হারিয়ে ফেলানো ও খুঁজে পাওয়া

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/১১/২০০৬ - ২:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হঠাৎ প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে যেমন লাগে সোলসের "ঝুটঝামেলা" সংকলনটা শুনতে গিয়ে এমনই একটা অনুভব হলো আমার, প্রায় 30 বছর হয়ে গেলো, আমাদের বাবারাও এদের গান শুনে ভালোবাসতে শিখেছে, কলেজের করিডোরে দেখা মেয়েটিকে নিয়ে ভেবেছে, ভেবেছে বৃষ্টিমেদুর দিনে বিগত প্রেমিকার কথা , বিলাইবো প্রেম জনে জনে, এমন একটা মেলোডিয়াস রকের ধারা তৈরি করেছিলো সোলস, একেবারেই অনন্য বাংলা সংগীতের ক্ষেত্রে, সোলসের গান শুনেই বলে দেওয়া যায়, কিংবা যেতো এটা সোলসের গান। ঝুটঝামেলায় সেই সোলস কে হারানোর দুঃখ পেলাম, হঠাৎ হঠাৎ করে পুরনো সোলসের ঝলক দেখা গেলেও সোলসের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যার্থ হয়েছে এই গীতি সংকলন। সোলসের আনপ্লাগড বের হয়েছিলো, সেখানে পার্থর গাওয়া "সারাদিন তোমাকে ভেবে" শুনে অনেক মুগ্ধ প্রহর কেটেছে, শচীন দেব বর্মনের গান গেয়েছে পার্থ, সেখানেও নতুন এক সোলসকে পাওয়া গেছে, তবে এই নতুন সংকলনে ওদের প্রেতাত্মার ছায়া যেনো ভর করেছে।বাংলা সংগীতে সোলসের অবদান হয়তো আমি লিখে বুঝাতে পারবো না, এই একটা দল থেকেই রেঁনেসার মতো নতুন একটা দলের জন্ম হয়েছে, সোলসের দীর্ঘ ইতিহাসে এদের সাথে ছিলো নকীব খান, কুমার বিশ্বজিত, তপন চৌধুরী, আইয়ুব বাচ্চু, পার্থ এবং আরও অনেক সংগীত শিল্পি যাদের নাম আমি নিজেও জানি না।তবে সোলসের গান বাছাই, সোলসের সমসাময়িকতা এবং চিরকালিনতার মিশ্রন আমাকে বারংবার মুগ্ধ করেছে।নকীব খান আমার কাছে বাংলাদেশের অন্যতম একজন সুরকার, তার স্বপ্ন জড়ানো গীতি সংকলন বাংলাদেশের ভালো কয়েকটা গীতি সংকলনের ভেতরে 1 থেকে 10এর ভেতরে থাকবে হয়তো আরও 20 বছর, তবে আমার মনে হয় বাংলা সংগীতে পোষ্টমডার্নিজমের সুচনা সোলসের হাতে, একেবারে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন টুকিটাকি বিষয় নিয়েও গান করার ধারা শুরু করেছে সোলস, আমাকে আমার এক বন্ধু সেই লং প্লেয়ার সময় থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত সোলসের যে কয়টা গীতি সংকলন বের হয়েছিলো সবগুলোর এম পি থ্রি করে দিয়েছিলো, তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আর এর পর বিভিন্ন ওয়েব সাইটের কল্যানে নতুন 2টা গীতি সংকলন এসেছে হাতে, এত দিনের এত গান শুনে হঠাৎ এই সোলস কে হারিয়ে ফেললাম নতুন এই গীতি সংকলনে।নকীব খানের সুরের ধাঁচ এক রকম, আইয়ুব বাচ্চু সোলস থাকা কালিন সময়ে অসাধারন কিছু সুর করেছিলো, পার্থের নিজেরও নিজস্ব সুরের ধাঁচ আছে একটা, তবে আমার সবচেয়ে অপছন্দের মানুষ সোলসের ভেতরে নাসিম আলি খান, সোলসের কলংক মনে হয় এই লোকটাকে আমার। সেই একই রকম ভাবে একই রকম গান গেয়ে যাচ্ছে, বয়েসের সাথে একবিন্দু বদলায় নি তার গানের চরিত্র, সোলসের ভরাডুবির পেছনে এই লোকটারও একটা বিশাল ভুমিকা, এই গীতি সংকলনেও তার 4টা গান আছে, গতবারের সংকলনে পার্থে র গান ছিলো বলে নাসিম আলীর গানগুলো বাদ দিয়েও শোনা গিয়েছিলো, এই নতুন সংকলনে পার্থের সুর হয়েছে নীচু মানের, তাই আর শোনার উৎসাহ পাচ্ছি না, অনেক ভালো করা যেতো, অনেক জায়গায় কমতি থেকে গেছে তাই এই গীতি সংকলনকে 100তে 40 দেওয়া যাচ্ছে না, এর পরও দিলাম, পুরোনো স্মৃতিমেদুরতা থেকে।হিমুর চমৎকার একটা সাম্যবাদী তত্ত্ব ছিলো এখানে, সেই তত্ত্বের মতোই, সোলস হারিয়ে গেলেও খুঁজে পেলাম পুরোনো মাকসুদকে আবার তার মারেফাতের পতাকা, কিংবা মা আরেফাতের পতাকা শীর্ষক গীতি সংকলনে, মাকসুদ ফিডব্যাকে থাকাকালীন সময়ে ক্রমাগত গানের ধারা বদলে গেছে, তবে তার ফিডব্যাকে গাওয়া সবগুলো গানের ভেতরেই একটা উন্মাদনার বিষয় ছিলো, আবেগ কিংবা উচ্ছাস ছুঁয়ে যেতো শ্রোতাকে, মৌসুমি, কিংবা মেলা কিংবা মাঝি কিংবা প্রেম শুধু এক থাকা, এই গানগুলোর সাথে মাকসুদের জড়িয়ে থাকা এমনই যে মাকসুদকে ভিন্ন এইগান আর কেউ গেয়ে মন ভরাতে পারবে এমনটা মনে হয় নি আমার। মাকসুদ যেকোনো কারনেই হোক ফিডব্যাক ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন ব্যান্ড করলো মাকসুদ ও ঢাকা, ওটার প্রথম সংকলন শুনে হতাশার মাত্রা বেড়েছিলো কয়েকশত গুন, গানগুলো যেমন যাচ্ছে তাই রকমের জঘন্য হয়েছিলো তারও বেশী ফিউশন নামক যন্ত্রনাটা। এর পরের বৈশাখী ঝড়ের রাত্রিও তেমন ভালো না, মনে হচ্ছিলো ফিডব্যাক ছাড়া মাকসুদের সেই স্বকীয়তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তবে এই নতুন সংকলনে আবারও মাকসুদের সেই উচ্ছ্বাস খুঁজে পেলাম, আরও কিছুটা ভালো করা যেতো, লালনের যেই গানটা বাউলের ঠোঁট থেকে কেড়ে নিয়ে মাকসুদ গাওয়া শুরু করলো ওটা বাউলকে দিয়ে গাওয়ালেই ভালো হতো, মাকসুদের অন্তর্ভুক্তি গানটার মান বরং কমিয়েছে, এর পরও সেই পুরোনো মাকসুদ যার গান শুনে শ্রোতার রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠে সেই মাকসুদকে পেয়ে এইসব ছোটো খাটো অপ্রাপ্তিকে ভুলে যাচ্ছি, মাকসুদ অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন ভাবে ফিউশনের সার্থক প্রয়োগের চেষ্টা করছে, বাউলিয়ানা নিয়ে একটা প্রয়াসও মনে পড়ছে আমার, তবে অনেক দিন পর মাকসুদ ফিরে পেলো তার পুরোনো অবস্থান, তাই করেছে যা মাকসুদের কণ্ঠে সবচেয়ে মানানসই, মেলার অন্যরকম মাদকতা যেমন সুর আর কণ্ঠে মাকসুদ আমাদের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলো, যে রকম করে মৌসুমিকে হারানোর বেদনাও আমাদের বুকে ততটা ব্যাথা হয়ে বাজে নি, যেমন তেমন একটা সার্বক্ষনিক আনন্দ ছড়িয়ে আছে সংকলনে, সংগীতযোজনায় একেবারে নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে এই গীতি সংকলন, ব্রিটনী স্পিয়ার্স থেকে শুরু করে রেড হট চিলি পেপারস সবাই এখন একই রকমের একটা ধাঁচ তৈরি করে ফেলেছে, কারো কারো সাথে বিষয়টা মানিয়ে যায়, কারো কারো সাথে বিষয়টা মানিয়ে যায় না, মাকসুদের সাথে এই বিষয়টা একেবারে মানিয়ে গেছে।এই গীতিসংকলনের সবগুলো গানই মোটামুটি চলনসই, তবে উচ্ছাস আর আনন্দের জন্য এই গীতিসংকলনকে আমার এই মুহূর্তে দিতে ইচ্ছা করছে 100 তে 90। কোনো দুর্বলতা বা সবলতার কথা না বলে শুধু শুনতে বলি সবাইকে, মাকসুদের উচ্ছাসে ভাসবে বাংলাদেশ আবারও।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।