুর্ন কংক্রিট কারাগার হয়ে যায় নি, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, বাড্ডা, রামপুরা, লালবাগ, সায়েদাবাদ যাত্রাবাড়ী, ঢাকার মানচিত্রের কোন অংশের পরিবেশ বিপর্যয় হয় নি তেমন ভয়ানক ভাবে এই বিষয়টা নিয়ে একটা গবেষনা চলতে পারে। এই সব জায়গার আশেপাশে আছে বস্তি, রেললাইনের 2 পাশ দিয়ে বিশাল এক বস্তির সিরিজ আছে, এই বস্তির সূচনা কোথা থেকে কে জানে, কিন্তু গোপিবাগ থেকে শুরু করে একেবারে উত্তরার আগ পর্যন্ত বস্তির শেষ নাই। আমরা রাজধানী থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য সব জেলা সদর কিংবা উপজেলা এবং ধাপে ধাপে গ্রামের দিকে যাই, কোথায় মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত, রাষ্ট্র মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চত করতে ব্যার্থ কিন্তু মানুষের জীবনধারনের নিরাপত্তা পর্যন্ত দিতে পারছে না রাষ্ট্র, এটাকে এখনও সম্মগ্রিক ভাবে ব্যার্থ রাষ্ট্র বলা যাবে না হয়তো, হয়তো বাংলাদেশের মানুষের অসীম জীবনিশক্তি তাই এত অপূর্নতার মাঝেও ওরা বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ।আমার কাছে রাষ্ট্রের সংবিধান একটা চুক্তির মতো মনে হয়, এই সংবিধান মেনে চলার অঙ্গিকার করে প্রতিটা নতউন নাগরিক,যারা ভিনদেশ থেকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে চায়, এটার অর্থ বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিক জন্মসূত্রে এই সংবিধান মেনে চলায় অঙ্গিকারবদ্ধ। তারা বাংলাদেশ নামকএই 56 হাজার বর্গমাইলের সীমিত ভুখন্ডে বসবাস করছে, তাদের শ্রম এবং রক্ত দিয়ে 14 কোটি মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরনে সম্মিলিত ভাবে কাজ করছে, প্রতিটা জনপ্রতিনিধি যখন শপথ গ্রহন করে তখন আইন এবং রাষ্ট্রিয় আনুগত্যের প্রতি আস্থা এবং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে , এবং প্রতিটা সাংসদ সংবিধান অনুসারে সকল মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সংসদকে রাষ্ট্রের নির্বাহী ব্যাবস্থার এবং আইনপ্রণয়নের একটা নিরপেক্ষ কেন্দ্র হিসেবে দেখবে এমন আশ্বাস দিয়েই সাংসদ হয়। কিন্তু আমাদের জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারিদের আচার-ব্যাবহারে কখনই এটা প্রকাশ পায় না যে তাদের এই জীবনযাপনের সকটুকুই আসছে বাকী 14 কোটি মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, এই 14 কোটি মানুষের সেবা দেওয়ার বদলে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সেবা নিতেই ব্যাস্ত তারা। এই বিষয়ের অবসান আমরা চাই, আমরা দূর্নিতিমুক্ত একটা প্রশাসন চাই, আমরা রাষ্ট্র সকল নাগরিকদের নিরাপত্তা দিক এটাও চাই, আমরা চাই যে মানুষটা সকালে ঘর ছেড়েছে জীবিকার টানে সে যেনো দিনান্তে অক্ষত দেহে ফিরে আসে এই প্রার্থনা না করে রাষ্ট্র যেনো তাকে অক্ষত দেহে গৃহে ফিরিয়ে দেয় এই দাবি করি রাষ্ট্রের কাছে। আমরা প্রতিটা মানুষের সংবিধানস্ব ীকৃত অধিকারগুলো অক্ষত থাকুক এই দাবি করি রাষ্ট্রের কাছে, কারন রাষ্ট্র আমাদের সাথে এই চুক্তিই করেছে, আমরা এই রাষ্ট্রের অনুগত থাকবো এবং এর অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করবো এই শর্তে যে রাষ্ট্র এর বদলে আমাদের সংবিধান সম্মত অধিকারগুলো সংরক্ষন করবে।
লক্ষ্যটা এই হওয়া উচিত, কোনো রকম ভয় না পেয়ে আমরা নিজেরা ছোটো ছোটো মহলে এই দাবিটা প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত তৈরি করতে পারি, আমরা সম্মিলিত ভাবে এই দাবিগুলোর চর্চা করটে পারি, এভাবেই অনেকগুলো ক্ষুদ্্র স্বর মিলে একটা মহানাদ তৈরি হতে পারে, যেই দাবীর প্রবল প্রতাপে খসে পড়বে সকল আবর্জনা, আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষায় আমরা নিজেরা সচেষ্ট না হলে রাষ্ট্র বদলাবে না, আমদের নিজেদের প্রতিহত করতে হবে সকল অপচেষ্টা, বুঝতে হবে মানুষের অধিকার মানে আমার-তোমার-তার-সবার মৌলিক অধিকার, শুধু আমার অধিকারপ্রতিষ্ঠা হলে হবে না, সকল মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, আমরা প্রাগৈতইহাসিক কাল থেকে এই কাজটাই করে আসছি, সবাই সবাইকে সাহায্য করার মাধ্যমে একটা বাসযোগ্য সমাজ তৈরির চেষ্টা করছি।
আমার কাছে এই পরিপ্রেক্ষিতে লালনকে মোহাম্মদের চেয়ে গ্রহনযোগ্য এবং সম্মানিত ব্যাক্তি মনে হয়, মোহাম্মদের অনেক সীমাবদ্ধতা লালন সময়ের সাথে এইসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠেছেন। আজ থেকে 150 বছর আগে তিনি যা চিন্তা করেছেন তা আমরা এই সময়ের অনেকের ভিতরেই দেখতে পাই না, মানুষের ভিতরে বর্ন গোত্র- ধর্ম বিভাজন ছাড়া সমাজের স্বপ্ন, ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, ধর্মভিত্তিক উন্মাদনার আগে এটা ভাবা ধর্ম মূলত আমদের সাধারন বিবেচনাবোধের মতোই সাধারন একটা বিষয়, আমাদের বিবেচনা বোধ আমদের যেই কাজটা করতে অনুপ্রানিত করে সেইটা করাই ধর্ম। মানুষ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা মানুষের ধর্ম এবং এই কাজটা করার সময় মানুষ মানুষের ধর্ম কি এটা নিয়ে ভাবে না, একটা মানুষের প্রতি অন্য একটা মানুষের মমত্ববোধের মতও সুন্দর কিছু নেই, যদিও এই কথার পর সাদিক হয়তো ফোড়ন কাটবে এটা ইসলামের শিক্ষা, কিন্তু আমার কাছে এটা মনুষ্যত্বের শিক্ষা। মানুষের মনুষ্যত্ব মানুষকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে, এবং সমাজ এই দায়িত্বনির্বাহের মাধ্যমেই এতাটা পথ পাড়ি দিয়েছে। আমরা আরও একটু মানুষ হয়ে উঠার চর্চা করি, নতুন বছরে এটাই আমাদের সবার চেষ্টা হোক।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।