নারী স্বাধীনতা-

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: রবি, ১৮/০৬/২০০৬ - ১০:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুব সচেতনভাবে এখানে নারীর পরাধীনতার কারন ঐহ্য রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। নারী কেনো পরাধীন এবং এর পিছনে কি কি নিয়ামক কাজ করছে এটা নিয়ে বাদানুবাদ আলোচনার প্রকৃতি বদলে দিতে পারে।
তাই যারা আলোচনা করবে তাদের প্রতি অনুরোধ পেছনের কারনটা না খুঁজে শুধু স্বারূপ উদঘাটনের চেষ্টা করলে ভালো।
নারীর স্বাধীনতাহীনতার চর্চা শুরু হয় আমাদের সার্বিক তত্ত্ববধানে। আমাদের শালীনতাবোধের জায়গা থেকেই একটা কাজ চালানো গোছের সমাধান নির্ধারন করি আমরা- নারীকে পরাধীন করি।

বছয় কয়েক আগে বি আর টি সি মেয়েদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস শুরু করলো। অভিযোগ সাধারন পরিবহন ব্যাবস্থায় নারীর যৌন হয়রানি হচ্ছে। অনেকেই সাধুবাদ জানালো এমন মহতি উদ্যোগের। পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দিয়ে মেনে নেওয়া পুরুষ যৌনতাসর্বস্ব পশু। যারা রাস্তায় মেয়ে দেখলেই উদগ্রকামনায় ছটফট করে।
অন্য সবার কেমন লেগেছিলো জানি না, আমার জিনেকে অপমানিত মনে হয়েছিলো এই উদ্ভট সিদ্ধান্ত দেখে। বাঁকা কথা চাইলে অনেক বলা যায়, যেমন সাধারন পরিবহন ব্যাবস্থায় কেনো সংরক্ষিত নারী আসন রাখা হয়, কেনো নারী স্বাধীনতা বলে যারা গলা ফাটাচ্ছে তারা এই স্পষ্ট বিভাজনের বিরুদ্ধে কথা বলছে না। আমি কয়েকজনকে চিনি যারা নিজেরাই এই ব্যাস্থার প্রতিবাদ হিসেবে সাধারন আসনে গিয়ে যাতায়ত করতো বাসে। এমন কি খুব ভীড়ের সময় নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রি বসে থাকে- সেখানেও নারীর একক অধিকার নেই। কিন্তু নারীকে অসহায় ভাবা এবং পুরুষকে বলিষ্ঠ এবং রক্ষক ভাবার ধারনাটা, যেখানে অনিবার্য ভাবে পুরুষের উপর নারীকে রক্ষার ভারটা চলে আসে সেখানে নারীর অসম্মানের বিষয়টা সমাজ মেনে নেয়।
এই সামাজিক ধারনা, সম্মিলিত শালিনতাবোধ নারীর স্বাধীনতা হরণ করছে।

এটা একটা পর্যবেক্ষণ। কিন্তু গতকাল যখন একটা পোষ্টে নারী স্বাধীনতা বলতে কি ধারনা জন্মায় সবার ভিতরে এর আলোচনা শুরু হলো, তার উত্তর দিতে যত জন এসেছে তাদের 2 জন মাত্র মেয়ে। একজন স্বাধীনতার রূপরেখার কিছু বলে নাই- অন্য জন বলেছে নারীকে মানুষ স্ব ীকৃতি দিতে। প্রশ্নের পরবর্তি অংশের উত্তর দেওয়ার জায়গায় পৌঁছায় নি আলোচনাটা।
আমরা যেহেতু স্বাধীনতার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে পারি নি, এর পরিধি নির্নয় করতে পারি নি, তাই এই অসংজ্ঞায়িত আলোচনার ভবিষ্যত পরিপ্রেক্ষিত নির্ধারনও অসম্ভব। নারীকে যদি স্বাধীনতা দেওয়া হয়, ধরা যাক কোনো এক আদর্শ ব্যাবস্থায় নারি পুরুষ সামাজিক ভাবে সমকক্ষ হয়ে গেলো, সে অবস্থায় নারীর ভুমিকা এবং আচরন কি হবে? নারী কিভাবে সামাজিক বিবর্তন ঘটাবে, এটার প্রয়োজন আছে যে কারনে তা হলো নারীর ক্ষমতায়নের সাথে নারী স্বাধীনতার কোনো সম্পর্ক নেই। কুইন ওফ সেবা, ক্লিওপেট্রা, কিংবা মধ্যযুগে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, স্পেনে যখন নারী নেতৃত্ব ছিলো তখনও সেখানের নারী স্বাধীনতা ছিলো না। নারীর ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে আসীন হওয়াটা নারী স্বাধীনতা নয় মোটেও।

কৌশিকের ভাষ্যে এসেছে নারীর কাজের স্বাধীনতার কথা-নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টা সামনে আসে নাই, এসেছে পরিবারের অংশ হিসেবে , একজন গৃহবধু হিসেবে নারী যদি বাইরে কাজ করতে যায় তার প্রভাব কি হবে- এখানেও ভাবনার জড়তা- নারীকে একটা সম্পর্কের আড়াল থেকে বিবেচনা করা, সেটা কারো কন্যা, কারো বিবাহিত স্ত্র ী হিসেবে কল্পনা করা। এমন ধারনা কেনো আসবে না যে নারী বিবাহিত না হয়েও স্বাধীন জীবন যাপন করতে পারে।
পুরুষের ক্ষেত্রে তার বৈবাহিক অবস্থা কখনও বিবেচনার ভিতরে আসছে না চিন্তায় কিন্তু নারী স্বাধীনটার কথা বললেই বৈবাহিক সম্পর্কের শেকড় জতিয়ে অতঃপর আলোচনার শুরু।
সাদিকের কথাটা বুঝলাম না- মানুষ হিসেবে পরিচয় চায়- কিন্তু পরিশেষে একটা আশংকার মতো শোনালো যদি কেউ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তখন কি হবে? এটা বিশ্বাসঘাতকতা। একটা সম্পর্কের মধ্যে থেকে অন্য একটা সম্পর্ক স্থাপন সব সময়ই দ্্বিচারিতা, এটার নারী পুরুষ ভেদ নেই। সমস্যার মূল হলো সমস্যাচিহি্নত করনের প্রক্রিয়াটায়।
নারী স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলার আগে স্বাধীনতা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
স্বাধীনতার সংজ্ঞায় আসে বাছাই করার ক্ষমতা, নিজের পছন্দসই জীবন বাছাই করার স্বাধীনতা। কেউ যদি এই পছন্দের তালিকায় যৌনতাকে রাখে তবে সেটাও তার স্বাধীনতার অংশ, কেউ যদি বৈবাহিক সম্পর্ক রাখে সেটাও তার স্বাধীনতার অংশ। এই স্বাধীনতা কোনো অর্থেই নৈরাজ্যিক অবস্থা নির্দেশ করে না। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং অধিকারবোধ অক্ষত রেখে সামাজিক সম্পর্কগুলো প্রতিষ্ঠিত করা, সমাজের একজন হিসেবে চিহি্নত হতে পারার মতো মৌলিক পরিচয়গুলোর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হয়।
আস্তমেয়ে টম বয় ধারনার সাথে নারী আন্দোলনের যোগসূত্র করে ফেলেছে- নারী আন্দোলনের প=রথম সুর তোলা হয়েছিলো 1800 সালের দিকে, সেই 100 বছরের ধারাভিক জনমত গঠনের প্রক্রিয়ায় একটা সময় নারীর ভোটাধিকার অর্জিত হয়। নারী রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্ব ীকৃতি পায়। এটা একটা বড় মাপের অর্জন।
নারী আন্দোলনের ইতিহাস অনেক প্রাচীন, নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রক্রিয়া সুদুর অতীতের বিষয়।
ভারতের প্রাচীন সমাজে কয়েকজন বিজ্ঞ নারীর সন্ধান পাওয়া যায়- যারা সামাজিক ভাবে পরিচিত হতে পারে নাই নারী পরিচয় নিয়ে, কিন্তু অন্য একটা স্বাধীনতা পেয়েছে, নারী দেবদাসী হতে পারে, স্বৈরিনী হতে পারে। ভোগের জায়গাতে যেতে পারে অবলীলায় কিন্তু এই দৈহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত পরিচয় ছেড়ে বাইরে আসতে পারে না। এটা নারী স্বাধীনতার চেতনায় মূল আঘাতের মতো। এই যৌনদাসত্ব বিষয়টাকে অনেকে এখন প্রধান ইসু্য হিসেবে আনছে সামনে, এই চিহি্নত করণ কতটা সুফল আনবে এটা নিয়ে অনেক মতাদর্শিক বিতর্ক বিদ্যমান। আমরাও একটা বিতর্ক শুরু করতে পারি।
নারী স্বাধীনতার পরিধি নিয়ে আমাদের মতামত জানাতে পারি- কে কোন জায়গা থেকে দেখছে নারীর মানুষ হয়ে ওঠাটাই মূল লক্ষ্য হয়ে যাওয়া উচিত কি না এটা নিয়েও কথা হতে পারে। কিন্তু নারী স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা হলে লিঙ্গ বৈষমের অবসান চাওয়াটাই মূল সুর। লিঙ্গ বৈষম্য পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রের নিয়োগের সময়, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মিদের ব্যাবহার সংক্রান্ত- একটা নীতিমালার অভাব- কর্মক্ষেত্রে কিভাবে নারীকে মূল্যায়ন করা হবে- স্বাধীনতার আলোচনায় এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার উপর আলোকপাত করা যেতে পারে-
আমরা নারী স্বাধীনতার ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা করতে পারি-
যেখানে অবাধ যৌনতার বিষয়টা আসে- নারীকে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দিলে নারী অপরিনামদর্শি হয়ে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করবে- এমনটা ধারনা করাটাও একটা চেতনার বাধার মতো।
যৌণসঙ্গি বাছাইয়ের স্বাধীনতা যদি পুরুষের থাকে নারীরও সেই স্বাধীনতা থাকতে পারে- আর পরিমানদর্শিতার সাথে অবাধ যৌনতার সম্পর্ক কোথায়।
অবাধ যৌনতার সাথে যেমন পোশাকের সম্পর্ক নেই তেমনই নারী আন্দোলনের চেতনার সাথেও অবাধ যৌনতার ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্ক নেই।
বোরখা আবৃত মেয়েরাও অনেক জনের সাথে যৌনসম্পর্কস্থাপন করতে পারে, আবার টমবয়েরাও যৌন বিশ্বস্ত হতে পারে, এটা একটা ব্যাক্তিমানুষের নিজস্ব অভিরূচির উপর নির্ভর করে- কিন্তু বোরখার সাথে আমরা একটা আলাদা যৌনসততার সম্পর্ক অবচেতনে স্থাপন করে ফেলেছি- এই অবচেতন ধারনা বলেই আমরা মেয়েদের বোরখায় মুড়ে কর্মক্ষেত্রে পাঠাতে ইচ্ছুক, ঝুঁকিপূর্ন কাজে নারীর নিয়োগে বাধা দিতে উদ্যত, আমরা নারীর কর্মক্ষেত্র নির্ধারনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম, এখনও সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত।
একই রকম অবচেতন ধারনা নামাজী এবং সৎ লোকের ক্ষেত্রে- দাড়ি সম্বলিত মানুষেরা ঘুষ নিলে আমরা আশাহত হই এই কারনেই যে আমারের অবচেতন ধারনায় এর বিরুদ্ধ চেতনা বিদ্যমান। আমরা এদের যাচাই না করেই সৎ উপাধি দিয়ে বসে আছি।
নারীদের ক্ষেত্রেও আমরা এমন অনেক ধারনা নিয়ে বসে আছি, যদি সবাই মুক্ত আলোচনা করে তাহলে এইসবধারনার মধ্যে অনেক দিকের আলো পড়বে এবং অবশেষে ভ্রান্তি কেটে যাবে-
যদিও আমার অভিজ্ঞতা বলে নারী স্বাধীনতা নিয়ে সবচেয়ে নিরব নারীরা। পুরুষেরাই বেশী আলোচনা করে নারী স্বাধীনতা নিয়ে।
তবে নারী স্বাধীনতা নিয়ে সবচেয়ে বৈপ্লবিক বক্তব্য মদনের- এটা একটা বানিজ্যিক পন্য- কিন্তু ভোক্তা কারা? কাদের আমলে এনে এই পন্যের প্রচারনা শুরু করছে। কথাটা অনেক বেশী পুরুষতান্ত্রিক। নারীর পন্যায়নের জন্যই নারী স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলছে প্রচার মাধ্যম। এই খানেও একটা লুকানো ধারনা বিদ্যমান- ঘর থেকে বাইরে বের লেই মেয়েরা পন্য হয়ে যায়- এই ধারনার সাথে যা আসে সহায়ক হিসেবে তা হলে যারা বিভিন্ন পন্যের মডেল হচ্ছে তারা রূপ যৌবন বিক্রি করছে বহুগাতিক কোম্পানিগুলের পয়সায়। এই রুপোজীবিনি শব্দটার সাথে আসে যৌনদাসী হয়ে যাওয়ার কথা। এবং অবশেষে এই পন্থায় আলোচনা সামনে টানলে আসবে যারা নারীস্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছে তারা নারীর শরীরকে পন্য করার চেষ্টা করছে- নারীকে বেশ্যা বানানোর চেষ্টা করছে, খুবই ভয়ংকর প্রবনতা এটা-
আমরা অনেকগুলো দৃষ্টিভঙ্গির সাথে যেনো পরিচিত হতে পারি এর জন্য সবাই মতামতে অংশগ্রহন করলে ভালো হয়-


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।